লিফান কেপিআর ১৫০ মোটরসাইকেল রিভিউ - মোকলেসুর রহমান

বাইক চালানো শিখেছিলাম আজ থেকে প্রায় ৮ বছর আগে। এরপরে আমি ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের বাইক, টিভিএস এপ্যাচি আরটিআর এবং বাজাজের পালসার সহ বিভিন্ন বাইক ব্যবহার করেছি। বিভিন্ন বাইকের ভিড়ে আমি ব্যাতিক্রম একটি বাইক লক্ষ্য করেছিলাম সেটা হল লিফান কেপিআর। লিফান কেপিআর বাইকটি আমার বন্ধু ব্যবহার করত এবং তার বাইক বলতে গেলে প্রায় সব সময় চালাতাম। তারপরে এই বাইকটি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা ব্যাপক হল এবং বাইকটি আমাকে কেনার জন্য আকৃষ্ট করলো। সব কিছু দেখে শুনে এবং বিভিন্ন ওয়েব সাইটে রিভিউ দেখে এই বাইকটি কেনার সিদ্ধান্ত নিই । আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে বাইকটির ইঞ্জিনটা খুবই অসাধারণ। আমি মনে করি যে, বাইকটির ইঞ্জিন যে কোন রাইডিং পরিস্থিতিতে অনেক ভালো ফিডব্যাক দিবে ।

লিফান কেপিআর বাইকটি আমি বেশ কিছুদিন হল কিনেছি এবং কিনে প্রায় ৫০০ কিমি এর কাছাকাছি রাইড করে ফেলেছি। আজকে এই বাইকের কিছু বিষয় আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো।

বাইকটির দিকে তাকালেই প্রথমে যে বিষয়টি মনের মধ্যে নাড়া দিবে সেটি হল বাইকের ডিজাইনটা। আমার কাছে বেশ ভালো ডিজাইন বলে মনে হয়েছে । এই বাজেটে স্পোর্টস লুকের ডিজাইন সত্যিই অভাবনীয়। বাইকটি দূর থেকে দেখে প্রিমিয়াম বাইকের মত লাগে। মোট কথায় ডিজাইনের দিক থেকে আমি বলতে গেলে পুরোপুরি সন্তুষ্ট।

অন্যদিকে বাইকের শাড়ী গার্ডটা যদি দেওয়া থাকতো তাহলে মনে হয় বেশি ভালো হত। শাড়ী গার্ডটা না থাকার ফলে আমার একটু অসন্তুষ্টি বোধ হয়েছে । বাইকের মারড গার্ডটা আরেকটু বড় দেওয়া উচিত কারণ এর ফলে রেডিয়েটরে পানি প্রবেশ করে।

যেহেতু আমি শুরুতেই উল্লেখ করেছি যে বাইকের ইঞ্জিন খুবই ভালো এবং ইঞ্জিনটা এই বাজেটে সেরা। আমি এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনের কোন ওভার হিট লক্ষ্য করিনি। ইঞ্জিনটা অনেক স্মুথ এবং চালিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয়।আমি থ্রটল দিয়ে ইঞ্জিনের গতি ও আরপিএম ঠিক ঠাক পেয়েছি। আর গিয়ার শিফটিংটা আমার কাছে প্রথম অবস্থায় একটু শক্ত মনে হচ্ছে। আমি শুনেছি যে এই শক্তভাবটা ৫ হাজার কিমি এর পরে ঠিক হয়ে যাবে।

সিটিং পজিশনে বসে একদম রেসিং বাইকের অনুভূতি পাওয়া যায় এবং এটা খুব আরামদায়ক। বেশিক্ষন রাইড করলে কাঁধ বা কবজি ব্যাথা করে না তবে নতুন যারা রাইড করবেন তাদের ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থায় একটু কাঁধ বা কবজি ব্যাথা করতে পারেন।

হ্যান্ডেলবারটা আমার কাছে বেস্ট লেগেছে কারণ সিটিং পজিশনের সাথে হ্যান্ডেলবার পুরোপুরি ম্যাচিং এবং আরামদায়ক। হ্যান্ডেলবার ভালো হওয়ার ফলে কন্ট্রোল করেও অনেক মজা পাওয়া যায়। আমি একদিনে প্রায় ১৩১ কিমি রাইড করেছি এক্ষেত্রে আমার কোন অসুবিধা হয়নি।

বাইকের ব্রেকিং সিস্টেমে ব্যবহার করা হয়েছে ডুয়েল ডিস্ক ব্রেক যা খুব ভালো পারফরমেন্স দিতে সক্ষম। ব্রেকিং করে স্মুথ অনুভূতি পাই আর যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য এই ব্রেকিং যথেষ্ট মনে করছি।

সাসপেনশনটা একটু নরম সিংগেল রাইডের জন্য ঠিক আছে কিন্তু পিলিয়ন নিলে একটু ঝামেলা হয় । অর্থাৎ ভাঙ্গা রাস্তা কিংবা উঁচু নিচু রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে টায়ারের সাথে সিটিং পজিশন লেগে যায় শুধুমাত্র এর নরম সাসপেনশনের জন্য। এমনি সিংগেল রাইডের জন্য সাসপেনশন ঠিক আছে।

টায়ারের সাইজটা এই বাইকের গঠনের সাথে খাপ খায় না কারণ এই বাইকের মাস্কুলার লুক রয়েছে এবং এই দিক থেকে বিবেচনা করলে একটু মোটা টায়ার অবশ্যই দেওয়া উচিত এর ফলে লুক আরও বৃদ্ধি পাবে।

মাইলেজ হিসেবে আমি এই বাইক থেকে পাচ্ছি লিটারে ৩৮ কিমি এর কিছু বেশি। আমার কাছে অন্যান্য বাইকের দিক বিবেচনা করলে এই বাইকের মাইলেজ ৪৫ কিমি হলে বেশ ভালো হত। মাইলেজের বিষয়টা আমার মেনে নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে।

সার্ভিস সেন্টারের বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই। আমাদের পঞ্চগড়ে লিফানের অথোরাইজ কোন সার্ভিস সেন্টার নাই। যার জন্য বাইক কিনে অনেকেই বিপাকে পড়ে যে কোথায় সার্ভিস করবে। সে জন্য লিফানের কাছে অনুরোধ যে সকল এলাকায় লিফানের ডিলার রয়েছে সে সকল স্থানে একটি করে সার্ভিস সেন্টারে করা উচিত। এর ফলে গ্রাহকদের আস্থা বাড়বে।

সব কিছু নিয়ে মতামত দিয়েছি কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতামত দেওয়া হয়নি সেটি হল বাইকের দামটা। এই বাইকের দাম আমার কাছে বাজেট কিলার মনে হয়েছে কারণ এত কম দামে স্পোর্টস লুক আবার প্রিমিয়াম বাইকের মত অনুভূতি সত্যিই অকল্পনীয়। আজ এই পর্যন্তই সবার ভালো থাকবেন। আর যদি কেউ লিফান কেপিআর ১৫০ কিনতে চান তাহলে আমার পরামর্শ থাকবে যে বাইকটি অবশ্যই কিনবেন ।

All LIFAN bike price in bd

Lifan KPR 150