আমার নাম রাফি আহমেদ শিবলু। আমি পেশায় একজন ছাত্র। যেহেতু একটু কম বয়স তাই বাইকের উপর আমার ভালোলাগা একটু বেশি। বাইক হচ্ছে মানুষের চলার পাথে সাহায্যকারী একটি বাহন। যেখানে বড় কোন বাহন নিয়ে যাওয়া সম্ভব না সেখানে নিমিষেই বাইক নিয়ে যাতায়াত করা যায়। তবে যাতায়াত ক্ষেত্রে আমাদের একটি বিষয় নিশ্চিত করতে হয় সেটি হচ্ছে আরাম,কন্ট্রোল এবং ইঞ্জিন পারফরমেন্স এবং এই সব মিলিয়ে ভালো একটা বাইক চাই। আমি বর্তমানে ব্যবহার করছি লিফান কেপিআর ১৫০ ভার্সন ২ বাইক এবং আমার এই বাইকের পূর্বে ছিলো বাজাজ পালসার, হিরো প্যাশন প্লাস, ডায়াং সহ বিভিন্ন বাইক। আমি মূলত বাইকের পারফরমেন্স দেখে লিফান কেপিআর ১৫০ বাইকটা কিনি। আমি গত ৯ মাস যাবত লিফান কেপিআর বাইকটা ব্যবহার করছি। আর এই ৯ মাসে আমি বাইকটা প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার রাইড করেছি। আজকে আমি সেইসব ভালো এবং মন্দ লাগা বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো।
ডিজাইন
কম দামের মধ্যে বাইকটিতে সেরা রেসিং লুকের ডিজাইন রয়েছে। বাইকের বডি কিট, সামনের হেডল্যাম্পের ডিজাইন, এলয় হুইল, ফুয়েল ট্যাংকার সব মিলিয়ে বাইকটার ডিজাইনকে আরও ফুটিয়ে তুলেছে কিন্তু পেছনের দিকে একটু উঁচু হলে আরও রেসিং রেসিং একটা ভাব চলে আসতো আর পেছনের সাসপেনশনটা আরেকটু উঁচু করলে আমার মনে হয় ডিজাইনগত দিক দিয়ে আরও উন্নত হয়। কিন্তু সব কথার শেষ কথা হচ্ছে কম দামের মধ্যে প্রিমিয়াম বাইকের মত ডিজাইন।
বিল্ড কোয়ালিটি
বাইকের বিভিন্ন বডি পার্টসগুলো অনেক মজবুত মনে হয়েছে। বডি কিট বা অতিরিক্ত প্লাস্টিকগুলো মনে হয় না যে খুব সহজেই ভেঙ্গে পড়বে। তবে একটা বিষয় অবশ্যই বলতে হয় যে বাইকের বিল্ড মজবুত হলেও প্রিমিয়াম বাইকের মত না।
ইঞ্জিন
ইঞ্জিন পারফরমেন্স ১৫০ সিসি বাইক হিসেবে অত্যান্ত ভালো মানের। ইঞ্জিনের খারাপ কোন শব্দ হয় না এবং স্মুথ পারফরমেন্স দেয়। প্রথমের দিকে অবশ্য ইঞ্জিন একটু গরম হচ্ছিল আস্তে আস্তে সেই গরমটা আর নেই এবং ইঞ্জিন মনে হচ্ছে দিন দিন আরও স্মুথ হচ্ছে। তাই বলতে গেলে ইঞ্জিনের পারফরমেন্স নিয়ে আমি খুব খুশি আছি।
আরাম
একটি বাইকের শুধু মাত্র ইঞ্জিন পারফরমেন্স ভালো হলে হয় না বাইকটা চালিয়ে যেন রাইডার আরাম বোধ করে সে ব্যাপারে একটু বিবেচনা করতে হয়। আমি লিফান কেপিআর ১৫০ বাইকে বেশ ভালই আরাম অনুভব করি। রাইডিং সিট খুবই ভালো এমনকি পিলিয়ন নিয়েও আরামসে রাইড করা যায়। সিটের উচ্চতা ভালো হওয়ার কারণে ব্যস্ততম রাস্তায় খুব কম ঝামেলা পোহাতে হয়। হ্যান্ডেলবারটা একটু কার্ভ যা সিটিং পজিশনের সাথে ম্যাচ করে স্পোর্ট ফিলিংস এনে দিয়েছে।
কন্ট্রোল
কন্ট্রোল ভালো অনুভব করি। বাইকটা ওজনে একটু বেশি হওয়ার কারণে হাইওয়েতে রাইড করে ভালো অনুভূতি পাওয়া যায়। এমনিতে শহরের ব্যস্ততম রাস্তা কিংবা অন্যান্য যে কোন রাস্তায় বাইকটা খুব ভালো ভাবে কন্ট্রোল করা যায়।
টপ স্পীড
আমি টপ স্পীড তুলেছি ১০৭ কিমি প্রতি ঘন্টা। টপ স্পীড আমি কম তুলতে পেরেছি কারণ রাস্তা স্বল্পতা এবং নিজের ব্যাক্তিগত চিন্তা ধারা থেকে আমি টপ স্পীড তোলার জন্য কখনই পক্ষপাতি ছিলাম না এখন নেই। বাইক চালাবো নিজের মত করে এবং অনুভূতি নিয়ে।
ব্রেকিং
সামনে এবং পেছনে উভয়দিকে ডিস্ক ব্রেক থাকার ফলে ব্রেকিং অনেক ভালো হয়। আমি খুব ভালোভাবেই যে কোন রাস্তায় যে কোন কন্ডিশনে ব্রেকিং করে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনতে পারি। আর এক্সিডেন্ট কপালে থাকলে কেউ রুক্ষতে পারবে না তবুও অনেক সাবধানে বাইক চালাই।
সাসপেনশন
সামনের দিকের টেলিস্কোপিক সাসপেনশন ভালো পারফরমেন্স দেয় কিন্তু পেছনের মনোশকটা একটু নরম মানে ভালো পারফরমেন্স দেয় না। পিলিয়ন সাথে থাকলে পেছনে চাকার সাথে ঘষা খায়।
টায়ার
টায়ার বেশি মোটা না হলেও পারফরমেন্সের দিক দিয়ে ভালো। কিন্তু যদি সিংগেল ব্রেক করা হয় তবে চাকা স্কীড করে আর এক সাথে দুইটা ব্রেক ব্যবহার করলে চাকা স্কীড করে না।
মাইলেজ
আমি ১০ হাজার কিমি রাইড এর মধ্যে মাইলেজ পাচ্ছি লিটারে প্রায় ৩৮-৪০ কিমি। মাইলেজের দিক দিয়ে আমি সন্তুষ্ট কারণ এত ভালো ইঞ্জিন পারফরমেন্স, বেশি ওজনের বাইক রাস্তায় আমাকে যথেষ্ট ভালো মাইলেজ দিচ্ছে যা অন্যান্য বাইকের সাথে তুলনা করলে সার্বিক দিক দিয়ে এরই মাইলেজ বেশি হবে।
সার্ভিস সেন্টার
সার্ভিস সেন্টারের ব্যবহার ,আচরন ইত্যাদি আমার কাছে ভালো লেগেছে। তাদের কাজের দক্ষতা ভালো আছে কিন্তু সব জায়গায় সার্ভিস সেন্টার নেই। সার্ভিস করানোর জন্য আমাকে বাইক নিয়ে বেশ খানিকটা পথ পাড়ি দিতে হয় এবং এটা আমার জন্য বিড়ম্বনা।
দাম
বাইকের একটা বিষয় আমি শুরু থেকেই বলে আসছি যে দামটা একদম ঠিক আছে। আমাদের দেশে অন্যান্য বাইকগুলো এই দামে এত কিছু ফিচারস দিতে পারে না তাই আমি লিফান কেপিআর ১৫০ কে দামের দিক থেকে বেশি এগিয়ে রাখবো।
বাইকের কিছু ভালো দিক
-দানবীয় স্পীড
-মাইলেজ বেশি
-প্রজেকশন হেডল্যাম্প
বাইকের কিছু মন্দ দিক
-গিয়ার শিফটিং একটু কড়া
-ব্রেকিং ডিস্ক আরেকটু উন্নত করতে হবে কারণ দ্রুত ক্ষয় হয়
আমি সবাইকে একটা কথা বলতে চাই যে অন্যের কথায় কান না দিয়ে নিজে সব বাইক ট্রাই করবেন এবং অবশ্যই লিফান কেপিআর বাইকটা একবার হলেও ট্রাই করবেন। আশা করি আপনারা আশাহত হবেন না। ধন্যবাদ সবাইকে।