লিফান কেপিআর ১৫০ মোটরসাইকেল রিভিউ - মামুন আকতার

হোন্ডা সিডি ৮০ দিয়ে বাইক চালানোর হাতে খড়ি আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে। বাইক চালানো শেখার পর থেকে বাইকের প্রতি আমার আগ্রহ দিন দিন আরও বাড়তে থাকে এবং তারই ধারাবাহিকতায় আমি হিরো হোন্ডা হাংক দেড় বছর, হোন্ডা ইউনিকর্ন ১ বছর, ইয়ামাহা ফেজার ২ বছর ব্যবহার করেছি এবং বর্তমানে যে বাইকটি ব্যবহার করছি সেটা বাংলাদেশের তরুণদের একটি পছন্দের বাইক লিফান কেপিআর ১৫০। অনেকেই লিফান কেপিআর কে গরীবের সিবিআর বলে থাকেন এবং আমার কাছেও ঠিক সেরকমই লেগেছে অর্থাৎ সহনীয় দামের মধ্যে দামী দামী বাইকের অনুভূতি রয়েছে এই বাইকে। লিফান কেপিআর ১৫০ বাইকটি ৫ মাস আগে রাজশাহীর নাহার মেশিনারিজ থেকে কিনেছিলাম। আমি কারও কথা শুনে কিনি নাই। আমি অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েব সাইটে গবেষণা করে লিফান কেপিআর পছন্দ করি। আমার চিন্তা-ভাবনা ছিলো যে চাইনিজ বাইকগুলো একটা ট্রাই করবো এবং সেই ট্রাই হিসেবে কেপিআর ১৫০ কে আপন করে নিই। যেহেতু আমি প্রায় ৫ মাস ধরে ব্যবহার করছি তাই এই বাইকটা নিয়ে আশা করি ভালো মন্দ কিছু বলা উচিত। মোটরসাইকেলভ্যালীর আমন্ত্রণে আজকে সেই ভালো মন্দ বিষয়গুলো আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।


ডিজাইন নিয়ে বলতে গেলে Yamaha R15 এবং Yamaha R15 v2 এর পরে লিফান কেপিআর ১৫০ কে রাখবো। ডিজাইনগত দিক দিয়ে বাইকটা খুবই ভালো লেগেছে। বাইকের বিভিন্ন বডি কিটস একে দিয়েছে একদম স্পোটি লুকস । একইসাথে বাইকের বডি কিটগুলো অনেক মজবুত এবং সেগুলো খুব সহজে ভেঙ্গে যায় না। ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটির দিক দিয়ে এক কথায় খুবই ভালো।

ইঞ্জিনের পারফরমেন্স নিয়ে আমি সন্তুষ্ট আছি । আমি এই পর্যন্ত ইঞ্জিনের বাজে কোন শব্দ কিংবা ওভার হিট হয়নি। সত্যি কথা বলতে প্রথমের দিকে ইঞ্জিনটা একটু ওভার হিট হতো এবং এই নিয়ে আমি চিন্তিত ছিলাম কিন্তু পড়ে শুনলাম যে নতুন নতুন সব বাইকের ইঞ্জিন ওভার হিট হয়। এদিকে খুব সম্প্রতি একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি যে ইঞ্জিনটা হটাত চলতে চলতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো । এই বিষয়টা আমার জন্য একটু মন খারাপ মনে হয়েছে।

সিটিং পজিশন অনেক আরামদায়ক । সিটে বসে মাটিতে পা পেতে তেমন সমস্যা হয় না এবং হাই স্পীডে তেমন ঝিনঝিন অনুভব করিনি। বাইকের একটা খারাপ বিষয় হচ্ছে বেশিক্ষন ধরে রাইড করলে একটু কষ্ট হয় এবং ব্যাক পেইন অনুভব হয়। হ্যান্ডেলবারের সুইচগুলো মোটামুটি এবং হেডল্যাম্পের আলোটাও বলতে গেলে ভালোই। আমি একদিনে প্রায় ২৭০ কিমি চালিয়েছি এক্ষেত্রে আমার কাছে একটু কষ্টদায়ক মনে হয়েছে।
টায়ারের গ্রিপিং খুবই নিম্নমানের এবং এই ফলে আমি স্কীড অনুভব করি। ব্রেকিং নিয়ে যদি বলি তবে বলবো যে ব্রেকিং খুবই শক্ত, এভারেজ ব্রেকিং পাই না এবং চাকা মাঝে মাঝে লক করে ফেলে আমি খারাপ রাস্তায় চালিয়ে যেটা অনুভব করেছি যে সাসপেনশন সামনেরটা খুবই ভালো কিন্তু পেছনেরটা আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। পেছনের সাসপেনশনটা স্মুথ না এবং আমি চালিয়ে তেমন আরাম পাই না । পেছনের সাসপেনশন আরও উন্নত করা দরকার। বাইকের ওজনের ফলে বেশ ভালোই কন্ট্রোল করা যায় বিশেষ করে বেশি স্পীডে বাধাহীনভাবে কন্ট্রোল করতে পারি কিন্তু ব্রেকিং, সাসপেনশন এবং টায়ার এই তিনটা বিষয় আগের থেকে আরও বেশি উন্নত করা উচিত বলে আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি।

কেনার সময় কোম্পানী থেকে আমাকে মাইলেজ বলা হয়েছিলো যে ৪২-৪৫ কিমি/লিটার পাওয়া যাবে । আমি এখন বর্তমানে পাচ্ছি শহরে ৪০ কিমি/লিটার এবং হাইওয়েতে ৪৩-৪৪ কিমি/লিটার। মাইলেজ নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নাই কারণ এই রকম দানবের জন্য মাইলেজটা আমার কাছে ঠিকঠাক বলে মনে হয়েছে।

সার্ভিস সেন্টার নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট। আমি শুনেছি যে অন্যরা রাজশাহী মানে আমার এলাকায় ভালো সার্ভিস পাচ্ছে না কিন্তু আমি তাদের কাছ থেকে ভালোই সার্ভিস পেয়েছি। তারা শুধুমাত্র আমার জন্য ঢাকা থেকে সার্ভিস ম্যান পাঠিয়েছিলেন। সেই জন্য ধন্যবাদ জানাই রাসেল ইন্ডাস্ট্রিজ কে কিন্তু খুব দ্রুত রাজশাহীতে সার্ভিস সেন্টার করা উচিত।

দাম আমার কাছে ঠিক মনে হয়েছে। এই রকম বাজেটে এত সুন্দর বাইক পাওয়া খুব কষ্টকর ব্যপার।

খারাপ দিক –
-পেছনের সাসপেনশন
-স্পীড মিটারের ডিসপ্লে ছোট
-লুকিং গ্লাসের মান ভালো না
-গিয়ার শিফটিং কড়া

কোম্পানীর কাছে পরামর্শ থাকবে যে তাদের গিয়ার শিফটিং টা প্রথম অবস্থায় একটু স্মুথ করা উচিত। সবাইকে ধন্যবাদ।

All LIFAN bike price in bd

Lifan KPR 150