স্পোর্টস বাইক! আমাদের বাংলাদেশে এক ধরণের স্বপ্নের বাইক হচ্ছে এই স্পোর্টস বাইক! বাংলাদেশে বাইকের জন্য সিসি সীমা বা অন্যান্য অনেক সমস্যার কারণে আমরা বাইকপ্রেমীরা টাকা থাকলেও আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাইকটি কিনতে পারি না। এ কারনে আমাদের স্থানীয় বাজারে যা আছে তা নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয় এবং কিনতে হয়। আমরা যদি বাংলাদেশি মার্কেটের দিকে নজর দেই এবং চাহিদা বেশি কিন্তু বাজেট কম হয় তাহলে বাংলাদেশের সর্বাধিক সাশ্রয়ী মূল্যের এবং নজরকাড়া স্পোর্টস বাইকগুলির মধ্যে একটি হল লিফান কেপিআর ১৬৫ আর। বাইকের স্পোর্টি আউটলুক, গতি এবং ইঞ্জিনের দুর্দান্ত পারফরমেন্স (ব্যবহারকারীদের মতে) খুব অল্প সময়ে বাইকটিকে করে তুলেছে আলচোনার বিষয়বস্ত্য।বাইকটির দুটি ভার্শন বাজারে পাওয়া যায়, একটি কার্বুরেটর ভার্শন এবং অন্যটি ইএফআই, এই দুটি ভার্শনই সত্যিই দুর্দান্ত পারফর্ম করছে বলে সবার মতামত। গত বছর ঢাকা বাইক শো এর মাধ্যমে লিফান কেপিআর ১৫০ এর নতুন ভার্শন ১৬৫ আর প্রদর্শন করেছিল, যদিও বেশ কিছু কারণে এটি আমাদের স্থানীয় বাজারে সব সময় পাওয়া যায়নি। এই বছর একই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে তারা কেপিআর ১৬৫ আর এর কার্বুরেটর সংস্করণটি সরবরাহ করতে শুরু করেছে।
এই বাইকটি নিয়ে আসার সময় বেশ কিছু ফিচার পরিবর্তন ও যুক্ত হয়েছে এই বাইকের সাথে, কিছু গ্রাফিকাল পরিবর্তনের পাশাপাশি ইঞ্জিন আপগ্রেড এবং নতুন কিছু পরিবর্তন বাইকটিকে আরও শক্তিশালী এবং আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এটি একটি স্পোর্টস বাইক যা সাশ্রয়ী মূল্যে এবং অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স দিয়ে থাকে, ফলস্বরূপ, খুব অল্প সময়ের মধ্যে এতটা জনপ্রিয়। তাহলে চলুন আমরা আর কোন সময় নষ্ট না করি এবং এই বাইকটি আমাদের জন্য যেসকল প্রয়োজনীয় ফিচারস নিয়ে এসেছে বা আগের মডেলের সাথে এর কি পার্থক্য তা যাচাই করি।
ডিজাইন ও কালার
আগেই বলা হয়েছে, বাইকটি অফিসিয়ালি ঘোষনার পরেও আমাদের স্থানীয় বাজারে তেমন একটা পাওয়া যায়নি, তবে এখন এটি পাওয়া যাবে, এবং শুধু তাই নয় পাওয়া যাবে নতুন আকর্ষনীয় আঙ্গিকে। লিফান কেপিআর ১৬৫ আর এর আপগ্রেড গ্রাফিকস সহ, ফুল ফেয়ারিং লুক এবং পেশীবহুল বডির গঠন বাইকটিকে দিয়েছে নতুন একটি রুপ যা ক্রেতাদের কাছে ভাল লাগবে বলে আসা করা যায়। যদি আমরা একটি সম্পূর্ণ ফেয়ারিং মেশিনের বিষয়ে বলি, তাহলে বাইকটির বডি কিটের কারণে এটি অন্যতম মাস্কুলার একটি মোটরসাইকেল। সামনের অংশে একটি সুন্দর প্রজেকশন হেডলাইট, পেছনের দিকে আনকমন একটি এলইডি রেয়ার লাইট স্থাপন করা ঠএয়েছে এই বাইকের জন্য সেই সাথে নতুন চালার কম্বিনেশন মিলিয়ে এই নতুন কেপিআর এর চেহারা হয়ে উঠেছে সত্যই নজরকাড়া।
আগের মডেল কেপিআর ১৫০ এর সাথে তুলনা করলে এই বাইকের সাথে অনেক মিল পাওয়া যাবে।এই বাইকটির পিলিয়ন সিট, ফুয়েল ট্যাঙ্ক এবং ইন্ডিকেটরগুলো একই রকম দেখতে। এই মডেলে লিফান যুক্ত করেছে নতুন এক্সহস্ট পাইপ, যা বাইকে একটি নতুন আকর্ষন দিয়েছে। পুরণো মডেলগুলির দিকে তাকালে দেখা যাবে রঙের সংমিশ্রণগুলি সাধারণ ছিল এবং বেশিরভাগই একটি কালার বিশিষ্ট ছিল তবে এখন এই বাইকটি আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য দেয়া হয়েছে দুটি কালারের মিশ্রন। কেপিআর ১৬৫ আর এখন ৫টি আকর্ষণীয় রঙে পাওয়া যাবে।
ইঞ্জিন এবং গিয়ার
লিফান কেপিআর এ ব্যবহার করা হয়েছে ১৬৫ সিসি লিকুইড-কুল্ড ৪ স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, কার্বুরেটর টাইপ ইঞ্জিন। এই বাইকের EFi (ইলেক্ট্রিক ফুয়েল ইঞ্জেকশন) সংস্করণও রয়েছে। বর্তমান ইঞ্জিনটি তার আগের মডেলটির থেকে আরও বেশি স্মুথ পারফরমেন্স দিবে কারণ এখন এটিতে এনবিএফ ২ ইঞ্জিন টেকনলোজি রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এনবিএফ ২ কী, এটি নিউ ব্যালেন্সড-শ্যাফট ফাংশনাল ইঞ্জিন, এটি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা যাক। এমনটা নয় যে এর কারণে বাইকের শক্তির আউটপুট বৃদ্ধি পাবে, শক্তি আগের মতো এখনও থাকবে, তবে ক্র্যাঙ্ককেস পরিবর্তন করা হয়েছে এই ইঞ্জিনের, কুল্যান্ট ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এতে নতুন ট্রান্সমিশনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অতিরিক্তভাবে, এই সিস্টেমে অয়েল ফিল্টার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা পূর্ববর্তী কেপিআরে ছিল না। লিফান বিশ্বাস করেন যে এই সকল নতুন ফিচার যুক্ত করার ফলে মোটরসাইকেলের গিয়ার শিফটিং আরো নরম হবে এবং তা সহায়তা করবে সামগ্রিক ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স এবং অন্যরা আগের তুলনায় আরও ভাল পারফরমেন্স পাবেন। এর পাশাপাশি, তারা KEIHIN PZ30 কার্বুরেটর ইনস্টল করেছেন এবং তারা আশা রাখছেন এটি বাইকের জ্বালানী খরচ কমাতে সাহায্য করবে।
এই ইঞ্জিনটি সর্বাধিক 17Bhp @ 8000rpm শক্তি উৎপাদন করতে পারবে এবং সর্বাধিক টর্ক হচ্ছেন 17Nm @ 6500 RPM আরপিএম হতে পারে। এই বাইক ইঞ্জিন সম্পর্কে একটি আকর্ষণীয় বিষয় ৬ স্পিড গিয়ার ট্রান্সমিশন সিস্টেম। এই ইঞ্জিনগুলির কম্প্রেশন অনুপাত 11.1, এবং ইঞ্জিনটি স্টার্ট দেবার জন্য রয়েছে ইলেক্ট্রিক স্ট্রার্ট অপশন। লিফানের মতে, এই ধরণের ইঞ্জিনটি চালকদের ছোট এবং দীর্ঘ উভয় ভ্রমণে একটি ভাল রাইডিংয়ের অভিজ্ঞতার দিয়ে সন্তুষ্ট করবে, তাদের গতির বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না এবং তারা কমপক্ষে ৪৫ কিলোমিটার মাইলেজও পাবেন আশা করা যায়।
বডি ডাইমেনশন
বডি ডাইমেনশনের দিক থেকে দেখা যায় যে কেপিআর ১৬৫ মডেলটির বেশ সব দিকই মিল রয়েছে আগের মডেলগুলোর সাথে। কেপিআর ১৬৫ এর সামগ্রিক বডি ডাইমেনশন এর ক্ষেত্রে দেখা যায় এর দৈর্ঘ্য ২০৬০ মিমি, উচ্চতা ৭৬০ মিমি এবং প্রস্থ ১১০৫ মিমি। এই বাইকের গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৮০ মিমি যা যে কোনও রাস্তার ক্ষেত্রেই যথেষ্ট ভাল। এই বাইকের সীট হাইট ৭৭৫ মিমি এবং হুইলবেস, যা ভাল নিয়ন্ত্রণের সাথে চলাচলের ক্ষেত্রে সত্যই গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে ১৩৩০ মিমি। এই সমস্ত জিনিস দিকগুলি সহ এই বাইকের ওজন ১৫২ কেজি এবং এতে ১৪ লিটার ফুয়েল ধারন ক্ষমতাশালী একটি ফুয়েল ট্যাঙ্কার রয়েছে।
টায়ার এবং হুইল
বাইকটির চমক এখনও শেষ হয়নি এর টায়ার এর ক্ষেত্রেও রয়েছে নতুন আকর্ষণ। সামনের টায়ারটি একই 90 / 90-17 টিউবলেস টায়ার, তবে পরিবর্তনটি পিছনের দিকে করা হয়েছে। এখন থেকে এই বাইকটি পিছনে দিকে থাকবে 130 / 80-17 টায়ার যা রাস্তায় আরও ভাল পারফরমেন্স সরবরাহ করবে। দুটি টায়ারই আকর্ষণীয় নতুন হুইলের উপর স্থাপন করা হয়েছে।
ব্রেক এবং সাসপেনশন
ব্রেকের দিকে নজর দিলে কেপিআর ১৬৫ আর এর সামনে ৩০০ মিমি ডিস্ক ব্রেক রয়েছে এবং এর পিছনেও রয়েছে উন্নত মানের ডিস্ক ব্রেক। অন্যদিকে, এই বাইকটি সামনে একটি টেলিসকপিক ফর্ক এবং পিছনের দিকে মনো-শক সাসপেনশন দেয়া হয়েছে। আরও ভাল স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিয়ন্ত্রণের সাথে বাইক চালানোর জন্য এই ধরনের ফিচারের কোন বিকল্প আপাতত নেই।
ইলেক্ট্রিকালও মিটার কনসোল
লিফান হেডলাইটের জন্য আকর্ষনীয় প্রোজেকশন ল্যাম্প ব্যবহার করেছে এবং পাশাপাশি এলইডি টেল ল্যাম্পটি দেখতেও সুন্দর। পাশের ইন্ডিকেটির, পাস লাইটের মতো অন্যান্য লাইটগুলির জন্য এই মডেলের অন্যন্য মডেলের মত বাল্ব ব্যবহার করা হয়েছে। যাবতীও ইলেক্ট্রিকাল ফিচারগুলো ঠিকভাবে চালানোর জন্য ১২ ভোল্ট মেইনটেনেন্স ফ্রি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে।
নতুন কেপিআর ১৬৫ আর এ পুরোনো মডেল কেপিআর ১৫০ এর মতো অ্যানালগ টাকোমিটার সহ একই ডিজিটাল ইনস্ট্রুমেন্টাল কনসোল ব্যবহার করা হয়েছে। এই মিটার প্যনেলে একজন বাইকারের প্রয়জনীয় সকল ফিচারই রয়েছে, তেমন, স্পিডমিটার। আর পি এম মিটার, অডোমিটার ইত্যাদি।
মতামত
সামগ্রিকভাবে বলা হলে এই বাইকটি কেপিআর ১৫০ এর মতো আগের মডেলগুলির মতো কিছুটা হলেও এর সাথে এনবিএফ ২ ইঞ্জিন যুক্ত করার ফলে সত্যিই বাইকের চাহিদা আরো বেড়েছে এবং হয়েছে আকর্ষণীয়। এর দামের ভিত্তিতে যদি বলা হয় তাহলে আমরা স্পষ্টভাবে বলতে পারি যে এই বাইকটি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের সর্বাধিক সাশ্রয়ী মূল্যের স্পোর্টস বাইক, এই বাইকের যে প্রতিযোগীরা বাজারে রয়েছে তাদের তুলনায়।গ্রাফিক্স, ইঞ্জিন, শক্তি এবং মাইলেজে কিছু মূল্যবান পরিবর্তন এখন এই বাইকটিকে আপগ্রেড দানবে পরিনত করেছে আর বলার কোন অপেক্ষা নেই যে এর পারফরমেন্স ইতিমধ্যে অনেকের মন জয় করে নিয়েছে।