দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পর আমাদের দেশে বাংলাদেশ সরকার মোটরসাইকেলের সিসি লিমিট বর্ধিত করেছেন এবং এটা খুবই আনন্দের একটি বিষয়। সিসি লিমিট বৃদ্ধি করার ফলে ভালো ফিচারস এবং ডিসেন্ট লুকের কিছু বাইক এখন আমাদের সামনে। আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত ১৬৫ সিসি বাইকগুলো জাপানিজ, ইন্ডিয়ান এবং চাইনিজ বিভিন্ন ব্রান্ড সরবরাহ করছে এবং আমরা যদি সেই সকল বাইকের মধ্যে দেখতে চমৎকার, শক্তিশালী ইঞ্জিনের কোন একটি বাইক খুঁজি তাহলে অবশ্যই লিফান কেপিআর ১৬৫ এফআই বাইকটির কথা উল্লেখ করতে হয়। চাইনিজ এই মোটরসাইকেলটির রয়েছে নজরকাড়া ডিজাইন এবং অত্যাধুনিক ফিচারস সাথে স্পোর্ট লুক যেটা দেখলেই স্পোর্টস প্রেমি বাইকারদের মন জুড়িয়ে যাবে। এই মডেলের পূর্বে যে লিফান ১৫০ সিসি ছিলো সেটি আমাদের দেশে সফলতার সাথে গ্রাহকদের মন জয় করেছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় প্রস্তুতকারক কোম্পানী তাদের এই নতুন বাইকটিতে গ্রাহকদের জন্য নতুন কিছু নিয়ে এসেছে । তারা আশা করছে যে গ্রাহকদের থেকে তারা বেশ ভালোই সাড়া পাবে। তো চলুন আর দেরি না করে দেখে নেওয়া যাক নতুন ১৬৫ সিসি তে কি কি ফিচারস সংযুক্ত করা হয়েছে।
ডাইমেনশন ও লুক
এই দুইটা বিষয় একে অন্যের সাথে সম্পৃক্ত, ভালো ডাইমেনশন একটি বাইককে সুন্দর একটি আউটলুক এনে দেয়। লিফান কেপিআর ১৬৫ তে আমরা ঠিক সেরকমই ভালো ডাইমেনশন লক্ষ্য করি। ডাইমেনশনের দিক দিয়ে বাইকটিতে রয়েছে ২০৫০ লম্বা, ৭৮০ মিমি উচ্চতা এবং চওড়ায় রয়েছে ১১৫০ মিমি। বাইকটির হুইলবেজের পরিমাপ হচ্ছে ১৩৩০মিমি এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৮০ মিমি। বাইকটির আরও আছে বড় আকারের ফুয়েল ট্যংকার যেখানে প্রায় ১৬.৬ লিটার তেল ধরবে, ওজন রয়েছে ১৫০ কেজি এবং ম্যাক্স লোড ১৪০ কেজি। এই ধরনের ডাইমেনশন বাইকটির আউটলুক কে আরও বেশি ফুটিয়ে তুলবে, বড় আকারের ফুয়েল ট্যংকারের দুই পার্শ্বের সাইড বাইকটিকে স্পোর্টস লুক এনে দিয়েছে। স্পোর্টস লুক পরিপূর্ণ করার জন্য এর সাথে রয়েছে স্প্লিট সিটিং পজিশন এবং সুন্দর কালার কম্বিনেশন। ডাবল ডিস্ক, সুন্দর ডিজাইনের এলয়, সামনের হেডল্যাম্প কিট , নতুন ডিজাইনের সাইলেন্সর পাইপ এবং রেয়ার ফেন্ডার বাইকটিকে একদম স্পোর্টস লুক এনে দিয়েছে । বাইকটা দেখতে অনেকটাই পূর্বের ১৫০ সিসির মতো মনে হলেও এর কিছু গ্রাফিক্স এবং কালার কম্বিনেশন আরও উন্নত করা হয়েছে।
ইঞ্জিন এবং ট্রান্সমিশন
ইঞ্জিনই শুধুমাত্র মোটরসাইকেলের শক্তির উৎস নয় এটা যে কোন বাহনের শক্তির উৎস। ইঞ্জিন যদি ভালো শক্তি এবং সুন্দর পারফরমেন্স সরবরাহ করে তবে রাইডিং অনেক মজার হয়। লিফানের ১৬৫ সিসির বাইকের ইঞ্জিনে রয়েছে ৪ স্ট্রোক, সিংগেল সিলিন্ডার ১৬৫ সিসির ইঞ্জিন যা ম্যাক্স পাওয়ার ১২.৫ কিলোওয়াট @ ৮০০০ আরপিএম এবং ম্যাক্স টর্ক ১৭ এনএম @৬৫০০ আরপিএম সরবরাহ করতে পারে। ইঞ্জিনের কুলিং সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে লিকুয়িড কুলিং সিস্টেম যা দীর্ঘক্ষন রাইডের পরও ইঞ্জিনের কোন ওভার হিট হতে দিবে না। ইঞ্জিনের কম্প্রেশান রেশিং হচ্ছে ১১.৪:১ এবং রয়েছে ৬ স্পীড গিয়ার বক্স। কারবুরেটরের পরিবর্তে ইঞ্জিনের নতুন ফুয়েল ইনজেকশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা সর্বচ্চো মাইলেজ নিশ্চিত করে। নতুন প্রযুক্তির এই ইঞ্জিনের টপ স্পীড পাওয়া যাবে ১৫০ কিমি/ঘন্টা এবং সন্তোষজনক মাইলেজ। ইঞ্জিনের চালু করার জন্য রয়েছে ইলেকট্রিক স্টার্ট অপশন।
সাসপেনশন ও ব্রেক
এই দুইটা বিষয় যে কোন পরিস্থিতিতে ভালো কন্ট্রোলিং, আরাম এবং স্টাবিলিটি সর্বপরি নিরাপত্তা প্রদানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই যে কেপিআর ১৬৫ তে ব্যবহার করা হয়েছে পেছনের দিকে মনোশক এবং সামনের দিকে রয়েছে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন। দুইটা সাসপেনশন অনেক আরাম এবং স্টাবিলিটি দিবে। কন্ট্রোল ভালো করার জন্য সামনে পেছনে ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে । কম বেশি রাইডারের জন্য সকল সেফটি ফিচারস রয়েছে এই বাইকে।
টায়ার এবং হুইল
টায়ার এবং হুইল পূর্বের মডেলের মতই রয়েছে অর্থাৎ সামনে পেছনে দুই দিকেই টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেগুলোর পরিমাপ হচ্ছে সামনে ৯০/৯০-১৭ এবং পেছনের দিকে রয়েছে ১২০/৮০-১৭।
ইলেকট্রিক্যাল ও মিটার কনসোল
ইঞ্জিন চালু ও ইলেকট্রিক্যাল অন্যান্য বিষয় পরিচালনা করার জন্য ১২ ভোল্টের মেইন্টেনেন্স ফ্রি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে প্রজেক্টর হেডল্যাম্প, এলিডি সাইড স্ট্যান্ড ইন্ডিকেটর, ডিআরএল লাইট এবং সবগুলো বেশ ভালো কাজ করে।
বাইকটির মিটার কনসোল অনেক স্টাইলিশ এবং এনালগ ও ডিজিটাল ফিচারের সংমিশ্রণে মিটার কনসোলটি তৈরি। এর রয়েছে বড় জায়গা জুড়ে আরপিএম মিটার এবং তার পার্শেই রয়েছে ফুল ডিজিটাল মিটার প্যানেল। ডিজিটাল প্যানেলে রয়েছে ঘড়ি, ফুয়েল ইন্ডিকেটর, ওডো মিটার, স্পীডো মিটার, গিয়ার ইন্ডিকেটর এবং ডিজিটাল কনসোলের সম্পূর্ণ রঙ হচ্ছে নীল যেটা মিটার প্যানেলকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
সবশেষে
বাইকটির সকল ফিচারস দেখার পর আমরা বলতে পারি যে, ইঞ্জিনের শক্তি, সিসি এবং ভালো পারফরমেন্সের জন্য সম্পূর্ণ টেকনোলজি নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে । ইঞ্জিনে কারবুরেটরের পরিবর্তে এফআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা আগের থেকে পারফরমেন্স বাড়িয়ে দিবে। অন্যদিকে বাইকের আউটলুক টা গ্রাফিক্স ও কিছু কিছু বিষয় বাদে প্রায় আগের মতই রয়েছে। তাই এটা বলা যায় যে নতুন এই বাইকটিতে পূর্বের মডেলের থেকে একটু হলেও কিছু ভিন্ন অনুভূতি পাবেন। যেহেতু এই বাইকটা বাংলাদেশের চাইনিজ সিবিআর নামে পরিচিত তাই আশা করা যায় ভবিষ্যতেও ঠিক এরকমই পারফরমেন্স দিয়ে যাবে এবং আরও আশা করা যায় যে বাইকটা নিয়ে কোন গ্রাহক কোন প্রকার অভিযোগ দিবে না কারণ সম্পূর্ণটাও একদম অত্যাধুনিক ফিচারস।
নতুন লিফান ১৬৫ সিসির রয়েছে তিনটি ভিন্ন রঙ এবং সেগুলো হচ্ছে লাল, কালো এবং আর্মি(সবুজ)।