লিফান কেপিআর ১৬৫সিসি মোটরসাইকেল রিভিউ - আতিক ইমন

হোন্ডার কালজয়ী একটি মোটরসাইকেল হোন্ডা সিজি ১২৫ দিয়ে আমার বাইক চালানোর যাত্রা শুরু হয়েছিলো। তারপর থেকে আমি এই পর্যন্ত অনেক বাইক ব্যবহার করেছি। আমি হোন্ডা এইচএস, টিভিএস ফ্লেম, হোন্ডা সিবি ট্রিগার,পালসার, লিফান কেপিআর ১৫০ ইত্যাদি সহ বিভিন্ন বাইক ব্যবহার করেছি। আমার সর্বশেষ বাইক ছিলো লিফান কেপিআর ১৫০ । বাইকটা আমি অনেকদিন ব্যবহার করেছি তারপর দেখলাম রাসেল ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশে নিয়ে আসছে ১৬৫ সিসির কেপিআর। আমি মনে মনে ভাবলাম যে ১৫০ সিসি বিক্রি করে দিয়ে ১৬৫ সিসি কেপিআর কিনবো সেই জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। বাইকটা আসা মাত্রই আমি কালশী শো-রুম থেকে বাইকটা কিনে ফেলি এবং সেটা ছিলো ঈদ উল ফিতরের ৩ দিন আগে । এই পর্যন্ত আমি বাইকটা প্রায় ১১০০ কিমি চালিয়েছি তো সব মিলিয়ে মোটরসাইকেল ভ্যালীর আমন্ত্রণে আজ আমি আমার ব্যবহার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

লিফান কেপিআর ১৬৫ সিসি কেনার মুল কারণ ছিলো প্রথমত এর গ্রাফিক্স তারপর এর সিসি বেশি এবং আমি নিজেই টেস্ট রাইড দিয়ে ভালো থ্রটল রেসপন্স, এক্সজস্ট সাউন্ড , ব্রেকিং নিয়ে অনেক ভালো অনুভূতি পেয়েছি। তাই সব কিছু বিবেচনা করে আমি এই বাইকটা কিনি।



ডিজাইন
প্রথমত বাইকের ডিজাইনটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে । বিশেষ করে এর গ্রাফিক্সগুলো পূর্বের থেকে উন্নত করায় আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে। এছাড়াও পেছনের এক্সজস্ট ডিজাইনগত দিক দিয়ে দেখতে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আর ডিজাইনের পাশাপাশি যদি এর বিল্ড নিয়ে বলি তবে অবশ্যই বলতে হবে যে , ইন্ডিয়ান বাইকের থেকে ভালো কিন্তু প্রিমিয়াম বাইকের মত না। আসলে এত কম দামে বেশি কিছু চাওয়া বোকামি।

ইঞ্জিন
প্রথমের দিকে ইঞ্জিন নিয়ে আমি একটু বিরক্ত বোধ করতাম কারণ ইঞ্জিনটা শব্দ অল্প রাইডেই নষ্ট হয়ে যেত তারপর ৫০০ কিমি রাইড করার পর সেই সমস্যাটা কমে গেছে এবং এখন ১০০০ কিমি পর সেই সমস্যাটা নাই বললেই চলে। আর শুরুতে একটু হিট হত এটা মূলত সব বাইকেরই শুরুতে একটু ইঞ্জিন হিট হয় পরে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। আর ইঞ্জিন সঠিক গতি তুলতে পারে এবং শুরুতেই বলেছি যে থ্রটল রেসপন্স খুবই ভালো। আর ইঞ্জিনটা প্রথম থেকেই অনেক স্মুথ।

সিটিং পজিশন
আমার যখন কেপিআর ১৫০ ছিলো তখন প্রথমের দিক রাইড করলে একটি ক্লান্তি অনুভব হত পরে আর হয়ন। এই বাইকটা কেনার পর থেকে লক্ষ্য করেছি যে সিটিং পজিশনে বসে কোন ক্লান্তি অনুভব হয় না কিন্তু একটা সমস্যা হচ্ছে যে এর সিটিং পজিশনের সাথে ফুটরেস্ট যথাস্থানে স্থাপন করা হয়নি। ফুটরেস্টটা একটু পেছনের করলে ভালো হত।আমি একদিনে প্রায় ৪৫০ কিমি রান করেও কোন ক্লান্তি অনুভব করিনি।

হ্যান্ডেলবার
হ্যান্ডেলবার আরেকটু কার্ভ হলে ভালো হত কিন্তু হ্যান্ডেলবারের সাথে সংযুক্ত ইলেকট্রিক্যাল সুইচগুলো যথেষ্ট ভালো আর রাতে হেডল্যাম্পের আলোটা ১৫০ এর থেকে অনেক বেশি আমার কাছে মনে হয়েছে।

ব্রেকিং, টায়ার এবং সাসপেনশন
ব্রেকিং আমি বলবো যে ১৫০ সিসির থেকে অনেক উন্নত এবং আমি ১৬৫ কেপিআর এ অনেক ভালো ব্রেকিং অনুভব করি। টায়ারের বিষয়টা একটু খারাপ মনে হয়েছে কারণ টায়ারের সাইজটা পূর্বের ১৫০ সিসির মতই আছে আর গ্রিপিংটা বলতে গেলে একই । সাসপেনশন সিংগেল রাইডের জন্য খুবই ভালো কিন্তু পিলিয়ন নিয়ে রাইড করলে কোমড়ে লাগে।

মাইলেজ
মাইলেজ আমি গড়ে ৪০ কিমি এর কিছুটা বেশি পাচ্ছি এবং এর ইঞ্জিন পারফরমেন্স, থ্রটল রেসপন্স মিলিয়ে মাইলেজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।

সার্ভিস সেন্টার
যেহেতু রাজশাহীতে তাদের সার্ভিস সেন্টার তাই আমি তাদের ঢাকার সার্ভিস সেন্টার গিয়েছিলাম ।তাদের সার্ভিস সেন্টারের কাজের মান , ব্যবহার ইত্যাদি সব কিছুই অনেক প্রশংসনীয় এবং তারা প্রত্যেকটা সমস্যা অনেক খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে তাই তাদের সার্ভিস সেন্টারের প্রশংসা অবশ্যই করতে হবে।

দাম
দাম নিয়ে আমি বলবো যে এই দামে এত ভালোভালো ফিচারস অন্য কোন বাইকে নেই তাই এই বাজেটের মধ্যে আমি বলবো যে লিফান কেপিআর সেরা।

বাইকটির যে সকল বিষয় আরও উন্নত করা উচিত বলে আমি মনে করি
-ডিস্ক প্লেট
-ব্রেক শু
-পেছনের সাসপেনশন
-চেইন
-লুকিং গ্লাস
-মার্ড গার্ড বাংলাদেশের জন্য না এটা আরও বড় করা উচিত

উপরিউক্ত সমস্যা গুলো আসলে কোন সমস্যা না এটা কোম্পানীর কাছে অনুরোধ যে বাইকটার এসকল জিনিস আরও উন্নত করা । এই ছিলো আমার লিফান কেপিআর ১৬৫ ব্যবহার অভিজ্ঞতা। আশা করি আমার ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

All LIFAN bike price in bd

Lifan KPR 165 EFI