লিফান কেপিআর ১৬৫সিসি মোটরসাইকেল রিভিউ - রওনক বিন আহমেদ

বাইক চালানোর শখটা ছিলো ছেলেবেলা থেকেই । তখন বড় ভাইদের বাইক নিয়ে ঘুরতাম কিন্তু হাইওয়েতে যেতাম না। একদিন মনে হল যে না এইবার আমাকে বাইক চালানো শিখতেই হবে তাই আমি জীবনের প্রথম হোন্ডা সিডিআই ১০০ সিসি নিয়ে প্রথম হাইওয়েতে বাইক চালায় এবং বলতে গেলে সেটা দিয়ে আমার বাইকিং জীবনের সূচনা। ২০১৫ সালে আমি ভালোভাবে বাইক রাইডিং শিখি তারপর আমি সরাসরি কিনে ফেলি লিফান কেপিআর ১৬৫ এফআই। লিফান কেপিআর ১৬৫ এফআই বাইকটির আগে আমি লিফান কেপিআর ১৫০ বাইকটি চালিয়েছিলাম সেটা চালিয়ে আমার কেপিআর বাইক কেনার আগ্রহ জাগে। বাইক কেনার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দুইটি বিষয় মাথায় নিতে হয় সেটি হল দামের সাথে এর ডিজাইন ও ক্যাটাগরি। ডিজাইন,বাজেট এবং রাসেল ভাইয়ের পরামর্শ সব কিছু বিবেচনা করে লিফান কেপিআর ১৬৫ এফআই বাইকটি কিনে ফেলি। এখন পর্যন্ত বাইকের বয়স মাত্র ৫ মাস এবং এই ৫ মাসে আমি ৫৮০০ কিমি রাইড করেছি। আমি লিফান কেপিআর ১৬৫ নিয়ে আজকে আপনাদের সাথে মতামত শেয়ার করবো। আশা করি যারা নতুন বাইক কিনবেন কিংবা কেনার কথা ভাবছেন তাদের জন্য এই রিভিউটা সহায়ক হবে বলে মনে করি।



প্রথমে শুরু করতে চাই ডিজাইন দিয়ে। এই বাজেটের মধ্যে আমি এক কথায় বলবো যে কেপিআর ১৬৫ এর ডিজাইনটা পুরাই অস্থির। বাইকটার স্পোর্টস লুক আমাকে বেশি আকর্ষণ করে যার জন্য আরও বেশি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করি কিন্তু সমস্যার বিষয় হল বাইকের রঙ ম্যাট ব্ল্যাক যার জন্য একটু ধুলাবালির রাস্তায় গেলে ময়লা লেগে যায় এবং সেটা অন্যান্য বাইকের থেকে খুব দ্রুত বুঝা যায়। আর যদি একটু পানি যোগ হয় তাহলে একদম কাদা কাদা হয়ে যায়। এই বিষয়টা আরেকটু উন্নত করা উচিত।

বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে আমি অনেক সন্তুষ্ট কারণ আমার বাইক নিয়ে একজন প্রায় ৮০-৯০ স্পীডে পড়ে যায় ।এটা ছিলো ৩০০ ফিট রাস্তায় । আমি লক্ষ্য করলাম যে বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি অনেক ভালো। এই রকম স্পীডে বাইকটা পড়ে গিয়েও কোন রকম ক্ষতি হয়নি। শুধুমাত্র হ্যান্ডেলবার ও ক্লাচ লিভারের ক্ষতি হয়েছে এছাড়া বডি কিটের উপর একটা দাগও পড়েনি। তাই আমি আবারো বলব যে বাইকটা দেখে যেরকম মনে হয় যে এর বিল্ড কোয়ালিটি পুরোটাই প্লাস্টিকের ,সহজেই ভেংগে যাবে তাদের জন্য আমার এই ছোট্ট উদাহরণ।

ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে আমি লক্ষ্য করেছি যে বাইকটা ২-৩ ঘণ্টা রাফ চালালে ইঞ্জিন থেকে অনেক ভাইব্রেশন হয়। ভাইব্রেশনটা শুরুতে একদমই থাকেনা । আর আরেকটি সমস্যা যেটি লক্ষ্য করছি সেটা হল ব্রেক ইন পিরিয়ডের পর বেশি রাফ রাইড করলে ইঞ্জিন থেকে ঝনঝন শব্দ করে কিন্তু এটা ইঞ্জিন পারফরমেন্সে কোন প্রভাব ফেলে না। এদিকে ইঞ্জিন ওভার হিট হয় না। প্রথম প্রথম ক্লাচটা প্রচন্ড শক্ত ছিলো কিন্তু ৩০০০ কিমি এর পরে একদমই লুজ মানে এক আঙ্গুল দিয়ে টানা যায়।

সিটিং পজিশনের ফলে শহরের মধ্যে ২-৩ ঘণ্টা রাইড করলে একটু সমস্যা হয় কিন্তু পিলিয়ন থাকলে ব্যাক পেইন হয় না । হ্যান্ডেলবার একটু উঁচু এবং কার্ভ করলে আরও ভালো হত এবং আমার মনে হয় এর ফলে ব্যাক পেইন হবে না।

আমি কেপিআর ভার্সন ১ ,ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইভ ভার্সন ৩ এসব বাইকের হেডল্যাম্প লক্ষ্য করেছি কিন্তু কেপিআর ১৬৫ এফআই এর মত পাওয়ারফুল প্রজেকশন হেডল্যাম্প আমি অন্য কোন বাইকে লক্ষ্য করিনি।

কন্ট্রোল আমার কাছে কেপিআর ভার্সন ১ এর থেকে অনেক ভালো লেগেছে । মাঝে মাঝে আমি আমার কেপিআর ১৬৫ এর কাছে দায়বদ্ধ থাকি শুধুমাত্র এর ব্রেকিং এর কারণে। আমি অনেক বড় বড় বিপদ থেকে রেহাই পেয়েছি শুধুমাত্র এর ভালো ব্রেকিং থাকার ফলে। এক কথায় ব্রেকিং এর প্রতি আমার এক ধরনের মায়া জমে গেছে।

সাসপেনশন সামনেরটা ঠিক মনে হলেও পেছনেরটা শক্ত মনে হয়েছে । এমনকি পিলিয়ন ও অনুভব করে যে পেছনের সাসপেনশন অনেক শক্ত। পেছনের সাসপেনশন আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে।

টায়ারের সাইজটা সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমি যদি বেশি স্পীডে বাইক রাইড করি সেক্ষেত্রে করনারিং করার সমস্যা টায়ারের সাইজটা আমাকে খুব বেশি করনারিং করতে দেয় না। এখন টিমসুনের টায়ার দেওয়া হচ্ছে শুনলাম এই টায়ারের গ্রিপ নাকি আগের থেকে ভালো। আর আমি বলব যে টায়ারের সাইজটা ১৩০ করা উচিত।

মাইলেজ আমি শহরের মধ্যে পেয়েছি ৩৮-৪০ এবং হাইওয়েতে পেয়েছি ৪৫ কিমি প্রতি লিটার।

সার্ভিস সেন্টার মিরপুর ১০ এর খুবই ভালো কিন্তু তাদের ওখানে বেশি কাস্টমার থাকার ফলে যথাযথ সার্ভিস দিতে পারে না কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান ভাই খুবই ভালো ও দক্ষতার সাথে সবাইকে সেবা দিয়ে থাকেন। আমি এখন সার্ভিস করাই শানার পাড় থেকে । ওখানে ভীর কম সেজন্য তারা সময়টা ভালোভাবে দিতে পারে।

দাম হিসেবে আমি বলবো যে এই বাইকটার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে সে দিক থেকে আমার কাছে দামটা একদম সঠিক মনে হয়েছে। এই দামে এত সুন্দর বাইক অন্য কোন কোম্পানী সরবরাহ করতে পারবে না। আজ এই পর্যন্ত। ধন্যবাদ সবাইকে।

All LIFAN bike price in bd

Lifan KPR 165 EFI