“লিফান” বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারে বহুল পরিচিত একটি নাম। বিশেষ করে তরুণদের মাঝে বিশালাকার জায়গা করে নিয়ে এই লিফান। তারা তরুণদের কাছে জনপ্রিয়তার একটি কারন হচ্ছে কেপিআর সিরিজ। এই বাইকটি খুব স্বল্প সময়ে ব্যাপাক জনপ্রিয় হয়ে উঠে। একজন বাইকার হিসেবে আমারও একটু স্পোর্টস ক্যাটাগরির বাইক পছন্দ। আমি আজ থেকে প্রায় ৮ বছর আগে ওয়াল্টনের একটি বাইক দিয়ে বাইক চালানো শিখি। ঠিক তখন থেকেই আমার বাইক চালানো থেকে থাকেনি। যখনই সময় পেয়েছি বন্ধুদের বাইক দিয়ে বের হইছি। আমি সব সময় পারিবারিক একটি বাইক চালাতাম এবং বলতে গেলে আমার নিজস্ব কোন বাইক ছিলো না তাই ভাবলাম নিজস্ব একটা বাইক কিনবো। আমি অনেক আগে থেকেই কেপি আর বাইকের উপর নজর রেখেছি এবং সকল রিভিউ আমি বিভিন্ন অনলাইনে পড়েছি। এক পর্যায়ে শুনলাম যে কেপিআর ১৬৫ বাংলাদেশে আসছে তাই একটু ধৈর্য ধরে বসে থাকলাম এবং আসা মাত্রই আমি সেটা নিজের করে নেই।
আমি ফরহাদ পাশা আমার বাসা ফেনীতে। লিফান কেপিআর ১৬৫ বাইকটি ফেনী অঞ্চলে আমারই প্রথম। আমার জানা মতে আমার আগে কেই কিনে নি। বাইকটা আমি বেশ কয়েকদিন ধরে চালাচ্ছি (প্রায় ৩০০ কিমি) এবং বাইকটা রাইড করার পরে ভাবলাম সবার সাথে বাইকের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শেয়ার করা যাক। মোটরসাইকেল ভ্যালির আমন্ত্রনে আজকে আমি লিফান কেপিআর ১৬৫ নিয়ে কিছু রাইডিং অভিজ্ঞতা তুলে ধরবো।
ডিজাইন
আমি এই বাইকটা মুলত এর ডিজাইন ও আউটলুক থেকে কিনি। বাইকটার প্রথম লুক দেখেই আমি নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে লিফান কেপিআর ১৬৫ কিনবো। সুন্দর কালার কম্বিনেশন, স্টাইলিশ গ্রাফিক্স, মাস্কুলার বডি কিট সব কিছুই আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। আর আমি বাইকটা যেখানেই পারকিং করি না কেন মানুষজন একটু আগ্রহের সাথে তাকিয়ে থাকে।
বিল্ড কোয়ালিটি
এই বাজেটের মধ্যে ব্যাক্তিগতভাবে বলবো যে ভালোই বিল্ড কোয়ালিটি পেয়েছি। বডি কীট সহ বিভিন্ন পার্টসগুলো অনেক মজবুত এবং ভাংগা রাস্তায় কোন পার্টস থেকে খারাপ কোন শব্দ না বিরক্তিকর কোন শব্দ আসে না। বাইকটা আমার কাছে শুধু একবার পেড়েছে কিন্তু সেরকম কোন ক্ষতি হয়নি। আমার হয় নি আমার বাইকেরও হয়নি।
ইঞ্জিন
১৬৫ সিসির শক্তিশালী ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে যা ভালো টর্ক ও বিএইচপি তৈরি করতে পারে। ইঞ্জিনের থ্রটল রেসপন্স খুব ভালো । প্রথমের দিকে গিয়ার শিফটিং একটু শক্ত ছিলো করে ক্লাচ এডজাস্ট করে নিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। এছাড়া ইঞ্জিনের অতিরিক্ত গরম বা ত্রুটিপূর্ণ কোন শব্দ লক্ষ্য করিনি।
আরাম
বাইকটিতে চড়ে এবং রাইড করে আমি অনেক আরাম পেয়েছি। বিশেষ করে এর সিটিং পজিশনটা স্পোর্টস হওয়ার কারনে আমি বেশি ভালো লাগে। সিটের সাথে হ্যান্ডেলবারের দারুন কম্বিনেশনের ফলে আমি বেশিক্ষন রাইডে কোন ব্যাক পেইন না ক্লান্তি অনুভব করি না। আমি যেমন চালাই বাইকটাও আমাকে ঠিক সেরকম সাপোর্ট দেয়।
ইলেকট্রিক্যাল
বাইকের হেডল্যাম্পটা আমি বলবো যে একদম ভিআইপি। আমি অন্ধকার রাস্তায় অনেক পরিস্কার ও বেশি আলো পেয়েছি।প্রজেকশন হেডল্যাম্প থাকার ফলে আমার হেডল্যাম্পের আলো নিয়ে দুশ্চিনা নেই। এছাড়া অন্যান্য ইলেকট্রিক্যাল বিষয়গুলো থেকে ভালো সাপোর্ট পাওয়া যায়।
ব্রেকিং
ডাবল ডিস্ক ব্রেকগুলো যথেষ্ট কার্যকরী এবং সেগুলোর রেসপন্স ও খুবই ভালো। তবে আমি পেছনের থেকে সামনের ব্রেকিং থেকে ভালো সাপোর্ট পাই আর ব্রেকিং যথেষ্ট উন্নত আছে।
সাসপেনশন
সামনের টেলিস্কোপিক ফরক এবং পেছনের মনশোক বেশ ভালো কাজ করে কিন্তু আমি পেছন্দের মনোশকের পারফরমেন্স কিছুটা কম পেয়েছি কারন সাসপেনশনটা অনেক শক্ত মনে হয় এবং ঝাঁকুনি লাগে।
টপ স্পীড
ব্রেক ইন পিরিয়ডে থেকেও আমি টপ স্পীড তুলেছি ঘন্টায় ১০৪ কিমি ।
টায়ার
টায়ারের ব্যাপারে আমার কাছে একটু গাফেলতি মনে হয়েছে কারন টায়ারের সাইজ ১২০ ই রাখা হয়েছে। তারা বাইকটা নিয়ে আসার আগে বলেছিলো যে ১৩০ সাইজের টায়ার ব্যবহার করা হবে কিন্তু সেটা করেনি। এমনিতে টায়ারে গ্রিপ ভালো এবং সঠিক ব্যালেন্স পাওয়া যায়।
মাইলেজ
মাইলেজ আমি এখন লিটারে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ কিমি পাচ্ছি। মাত্র ৩০০ কিমি হয়েছে । আশা করা যায় আরও পাবো। আর আমি আরেকটু বলবো যে মাইলেজটা ইএফআই হিসেবে আরও বেশি হওয়া উচিত বর্তমানে।
সার্ভিস সেন্টার
ফেনীতে সার্ভিস সেন্টারের ব্যবস্থা নাই কিন্ত রাসেল ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর পদক্ষেপ গুলো অনেক ভালো । তাদেরকে ফোন করা হলে দ্রুত তাদের সার্ভিস ম্যান পাঠিয়ে দেয়। তবে দ্রুত ফেনীতে সার্ভিস ব্যবস্থা চালু করা হোক এটা দাবি জানাই।
দাম
দামতো অবশ্যই বলবো যে একদম সাধ্যের মধ্যে । দামী দামী স্পোর্টস বাইকের অনুভূতি এই বাইকে পাওয়া যায় এবং সেটা আবার একদম ২ লক্ষ টাকায়। দাম নিয়ে আমি কোন অভিযোগ করতে চাই না । তারা এই দামের মধ্যে সব ভালো ফিচারস দিয়েছে।
খারাপ দিকের মধ্যে শুধু আমি বলবো যে তারা যদি ১৩০ সাইজের টায়ার ব্যবহার করত তাহলে ভালো হত। আর কোম্পানির কাছে অনুরোধ যে ফেনিতে সার্ভিস সেন্টারের ব্যবস্থা করা।