লিফান কেপিআর ১৫০ মোটরসাইকেল রিভিউ - ইয়াছির আরাফাত

আমার নাম মোঃইয়াছির আরাফাত। আমি একজন মেডিক্যাল স্টুডেন্ট ইতিপূর্বে আমি ব্যবহার করতাম বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি বাইক HERO HUNK বর্তমানে আমি ব্যবহার করছি LIFAN KPR 150 V2। এই বাইকটা কেনার মূল হচ্ছে স্পোর্টস লুক , ভাল থ্রটল রেসপন্স,ইঞ্জিন পারফরমেন্স,ফেয়ারিং বডি কিট এবং কমদাম কারণ আমি এখনো ছাত্র] আমি প্রায় ১ বছর ধরে ১৫ হাজার কিমি ধরে বাইক টির সাথে আছি ।



ইঞ্জিন পারফরমেন্সঃ চরম শক্তিশালী ইঞ্জিন এক কথায় অসাধারন । লিকুইড কুল ইঞ্জিন এর কারণে আপনি অনেক সময় ধরে বাইক রাইড করলেও ইঞ্জিন তেমন গরম হবে নাহ। আমি রংপুর-সিলেট ভ্রমণ এর সময় ইঞ্জিন আমাকে একবার ও হতাশ করে নাই । ইঞ্জিন নিয়ে নেগেটিভ বলতে গেলে বলার মত আহামরি কিছু নাই ।

ডিজাইনঃ ডিজাইন নিয়ে নতুন কিছু বলার নাই । v1 এর সাথে কোন পার্থক্য নাই কালার ছাড়া ডীজাইন এ । যদি আমাকে বলা হয় ৫ এ কত দিতে হবে আমি বলব ৪।

বিল্ড কোয়ালিটিঃ আমার কাছে ফেয়ারীং কীট গুলা যথেষ্ট মজবুত মনে হয়েছে কিন্তু আপনাকে হতাশ করবে কিছু স্ক্রু/নাট । অফ রোডে আপনি রাইড করলে স্ক্রু গুলা মনে হয় খুলে বের হয়ে আসে । অনেক সময় রাইড করার পর আপনাকে অবশ্যই টাইট দিয়ে নিতে হবে । কিছু রাস্তায় হারাতে ও পারে। আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে ৮ টা ক্র্যাশ এরপর অ আমার বাইক এর কিট বা অন্য কিছুর তেমন ক্ষতি হয় নাই । যেখানে অফ রোডে লং রাইডে আমাকে অনেক স্ক্রু হারাতে হয়েছে ।যদিও এটা মেজর সমসা নাহ।

আরামঃ যাদের উচ্চতা ৫ফুট১০ এর বেশি তাদের আমি রিকমেন্ড করব নাহ বাইক টা ।

সিটিং পজিশনঃ যদি নতুন রাইডার হয় তাহলে তার জন্য অনেক পোহাতে হবে কিছুদিন । বিশেষ করে জ্যাম এ হাত ধরে যায় প্রথম প্রথম [এজন্য হীপ জয়েণ্টেও যথেষ্ট ব্যথা অনুভব করতে পারেন যদি আগে স্পোর্টস বাইক না চালিয়ে থাকেন কখনো ।তবে কিছুদিনেই আয়ত্তে চলে আসবে সব কিছু, এ নিয়ে ভয়ের তেমন কিছু নাই।

হ্যান্ডেলবারঃ এটি আপনাকে স্পোর্টস এটিটিউড এনে দিবে । আগেই বলেছি যারা আগে স্পোর্টস বাইক চালায় নাই তাদের জন্য এটাই একটা সাময়িক সমস্যার কারণ হতে পারে ।

সুইচঃ খুবই ফ্রেন্ডলি ।
রাতে হেডলাইট এর আলোঃ LED ব্যবহার করায় আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণ আলো দিত সক্ষম কিন্তু হাইওয়েতে অনেক হলদে লাইটে এর ভিড়ে মাঝে মাঝে আলো কম মনে হতে পারে আপনার কাছে।

সার্ভিস সেন্টারঃ সার্ভিস সেন্টারগুলো নিয়েই আমাদের একটু অভিযোগ। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য এলাকায় সার্ভিস করানো খুবই মুশকিল। আমি যেমন রংপুরে থাকি এখানে ২/৩ মাস পর পর সার্ভিস সেন্টার থেকে লোক আসে তাও আবার দু দিনের জন্য যেখানে প্রায় ৫০টারও বেশি বাইক থাকে। এটা খুবই কষ্টকর বিষয় যে বাইকের প্রপার সার্ভিস পাওয়া যায় না। আমি টুকটাক কাজগুলো বাইরে থেকেই করাই নিই। পার্টস শো_রুম গুলোতে থাকে এবং ফোন দিলে রাসেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দেয়।

দামঃ দামের ব্যাপারে এক কথায় বলা যায় যে বেস্ট ভ্যালু ফর মানি। দাম নিয়ে নেগেটিভ কিছু নেই।

মাইলেজঃ আমি এখন মাইলেজ পাচ্ছি মোটামুটি ৩৮ কিমি/লিটার।

আমি আরও কিছু বিষয় লক্ষ্য করেছি যে ০ থেকে ৫ হাজার কিমি এর মধ্যে ইঞ্জিনটা অনেক গরম হয় এরপর সেটা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়। প্রথম ১০ হাজার কিলোর মধ্যে গিয়ার বক্স একটু কড়া পেয়েছি তারপর স্মুথ হয়ে যায়। আমি ১৫ হাজার কিমি এর মধ্যে টপ স্পীড পেয়েছি ঢাকা ময়মনসিংহ রোডে ১৩১ কিমি ঘণ্টা । কন্ট্রোলিং ভালো কিন্তু পেছনের চাকা ১২০ হওয়ার ফলে স্কীড করার একটু ভয় থাকে। তবে ডাবল ডিস্ক ব্রেকিং অনেক ভালো এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমাকে অনেক সাহায্য করে।

আমি ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করেছি মটুল ৩১০০ এবং এখন ৭১০০ কিমিতে ব্যবহার করছি 10w40 যা আমি ময়মনসিংহ মোটরস থেকে নিতাম।

এর ব্রেক প্যাডটা ক্ষয় হয় বেশি এবং ডিস্কটাও অনেক ক্ষয় হয়। আমি বিকল্প হিসেবে সামনে আরটিআর এর ব্রেক প্যাড এবং পেছনে ট্রিগারের ব্যবহার করি। আমি সব সময় অকটেন ব্যবহার করি যা আমাকে ৩৮ কিমি এর বেশি মাইলেজ সরবরাহ করে।

ভালো দিক
-ফেয়ারিং লুক
-শক্তিশালী ইঞ্জিন
-শক্ত ফেয়ারিং কিট
-ফাস্ট এক্সেলেরেশন

খারাপ দিক
-পেছনের চাকা
-পেছনের শকাপ ( সাসপেনশন) যা ভারি কেউ বসলে চাকার সাথে লেগে যাওয়ার উপক্রম
-যাদের উচ্চতা ৫ফুট১০ এর বেশি তাদের জন্য এই বাইক না।

বাইক যদি কেউ নিতে চায় তাকে বলবো KPR এমন একটি বাইক যা যে কোন স্পোর্টস বাইকের সাথে তুলনা করতে পারবেন। তবে বেশী লম্বা বা বেশী খাটো আপনার উচ্চতা থাকে তাহলে কিছু শারীরিক সমস্যা তা পড়তে পারেন। আর চায়না সকল বাইক এর পজিশন করা হলে এটা থাকবে স্পোর্টস বাইক গুলোর মধ্যে ২ লক্ষ টাকার বাজেটের বেস্ত বাইক এটা। চোখ বন্ধ করে নিতে পারেন। আর বাইক এর ডিউরাবিলিটি ব্যক্তি নির্ভর আপনি যেভাবে যত্ন করবেন সেভাবেই আপনাকে ফিডব্যাক দিবে আপনার বাইক

All LIFAN bike price in bd

Lifan KPR 150