বাংলাদেশের বাজারে প্রচলিত সকল মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে লিফান একটি শীর্ষস্থানীয় চাইনিজ মোটরসাইকেল কোম্পানি। তাদের পণ্যের মাধ্যমে তারা সর্বদা ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্ট করে থাকে এবং লিফানের সবচেয়ে ভালো দিক হল তারা সাশ্রয়ী দামের মধ্যে লেটেস্ট প্রযুক্তিসহ বাইক সরবরাহ করে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা তাদের লাইনআপে বিভিন্ন বাইক দেখেছি, তবে ডুয়াল পারপাস বা অফ-রোড বাইকের অভাব দেখা গেছে। সেই অপেক্ষার পালা শেষ, সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি নতুন মোটরসাইকেল এনেছে রাসেল ইন্ডাস্ট্রিজ। একটি নতুন অফ-রোড বাইক, নাম Lifan X-pect 150
আমাদের দেশে হাতেগোনা কয়েকটি অফ-রোড মোটরসাইকেল আমরা দেখতে পাই। অফ রোড বাইকগুলি মূলত দীর্ঘ যাত্রার জন্য এবং ভাঙ্গাচূড়া রাস্তায় ব্যবহার করা হয়। সম্পুর্ন নতুন X-Pect-এ অফ রোড বাইকের সকল ফিচারই রয়েছে যা অ্যাডভেঞ্চারের জন্য যথেষ্ট।
Lifan X-Pect 150 এর ডিজাইন এবং লুকঃ যখন স্ট্রিট অ্যাডভেঞ্চার বাইকের কথা আসে তখন একটি মডেল ডিজাইন অনুসরণ করা হয়, কিন্তু মজার ব্যাপার হল একটি কোম্পানি কতটা ভালোভাবে বাইকটি সাজাতে পারে সেটাই পার্থক্য এনে দেয়। লিফান এক্স-পেক্ট 150 এর কথা বলতে গেলে আমরা দেখতে পাচ্ছি আপরেইজড হ্যান্ডেলবার এবং রাইডিং পজিশন, আপ মাউন্ট এক্সজস্ট, ফ্রন্ট ফেন্ডার, স্পোক হুইল, ইত্যাদি সবকিছুই একটি অফ-রোড বাইকের ফিচারস। X-Pect 150-এও এই ডিজাইনগুলি রয়েছে, তবে আকর্ষণটি হচ্ছে কালার কম্বিনেশন এবং আকর্ষনীয় ডিকেলসে। এই বাইকের বডিতে কালো ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে এবং ফুয়েল ট্যাঙ্কারের সাথে সাথে সামনের কিটের ডিজাইনও বেশ অকর্ষনীয়। হেডলাইট ইউনিট ট্র্যাপিজয়েডাল এবং হ্যালোজেন বাল্ব দিয়ে সজ্জিত। কিন্তু টেল লাইট একটি LED সেটআপ রাখা হয়েছে। আকর্ষণীয় ডিকালের সাথে ম্যাট কালার ফিনিশ এই বাইকটিকে দেখতে চমৎকার করে তোলে।
Lifan X-Pect 150 ইঞ্জিন ট্রান্সমিশনঃ এখন আসল ব্যাপারে আসা যাক, ইঞ্জিন পারফরম্যান্স একটি অ্যাডভেঞ্চার স্ট্রিট বাইকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ শক্তি ছাড়া আপনি ভাঙ্গা রাস্তায় রাইড করতে পারবেন না। Lifan X-Pect 150 এ ইঞ্জিন পাওয়ার এবং সেই সাথে চমৎকার থ্রোটল রেস্পন্স রয়েছে। এই বাইকটিতে থাকছে Vertical single-cylinder, four-stroke, Air-cooled, Power Push-rod, 150cc ইঞ্জিন যা 14 bhp সর্বোচ্চ শক্তি @ 8000 rpm এ এবং 14 Nm টর্ক @ 6500 rpm এ উৎপন্ন করতে পারে। স্মুথ ট্রান্সমিশনের জন্য লিফান ৫-স্পীড গিয়ারবক্স এবং ওয়েট মাল্টি-প্লেট ক্লাচ ব্যবহার করেছে। এই বাইকের সর্বোচ্চ গতি হবে প্রায় ১২০ কিমি/ঘন্টা। ইঞ্জিন স্টার্ট করার জন্য এতে কিক এবং ইলেকট্রিক স্টার্টিং অপশন রয়েছে।
Lifan X-Pect 150 ডাইমেনশনঃ Lifan X-Pect 150 এর বেশ লম্বা সিটিং পজিশন রয়েছে যেখানে রাইডার এবং পিলিয়ন উভয়ই বসে খুব ভাল ভাবেই রাইড করতে পারবে। সিঙ্গেল স্টেয়ার সিটটিও বেশ সুসজ্জিত, কম্ফোর্টেবল কুশনিং থাকছে সাথে। বাইকটির বডি ডাইমেনশন হল ২০৫০ মিমি দৈর্ঘ্য, ৭৯০ মিমি প্রস্থ এবং ১৩২৫ মিমি উচ্চতা। এই বাইকের স্ট্যান্ডার্ড গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ২২০ মিমি এবং হুইলবেস ১৩৬০ মিমি। মূলত অফ-রোড বাইকগুলিকে ভাল নিয়ন্ত্রণের জন্য হালকা করা হয়, যে কারণে X-Pect-এর কার্ব ওয়েটও কিছুটা কম ১৩০ কেজি যা সাধারণ ১৫০ সিসি স্ট্যান্ডার্ড কমিউটার বাইকের তুলনায় কিছুটা হালকা। ফুয়েল ট্যাঙ্কে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে যা ১০ লিটার ধারণ করতে পারে।
Lifan X-Pect 150 সাসপেনশন এবং ব্রেকঃ Lifan X-Pect 150 এর সামনে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন এবং পিছনের চাকায় একটি সুইংআর্ম মনো-শক সাসপেনশন রয়েছে। টেলিস্কোপিক সাসপেনশন যেকোন রাস্তার অবস্থাতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদান করবে। ব্রেকের ক্ষেত্রে এই বাইকটির সামনে ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে ড্রাম ব্রেক রয়েছে। যাইহোক, আজকালের মানুষ সিবিএস/এবিএস সিস্টেমের দাবি করে, কিন্তু এতে এই ধরনের কোন ব্যাবস্থা নেই।
Lifan X-Pect 150 টায়ার এবং হুইলঃ Lifan X-Pect 150-এ স্পোক হুইল রয়েছে এবং টায়ারগুলি টিউব টাইপ অফ রোড ডুয়াল পারপাস টায়ার। সামনে রাখা হয়েছে ৯০/৯০-১৭ সেকশন এবং পেছনে থাকছে ১১০/৯০-১৭ সেকশন টায়ার।
Lifan X-Pect 150 মিটার ক্লাস্টারঃ Lifan X-Pect 150 বাইকের মিটার প্যানেল বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন অন্যান্য Lifan বাইকের মতই, যেটি সেমি-ডিজিটাল। ট্যাকোমিটারটি অ্যানালগ, তবে ওডোমিটার, ট্রিপ-মিটার, ফুয়েল গেজ, গিয়ার ইন্ডিকেটর ইত্যাদি ফিচার ডিজিটাল।
শেষ কথাঃ Lifan X-Pect 150 একটি ডুয়াল পারপাস স্পোর্টস বাইক। বাইকটি ডার্ট বাইক পাশাপাশি সিটি রাইডিং বাইক হিসাবে উভয়ই কাজেই তৈরি করা হয়েছে। তবে, বিশ্বজুড়ে দেখা অন্যান্য অফ রোড বাইকের তুলনায় বাইকটির ওজন কিছুটা বেশি। স্পোর্টিয়ার ডিক্যালস এবং ভেন্ট সহ বেশ স্পোর্টি ডিজাইন এই বাইকটিকে দেখতে খুব আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এখন ব্যবহারকারীরা তাদের মতামতই ঠিক করবে এই বাইকের ভবিষ্যতে। এই মোটরসাইকেলের জন্য তিনটি কালার স্কিম রাখা হয়েছে, সেগুলো হল সবুজ, লাল এবং কমলা, যেগুলোর সবগুলই বেস কালার কালো রঙের সাথে মিলিত।