মোটরসাইকেল বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় একটি বাহন। বলতে গেলে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই একটি করে বাইক রয়েছে। কারণ, মোটরসাইকেল এর মাধ্যমে খুব দ্রুত যে কোন কাজ অল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা যায়। এটি ব্যক্তিগত জীবনে অনেক উপকারে আসে। আমার পরিচয় আমি সুকুমার সাহা। আমি দীর্ঘ ৭ বছর বাংলাদেশের বাহিরে ছিলাম। দেশের বাইরে সেখানে আমি একটা কোম্পানিতে কাজ করতাম। ৫ মাস আগে আমি বাংলাদেশে ফিরে আসি। বর্তমানে আমি এখন একটা ব্যবসার কাজে জড়িত আছি। সেজন্য আমাকে অনেক জায়গাতে ছোটাছুটি করতে হয়। তাই আমি ভেবে দেখলাম বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করার জন্য আমার একটি মোটরসাইকেল থাকা দরকার। সাথে সাথে আমি তাহেরপুর বাজারে গিয়ে “রিয়াল মটরস” শোরুম থেকে মাহিন্দ্রা ১১০ সিসির মোটরসাইকেলটি কিনি। এই মোটরসাইকেলটি আমি সাড়ে চার মাস যাবত ব্যবহার করছি। আমি এ পর্যন্ত প্রায় ৬,৫০০ কিমি পথ চালিয়েছি কোন দূর্ঘটনা ছাড়াই। এখন আমি যে কোন যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই মোটরসাইকেলটিকেই আগে প্রাধান্য দেই। এছাড়া আমি মাঝে মধ্যে আমার পরিবার নিয়েও এখানে ওখানে এটির মাধ্যমে যাতায়াত করে থাকি। আজকে আমি সবার উদ্দেশ্যে আমার মোটরসাইকেল নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরার জন্য হাজির হয়েছি। বলতে গেলে আজ আমি আমার মোটরসাইকেল এর যে রিভিউ সবার কাছে প্রকাশ করছি, এটি সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমার লিখাটি পড়লে আপনারা Mahindra 110 cc মোটরসাইকেল সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন।
প্রথমত আমি কথা বলতে চাই ইঞ্জিন নিয়ে। কেননা ইঞ্জিন হল বাইকের মূল প্রানকেন্দ্র। এই মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুবই ভাল। ইঞ্জিনটা খুব শক্তিশালী এবং বেশিক্ষণ চললেও ইঞ্জিন খুব বেশি গরম হয় না। এছাড়া ইঞ্জিনের ভেতরে কোন ধরনের খারাপ শব্দ করে না। এদিকে আমি ইঞ্জিন থেকে মাইলেজ পাচ্ছি ১ লিটারে প্রায় ৬০ কিমি। সব মিলিয়ে ইঞ্জিন পারফরমেন্স ও মাইলেজ খুব ভাল।
এবার মোটরসাইকেলটির ডিজাইন নিয়ে কিছু কথা বলবো। এই মোটরসাইকেলটির বিভিন্ন দিকের ডিজাইন, গ্রাফিক্স সব কিছু ভালো লাগার মত। এর বিল্ড কোয়ালিটি আমার কাছে মজবুত মনে হয়েছে। ডিজাইনের পাশাপাশি আমি আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করেছি যে, এই মোটরসাইকেল এর বডির প্লাস্টিক গুলো অনেক মজবুত এবং এর পার্টসগুলো বেশ উন্নত মানের। এই ডিজাইনের বাইকটি যে কারো খুব সহজেই পছন্দ হবে বলে মনে করি এবং সকল বয়সের ব্যক্তির সাথে মোটরসাইকেলটি মানানসই হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের বাইক আছে, আমার কাছে এই মোটরসাইকেলটি একটু ভিন্ন ধরনের মনে হয়েছে। আমি
শোরুমে গিয়ে এই মোটরসাইকেলটি এক দেখাতেই আমার ভাল লেগে যায় এবং আমি সিদ্ধান্ত নিই এই মোটরসাইকেল টিই কিনবো।
এবার মোটরসাইকেল এর কন্ট্রোল ও আরাম নিয়ে কথা বলবো। এই মোটরসাইকেলটি চালিয়ে আমার কাছে মোটামুটি আরামদায়ক মনে হয়েছে। আমার কাছে মোটরসাইকেলটির সিটিং পজিশন বেশ ভাল মনে হয়েছে। এর সিট নরম হওয়ায় বসে আরাম আছে। এর সিটে ৩ জন পর্যন্ত বসা যায়। মোটরসাইকেলটি খুব বেশি উঁচু না, আমি সহজেই সিটে বসে মটিতে পা রাখতে পারি। এছাড়া মোটরসাইকেলটির হ্যান্ডেলবার ধরে চালিয়ে খুব আরাম অনুভব করি। তবে আমি ৫৫ গতির বেশি কখনওই তুলি নাই। বেশি স্পীডে মোটরসাইকেল চালানো আমার পছন্দ না। কেননা সময় বাঁচাতে গিয়ে যে কোন সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশী। আমি একদিনে প্রায় ৭০ কিমি পথ চালিয়েছি। অতি দীর্ঘ যাতায়াত আমি খুব কম করেছি। মোটরসাইকেলটির সাসপেনশন গুলো আমার কাছে একটু নিম্ন মানের মনে হয়েছে। খারাপ যে কোন রাস্তায় একা যাতায়াত করলে খুব ঝাঁকুনি মনে হয়। তবে মোটরসাইকেলটির লুকিং গ্লাস থেকে পিছনের দৃশ্য খুব ভাল দেখতে পাই। মাহিন্দ্রা ১১০ সিসি মোটরসাইকেল এর ব্রেকিং সিষ্টামটা খুবই ভাল লেগেছে। আমি খুব সহজেই মোটরসাইকেলটি কন্ট্রোল করতে পারি। সামনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক থাকায় ভাল কন্ট্রোল করা যায়। এর সুইচগুলো দেখতে অনেক সুন্দর এবং এগুলো ব্যবহার করতে আমার কোন রকমের কষ্ট হয় না। রাতে হেডলাইট থেকেও আমি প্রচুর আলো পাই।
ভাল মাইলেজ এর আশায় আমি এই মোটরসাইকেলটি কিনেছি। এক কথায়, আমি যেমনটি চেয়েছিলাম, ঠিক তেমন মাইলেজ পাচ্ছি। এছাড়া শোরুম থেকে বাইকটি কিনার সময় তারা যে মাইলেজের কথা বলেছিল, তাদের কথার সাথে কাজের বেশ মিল পেয়েছি। এজন্য আমি খুবই সন্তুষ্ট। ১১০ সিসি বাইক হিসেবে ১ লিটারে ৬০ কিমি পথ চলা মানে অনেক কিছু। যা অন্যান্য মোটরসাইকেল থেকে পাওয়া যায় না। তবে আমি দাম নিয়ে খুশি হতে পারি নাই। কারন ১১০ সিসি বাইক হিসেবে আমার কাছে দামটা অনেক বেশি মনে হয়েছে। বাইকটির মোটামুটি প্রায় সবকিছুই ভাল, শুধু দামটা একটু কম হলে মার্কেট এ ক্রেতার সমাগম আরো অনেক বেড়ে যাবে।
আমি এযাবত মাত্র এক বার সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়েছি। তাও শুধু মাত্র নাট-বল্টু টাইট করা, সব কিছু চেক করা এবং মবিল পরিবর্তন করার জন্য। এমন সাধারন সার্ভিসিং করার জন্য ১ বার সেখানে যাই। সেখানে গিয়ে তাদের ব্যবহার দেখে আমার ভাল লেগেছে এবং তাদের কাজের মান ভাল। সেখানকার পরিবেশ মুগ্ধকর। এজন্য নতুন ক্রেতাদের জন্য আমার পরামর্শ আপনারা ১১০ সিসির মধ্য বাইক কিনলে এই মোটরসাইকেলটি নিশ্চিন্তে কিনতে পারে। কারণ বাইকটির ইঞ্জিন পারফরমেন্স ও মাইলেজ খুবই ভাল।
ভাল দিকঃ ১/ ইঞ্জিনের পারফরমেন্স খুব ভাল, ২/ ডিজাইন ভাল, ৩/ মাইলেজ ভাল, ৪/ সুইচগুলো অনেক সুন্দর, ৫/ সার্ভিসিং সেন্টারের কাজের মান ভাল, ৬/ বাইকটির ব্রেক অনেক ভাল। ৭/ সিটিং পজিশন ভাল।
মন্দ দিকঃ ১/ দাম বেশি, ২/ সাসপেনশন তেমন ভাল না।
পরিশেষে সবার সুস্থ ও সুন্দর জীবন কামনায় বিদায় নিচ্ছি, সবাইকে ধন্যবাদ।