প্রথমেই আমি আমার পরিচয় দিয়ে শুরু করতে চাই। আমার নাম মোঃ রাসেল আলী। পেশায় আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার মোটরসাইকেল এর নাম মাহিন্দ্রা ১২৫ সিসি। এই বাইকটি আমি আমার ব্যবসার কাজে ও ব্যক্তিগত কাজর জন্য কিনেছি। আমি প্রায় ১০ বছর বাংলাদেশের বাহিরে ছিলাম। বাংলাদেশে আসার পরে ভাবলাম আমার সাধারণ যাতায়াতের জন্যে একটি মোটরসাইকেল দরকার। তখন আমি আমার ছোট ভাইয়ের থেকে পরামর্শ নিয়ে তাহেরপুর বাজারে চলে যাই। কারণ আমার ছোট ভাইটি মোটরসাইকেল মেকানিক। সে প্রায় সকল বাইক সম্পর্কে ভাল – মন্দ জানে। দুই ভাই তাহেরপুর বাজারের “রিয়াল মটরস” শোরুমে চলে যাই। সেখানে গিয়ে মাহিন্দ্রা ১২৫ সিসির মোটরসাইকেলটি পছন্দ করি। দামে কম, দেখতে সুন্দর, তেল খরচ কম ইত্যাদি আশা করে ছোট ভাই মাহিন্দ্রা মোটরসাইকেলটি কিনার সিধান্ত দেয়। আমি সাথে সাথে বাইকটি কিনে বাসায় ফিরে আসি। তবে শোরুমে মোটরসাইকেলটি কিনার সময় তারা অতিথি আপ্যায়নে কমতি রাখেন নাই। আমি এটি দেখে তো অবাক! যাই হোক, এই মোটরসাইকেলটি আমি দশ মাস যাবত ব্যবহার করছি। এই দশ মাসে প্রায় ৪৮০০ কিমি পথ চালিয়েছি। আজ মোটরসাইকেল ভ্যালী টিমের মাধ্যমে আমার বাইকের সকল তথ্য শেয়ার করতে পারায় আমি খুব খুশি। আশা করি পাঠক ভাইয়েরা আমার লিখাটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
এই মোটরসাইকেলটির ডিজাইন অনেক ভাল লেগেছে। এর বডির প্লাস্টিক গুলোও আমার কাছে মজবুত মনে হয়েছে। বাইকটির ব্লিডিং কোয়ালিটি অনেক মজবুত। বাইকটি যে কোন বয়সের মানুষকে সাথে মানানসই। মোটরসাইকেলটির ট্যাংকারটি আমার খুব পছন্দের। তবে মোট কত লিটার তেল এই ট্যাংকারটি পূর্ণ হবে তা এখনও মেপে দেখি নাই।
মাহিন্দ্রা ১২৫ সিসি মোটরসাইকেলটি চালিয়ে এখনো ইঞ্জিনের কোন প্রকার সমস্যা বুঝতে পারি নাই। এর ইঞ্জিন পারফরমেন্স আমার খুব ভাল লেগেছে। এছাড়া ইঞ্জিনের শব্দটিও অনেক সুন্দর। এই ইঞ্জিন থেকে আমি ভাল মাইলেজ পাচ্ছি। ইঞ্জিনটি অনেক শক্তিশালী। বাইকটি চালিয়েও আরাম আছে।
আমি মোটরসাইকেলটি কিনার সময় শোরুম থেকে আমাকে বলেছিল এক লিটার তেলে ৬০ কিমি পথ চলতে পারবো। আমি দশ মাস পরেও ইনশাআল্লাহ এই মাইলেজটিই পাচ্ছি। এখন মনে হচ্ছে ভাল মাইলেজ পাবার ইচ্ছেটি আমার পূরণ হয়েছে। তাই মাইলেজ নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই।
মোটরসাইকেলটির সিটিং পজিশন বড়। দুই বা তিন জন বসে চালানো যায়। এর সিট প্রথমের দিকে খুব শক্ত ছিল, কিন্তু আস্তে আস্তে এটি নরম হয়ে গেছে। এখন আমি দীর্ঘ যাতায়াত করলেও কোন সমস্যা হয় না। আমি ফাকা রাস্তায় সর্বোচ্চ গতিতে ৬০ তুলেছি। তবে আমি এর চেয়েও অনেক কম গতিতে মোটরসাইকেল চালাই। এছাড়া আমি এক দিনে প্রায় ৬০ কিমি পথ চালিয়েছি। দীর্ঘ যাতায়াত করলেও আমার তেমন ক্লান্তি আসে না। এই মোটরসাইকেলটি আমি রাতে চালিয়ে দেখেছি এর হেড লাইটে অনেক আলো হয়। এর সুইচ গুলো দেখতেও অনেক সুন্দর, এগুলো ব্যবহার করতে আমার কোন সমস্যা হয় না। এর লুকিং গ্লাস দুটোও আমাকে পিছনের রাস্তা পরিষ্কার দেখতে সাহায্য করে। এছাড়া মোটরসাইকেল খুব বেশি উঁচু না হওয়াতে আমি খুব সহজেই সিটে বসে মাটিতে পা রাখতে পারি। এই মোটরসাইকেলটির সাসপেনশন গুলো মোটামুটি ভাল। খারাপ রাস্তায় একা চালালেও আমাকে খুব বেশি পরিমানে ঝাঁকুনি লাগে না। মাহিন্দ্রা ১২৫ সিসির মোটরসাইকেলটির ব্রেক অনেক ভাল। এর সামনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনের চাকায় ড্রাম ব্রেক থাকায় আমি খুব ভাল কন্ট্রোল করতে পারি। যে কোন পরিস্থিতিতে এই বাইকটি আমার নিজের আয়ত্তে নিতে পারি। এই বাইকটির চাকা ও এর টায়ার বেশ ভাল। এর টায়ারের গ্রিপ গুলো অনেক ভাল হওয়ার কারনে ব্রেক করলেও স্লিপ করে না। এই মোটরসাইকেলটি চালিয়ে বেশ মজা আছে।
আমি একবার ঘুরতে ঘুরতে সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়েছিলাম। সেখানকার পরিবেশ অনেক ভাল। সেই দিনও তাদের ব্যবহার আমার ভাল লেগেছে। আমার বাইকের কোন সমস্যা ছিল না, তার পরে তারা পুরো মোটরসাইকেলটি চেক করে দেন। বিশেষ করে নাট বল্টু টাইট করা ও চেনটি টাইট করে দেন। তাদের কাজের মান আমার ভাল লেগেছে। এর পরে আমি আর সেখানে যাই নাই। বিশেষ করে আমার বাসা থেকে সার্ভিসিং সেন্টারটি দূরে হবার করনে সেখানে আর যাওয়া হয় নাই। এখন ছোট খাটো কোন সমস্যা হলে আমার ছোট ভাইয়ের দোকান থেকে সার্ভিসিং করি নিই।
এই মোটরসাইকেলটির পারফরমেন্স বিবেচনা করে এর দামটা আমার কাছে সঠিক রয়েছে বলে মনে করি। তবে ১২৫ সিসির অন্যান্য ব্যান্ডের মোটরসাইকেল গুলোর দাম একটু বেশি। আমি মনে করি দামটা একটু কম হওয়ায় এবং ভাল মাইলেজ পাওয়ায় এই বাইকটির চাহিদা ও বিক্রয়ের হার একটু বেশি।
ভাল দিকঃ ডিজাইন ভাল, তেল খরচ কম, ইঞ্জিনের পারফরমেন্স অনেক ভাল, এর ব্রেক ভাল, ডিস্ক ব্রেক আছে, টায়ারের গ্রিপ গুলো ভাল, এর সাসপেনশন অনেক ভাল, দাম হাতের নাগালের মধ্যেই আছে, সার্ভিসিং সেন্টারের কাজের মান ভাল, এর সুইচ গুলো দেখতে অনেক সুন্দর।
মন্দ দিকঃ আমি এখন পর্যন্ত মেজর কোন সমস্যা পাই নাই। যদি কখনো পাই তাহলে আমার পরবর্তী রিভিউ এ তা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
পরিশেষে বলতে চাই, কেউ যদি ১২৫ সিসির মধ্যে ভাল মাইলেজ সমৃদ্ধ বাইক কিনতে চান, তারা মাহিন্দ্রা ১২৫ সিসির এই বাইকটি নিশ্চিন্ত মনে কিনতে পারেন। সবাইকে ধন্যবাদ।