জংশেন ১২৫ সিসি বাইকের কথা আশা করি সবাই জানেন । আমি সেই বাইক দিয়ে আমার জীবনের প্রথম বাইক চালানো শিখি। ওই বাইক দিয়ে বাইক চালানো শেখার পর মাত্র ২ বছর ব্যবহার করি এবং তারপর কিনি পালসার ১৫০ সিসি। পালসার ১৫০ সিসি বাইকের সব কিছু ভালো লাগত কিন্তু ইঞ্জিনের শব্দটা ভালো লাগত না। ইঞ্জিন থেকে অন্যরকম একটা বিরক্তিকর শব্দ হয়। পালসার বাইকও আমার কাছে বেশীদিন থাকলো না। বাজাজ পালসার বিক্রি করে দিয়ে আমি কিনে ফেললাম ইয়ামাহা ফেজার । ইয়ামাহা ফেজারের তখন এফআই মডেল বাজারে আসেনি তাই পূর্বের মডেলটাই কিনি এবং সেটা প্রায় ২.৫ বছর ব্যবহার করি। তারকিছুদিন পর আমি কিনি টিভিএস এপ্যাচি আরটিআর কিন্তু এপ্যাচির মাত্রাতিরিক্ত ভাইব্রেশন আর খারাপ কন্ট্রোলের জন্য সেটা মাত্র ১২ দিন পর বিক্রি করে দিই। এরপর কিনলাম হরনেট ১৬০। বাংলাদেশে প্রথম যখন হরনেট বাজারে আসে তখনই কিনি। যেহেতু হোন্ডা একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড তাই আমি নির্দ্বিধায় হরনেট কিনি কিন্তু হরনেট কে আমি বেশীদিন রাখতে পারিনি। তখন আমার ব্যবসায়ীক কাজের জন্য টাকার প্রয়োজন ছিলো তাই হরনেট বিক্রি করে দিই। এরপরে ব্যবসায়ীক যোগাযোগের জন্য টিভিএস স্ট্রাইকার কিনি। স্ট্রাইকার কেনার কারণ ছিলো যে বাইকটা সবাই বলতো ভালো, মাইলেজ বেশি পাওয়া যায় কিন্তু আমি নিজে চালিয়ে যেটা লক্ষ্য করেছি যে ৮০ থেকে ১২০ কিমি একটানা রাইড করলে বাইক ফেলে হেটে যেতে মন চায় । এই কারণে টিভিএস স্ট্রাইকারের স্থায়িত্ব বেশীদিন ছিলো না। তারপর অর্থাৎ বর্তমানে আমি কিনে ফেলি লিফান কেপিআর ১৬৫ সিসি।
লিফান কেপিআর ১৫০ কেনার টার্গেট ছিলো কিন্তু অভিজ্ঞ ছোটভাই বলল যে, বাইক যখন কিনবেন তখন অবশ্যই নতুন ও আপডেট ফিচারের বাইক কিনবেন। এরপর লিফান কেপিআর নিয়ে আমি অনলাইনে রিভিউ পড়তে থাকি পাশাপাশি ইউটিউবে বাইকের রিভিউ দেখে কেনার শখ জাগে । তারপর রাজশাহীতে আতিক ইমন (মডারেটর, ক্লাব কেপিআর) কে পাই এবং তার ১৬৫সিসি বাইকটি টেস্ট রাইড দিই। কেপিআর ১৬৫সিসি টেস্ট রাইড দিয়ে আমি যেটা বুঝতে পারলাম যে বাইকটা একবার হলেও কেনা উচিত। তাই রাজশাহী
নিউ শুভ এন্টারপ্রাইজে যেয়ে ১৬৫ এর আর্মি গ্রিন পছন্দ করি কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় তখন আমার কাছে এত পরিমাণে টাকা ছিলো না কিন্তু নিউ শুভ এন্টারপ্রাইজের মালিক শামীম ভাই আমাকে বিশ্বাস করে বললেন যে ভাই আপনি ব্যবসা করেন আমি করি তাও আবার একই শহরে তাই আশা করি আপনি আমার টাকা মেরে কোথাও যাবেন না। সব মিলিয়ে আমার টিভিএস স্ট্রাইকার বিক্রি করে যে পরিমাণ টাকা হয়েছিলো সেটা টাকা জমা দিয়ে নিয়ে নেই কেপিআর ১৬৫ ।
আমি বাইকটি কেনার কিছুদিন পরেই চিন্তা করলাম যে একটানা অনেকক্ষণ রাইড করবো যেদিন চিন্তা করলাম সেদিনই আমি আমার বাসা থেকে শিবগঞ্জের উদ্দেশ্য রওনা হই সাথে একজন পিলিয়ন ছিলো। আমার উদ্দেশ্য ছিলো যে আমি কোথাও না থেমে একটানা শিবগঞ্জ যাবো এবং বাইকের পারফরমেন্সসহ এর আরাম দেখবো। আমি অর্ধেক রাস্তা যাবার পর পিলিয়নকে জিজ্ঞেস করলাম তার কোন সমস্যা হচ্ছে কি না। সে আমাকে বলল যে তার কোন সমস্যা হচ্ছে না। তারপর আমি প্রায় ৮০ কিমি এর বেশি পথ পাড়ি দিয়ে শিবগঞ্জে পৌঁছায় এবং পৌছানোর পর অন্য বাইক চালালে যেমন কষ্ট বা হাত ঝিনঝিন এরকম কোন সমস্যা আমি অনুভব করিনি। আমি একদম স্বাভাবিক ছিলাম এবং কোন ক্লান্তিবোধ অনুভব করছিলাম না। রাজশাহী টু শিবগঞ্জ আসার পরে আমি অনুভব করলাম কেপিআর এর ইঞ্জিন শক্তি। পিলিয়ন নিয়ে ১০০ কিমি উঠতে কোন সময় লাগেনি এবং মজার বিষয় হচ্ছে শুধু মিটারের দিকে তাকালে বুঝা যায় যে বাইকটা ১০০ কিমি স্পীড অতিক্রম করেছে কিন্তু মিটাররে দিকে না তাকালে ৭০ কিংবা ৮০ স্পীড এর মত মনে হয়। রাজশাহী টু শিবগঞ্জ কেপিআর নিয়ে খুব ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।
টেকনিক্যাল বিষয়ের মধ্যে আমার কাছে ব্রেকিং সিস্টেম খুব ভালো লেগেছে। সামনে এবং পেছনে ডিস্ক ব্রেক এবং সামনের ডিস্কটার সাইজ বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যান্য বাইকের তুলনায় বড় তাই ব্রেকিং নিয়ে কেপিআর এর কোন খারাপ কিছু অনুভব করিনি। রাইডার এবং পিলিয়নের সিট খুবই আরামদায়ক এবং একটানা অনেকক্ষণ পিলিয়ন নিয়ে রাইড করা সম্ভব হয়।
একদিন হটাত করে ইগ্নিশন অন হচ্ছে না । আমি বাইকটা রাইড করে বাসায় আসলাম এবং পরদিন বাইরে যাবার উদ্দেশ্যে বাইকের চাবি দিয়ে ইগ্নিশন অন করলাম কিন্তু মিটারে কোন কিছু দেখাচ্ছে না অর্থাৎ ইগ্নিশন অন হচ্ছে না। ব্যাপারটা নিয়ে আমি একটু দুশ্চিন্তায় পড়লাম তারপর পরের দিন আবার ইগ্নিশন অন করলাম এবং আল্লাহর রহমতে অন হয়ে গেল । আমি ব্যপারটা পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম ওখানে লুজ কানেকশন ছিলো যার জন্য ইগ্নিশন চালু হচ্ছিল না। কেনার পর এই একটা সমস্যা ছিলো আল্লাহর রহমতে এখন এই সমস্যা নেই । আরেকটা সমস্যা হচ্ছে যে বাইকের সাসপেনশন খুবই নরম যার জন্য পেছনে একজন ভারী পিলিয়ন বসলে চাকাটা সিটের নিচের অংশের সাথে ঘষা খায়। সার্ভিস সেন্টার থেকে আশ্বস্থ করেছে ব্যাপারটা ঠিক করে দিবে। এই সমস্যা ছাড়া আর কোন সমস্যা দেখি না।
বাইকের মাইলেজ নিয়ে আমি কোন দুশ্চিন্তা করি না কারণ আমি জানি যে বাইকের ভালো যত্ন করলে সে অবশ্যই ভালো মাইলেজ দিবে। আমি এখন মাইলেজ পাচ্ছি লিটারে ৩৯ কিমি এবং ১০০ টাকাতে ৪৩ কিমি। আমি সর্বদা ভালোমানের অকটেন ব্যবহার করার চেষ্টা করি।
কেনার পর থেকে আমি কখনও তাদের সার্ভিস সেন্টারে যাইনি কারণ মাত্র ১১০০ কিমি চালিয়েছি তবে কেনার সময় নিউ শুভ এন্টারপ্রাইজের ব্যবহার দেখে আমি মুগ্ধ। আশা করি তাদের সার্ভিস মান ভালো হবে।
স্পোর্টস বাইক, এফআই ইঞ্জিন, ১৬৫ সিসি এবং অন্যান্য সব কিছু বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে দামের দিক থেকে লিফান কেপিআর সবার মন জয় করেছে। এই রকম একটা স্পোর্টস বাইক ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। এর জন্য আমি রাসেল ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে চাই।
চায়না বেশি দিন যায়না কথাটার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। লিফান চাইনিজ ব্র্যান্ড হলেও আমি আঁচ করতে পেরেছি যে এর ইঞ্জিন কোয়ালিটি খুব ভালো এনং কেপিআর ১৬৫ টেস্ট রাইড দিয়ে আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে লিফান কেপিআর। অনেক ভালো ব্রান্ডের বাইক চালিয়েছি এইবার লিফানের বাইক চালানোর পালা। আশা করি লিফান কেপিআর আমাকে হতাশ করবে না।
আমার যদি পরবর্তীতে লিফানের পরিবর্তে কোন বাইক কেনার ইচ্ছা থাকে তাহলে ইয়ামাহা আরওয়ানফাইভ ভার্সন ২ কিনবো কিন্তু যদি লিফান কেপিআর ভালো লেগে যায় তাহলে এটা আমি আর ছাড়ছি না। সবাইকে ধন্যবাদ।