বাংলাদেশে প্রায় ব্যক্তির কাছেই মোটরসাইকেল একটি জনপ্রিয় বাহন। কারণ, বাইকের মাধ্যমে যে কোন সময় অতি দ্রুত যাতায়াত করা যায়। সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি মোঃ সেলিম আলী। আমার বাসা নাটোর জেলার দস্তনাবাদ গ্রামে। আমি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আমার ব্যবসার কাজের জন্য ও ব্যক্তিগত কাজের উদ্দেশ্যে এই বাইকটি মূলত আমি কিনি। বাইকটি আমি প্রায় ২ বছর যাবত ব্যবহার করছি। ২ বছরে প্রায় ১৭,০০০ কিমি পথ চালিয়েছি। আজকে আমি আমার বাজাজ ডিস্কোভার ১২৫ সিসি বাইক সম্পর্কে ভাল ও মন্দ কিছু বিষয় তুলে ধরবো।
এটা আমার জীবনের ২য় বাইক। এর আগে আমি ডায়াং ১০০ সিসি বাইক ব্যবহার করেছি। সেই বাইকের পারফরমেন্স তেমন ভাল ছিল না। এরপরে অনেক চিন্তা ভাবনা করে ডিস্কোভার ১২৫ সিসি বাইকটি কিনি। আমি যখন বাইক কিনি তখন রিভিউ পড়ার সুযোগ ছিল না। নিজের পছন্দ অনু্যায়ী বাইক কিনতে হয়েছিল। এজন্য আমি মোটরসাইকেল ভ্যালীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি কারন তারা আমার রিভিউ আপনাদের সামনে তুলে ধরার সু্যোগ করে দিয়েছে। এটির মাধ্যমে নতুন বাইক ক্রেতা প্রতিটি বাইকের গুণাগুণ যাচাই করে বাইক কিনতে পারবে। আমার প্রথম বাইকটি আমাকে খুব হতাশ করেছে। কিন্তু বর্তমানে যে বাইক ব্যবহার করছি এর পারফরমেন্স অসাধারণ। বলতে গেলে আমি যেমন চেয়েছিলাম, ঠিক তেমন বাইকই পেয়েছি।যদিও দাম কিছুটা বেশি। আমি এই বাইকটি শুধু পারফরমেন্স বিবেচনা করে কিনি নাই। বরং বাইকের ডিজাইন ও বডির মজবুত পার্টস দেখে কিনেছি। ডিজাইন আমার কাছে পারফেক্ট মনে হয়েছে। এছাড়া বাইকের বডির প্লাস্টিক অনেক মজবুত, যা খুব সহজে ভেংগে যায় না। বাইকটির বডির সাথে ডিজাইন দুই এ মিলে একাকার। বলতে গেলে এই বাইকের ডিজাইনটা আমার খুব পছন্দের। এ বাইকটি যে কোন বয়সের মানুষের সাথে মানানসই।
এখন আসি ইঞ্জিনের পারফরমেন্স নিয়ে। ১২৫ সিসি বাইক হিসেবে এই বাইকটি অনেক ভাল শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। কারন এটি খুব শক্তিশালী। বাইকটির ইঞ্জিনের শব্দটা অনেক সুন্দর। তাছাড়া অন্যান্য বাইকের মত এই ইঞ্জিনের ভেতরে কোন খারাপ শব্দ করে না। তবে বেশিক্ষণ চললে বাইকটি হালকা গরম হয় এবং চেনের ভিতরে বাজে শব্দ করে। কিন্ত ইঞ্জিনের পারফরমেন্স আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। বাইকটি কেনার সময় আমাকে বলা হয়েছিল ১ লিটার তেলে প্রায় ৫০-৬০ কিমি পথ চলা যাবে। আমি অনেকটা তেমনই মাইলেজ পাচ্ছি। তেল খরচ কম হবে এটা ভেবেই আমি এই বাইকটি কিনি। ভাল মাইলেজ পেতে এই বাইকের তুলনা হয় না।
এছাড়া বাইকের কন্ট্রোল অনেক ভাল। বাইকের ডিস্ক ব্রেক থাকায় আমি খুব সহজেই কন্ট্রোল করতে পারি। বেশী স্পীডে একটু ঝাঁকুনি মনে হয়, তবে এটি আমি এমন আমলে নেইনি। কারণ আমি বাইক বেশি স্পীডে চালাই না। এক্ষেত্রে আমি সন্তুষ্ট।
বাইকটির সিটিং পজিশন খুব ভাল। সিটে বসে আরাম আছে। এক সাথে ২/৩ জন বসে রাইড করা যায়। পরিবার নিয়ে এক সাথে চলাচলের জন্য এমন সিটিং পজিশন দেখে এই বাইকটি কিনেছি। এছাড়া সিটে বসে আমি খুব সহজেই মাটিতে পা রাখতে পারি। বাইকটির সুইচ গুলো দেখতে সুন্দর ও এগুলো ব্যবহার করতে আমার কোন সমস্যা হয় না। এছাড়া রাতে হেড লাইট থেকে প্রচুর আলো পাই। আমি বাইকটি সর্বোচ্চ ১০০ গতিতে তুলেছি। তবে বেশি গতিতে আমার হাত ঝিনঝিন করে। এছাড়া এক দিনে প্রায় ২০০ কিমি পথ চালিয়েছি। দীর্ঘক্ষণ বসে রাইড করলে হাতে,পিঠে, কোমরে ব্যাথা করে। বাইকটির সাসপেনশন মোটামুটি ভাল, তবে খারাপ রাস্তায় হালকা ঝাঁকুনি অনুভব করি। কন্ট্রোল ভাল। বাইকটির লুকিং গ্লাস থেকে আমি খুব সহজেই পিছনের দৃশ্য পরিষ্কার দেখতে পাই। এক কথায় এই বাইকের কন্টোল ভাল এবং মোটামুটি এটি একটি আরামদায়ক বাইক।
বাইকে বড় কোন সমস্যা নেই, কিন্তু আমি আগেও বলেছি বাইকের চেনের ভিতরে বাজে শব্দ হয়। এটি আমার কাছে খুব বিরক্তিকর মনে হয়। আমি সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়েছি, কিন্তু কাজের মান আমার কাছে তেমন ভাল লাগেনি। কারন চেনের সমস্যাটি কিছুদিন পরে আবার শুরু হয়। তবে তাদের ব্যবহার ও পরিবেশ দেখে আমি মুগ্ধ হই। এছাড়া সেখানে যথেষ্ট যন্ত্রপাতি লক্ষ্য করেছি। তাছাড়া ও আরেকটি বিষয় আমার কাছে খারাপ লেগেছে, সেটি হল বাইকের দাম। পারফরমেন্স বিবেচনা করে এই বাইকের দামটা অনেক বেশি বলে মনে করি।
ভাল দিকঃ তেল খরচ কম, ইঞ্জিন পারফরমেন্স ভাল, ডিজাইন ভাল, সিটিং পজিশন ভাল, সুইচগুলো দেখতে সুন্দর, লুকিং গ্লাসে পরিষ্কার দেখা যায়।
মন্দ দিকঃ দাম অনেক বেশি, দীর্ঘ যাতায়াতে কষ্ট হয়, চেনের ভেতরে বাজে শব্দ করে, কাস্টোমার সার্ভিসের মান আরো উন্নত হওয়া দরকার।
পরিশেষে বলতে চাই, যারা ১২৫ সিসির মধ্যে বাইক কিনার কথা ভাবছেন, তারা এই বাইকটি মাইলেজ বিবেচনায় কিনতে পারেন। কারণ এ বাইকের তেল খরচ খুব কম। এছাড়া, বাইকটির ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুবই ভাল। নিজের বাইক বলে বলছি না, বাইকটির দাম একটু বেশি হলেও মাইলেজ বিবেচনায় আপনারা বাইকটি কিনতে পারেন।
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার কথা শেষ করছি। সবাই ভাল থাকবেন। এই শুভ কামনায় বিদায়।