আমি সজল হাসান একজন বাইক প্রেমি মানুষ। বাইক নিয়ে ঘুরতে আমার খুব ভালো লাগে। বাংলাদেশের মার্কেটে যদি কোন নতুন বাইক আসে সেটাই আমি কেনার সিদ্ধান্ত নিই এবং এরকম করতে করতে আমি আমার জিবনে প্রায় অনেকগুলো বাইক চালিয়েছি। আমি সর্বপ্রথম বাইক চালানো শিখেছিলাম সপ্তম শ্রেনিতে পড়া অবস্থায় এটা প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর আগের কথা। আমি বাইক চালানোর ইতিহাতে সর্বপ্রথম আমি যে বাইকটি ব্যবহার করেছি সেটি হল বাজাজ পালসার। তারপরে এখন ব্যবহার করছি সুজুকি ইন্ট্রুডার এরই মধ্যে আমি সুজুকি জিক্সার, জিক্সার এসএফ, ফেজার, এফযেডএস সহ অনেকগুলো বাইক ব্যবহার করেছি।
আমার কাছে ইন্ট্রুডার প্রথম ভালো লাগার কারণ হল মার্কেটে নতুন ডিজাইনের একটি বাইক আর আমার আগে থেকেই শখ যে নতুন বাইক আসলে সেটা কিনবো। ইন্ট্রুডারের অন্য রকম একটি লুক রয়েছে যে বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে তেমন লক্ষ্য করা যায় না। মাস্কুলার বডি, এবিএস ব্রেকিং ইত্যাদি সব কিছু মিলিয়ে সুজুকি ইন্ট্রুডার আমার ভালো লেগে যায় এবং আমি এটাই কিনে ফেলি।আমি এই বাইক নিয়ে এখন পর্যন্ত ১২০০ কিমি চালিয়েছি এবং এই সময়কালের মধ্যে ইন্ট্রুডার থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা আজকে মোটরসাইকেল ভ্যালীর মাধ্যমে শেয়ার করবো।
ডিজাইনের দিক দিয়ে ইন্ট্রুডারের রয়েছে মডার্ন ডিজাইনের ক্রুজার। বডি কিটগুলোর জন্য দেখতে অনেক মাস্কুলার মনে হয় কিন্তু বাইকের সামনের যে অংশটা যেটা হ্যান্ডেলবারের নিচে থাকে সেটা দূর থেকে অনেকেই দেখে মনে করে যে এটা একটা ব্যাটারী বাইক । আমার মন্তব্য হল যে এত দাম দিয়ে কিনে যদি এই রকম মন্তব্য মানুষের কাছ থেকে শুনতে হয় তাহলে ব্যপারটা আসলেই দুঃখজনক। এছাড়া ডিজাইনের মধ্যে ভাল লাগার দিক হচ্ছে হেডল্যাম্পটা অন্যান্য বাইকের থেকে ভিন্ন করেছে।
বিল্ড কোয়ালিটির দিক দিয়ে প্রথমে ভয়ে ভয়ে ছিলাম কারণ পুরো বাইকে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেশি যার জন্য পড়ে গেলে কিংবা ঘষা লাগলে দেখতে খারাপ লাগবে। কিছুদিন ব্যবহার করার পর বুঝতে পারলাম যে প্লাস্টিকগুলো অনেক ভালো মানের এবং ভাঙ্গা রাস্তায় কোন শব্দ হয় না।
সিটিং পজিশন অনেক ভালো এবং সেখানে বসে চালিয়ে অনেক মজা লাগে । এদিকে সিটিং পজিশনের সাথে মিল রেখে হ্যান্ডেলবারটাও অনেক ভালো করা হয়েছে যার জন্য চালিয়ে কোন খারাপ অনুভুতি হবে না কিন্তু সিটিং পজিশন থেকে এর পা দানিটা একটু দূরে যা লম্বা রাইডারদের জন্য ঠিক আছে কিন্তু একটু খাটো রাইডারদের জন্য সমস্যা হতে পারে। আমি একদিনে প্রায় ২০০ কিমি চালিয়ে আরামের দিক থেকে খারাপ কিছু অনুভব করিনি।
হেডল্যম্পের আলো অনেক ভালো অন্যান্য বাইকের থেকে কিন্তু এর মিটার কনসোল ও কিছু কিছু ইলেকট্রিক্যাল বিষয় আমার কাছে মনে হয়েছে যে এই ফিচারসগুলো সুজুকি জিক্সার সিরিজের যেহেতু তারা মডার্ন ক্রুজার বলছে তাই সেদিক থেকে আমার মনে হয় ঠিক আছে । এছাড়াও স্টক হর্ন , ইনডিকেটর ইত্যাদি শব্দ বেশ পরিষ্কার তবে কিছু কিছু ফিচারস রয়েছে যা আমার কাছে মনে হয়েছে যে আরও উন্নত করা সম্ভব।
ইঞ্জিনের বিষয় প্রথম যে কথাটা অবশ্যই বলতে হবে সেটা হল এখানে তারা সুজুকি জিক্সারের ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে যার পাওয়ার টর্ক একদম একই। ইঞ্জিন থেকে আমি মোটামূটি ভালো সাপোর্ট পাচ্ছি । ইঞ্জিন ওভার হিট হয় না এবং থ্রটল রেসপন্স অনেক ভালো। অন্যদিকে ইঞ্জিনের শব্দটা বেশ গম্ভীর।
বাইকটা আকারে বেশ বড় এবং এর কন্ট্রোল দুর্দান্ত। আমি ৯০ কিমি স্পীডে চালিয়েও কোন ভয় পাইনি যে কন্ট্রোল হারিয়ে যাবে কি না এরকম কোন সন্দেহ ছিলো না। আমি একদিন বালুর মধ্যে চালাচ্ছিলাম এবং সেখানে অন্যান্য বাইক যেমন স্লিপ করে কিন্তু আমার এই ইন্ট্রুডার কোন স্লিপ করে নি । মোট কথায় কন্ট্রোল খুব ভালো।
ব্রেক খুব ভালো। আমার এই বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম খুব পছন্দ হয়েছে। এবিএস ব্রেকিং থাকার হলে স্কীড হওয়ার প্রবণতা কমে গেছে এবং ব্রেকিং আরও শক্তিশালী হয়েছে।
সাসপেনশনগুলোও ভালো। ভাঙ্গা রাস্তায় গেলে অন্যান্য বাইকে যেমন অনেক ঝাঁকুনি এবং বাইক থেকে শব্দ হয় কিন্তু আমার এই বাইক ভাঙ্গা রাস্তায় চালালে তেমন কোন সমস্যা হয় না। পিলিয়ন নিয়েও সাসপেনশন অনেক স্মুথ পারফরমেন্স দেয়।
আমার কাছে টায়ারের সাইজ যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে ।অন্যান্য বড় বড় বাইকের যেমন টায়ার মোটা ঠিক আমার এই বাইকেরও টায়ার মোটা। টায়ারের গ্রিপ যথেষ্ট ভালো আমার কাছে স্কীড করেনি এখন পর্যন্ত।
মাইলেজের বিষয়টা আমার কাছে মনে হয়েছে যে তেল একটু বেশি যাচ্ছে । আমি ধারণা করছি যে লিটারে আমি ৪০ কিমি মাইলেজ পাচ্ছি। মাইলেজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট যেহেতু বড় বাইক তাই একে চালনা করার জন্য তেল একটু বেশি দরকার হবেই।
আমি কে আর বাইক সেন্টার, রানিবাজার, রাজশাহী থেকে বাইকটা কিনেছি এবং তাদের কাছে সার্ভিস করার জন্য ১ বারে গিয়েছিলাম। সেখানের তাদের দক্ষ টেকনিশিয়ান দ্বারা ভালোভাবে সার্ভিস করানো হয় এবং তারা সার্ভিস এর ব্যাপারে অনেক যত্নবান।
বাইকটার দাম হচ্ছে ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা । এই দাম দিয়ে বাইক নিয়ে আমি একটু অসন্তুষ্ট। কারণ এর ফিচারস, পারফরমেন্স অনুযায়ী দামটা অনেক বেশি যার জন্য এই বাইকের বিক্রি অনেক কম। আমার কাছে মনে হয়েছে যে দামটা যদি একটু কমানো যেত এবং কিছু কিছু বিষয় দি আরও উন্নত করা যেত তাহলে মনে হয় গ্রাহকদের চাহিদা এবং বাইকের বিক্রি দুটাই বৃদ্ধি পেত।
এই ছিলো সুজুকি ইন্ট্রুডার নিয়ে আমার ১২০০ কিমি রাইডিং অভিজ্ঞতা। এটা সম্পূর্ণ আমার মতামত। আমি নিজে চালিয়ে যেসব অনুভব করেছি সেগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। বাইক পরিবর্তন করা থেমে থাকবে না কারণ মার্কেটে যদি আবার নতুন কোন বাইক আসে তাহলে আমি সেটা কিনবো এবং চালিয়ে সব বাইকের সাথে পার্থক্য তুলে ধরবো। সবাইক হেলমেড পড়ে বাইক চালাবেন এবং একটা কথা মাথায় রাখবেন যে আপনি যখন বাসা থেকে বের হল তখন আপনার পরিবার আপনার প্রিয়জন মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে যে আবার কখন বাসায় ফিরবেন। এসব কথা মাথায় নিয়ে নিরাপদে বাইক চালাবেন। আজ এই পর্যন্ত ধন্যবাদ সবাইকে এতক্ষন সাথে থাকার জন্য।