ইলেকট্রিক বাইক কেনার শখটা আমার বহু পুরনো। বর্তমানে বিভিন্ন বাইকার যখন নামীদামী প্রিমিয়াম বাইকগুলো নিয়ে বেশি মাতামাতি করে তখন আমি চেষ্টা করি ভিন্ন কিছু নিয়ে মাতামাতি করার। আমি নতুন ইলেকট্রিক বাইক ব্যবহারকারী নই এর পূর্বে আমি ব্যবহার করেছি লিফান লাইম ইলেকট্রিক বাইক। লিফান লাইম বাইকটা আমি প্রায় দেড় বছর ব্যবহার করেছি। দেড় বছর ব্যবহার করার পর ভাবলাম যে বাইকের বিষয়ে কিছু ভিন্নতা আনা দরকার । ঠিক তারই অংশ হিসেবে আমি বেছে নিয়েছি স্বদেশী ব্যান্ডের পণ্য আকিজ দুর্বার কে। আজকে আমি শোনাবে আকিজ দুর্বার ইলেকট্রিক বাইক ব্যবহারের কিছু অভিজ্ঞতা।
আমি মোঃ রকিবুল হাসান পেশায় ব্যবসায়ী। আমি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্রগ্রামে বসবাস করি। অনেক দিন ধরেই ভাবছি যে একটা রিভিউ প্রকাশ করবো। মোটরসাইকেলভ্যালী সহ বিভিন্ন ওয়েব সাইটে রিভিউ পড়ে আমার শখ জাগে নিজের বাইকের একটা রিভিউ লিখার। তাই আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
এই বাইকটা কেনার পেছনে মুল ফোকাস ছিলো এর ডিজাইনে। কারণ বাইকটার ডিজাইন অনেক সুন্দর। আমার কাছে বাইকটির বডিটা দেখতে আরটিআর এর মত লাগে এবং সামনে হেডল্যাম্পটা নিনজার একটি মডেলের বাইকের মতো লাগে। তাই ডিজাইনটা একবার দেখেই পছন্দ হয়ে যায়। ডিজাইনের সাথে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই সেটি হচ্ছে এর বডি পার্টসগুল অনেক মজবুত। ইলেকট্রিক বাইক হিসেবে বডি পার্টসগুলো সত্যিই প্রশংসনীয়। ইলেকট্রিক এই বাইকটার ডিজাইন ও বডি পার্টস এক কথায় আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছে।
সিটিং পজিশন অনেক ভালো। বসতে তেমন কষ্ট হয় না এবং পিলিয়ন নিয়ে আরামে রাইড করা যায়। হ্যান্ডেলবারটা ধরে আরাম আছে এবং এর সাথে সংযুক্ত সুইচগুলো ব্যবহার করে আমি অনেক স্বছন্দ বোধ করি। হেডল্যাম্পের আলোটা আমার কাছে অন্যান্য শক্তিশালী বাইকের মতই মনে হয়েছে।
ইলেকট্রিক বেশ ভালো ওজনের বাইকের ফলে আমি খুব সুন্দর কন্ট্রোলিং পাই। ব্রেকিং সিস্টেম ডাবল ডিস্ক ব্রেক যা আমাকে পিলিয়ন বা পিলিয়ন ছাড়া সুন্দর ব্রেকিং নিশ্চিত করে। এদিকে সাসপেনশনের কথা যদি বলি তাহলে অবশ্যই বলবো যে সাসপেনশন অনেক স্মুথ এবং ভাংগা কিংবা খুবই খারাপ রাস্তায় বেশি ঝাঁকুনি মনে হয় না।
বাইকটার ইঞ্জিন শক্তি হচ্ছে ২৫০০ ওয়াট যা আমাকে ভালো পাওয়ার এনে দেয়। পিলিয়ন নিয়ে রাইড করেও ইঞ্জিন শক্তি কম বলে মনে হয় না তবে একটানা বেশি স্পীডে রাইড করলে ইঞ্জিন পয়ারফরমেন্স একটু কম কম মনে হয় এছাড়া আমি লক্ষ্য করেছি যে বাইকটা এক চার্জে প্রায় ৭০ কিমি পথ পাড়ি দেয়। ভালো মানের পাউডার ব্যাটারী থাকার ফলে যত বেশি চালানো যায় মনে হয় যে তত বেশি মাইলেজ পাওয়া যায়। মোট কথায় বেশি চালালে মাইলেজ অনেক পাওয়া যায় কিন্তু বাইকটা যদি আপনি ১০-১২ দিন ফেলে রাখেন সেক্ষত্রে ব্যাটারি ব্যাক আপ কম মনে হবে। সব মিলিয়ে ইঞ্জিন ও মাইলেজ দারুণ। আরেকটি বিষয় সেটি হচ্ছে যে লিফান লাইম এর থেকে ইঞ্জিনের শক্তি আমার আছে এটার বেশি মনে হয়েছে।
সার্ভিস সেন্টার নিয়ে আমি একটু ঝামেলায় আছি কারণ বর্তমানে আকিজের নিজস্ব কোন সার্ভিস সেন্টার নাই। তারা কেনার সময় আমাকে তাদের পরিচিত একটা মেকারের ঠিকানা দিয়ে দিয়েছিলো। আমি সাধারণত তাদের ওই মেকার থেকেই সার্ভিস করিয়ে থাকি। আমার চট্রগ্রামে তাদের সার্ভিস সেন্টার করা উচিত । আশা করি তাদের অন্যান্য অঞ্চলে নিজস্ব সার্ভিস সেন্টার আছে।
আমি তাদের এই বাইকটার দামটা একটু কমানোর জন্য অনুরোধ করবো। দামটা যদি ১ লাখের মধ্যে নিয়ে আসা যায় তাহলে ক্রেতা সমাগম আরও বাড়বে। কোম্পানীর কাছে আমার এটাই অনুরোধ থাকবে পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ের জন্য অনুরোধ থাকবে যে চট্রগ্রামে তাদের নিজস্ব একটা সার্ভিস সেন্টার করা। এই ছিলো আজকে আমার আকিজ দুর্বার নিয়ে কিছু মতামত। আগামী তে যদি কোন বাইক কিনি তবে অবশ্যই আরেকটি শক্তিশালী ইলেকট্রিক বাইক কিনবো এবং আপনাদের এইভাবে রিভিউ দিয়ে যাবো। এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।