আমি মোঃ আব্দুল হাকিম, পুঠিয়া রাজশাহী। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীক বিভিন্ন কাজে আমাকে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করা লাগে যার ফলে আমি মোটরসাইকেলের প্রয়োজন অনুভব করি। আমার অনেক দিনের শখ নিজের একটা মোটরসাইকেল থাকবে। আমি বিভিন্ন সময় বন্ধুদের বাইক নিয়ে ঘুরাঘুরি করেছি এবং এক পর্যায়ে আমার ইচ্ছা হল যে আমার নিজস্ব একটা মোটরসাইকেল থাকুক। আমি বিভিন্নজনের বিভিন্ন রকম পরামর্শ পেয়ে এক পর্যায়ে জানতে পারি রোডমাস্টারের মোটরসাইকেলগুলো খুবই ভালো মানের এবং দামটা সাধ্যের মধ্যে। মোটকথা বলা যায় যে সাধ্যের মধ্যে সব কিছু রয়েছে তাদের মোটরসাইকেলগুলোতে। তাই কারো পরামর্শ তে আর কান না দিয়ে কিনে ফেলি রোডমাস্টার ডিলাইট ১০০সিসি।
প্রায় ৫ মাস যাবত আমি এই মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করছি এবং এই ৫ মাসে আমি প্রায় ৩০০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছি। এটা আমার নিজস্ব প্রথম মোটরসাইকেল। আজ আমি আপনাদের সাথে এই মোটরসাইকেলটির ভালো মন্দ কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রথমে আসি ডিজাইন নিয়ে। ডিজাইনটি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। ১০০ সিসির একটি মোটরসাইকেল হিসেবে আমি অনেক ভালো মানের ডিজাইন লক্ষ্য করেছি। ফুয়েল ট্যাংকারের সাথে সুন্দর ডিজাইন, বিভিন্ন কালারে সংমিশ্রণ এসব কিছু আমকে ভালো লেগেছে। অন্যদিকে বিল্ড কোয়ালিটির কথা যদি বলতে হয় তবে আমি বলবো যে মোটরসাইকেলটির বিল্ড কোয়ালিটি অনেক মজবুত এবং টেকসই।
এরপরে আসি মোটরসাইকেলটির ইঞ্জিন এর দিকে।ইঞ্জিনটা আমার কাছে অনেক ভালো মনে হয়েছে কারণ, ইঞ্জিনের শব্দ, পারফরমেন্স এবং শক্তি সব কিছু আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছে। আমার কাছে বিশেষ করে ইঞ্জিনের স্মুথ শব্দটা শুনতে খুব ভালো লাগে। ইঞ্জিনের আমি আজ পর্যন্ত খারাপ কিছু পায়নি।
মোটরসাইকেলটি চালিয়ে অনেক আরাম পেয়েছি। আমি বিভিন্ন ধরনের রাস্তায় প্রায় অনেকক্ষন চালিয়েছি এবং কোনো ঝামেলা ছাড়াই নিজের গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছি। সিটিং পজিশন অনেক আরামদায়ক এবং ডাবল চড়লে আরও আরামদায়ক মনে হয় এবং আমি আজ পর্যন্ত কোনো ব্যাক পেইন অনুভব করিনি। হ্যান্ডেলবার ধরেও আমি আরাম অনুভব করি। অপরদিকে হ্যান্ডলবারের সাথে সংযুক্ত সুইচগুলোর মান আমার কাছে যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে। আমি রাতে অন্ধকার রাস্তায় ও হাইওয়েতে চালিয়েছি এবং হেডল্যাম্পের ভালো আলো পেয়েছি। বিশেষ করে অন্ধকার রাস্তায় আমি আলোর কোনো কমতি লক্ষ্য করিনি।
কন্ট্রোল খুবই ভালো। আমি প্রায় ৮০ কিমি প্রতি ঘন্টায় টপ স্পীড তুলতে সক্ষম হয়েছি এবং আমার কাছে মনে হয়েছে বাইকটির টপ স্পীড আরও উঠানো সম্ভব। অন্যদিকে টপ স্পীডে কোনো প্রকার ঝাঁকুনি, ইঞ্জিনের বাজে শব্দ এবং ভাইব্রেশন অনুভব করিনি। ব্রেক আমার কাছে ভালো লেগেছে তবে কেনা থেকেই পেছনের ব্রেকটা অনেক কড়া যার ফলে টায়ারটা অনেক স্লিপ করে। সময় পেলে আমি তাদের সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়ে ব্রেকটা একটু লুজ করে নিবো। সাসপেনশন আমার কাছে ভালো লেগেছে তবে সিংগেল এর থেকে ডাবল চড়লে সাসপেনশনটা আরও ভালো পারফরমেন্স দেয়। সামনের টায়ারটার গ্রিপ খুব ভালো কিন্তু পেছনের টায়ারটা প্রায় সব রকম রাস্তাতেই কড়া ব্রেক করলে স্লিপ করে।
ভালো দিক
- ডিজাইনটা সুন্দর
- চালিয়ে অনেক আরাম
- হেডল্যাম্পের আলো অনেক শক্তিশালী
- ইঞ্জিনের শব্দ এবং পারফরমেন্স দুটোই খুব ভালো
- সামনে ডিস্ক ব্রেক
খারাপ দিক গুলো বলতে গেলে আমি এখন পর্যন্ত কোনো খারাপ দিক খুঁজে পায়নি। ছোট খাটো কিছু বিষয় আমার কাছে খারাপ লাগলেও সেগুলো তেমন সমস্যা করেনা।
মাইলেজ নিয়ে আমি অনেক সন্তুষ্ট। বর্তমানে আমি মাইলেজ পাচ্ছি ৬০ কিমি প্রতি লিটারের একটু বেশী। আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি যে ১০০ সিসির বাইক হিসেবে মোটরসাইকেলটি অনেক ভালো মাইলেজ সরবরাহ করে। কোম্পানি এই মোটরসাইকেলটির মাইলেজ এমনটাই দাবি করেছে।
সার্ভিসিং সেন্টারের মান বলতে গেলে আমার কাছে তাদের আচরণ, ঠিক করার মান,দক্ষতা এবং অন্যান্য সব কিছু বেশ ভালো লেগেছে। তাদের সার্ভিসিং আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছে এবং তাদের দক্ষতা অন্যান্য সার্ভিস টেকনিশিয়ানদের চেয়ে অনেক বেশি আমার কাছে মনে হয়েছে।
কোয়ালিটি, পারফরমেন্স, ইঞ্জিন, ডিজাইন আউটলুক সব কিছু বিবেচনা করে আমার কাছে দামটা একদম ঠিক বলে মনে হয়েছে কারণ মোটরসাইকেলটির সব কিছু চোখে লাগার মতো এবং কেউ একবার তাকালে আমার বিশ্বাস সে আরেকবার তাকাতে বাধ্য হবে। আমি মনে করি রোডমাস্টার বেশ সস্তায় তাদের মোটরসাইকেলগুলো গ্রাহকদের হাতে তুলে দিচ্ছে।
যদি কেউ এই মোটরসাইকেলটি কিনতে চান সেক্ষেত্রে আমি বলবো যে- জ্বি হ্যাঁ মোটরসাইকেলটি অবশ্যই কিনতে পারেন যেহেতু ফিচারস অনুযায়ী অন্যান্য ১০০ সিসি মোটরসাইকেলের তুলনায় দামটা অনেক কম। তাই অন্য কোনো মোটরসাইকেলের দিকে না গিয়ে চোখ বন্ধ করে এটা কিনে ফেলুন।