মোটরসাইকেল মানুষের জীবনের যেমন সুবিধা নিয়ে এসেছে, তেমনি এটি ব্যবহারে অসুবিধাও রয়েছে অনেক। তবে সচেতনতার সাথে চালালে এটি মানুষের জীবনে অনেক উপকারে আসে। তবে মনে রাখতে হবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। মোটরসাইকেল এর মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত যাতায়াত করা যায়। মোটরসাইকেল কিনার আগে এবার আমি আগেই ভেবে রেখেছিলাম একটা ভিন্ন ব্যান্ডের মোটরসাইকেল কিনবো। মোটরসাইকেল চালাতে আমার খুবই ভাল লাগে। আমার পরিচয় আমি আব্দুল করিম। পেশায় আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার মোটরসাইকেল এর নাম রোড মাস্টার ডিলাইট ১০০ সিসি। এই মোটরসাইকেলটি আমি আমার ব্যবসার কাজে ও ব্যক্তিগত যাতায়াতের জন্য কিনেছি। এটা আমার জীবনের তৃতীয় বাইক। এই মোটরসাইকেলটি আমি দেড় বছর যাবত ব্যবহার করছি। আমি দেড় বছরে প্রায় ১৫,০০০ কিমি পথ চালিয়েছি। এই মোটরসাইকেলটি হঠাৎ করেই কিনে ছিলাম, আগে থেকে আমার কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। আমি আজ সবার সাথে আমার এই মোটরসাইকেল এর কিছু তথ্য শেয়ার করার জন্য হাজির হয়েছি।
এই বাইকটির ইঞ্জিন পারফরমেন্স এখন পর্যন্ত আমার খুব ভাল লেগেছে। তবে মোটরসাইকেলটি দীর্ঘ যাতায়াত করলে এর ইঞ্জিন অনেক গরম হয়। তবে এটি আমি গুরুতর ভাবে আমলে নাই। এই ইঞ্জিনটি খুব শক্তিশালী। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাইকটি নির্দিষ্ট গতিতে তুলতে পারে। আমি সর্বোচ্চ গতিতে ৭৫ কিমি/ ঘন্টায় তুলেছি। আমি বেশি গতিতে বাইকটি চালানোর সময় লক্ষ্য করেছে এর ইঞ্জিনে খারাপ ধরনের কোন শব্দ হয় না। বরং এর ইঞ্জিনের শব্দটা আমার খুবই ভাল লেগেছে।
এই বাইকটি কিনতে যাবার পরে শোরুমে গিয়ে এর ডিজাইনটা এক দেখাতেই আমার খুব ভাল লেগে যায়। এর রঙ ও ডিজাইন চমৎকার। এটি খুব সহজেই সবাইকে আকৃষ্ট করবে। এই বাইকের বডির প্লাস্টিক গুলো আমার কাছে খুব হালকা মনে হয়েছে। এগুলো অল্প আঘাতে ভেংগে যেতে পারে। আমার মতে প্লাস্টিক গুলো আরো মোটা হলে ভাল হত।
এই মোটরসাইকেল এর কন্ট্রোল নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। কেননা এর ব্রেক অনেক ভাল। এর চাকা দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি এর গ্রিপও ভালো। এই বাইকের সামনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক থাকায় আমি খুব আরামের সাথে এটি কন্ট্রোল করতে পারি। এই বাইকটির সিটিং পজিশন আমার কাছে ভাল মনে হয়। আমি সিটে বসে খুব ভাল মত কন্ট্রোল করতে পারি। প্রথমের দিকে মোটরসাইকেলটি চালাতে একটু কষ্ট হলেও এখন আমি আরামের সাথে এটি চালাতে পারি। এক দিনে আমি প্রায় ৩০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়েছি। আমার দীর্ঘ যাতায়াত করতে আগের মত এখন আর হাতে, পিঠে ব্যথা করে না। এখন আমার অভ্যাস হয়ে গেছে, যে কোন যাতায়াতে আমি আরামের সাথে চলি। আমি বাইকটি চালানোর সময় এখনও কোন প্রকার ভাইব্রেট লক্ষ্য করি নাই। এছাড়া এর সুইচ গুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি এগুলো ব্যবহার করে বেশ মজা পাচ্ছি। এই বাইকটির মিটারটি দেখতে অনেক সুন্দর। বাইকটির সাসপেনশন মোটামুটি ভাল। তবে আমি কাচা রাস্তার চেয়ে পাকা রাস্তায় বেশি চালাই। বাইকটির হেড লাইট থেকে আমি পর্যাপ্ত আলো পাই। এই বাইকটির ব্যাটারীর কোয়ালিটি আমার কাছে ভাল মনে হয়েছে। এর লুকিং গ্লাস দুটো দেখতে অনেক সুন্দর। এছাড়া মোটরসাইকেলটি খুব বেশি উঁচু না। আমি খুব সহজেই সিটে বসে মাটিতে পা রাখতে পারি।
আমি এই মোটরসাইকেল এর মাইলেজ নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। কারণ শোরুম থেকে আমাকে বলেছিল এক লিটার তেলে ৬০ কিমি মাইলেজ পাবো এবং আমি এখনও ঠিক মাইলেজটি পাচ্ছি। তবে খারাপ বা কাচা রাস্তায় চালালে একটু কম মাইলেজ পাই। এছাড়া আমি এক বার সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়েছি। সেখানে তাদের কাজের সিস্টেম আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমার সাথেও তারা ভাল ব্যবহার করেছে। আমি বড় কোন সমস্যা নিয়ে যাই নি সেখানে। আমার বাইকের চেন বড় হয়ে গিয়েছিল, সেটি টাইট করে নেবার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। তাদের কাজের মান ভাল। এছাড়া তাদের পরিবেশটা বেশ মনোরম।
রোড মাস্টার ১০০ সিসি বাইকটির দাম তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি। কেননা ১০০ সিসির অন্য বাইক কিনলে দাম অনেক কম। তাই আমার দাবি, দামটা আর একটু কমাতে হবে। ক্রেতারা সব সময় চায় কম দামে ভাল মোটরসাইকেল কিনতে। দাম কম হলে সেই পণ্যের চাহিদা বাড়ে।
ভাল দিকঃ ডিজাইন ভাল, ইঞ্জিন পারফরমেন্স ভাল, তেল খেরচ কম, সার্ভিসিং সেন্টারে কাজের মান ভাল, সুইচ গুলো দেখতে সুন্দর, ব্যাটারী উন্নত মানের।
মন্দ দিকঃ এর বডির প্লাস্টিক গুলো খুব হালকা, খুব দ্রুত চেইন লুজ হয়ে যায়।
পরিশেষে বলতে চাই, যারা ১০০ সিসির মধ্যে ভাল মাইলেজ সমৃদ্ধ মোটরসাইকেল কিনতে চান তারা রোড মাস্টার ১০০ সিসির এই মোটরসাইকেলটি নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন। এই মোটরসাইকেলটির ইঞ্জিন পারফরমেন্স ও অন্যান্য দিক গুলো অনেক ভাল। সবাইকে ধন্যবাদ।