আমাদের দেশে বিভিন্ন ব্যান্ডের মোটরসাইকেল রয়েছে। এদের মধ্যে রোড মাস্টার একটি। সকল প্রকার যাতায়াতের জন্য এই মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করে অনেক মজা আছে। মোটরসাইকেল মানেই কম সময়ে অধিক পথ যাতায়াত করা। সবাইকে স্বাগত জানিয়ে এখন আমি আমার পরিচয় দিচ্ছি। আমার নাম শেখ ফরিদ। পেশায় আমি একজন মৎস্য ব্যবসায়ী। আমার মোটরসাইকেল এর নাম রোড মাস্টার ১০০ সিসি। ব্যবসায়ের কাজের জন্য আমাকে অনেক জায়গাতে যেতে হয়। মূলত এই কারণেই মোটরসাইকেলটি আমি কিনেছি। প্রয়োজন ছাড়া আমি মোটরসাইকেল খুব কম চালাই। এই মোটরসাইকেলটি আমি ৭ মাস যাবত ব্যবহার করছি। ৭ মাসে আমি প্রায় ৪২০০ কিমি পথ চালিয়েছি। তবে আমি এখনো পুরোপুরি ভাবে মোটরসাইকেল চালাতে পারি না। অনেক ভয়ে ভয়েই চালাই। কয়েক দিন আগে আমি মোটরসাইকেল ভ্যালী কর্তৃক আয়োজিত মটোল্যাব মাঠে ফ্রী মোটরসাইকেল ট্রেনিং প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি হয়েছি। সেখানে আমি মাত্র একদিন ট্রেনিং করেছি। আমি চাই ভাল ভাবে মোটরসাইকেল চালানো শিখতে। যাই হোক, বর্তমানে আমি ভাল মাইলেজ পাবো এমন আশায় ১০০ সিসির এই মোটরসাইকেলটি কিনেছি। এই মোটরসাইকেলটি আমি “সুরভী মটরস” পুঠিয়া, রাজশাহীর একটি শোরুম থেকে কিনেছি। ৭ মাস চালিয়েই আমি মোটরসাইকেলটির ভাল ও মন্দ দিক গুলো মোটামুটি বুঝতে পেরেছি। তাই এখন আমি এই দিকগুলো এবং আমার চালানোর অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করব।
প্রথমে আমি ডিজাইন নিয়ে কথা বলতে চাই। রোড মাস্টার ১০০ সিসি মোটরসাইকেল এর ডিজাইন অনেক ভাল। এর বিল্ড কোয়ালিটি এক কথায় আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে। আমার আগে থেকে কোন মোটরসাইকেল পছন্দ ছিল না। সরাসরি শোরুমে গিয়ে এটি পছন্দ করে কিনেছি। আমি অনেক গুলো মোটরসাইকেল দেখে এটি পছন্দ করেছি। এই মোটরসাইকেলটির বডির প্লাস্টিক গুলো আমার কাছে মজবুত মনে হয়েছে। এছাড়া আমি মনে করি এই মোটরসাইকেলটি সকল বয়সের মানুষের সাথে মানানসই হবে। আমি এই মোটরসাইকেল থেকে ভাল পারফরমেন্স পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয় নাই। এর ইঞ্জিনটা আমার কাছে খুব শক্তিশালী মনে হয়েছে। এর শব্দটা অনেক সুন্দর। তবে আমি মোটরসাইকেলটি দ্রুত স্পীডে চালানোর সময় লক্ষ্য করে দেখেছি চেনের ভেতরে খারাপ শব্দ করে। কিন্তু ধীর গতিতে কোন সমস্যা বুঝতে পারি নাই। হাই স্পীডে চালালে মোটরসাইকেল এর মাথা ভাইব্রেট করে।
মোটরসাইকেলটি কিনার সময় শোরুম থেকে আমাকে বলেছিল ১ লিটার তেলে ৬০ কিমি পথ চলতে পারবো। এখন আমি ঠিক সেই মাইলেজটি পাচ্ছি। এছাড়া আমি তেল খরচ কম হবে এই আশায় মোটরসাইকেলটি কিনেছিলাম। সেজন্য আমি এই দিক থেকে খুবই খুশি।
এই মোটরসাইকেলটির সিটিং পজিশন অনেক বড় ও চওড়া। এজন্য আমি এক সাথে তিন জন নিয়েও চালাতে পারি। এছাড়া মোটরসাইকেলটি তেমন উঁচু না হওয়ায় সিটে বসে আমি খুব সহজেই মাটিতে পা রাখতে পারি। এর হ্যান্ডেলবারটি আমাকে ভাল অনুভূতি এনে দেয়। আমি হাই রোডে সর্বোচ্চ ৬০ কিমি পার ঘন্টায় গতি তুলেছি। বেশি গতিতে মোটরসাইকেলটির মাথা কাপে। এছাড়া এক দিনে প্রায় ৬০ কিমি পথ চালিয়েছি। তবে দীর্ঘক্ষন বসে চালালে আমার কাঁধে, পিঠে, কোমরে ব্যথা করে। আমি দীর্ঘ যাতায়াত খুবই কম করি। অতিরিক্ত প্রয়োজন ছাড়া আমি মোটরসাইকেল খুব কম চালাই। এছাড়া আমি বেশি স্পীডেও মোটরসাইকেল চালানো পছন্দ করি না। এই মোটরসাইকেল এর সুইচ গুলো দেখতে খুবই সুন্দর। যা ব্যবহার করতে আমার কোন সমস্যা হয় না। মোটরসাইকেলটি আমি রাতে চালিয়ে দেখেছি যে, রাতে হেড লাইটে পর্যাপ্ত আলো হয়। যা আমাকে পরিষ্কার রাস্তা দেখাতে সাহায্য করে। তবে খারাপ রাস্তায় একা একা মোটরসাইকেলটি চালালে অতিরিক্ত ঝাঁকুনি লাগে। ব্রেক এর কথা বলতে গেলে ব্রেক খুবই ভাল কাজ করে। তবে ডিস্ক ব্রেক থাকায় কন্ট্রোল করতে আমার আরো বেশি সুবিধা হয়। তবুও আমি ভাল কন্ট্রোল করতে পারি। এছাড়া এর চাকার গ্রিপ গুলো অনেক ভাল। খুব সহজে চাকা স্লিপ করে না। এর লুকিং গ্লাস দুটিও দেখতে চমৎকার। এর ব্যাটারির কোয়ালিটিও বেশ ভাল। মোটরসাইকেলটি চালিয়ে আমি মোটামুটি আরাম অনুভব করি।
আমার মোটরসাইকেলটি এক দিন মাত্র সার্ভিসিং সেন্টারে সার্ভিসিং করিয়েছি। তবে আমি বড় কোন সমস্যা নিয়ে সেখানে যাই নাই। তারা আমার মোটরসাইকেল এর সব কিছু চেক করে দেন। তবে আমি বেশির ভাগ সময় আমাদের বাজারের মেকানিক এর কাছে সার্ভিসিং করিয়ে নিই। তবে সার্ভিসিং সেন্টারের পরিবেশটি খুব ভাল। তাদের ব্যবহার ও কাজের মান অনেক ভাল। এছাড়া এই মোটরসাইকেলটির পারফরমেন্স অনু্যায়ী আমার কাছে এর দামটা একটু বেশি বলে মনে হয়েছে। বিক্রয়ের হার বাড়াতে হলে দামটা আরো কিছু কমাতে হবে। অন্যান্য ব্যান্ডের ১০০ সিসি মোটরসাইকেল এর দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। তাই কোম্পানির উচিৎ দামটা আর একটু কমানো। তাহলে রোড মাস্টার মোটরসাইকেল এর প্রতি মানুষের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে।
সকলের উদ্দেশ্যে আমার পরামর্শ এই যে, কেউ যদি ১০০ সিসির মধ্যে ভাল মাইলেজ সমৃদ্ধ মোটরসাইকেল কিনতে চান তবে আপনারা নিশ্চিন্তে রোড মাস্টার ১০০ সিসির এই মোটরসাইকেলটি কিনতে পারেন। এটি কিনলে আমি মনে করি আপনারাও আমার মত ভাল অনুভূতি পাবেন। কারন মোটরসাইকেলটি সব দিক থেকেই অনেক ভাল। এর ইঞ্জিন পারফরমেন্সও অনেক ভাল। সবাইকে ধন্যবদ।