
প্রথমেই আমি আমার পরিচয় জানাচ্ছি। আমি মোঃ আরিফ হোসেন। বর্তমানে আমি এখন মোটরসাইকেলের মেকানিক এর কাজ শিখছি। ভবিষ্যতে আমি বড় মেকানিক হতে চাই। এখন আমি সকলের উদ্দেশ্যে আমার বাইকের ভাল -মন্দ বিষয় গুলো তুলে ধরছি। আমার মোটরসাইকেল এর নাম রোড মাস্টার প্রাইম ১০০ সিসি। মোটরসাইকেলটি আমি আমার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার জন্য কিনেছি। এই মোটরসাইকেলটি আমি এক মাস যাবত ব্যবহার করছি। আমি এক মাসে প্রায় ৯০০ কিমি পথ চালিয়েছি কোন প্রকারের দূর্ঘটনা ছাড়াই। এই বাইকটি আমার জীবনের ১ম বাইক। অনেক দিন থেকে টাকা জমিয়ে রেখে এই বাইকটি কিনেছি। এই মোটরসাইকেল চালাতে আমার খুবই ভাল লাগে। আমার বডির সাথেও এটি বেশ মানানসই। এই বাইকটি আমার বন্ধুদের কাছে আগে থেকেই দেখেছি। এর মাইলেজ খুব ভাল সেই কারনে এই মোটরসাইকেলটি কিনার আগ্রহ ছিল। নতুন কোয়ালিটির মোটরসাইকেল দেখে আমার আরেকটি বন্ধুও দুই দিন আগে এই বাইক কিনেছে। এই মোটরসাইকেলটি আমি পুঠিয়া, রাজশাহীর একটি শোরুম থেকে কিনেছি। বর্তমানে মোটরসাইকেলটি আমার খুব কম চালানো পড়ে। কারন সব সময় আমি মোটরসাইকেল সার্ভিসিং এর কাজ শিখার জন্য একটি দোকানে থাকি। এজন্য বাইক চালানোর সময় খুব কম পাই। তবে আমি এই বাইকটি ১ মাস চালিয়ে এটি থেকে ভাল পারফরমেন্স পেয়েছি।
ডিজাইন নিয়ে আমি আগে কিছু কথা বলতে চাই। আমার এই মোটরসাইকেল এর ডিজাইন ও রঙ এই দুইটা জিনিস আমার পছন্দ মত কিনেছি। এর বিল্ড কোয়ালিটি আমার কাছে মজবুত মনে হয়েছে। বাইকটির বডির প্লাস্টিক গুলো অনেক মজবুত। আমার বিশ্বাস এগুলো খুব সহজে ভেংগে যাবে না। এই মোটরসাইকেলটি যে কোন বয়সের মানুষের সাথেই মানানসই হবে বলে মনে করি। তবে বয়স্কদের জন্য এটি চালানো সুবিধাজনক। বাইকটির তেলের ট্যাংকারটাও বেশ সুন্দর।

রোড মাস্টার প্রাইম ১০০ সিসি মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিন পারফরমেন্স অনেক ভাল। ১০০ সিসির বাইক হিসেবে এটির ইঞ্জিন মোটামুটি শক্তিশালী। আমি তিন জন নিয়েও বাইকটি চালাতে পারি। এর সিটিং পজিশন বেশ বড়। এর সিট নরম আছে। আমি বেশি যাতায়াত করেও আরাম অনুভব করি। এছাড়া এই ইঞ্জিনটি ভাল হওয়ায় আমি মাইলেজও ভাল পাচ্ছি। তবে ইঞ্জিনটি কোন ওভার হীট হয়। চেনের মধ্যে মাঝে মাঝে খারাপ শব্দ করে, তবে এটি কোন সমস্যা না। কারন, চেন লুজ হবার কারনে এই সমস্যাটা দেখা দিয়েছিল।
মোটরসাইকেলটি কিনার সময় শোরুম থেকে আমাকে বলেছিল এক লিটারে ৬০ কিমি মাইলেজ পাবো। এখন আমি ঠিক সেই মাইলেজটি পাচ্ছি। এই জন্য আমি একটু বেশিই খুশি। এই বিষয়ে তাদের কথার সাথে কাজের মিল পেয়েছি। আমি মনে করি ১০০ সিসির বাইক হিসেবে এই মাইলেজ পাওয়াটা সঠিক আছে।
এই মোটরসাইকেলটির ডিজাইনের পাশাপাশি এর সিটিং পজিশনও অনেক ভাল। মোটরসাইকেল টি ছোট হওয়ায় আমি খুব সহজেই সিটে বসে মাটিতে পা রাখতে পারি। এর হ্যান্ডেল বারটি বেশ সুন্দর এবং এটি ধরে চালালে ভাল অনুভুতি পাই। বাইকটির টায়ার ও এর গ্রিপ গুলো দেখতে অনেক সুন্দর। এটি থেকে আমি ভাল কন্ট্রোল করতে পারি। বাইকটির ব্রেক অনেক ভাল। তবে মোটরসাইকেলটির সাসপেনশন গুলো আমার কাছে একটু সমস্যা আছে বলে মনে হয়। খারাপ রাস্তাতে একা চালালে অতিরিক্ত ঝাঁকুনি লাগে। আমি এই মোটরসাইকেলটি হাই রোডে সর্বোচ্চ গতিতে আমি ৮৬ তুলেছি। তবে আমি এত বেশি স্পিডে বাইক চালাই না। আমি আগেও বলেছি বাইক আমি খুবই কম চালাই। এক দিনে সর্বোচ্চ ৫০ কিমি পথ চালিয়েছি। দীর্ঘ যাতায়াত করলে আমার হাত ব্যাথা করে। আর অতিদীর্ঘ যাতায়াতে আমার বুকে, পিঠে, কোমরে ব্যথা করে। আমি রাতে বাইকটি চালিয়ে দেখছি এর হেড লাইট থেকে প্রচুর আলো হয়। এর সুইচ গুলো দেখতে অনেক সুন্দর, যা ব্যবহার করতে আমার কোন প্রকার সমস্যা হয় না। এর লুকিং গ্লাস দুটিও বেশ ভাল। এর ব্যাটারী কোয়ালিটি আমার ভাল লেগেছে, জানি না এটি কেমন টেকসই হবে।
আমি একবার সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়েছি। আমি কোন সমস্যা নিয়ে সেখানে যাই নাই। কারণ এখন পর্যন্ত আমার বাইকে কোন বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয় নাই। অন্যান্য সব কিছু ঠিক আছে কিনা সেটি চেক করতে গিয়েছিলাম। সেখানকার পরিবেশ আমার ভাল লেগেছে। তারা আমার সাথে যথেষ্ট পরিমানে ভাল ব্যবহার করেছে। তাদের কাজের মান নিয়ে আমি সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে এসেছি। তবে এখন যদি হালকা কোন কাজ করার প্রয়োজন হয়, তবে সেগুলো আমি নিজেই সার্ভিসিং করি।
এই বাইকটির সব কিছু বিবেচনা করে এর দামটা আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে। আমি দেখেছি অন্যান্য ব্যান্ডের ১০০ সিসি বাইকের দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। বাইকটির দাম আর একটু কম হলে খুব ভাল হত। তবে শিকার করছি যে, বাইকটি থেকে আমি এখন পর্যন্ত মোটামুটি ভাল পারফরমেন্স পাই।
পরিশেষে বলতে চাই, এই মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিনের পারফরমেন্স ও মাইলেজ এর দিক বিবেচনা করে রোড মাস্টার প্রাইম ১০০ সিসির মোটরসাইকেলটি আপনারা নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন। আর কোম্পানির কাছে আমার দাবি, আগামী তে এই বাইক বের হলে সাসপেনশনের সমস্যাটি সমাধান করে বের করলে ক্রেতাদের জন্য একটু ভাল হত। এটি বাদে আমি মনে করি এই বাইকটির সব কিছুই মোটামুটি ভাল। সবাইকে ধন্যবাদ।