রোডমাস্টার স্বদেশি ব্রান্ড হিসেবে দিন দিন গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করে চলেছে এবং কম দামের মধ্যে খুব ভালো মানের বাইক গ্রাহকদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আমি রোডমাস্টার র্যা পিডো ১৫০ ব্যবহারকারী এবং গত ৬ মাস যাবত ব্যবহার করছি র্যা পিডো ১৫০। আমার যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করা সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বাইকটা ব্যবহার করি অন্যদিকে রোডমাস্টার র্যা পিডো ১৫০ বাইকটার ডিজাইন ও আউটলুক আমার খুব ভালো লেগে যায়। আসলে সকলেই মূলত যাতায়াত সুবিধার জন্য বাইক কিনে কেউ কেউ আবার যাতায়াত সুবিধাসহ অবসরে একটু বিনোদনের জন্য বাইক ব্যবহার করে। আমি ঠিক তেমনি আমার চাকুরি ও যাতায়াত সুবিধার জন্য বাইক ব্যবহার করি । আমি এর পূর্বে ব্যবহার করেছি বাজাজের দুটি বাইক বাজাজ ডিস্কোভার ১০০ এবং বাজাজ পালসার ১৫০ সিসি ।
এই ৬ মাসে বাইকটি নিয়ে প্রায় ৪৬০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছি। আমার রাইডিং অভিজ্ঞতার গল্প আমি আপনাদের শোনাবো। গল্প করার আগে আমি নিজের পরিচয় দিতে চাই আমার নাম মোঃ মামুন পেশায় চাকুরীজীবী। আমার বর্তমান ঠিকানা রাজধানীর বনানীতে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
ইঞ্জিনের পারফরমেন্স
ইঞ্জিনের বিষয়ে যদি বলি তবে এক কথায় বলতে হয় যে ইঞ্জিনটা অনেক স্মুথ এবং পারফরমেন্স খুব ভালো পাচ্ছি । কিন্তু ভালো বিষয়ের সাথে আবার কিছু খারাপ বিষয় থাকে সেটা হচ্ছে ইঞ্জিনটা বেশি গরম হয়ে যায়। জানি না কেন, আবার আধা ঘণ্টা চালানোর পরে শব্দটা একটু পরিবর্তন হয়ে যায় কিন্তু এগুলোর পাশাপাশি ইঞ্জিনটা আমাকে খুব ভালো পারফরমেন্স দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে আমি টপ স্পীড প্রায় ১০৪ কিমি তুলেছি এবং আমার কাছে টপ স্পীড একটু কম মনে হয়েছে। এদিকে আমি দেখেছি যে ২ থেকে ৪ গিয়ারে থাকা অবস্থায় হঠাৎ করে থ্রটল কম দিচ্ছে এবং সেটা আবার একটু পরেই ঠিক হয়ে যাচ্ছে। এসব কিছু মিলিয়ে ইঞ্জিনের পারফরমেন্স আমার কাছে তেমন খারাপ লাগেনি।
ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি
ডিজাইন নিয়ে আমি বলবো যে এই বাজেটের মধ্যে সেরা একটা ডিজাইন রয়েছে রোডমাস্টার র্যা পিডো ১৫০ সিসিতে। বাইকটার মাস্কুলার বডি কিট এবং কালার কম্বিনেশন আমার খুব ভালো লেগেছে। ডিজাইন নিয়ে আমি এক কথায় বলবো যে সহনীয় দামের মধ্যে খুব সুন্দর একটা ডিজাইন। এদিকে বাইকটির বডির প্লাস্টিকগুলো আমার কাছে যথেষ্ট মজবুত লেগেছে এবং সেগুলো খুব সহজে ফেটে বা ভেঙ্গে যায় না কিন্তু আমি আরেকটি বিষয় পরিষ্কার বলতে চায় যে যেহেতু বাইকটি বয়স প্রায় ৬ মাস তাই এত সহজেই সব কিছু বলা যায় না তবে এমনিতে আমার কাছে প্লাস্টিকগুলো খারাপ লাগেনি। মোট কথায় ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
সিটিং পজিশন ও হ্যান্ডেলবার
সিটিং পজিশন শক্ত না কিন্তু আমি মনে করি যে পজিশনটা আরেকটু উন্নত করা উচিত। পিলিয়নের জন্য যে সিটিং পজিশন আছে সেখানে একটু বসতে সমস্যা হয় এবং ব্রেক করলে পিলিয়ন সামনের দিকে চলে আসে। এছাড়া আমি দীর্ঘ ২৫০ কিমি চালিয়ে কোন ব্যাক পেইন অনুভব করিনি। আমি যেহেতু একটু লম্বা তাই সিটিং পজিশনে বসে আমার পা পেতে তেমন সমস্যা হয় না। হ্যান্ডেলবারটা সিটিং পজিশনের সাথে পুরোপুরি ম্যাচিং যার কারনে হাতে ব্যাথা বা কবজি তে ব্যাথা হয় না।
ব্রেকিং
ব্রেকিং নিয়ে যদি বলি তবে অবশ্যই বলবো যে সিবিএস ব্রেকিং আমাকে খুব ভালো সাপোর্ট দিচ্ছে। সিবিএস ব্রেকিং থাকার কারনে আমি খুব ভালো ভাবেই স্পীড নিয়ন্ত্রন করে নিতে পারি কিন্তু একদিন আমি লক্ষ্য করেছিলাম যে বাইকটার স্পীড ১২ কিমি/ঘন্টা ছিলো এবং ব্রেক করার সাথে সাথে একটু কাত হয়ে গিয়েছিলো হইতো বা আমারই ভুল ছিলো এতে আমার কোন সমস্যা হয় নি। সব মিলিয়ে বাইকটার ব্রেকিং খুব ভালো আছে।
সাসপেনশন
সাসপেনশনের বিষয় নিয়ে বলতে গেলে আমি স্মুথ সাসপেনশন অনুভব করেছি এবং যে কোন রাস্তায় খুব কম ঝাঁকুনি অনুভব করি। সাসপেনশন আমার কাছে খুব নরম মনে হয় এবং সামনে ও পেছনে দুটাই খুব ভালো পারফরমেন্স দেয়।
মাইলেজ
আমি বনানী শোরুম থেকে বাইকটি কিনি এবং তারা আমাকে বলেছিলো যে ৩০-৪০ কিমি মাইলেজ পাবেন এবং আমি সর্বশেষ পরিক্ষা করে দেখেছি যে লিটারে মাইলেজ পাচ্ছি প্রায় ৩৬কিমি/লিটার । মাইলেজটা একটু কম মনে হয়েছে তবে যদি পারফরমেন্স এর দিক দিয়ে মাইলেজ বিবেচনা করি তবে অনেক ভালো মাইলেজ আছে।
সার্ভিস সেন্টার
আমি ইতিপূর্বেই বলেছি যে বনানী শোরুম থেকে আমি ৬ মাস আগে বাইকটা কিনি এবং এই ৬ মাসে আমি তাদের সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। তাদের কাজের মান ভালো এবং বিভিন্ন পার্টস খুব দ্রুত পাওয়া যায়।
দাম
আমার কাছে এই বাইকের দামটা অনেক ভালো মনে হয়েছে কারন এই রকম একটা মাস্কূলার ও ভালো পারফরমেন্স সমৃদ্ধ বাইক অন্যান্য কোম্পানী এতো কম দামে সরবরাহ করে না। দাম নিয়ে আমি বলবো যে বাজেটের মধ্যে সেরা দাম রয়েছে।
কিছু খারাপ দিক
-হেডল্যাম্পের আলোটা একটু কম লেগেছে
-কোম্পানীর কাছে আমার পরামর্শ
-পেছনের যে মাড গার্ডটা আছে সেটা যদি সাসপেনশনের সাথে দিতো তাহলে খুব ভালো হত কারণ সাসপেনশনটা খুব দ্রুত ময়লা হয়ে যায়।
আমার পরবর্তী যে বাইকটি কেনার ইচ্ছা আছে সেটা হচ্ছে রোডমাস্টারের নতুন ১৫০ সিসি বাইক যেটা খুব সম্প্রতি বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করা যায়।