আমি মনিরুজ্জামান পেশায় চাকুরীজীবী। আমার বর্তমান ঠিকানা মিরপুর, ঢাকা। রোডমাস্টার র্যাপিডো বর্তমানে ব্যবহার করছি এবং আমি ২০০৬ সাল থেকে বিভিন্ন ধরনের বাইক ব্যবহার করে আসছি যেমন- জংশেন ৫০সিসি, হিরো হোন্ডা, ডায়াং ৮০ সিসি, পালসার১৫০ সিসি, হিরো হাংক, লিফান কেপিআর সহ নানান বাইক। এসকল বাইকের পাশপাশি আমি লক্ষ্য করেছি যে স্বদেশী ব্র্যান্ড রোডমাস্টার খুব ভালো ফিচারস সমৃদ্ধ বাইক বাজারে নিয়ে আসছে। আমি অপেক্ষা থাকলাম তাদের বাইকের জন্য এক পর্যায়ে আমি তাদের একটি বাইককে আপন করে নিলাম যার নাম হচ্ছে রোড মাস্টার র্যাপিডো। ১৫০ সিসি হিসেবে র্যাপিডো বাইকটিতে রয়েছে নজরকাড়া ডিজাইন ও আধুনিক ফিচারস এর ছোঁয়া যা আমাকে বাইকটি কিনতে অনেক অনুপ্রানিত করেছে । আমি রোডমাস্টার র্যাপিডো চালিয়ে
বেশ কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি যেগুলো আজকে আমি সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চাই এবং আমি আশা করি যে আমার অভিজ্ঞতাগুলো আপনাদের একটু হলেও সহায়ক হবে।
ইঞ্জিন
রোডমাস্টার র্যাপিডো ১৫০ তে আছে ১৫০ সিসির এয়ার কুল্ড, ৪ স্ট্রোক, ইউরো স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিন যা 13.6 kw@8500 rpm ম্যাক্স পাওয়ার এবং 15.6 nm টর্ক শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম। ইঞ্জিনটা বেশ ভালো, বেশি গরম হয় না এবং ভালো পাওয়ার দিয়ে থাকে। গতি, পারফরমেন্স সব দিক দিয়ে ১৫০ সিসির এই ইঞ্জিনটা বেশ ভালোই আছে। গিয়ার শিফটিং অনেক স্মুথ। বাইকটার স্পীড নিমিষেই ০-৮০ কিমি/ঘণ্টা উঠে যায়। আমি নিজেই কয়েক সেকেন্ডে ০-৮০ কিমি স্পীড তুলেছি এবং বেশি স্পীডে কোন প্রকার ভাইব্রেশন হয় না। আমার কাছে ইঞ্জিনটা অন্যান্য বাইকের থেকে একদম আলাদা মনে হয়েছে।
টপ স্পীড ও মাইলেজ
আমি বাইকটির টপ স্পীড পেয়েছি ১১৫ কিমি/ঘন্টা এবং মাইলেজ পেয়েছি শহরের মধ্যে ৩৫-৩৬ কিমি ।
টায়ার
টায়ারের দিক দিয়ে বলতে গেলে সামনের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে ১১০/৭০-১৭ সাইজের মোটা টায়ার এবং পেছনের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে ১৩০/৭০-১৭ যা আমাকে ভালো কন্ট্রোলিং ও ব্যালেন্সিং দিয়েছে।
ব্রেকিং
সিবিএস ব্রেকিং সিস্টেম হচ্ছে অত্যাধুনিক ব্রেকিং সিস্টেম যা সামনের ও পেছনের যৌথ ব্রেকিং নিশ্চিত করে এবং এর কারনে চাকা স্কীড না নিয়ন্ত্রন হারানোর সম্ভাবনা কম থাকে। বর্তমানে এই সেগমেন্টের বাইকগুলোর মধ্যে দেখা যায় যে খুব কম বাইকগুলোতে সিবিএস ব্রেকিং থাকে। র্যাপিডোতে সিবিএস ব্রেকিং থাকার কারনে আমি অন্যরকম অনুভুতি পেয়েছি। সামনে ও পেছনে দুই ব্রেকের কম্বিনেশন আমাকে যে কোন খারাপ পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে। র্যাপিডো ১৫০ সিসি তে সিবিএস ব্রেকিং পেয়েছি আমি খুব খুশি হয়েছি।
চেসিস
র্যাপিডো ১৫০ এর পাওয়ারফুল ইঞ্জিন সাথে হেভি ডিউটি চেসিস বাইকটির হাই স্পীডে চলার সময় দেয় দারুণ স্ট্যাবিলিটি ও কম্ফোরট ।
ইলেকট্রিক্যাল
বাইকটিতে একটি ১২v এর পাওয়ারফুল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে এবং এতে রয়েছে উন্নতমানের সেলফ স্টার্ট অপশন যা যে কোন মৌসুমে এক বারেই স্টার্ট নিতে সক্ষম। এলিডি ৩৬০ ডিগ্রি মুভএবল ইনডিকেটর বিশেষ করে রাজধানীর ট্র্যাফিক জ্যামের জন্য খুবই উপকারি। রাতে রাইড করার জন্য হেডল্যাম্পের আলো যথেষ্ট।
সাসপেনশন
বাইকটির সাসপেনশন প্রথম প্রথম খুব শক্ত মনে হচ্ছিল কিন্তু ৩০০ কিমি চালানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত অনেক স্মুথ হয়ে গেছে। পেছনের সাসপেনশনটা এতটাই স্মুথ যে আপনি অফ রোডে খুব আরামের সাথে রাইড করতে পারবেন।
ডিজাইন
রোডমাস্টার র্যাপিডো খুব চমৎকার লুকের একটি বাইক যা রাস্তায় চালানোর সময় অন্যান্য বাইকারদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং ইউনিক ফুয়েল ট্যংকার ও মাস্কুলার লুকের কারনে দূর থেকে মনে হবে যে একটা দানব এগিয়ে আসছে আপনার দিকে। ফুয়েল ট্যংকারের দুই পার্শ্বে এলিডি বাল্ব লাগানো আছে যা দিনে ও রাতে বাইকটির চমৎকার ফ্রন্ট লুক এনে দিয়েছে।
সিটিং পজিশন ও হ্যান্ডেলবার
সিটিং পজিশনটা না স্পোর্টস না কমিউটার দুইটার মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে যা রাইডিং এর সময় কোমর সোজা রাখে ফলে এখনও ব্যাক পেইন হয় না। সিটিং পজিশনে বসে লুকিং গ্লাসের দিকে তাকালে পেছনের সব কিছু পরিষ্কার দেখা যায়। এদিকে হাই স্পীডে বাইক চালানোর সময় কখনও কম আত্মবিশ্বাস মনে হয় না এর লম্বা হ্যান্ডেলের কারনে।
নেগেটিভ দিক
যারা রেডি পিকআপ পছন্দ করেন তারা র্যাপিডো চালিয়ে মজা পাবেন না কিন্তু যারা আরাম নিয়ে ভাবেন তাদের জন্য এই বাইক বেস্ট।
অত্যাধিক বালি কাদা রাস্তায় চাকা স্কীড করার সম্ভাবনা আছে
সিটিং পজিশন শুধুমাত্র দুই জনের জন্য
সবশেষে
র্যাপিডো ১৫০ বাংলাদেশে তৈরি । লুক, কন্ট্রোল, ব্রেকিং, মাইলেজ, দাম বিবেচনায় একটি বেস্ট বাইক যা অন্যান্য ১৫০ সিসি বাইকের থেকে আলাদা করেছে।
বি দ্রঃ আমার জানার সীমাবদ্ধতা থেকে বলছি যে র্যাপিডো ১৫০ এর চেসিস বাংলাদেশে বানানো আর বাকী সব আমদানী করা এবং বাংলাদেশেই এসেম্বল হয়।
আমার সকল ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন এটা আমার প্রথম রিভিউ লেখা।