২০১৭ সালের ১৯ সে নভেম্বর আমি আমার জীবনের প্রথম মোটরসাইকেল কিনি রানার রয়েল প্লাস এবং সেই বাইক দিয়েই আমার জীবনের বাইক চালানো শুরু। প্রায় এক বছর হতে চলেছে আমার বাইক চালানো। পারিবারিকভাবে মোটরসাইকেল এর বিষয়ে কোন ভাবেই সাপোর্ট পেতাম না। যখনই কোন মোটরসাইকেল কেনার জন্য বাসায় প্রস্তাব উত্থাপন করতাম আমি বাসায় একটু অবহেলা লক্ষ্য করতাম। এক পর্যায়ে বাসা থেকে বুঝতে পারলো বাইকের প্রয়োজনীয়তা। তারা আমাকে বাইক কেনার জন্য উৎসাহ দিতেন। আমি একটু আনন্দিত হয়ে আমার পছন্দের বাইক খুঁজতে শুরু করলাম। ইন্ডিয়ান বাইকের বিভিন্ন মডেলে যখন বাজার সয়লাব তখন আমি চিন্তা করলাম যে একটু আন কমন বাইক কিনবো। অনেক খুঁজাখুঁজির আমি সহনীয় দামের মধ্যে ভালো মানের, দেখতে আনকমন একটি বাইক খুঁজে পেলাম আর সেই আন কমন ডিজাইনে বাইক হচ্ছে রোডমাস্টার রেপিডো। বাইকটা কেনার পর থেকে আমি রোডমাস্টার ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হই এবং সেখানে কিছু বড় ভাইয়ের রিভিউ দেখে আমারো একটু শখ জাগলো রিভিউ লেখার জন্য।
আমি বাইকটা কিনি ২৫ শে জুলাই । কেনা বেশিদিন হয় নি আর যেহেতু বেশি দিন হয়নি তাই পুরোপুরি একটা রিভিউ এখন দেওয়া ঠিক হবে না।তাই আজকে আমি শুধুমাত্র আমার বাইকের প্রথম ব্যবহারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবো।
ইঞ্জিন
শুরুতেই বাইকের মুল জিনিস নিয়ে আলোচনা করবো। ইঞ্জিনটা আমার কাছে প্রথম প্রথম ভালোই লাগছে। নো ওভার হিট, নো এক্সট্রা ব্যাড সাউন্ড মানে সব কিছু দিক বিবেচনা করলে নতুন ইঞ্জিন হিসেবে আমার কাছে খুবই ভালো মনে হয়েছে। এখন দেখার বিষয় সামনের দিনগুলোতে ইঞ্জিনটা কেমন পারফরমেন্স দিবে। আর ইঞ্জিনের থ্রটল রেসপন্স, শব্দ অনেক গম্ভীর যা আমি মাঝে মাঝে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করি। আশা করি ইঞ্জিনটা আমাকে এরকম সুন্দর পারফরমেন্স দিয়ে যাবে।
ডিজাইন
ডিজাইন এর উপর ভিত্তি করেই আমি মূলত এই বাইকটা নিয়েছি। পালসার কিংবা অন্যান্য বাইকের ডিজাইন আমার দেখতে দেখতে আর ভালো লাগে না তাই ভেবেছি একটা আনকমন ডিজাইনের বাইক নিবো। রেপিডো বাইক ডিজাইনের দিক দিয়ে একটু ভিন্নধর্মী এবং সচারচর এই বাইক রাস্তায় দেখা যায় না। তাই সব দিক ভেবে চিনতে ডিজাইন পছন্দ করে এই বাইকটা কিনেছি। আর বিল্ড কোয়ালিটি প্রথম প্রথম ভালোই লাগছে। আসলে বিল্ড কোয়ালিটিটা বুঝা যাবে অনেক দিন ব্যবহারের পর। তাই আমি বলবো যে প্রথম অবস্থায় ডিজাইন ও বিল্ড, কালার কম্বিনেশন, বডি ফেয়ারিং কিটগুলো আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।
আরাম
বাইকটির রাইডিং সিট খুব ভালো। আমি বসে অনেক আরাম অনুভব করি আর রাইডিং করার সময়ও সিট আমাকে খুব ভালো সাপোর্ট দেয়। সিটে বসে ব্যাক পেইন বিহীন রাইড করা যায়। আর সিটের সাথে হ্যান্ডেলবারের কম্বিনেশন খুব ভালো এর ফলে মূলত কোন ব্যাক পেইন বা ক্লান্তি আসে না। সাসপেনশনগুলো প্রথম অবস্থায় খুব ভালো পারফরমেন্স দিচ্ছে আশা করি ভবিষ্যতেও এরকম দিয়ে যাবে। আরামদের দিক দিয়ে বাইকটি আমি বলব যে মধ্য বয়সী কিংবা তরুন সবার কাছে অনেক আরামদায়ক মনে হবে পাশাপাশি স্টাইলিশ ইউনিক ডিজাইনের কারণে সব বয়সের রাইডারের সাথে মানানসই হবে।
কন্ট্রোল
সুন্দর সিট হাইট , সিবিএস ব্রেকিং ও টায়ার গ্রিপ সব কিছু মিলিয়ে আমি কন্ট্রোল খুব ভালো পাচ্ছি। বাইকটা শহর কিংবা হাইওয়েতে খুব সুন্দরভাবে কন্ট্রোল করা যায়।আর সিবিএস ব্রেকিং আমাকে ব্রেকিং এর দিক দিয়ে দিয়েছে অন্যরকম এক অনুভূতি। আর ব্রেকিং এর ফলে আমার কন্ট্রোল আরও ভালো হয়। আপাতত কন্ট্রোলিং ভালো লাগছে আশা করি বাইকটা আমাকে এরকম কন্ট্রোল দিয়ে যাবে।
মাইলেজ
মাইলেজের ব্যাপারে আমি এখন বেশি চিন্তিত না কারণ আমি এখন ব্রেক ইন পিরিয়ডে আছি তাই মাইলেজের বিষয়টা আমই এখন মাথায় নেই নি । শো-রুম থেকে বলা হয়েছিলো যে ৩৫-৪০ এর মত মাইলেজ পাওয়া যাবে আর এমনি বিভিন্ন ইউজাররা বলেন তারা নাকি ৪০-৪২ এর মত মাইলেজ পান।
সার্ভিস সেন্টার
আমি মেসার্স এস আর মোটরস থেকে বাইকটা কিনেছি এখনও সার্ভিস করতে যাই নি তবে কেনার সময় তাদের ব্যবহার, শোরুমে পরিবেশ সব কিছু অনেক ভালো লেগেছে। তারা আমাদের সাথে কোন খারাপ ব্যবহার কিংবা হেয় করে দেখা এরকম কিছু করেনি, গ্রাহকদের যথেষ্ট ভাল মর্যাদা তারা দিয়ে থাকেন।
দাম
দামের ব্যপারে আমি একদম খুশি কারণ এই দামের এরকম একটা দানবীয় বাইক পাওয়া বিরল। ফিচারস, পারফরমেন্স সব দিক দিয়ে দাম একদম ঠিক আছে।
সবশেষে আমি কোম্পানির উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে তাদের বাইকের সব কিছু এখন পর্যন্ত আমার কাছে ভালো লেগেছে কিন্তু মিটার প্যানেলটা আরেকটু উন্নত করা উচিত। বাইকের সাথে যে মিটারটি রয়েছে সেটা দেখতে খুব বেশি ভালো লাগে না। এই ছিলো আমার রেপিড ব্যবহারের প্রথম অভিজ্ঞতা।