সুদীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন ব্যান্ডের বাইক কেনার পর এইবার ভাবলাম যে সহনীয় দামের মধ্যে দেখতে ভালো একটি বাইক কিনবো। আমি পূর্বে ব্যবহার করেছি হিরো স্পীড, রানার চিতা এবং পালসার। পূর্বের ৩টি বাইক সেকেন্ডহ্যান্ড বাইক ছিলো এরপর আমি ভাবলাম যে ব্র্যান্ড নিউ বাইক কিনবো। আমি অনেক খুঁজাখুঁজির পর এবং আমার সাধ্যের মধ্যে একটি বাইক খুঁজে পাই যার নাম রোডমাস্টার ভেলোসিটি। ভেলোসিটি বাইকটি কিন্তু ১০০ সিসির বাইক কিন্তু এটা দেখেতে ১৫০ সিসির বাইকের থেকে কোন অংশে কম না এবং দূর থেকে অনেকেই দেখে এটাকে ভুলবশত ১৫০ সিসির বাইক বলে ফেলবেন। মোটরসাইকেলভ্যালীর আমন্ত্রণে আজকে আমি রোড মাস্টার ভেলোসিটি বাইকটি নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো ।এটা উল্লেখযোগ্য যে এই বাইকটা আমি প্রায় ৬ মাস ধরে ব্যবহার করছি এবং ৯২০০ কিমি পথ নির্ভয়ে কোন ঝামেলা বা দুর্ঘটনা ছাড়াই পাড়ি দিয়ে ফেলেছি।
আমার নাম মোঃ আমিরুল আহসান জুয়েল ।আমি অনলাইন একটা জব করি। অনলাইন জবের প্রয়োজনের পাশাপাশি আমার ব্যাক্তিগত বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্য বাইকটা কেনা হয়।এছাড়া আরেকটি বিষয় দেখে আমি বাইকটা কিনি সেটা হচ্ছে বাইকটার আউটলুক । এসব বিষয় নিয়ে আমি আজকে আপনাদের সাথে কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরবো। আশা করি শেষ পর্যন্ত থাকবেন।
শুধু দেখতে সুন্দর হলেই হয় না পারফরমেন্স একটা বাইকের বিরাট বড় বিষয়। আমার বাইকটির ডিজাইন যেমন সুন্দর ঠিক তেমনি এর পারফরমেন্স আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছে। বাইকটির ইঞ্জিনের পারফরমেন্স নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। ইঞ্জিনের খারাপ কোন শব্দ কিংবা ওভার হিট ইত্যাদি কিছুই হয় না বরং সে আমাকে স্মুথ রাইডিং নিশ্চিত করে। এক কথায় যদি বলি তবে অবশ্যই বলবো যে ইঞ্জিনের পারফরমেন্স খুব ভালো।
আমি শুরু থেকেই বলে আসছি যে বাইকটার ডিজাইন আমার অনেক পছন্দ। ডিজাইন নিয়ে যদি বিস্তারিত বলি তবে, অবশ্যই একটা কথা বলতে হয় যে সহনীয় দামের মধ্যে ও অন্যান্য ১০০ সিসির বাইকের তুলনায় ডিজাইনটা অকল্পনীয়। বাইকটা এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা দেখতে সুন্দর লাগে এবং পড়ে গেলেও বিভিন্ন বডি পার্টসের ক্ষতি খুব কম হয় । বডি পার্টসের বিষয় যেহেতু আসলো সেহেতু এই নিয়ে কিছু বলতে চাই। বাইকটার বডি পার্টস অনেক মজবুত মনে হয়েছে। আমি ৬৫ কিমি/ঘন্টা স্পীডে বাইক নিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে যে আমি যেরকম ক্ষতির কল্পনা করেছিলাম তেমন কিছুই হয়নি। তাই বলা যায় যে রোডমাস্টার ভেলোসিটির বাইকটির ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
বাইক রাইড করার ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আরাম। অনেক বাইক আছে যেগুলো রাইড করলে ব্যাক পেইন, কব্জি ব্যাথা ইত্যাদি হয় কিন্তু আমার বাইকের সেরকম কোন কিছুই হয় না বরং আমি অনেক আরামের সাথে রাইড করতে পারি। সিটিং পজিশন অনেক নরম ও আরামদায়ক এবং সিটিং পজিশনের সাথে মিল রেখে হ্যান্ডেলবারটা এতো সুন্দরভাবে স্থাপন করা হয়েছে যা অনেকক্ষণ রাইড করলেও কোন ক্লান্তি আসবে না। হ্যান্ডেলবারের সুইচগুলো দেখে প্রথমে মনে করেছিলাম যে অনেক নিম্নমানের হবে কিন্তু ব্যবহার করে সে চিন্তা দূর হয়েছে। আমি এক দিনে প্রায় ২২৪ কিমি পথ রাইড করি এবং সেক্ষেত্রে আমার মাঝে ও বাইকের মাঝে কোন ক্লান্তি বোধ আসেনি। রাতে হেডল্যাম্পের আলো ভালো পেয়েছি বিশেষ করে হাই বিমে অনেক পরিস্কার সব কিছু দেখা যায়। একটা বিষয় আমার কাছে একটু অসুবিধা মনে হয়েছে সেটা হচ্ছে সাসপেনশন। পিলিয়ন নিয়ে রাইড করলে সাসপেনশন ভালো কাজ করে কিন্তু যদি একা রাইড করি সেক্ষেত্রে একটু কম আরামদায়ক মনে হয়। খারাপ রাস্তাগুলোতে সিংগেল রাইড করলে একটু ঝাঁকুনি বেশি মনে হয় তবে পিলিয়ন নিয়ে তেমন ঝাঁকুনি হয় না। ব্রেকিং নিয়ে যদি বলি তবে দুইটা ব্রেক খুব ভালো কাজ করে এবং নরমাল ব্রেকিং এ কোন স্কীড করে না তবে সব বাইকেই কড়া ব্রেক করলে স্কীড করবে এটা স্বাভাবিক।
মাইলেজ হচ্ছে বাইকের গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কোম্পানি থেকে আমাকে বলেছিলো যে ৫৫ প্লাস মাইলেজ পাবো কিন্তু বাস্তবে আমি ঢাকা শহরে মধ্যেই সর্বচ্চো মাইলেজ ৫৩ কিমি/লিটার এবং সর্বনিম্ন মাইলেজ পেয়েছি ৪৯ কিমি/লিটার। মাইলেজের বিষয় নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
সার্ভিসিং সেন্টারের বিষয় নিয়ে এক কথায় বলতে গেলে খুবই ভালো। তাদের ইঞ্জিনিয়ার এবং দক্ষ কর্মীরা আমাকে অনেক ভালো সার্ভিস দিয়েছে এবং সমস্যাগুলো খুব ভালো ভাবে সমাধানের চেষ্টা করে। সার্ভিস মান নিয়ে এর বেশি আমার কিছুই বলার নেই।
কোয়ালিটি,পারফরমেন্স বিবেচনা করলে দামটা আমার কাছে সঠিক মনে হয়েছে কারন এই দামের মধ্যে ভালো ফিচারস ও পারফরমেন্স সমৃদ্ধ বাইক খুঁজে পাওয়া কঠিন।
বাইকটির ভালো লাগার দিকগুলো আমি পূর্বেই বলেছি তবে আমার শুধুমাত্র একটা বিষয় খারাপ লেগেছে সেটা হচ্ছে সাসপেনশন।পেছনের সাসপেনশনটা আরও উন্নত করা যেত।
কোম্পানীর কাছে আমার সেরকমভাবে কোন দাবি নাই এবং আমার পরবর্তী যে বাইকটি কেনার ইচ্ছে আছে সেটা হলো রোডমাস্টার রেপিডো ১৫০। ধন্যবাদ সবাইকে।