অনেকেই অনেক বছর ধরে বাইক চালায়। তেমনি আমিও ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন ব্যান্ডের কয়েকটি বাইক ব্যবহার করেছি। আমার বর্তমান বাইকটি কিনার পূর্বে এবার ভেবেছি যে সহনীয় দামের মধ্যে দেখতে অনেক ভাল হবে এমন একটি বাইক কিনবো। এর আগে আমি ডিস্কোভার ১০০ সিসি, ডায়াং ১০০ সিসি, বাজাজ প্লাটিনা ১০০ সিসি ইত্যাদি বাইকগুলো ব্যবহার করেছি। আমার রাইডিং অভিজ্ঞতা প্রায় ৫ বছরের। আমি অনেক খোজাখুজির পরে আমি আমার সাধ্যের মধ্যে যে বাইকটি খুজে পাই তার নাম হচ্ছে রোডমাস্টার ভেলোসিটি । এই বাইকটি কিন্তু ১০০ সিসির বাইক,তবে এটি ১৫০ সিসি বাইকের তুলনায় কোন অংশে কম না। দূর থেকে দেখলে অনেকে ভুল বশত ১৫০ সিসির বাইক মনে করবেন। আমি মোঃ সজল আলী। আমি সাধারন যাতায়াতের জন্য এ বাইকটি কিনেছি। আমি বাইকটি ১০ মাস যাবত ব্যবহার করছি এবং প্রায় ১০,০০০ কিমি পথ চালিয়েছি কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু তথ্য যা হয়ত আপনাদের জীবনে অনেক উপকারে আসতে পারে।
বাইক কিনার আগে আমি ডিজাইনকে প্রাধান্য দিয়েছি। এই বাইকটির ডিজাইন অন্যান্য বাইকের তুলনায় একটু ভিন্ন ধরনের। বাইকটি যে ভাবে ডিজাইন করেছে তা দেখতে খুব সুন্দর লাগে। এর পার্টস গুলো অনেক মজবুত এবং বডির প্লাস্টিক টেকসই । বাইকটি পড়ে গেলেও খুব কম ক্ষতি হয়। এ থেকে আমি বুঝেছি রোডমাস্টার ভেলোসিটি বাইকের ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি অনেক মজবুত।
আমি আগেও বলেছি যে বাইকটির ডিজাইন আমার ভাল লেগেছে। তবে শুধু ডিজাইন ভাল হলে হয় না পারফর্মেন্সও বাইকের বড় বিষয়। আমার এই বাইকটির ডিজাইন যেমন সুন্দর তেমনি এর ইঞ্জিন পারফর্মেন্সও অনেক ভাল। বাইকটি বেশিক্ষন চললেও এর ইঞ্জিন খুব বেশি গরম হয় না এবং ইঞ্জিনে কোন খারাপ শব্দ হয় না। এছাড়া বাইকটি যে কোন সময়ে সঠিক গতি তুলতে পারে। এই বাইকটির ইঞ্জিন পারফর্মেন্স খুবই ভাল।
কিছু কিছু বাইক আছে যেগুলো রাইড করলে ব্যাক পেইন, হাতে ব্যাথা প্রভৃতি হয় কিন্তু আমার বাইকে সেই রকম কোন কিছুই হয় না। বাইকটি আমি অনেক আরামের সাথে রাইড করতে পারি। বাইকটির সিটিং পজিশন অনেক নরম ও আরামদায়ক। সিটে বসে আমি খুব সহজেই মাটিতে পা রাখতে পারি। সিটিং পজিশনের সাথে মিল রেখে হ্যান্ডেলবারটা এত সুন্দর ভাবে স্থাপন করা হয়েছে যা দীর্ঘক্ষণ রাইড করলেও কোন ক্লান্তি আসে না। হ্যান্ডেলবারের সুইচগুলো দেখতে অনেক সুন্দর, যা আমি আরামের সাথে ব্যবহার করতে পারি। আমি ফাকা রাস্তায় ১০০ গতি তুলেতে পেরেছি। একদিন আমার বন্ধুদের সাথে লং রাইডে যাই, সে দিন আমি প্রায় ২৫০ কিমি পথ চালিয়েছি। দীর্ঘ যাতায়াতে আমার কোন সমস্যা হয় না। বাইকটির ব্রেকিং সিস্টেম ও চাকার মান অনেক ভাল। চাকার গ্রিপগুলো সুন্দর হওয়াতে ব্রেক করলেও তেমন স্লিপ খায় না। এছাড়া বাইকটিতে ডিস্ক ব্রেক থাকায় দ্রুত গতিতে আমি খুব সহজেই কন্ট্রোল করতে পারি। বাইকটির সাসপেনশন মোটামুটি ভাল। তবে কাচা রাস্তায় একা একা রাইডিং করলে একটু ঝাকুনি লাগে। বাইকটির ব্যাটারির শক্তি অনেক। লুকিং গ্লাস ছাড়া বাইক চালানো নিরাপদ নয় বলে মনে করি, এই বাইকের লুকিং গ্লাস দুটো উন্নত মানের।
এখন পর্যন্ত আমি মাইলেজ নিয়ে খুশি, কিন্তু বাইকের বয়স বেশি হলে কেমন মাইলেজ পাবো এটা সঠিকভাবে বলতে পারছি না। ইঞ্জিনের সাথে মাইলেজের একটা সম্পর্ক রয়েছে। ইঞ্জিনে সমস্যা না হলে আমি মনে করি
ভাল মাইলেজই পাবো। তবে এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনে কোন প্রকার সমস্যা বুঝতে পারি নাই। আমার বাইকের ইঞ্জিন থেকে লিটারে হাইওয়েতে ৬০ প্লাস কিমি মাইলেজ পাচ্ছি এবং সর্ব নিম্ন ৫৫ কিমি মাইলেজ পাচ্ছি। এজন্য মাইলেজ নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই।
এই বাইকটির ইঞ্জিন পারফরমেন্স, ডিজাইন, বিল্ড কোয়ালিটি সব কিছু বিবেচনা করে দামটা আমার কাছে বেশি মনে হয়েছে। কোম্পানির কাছে আমার জোর দাবি আগামিতে এ বাইকটি দাম আর একটু কমাতে হবে এবং বাইকটির সাসপেনশন আরো উন্নত মানের লাগাতে হবে।
এবার সার্ভিস সেন্টার নিয়ে কিছু কথা বলবো। আমার বাইকে এখনো কোন সমস্যা পাই নাই। তবে বাইকের মবিল পরিবর্তন করার সময় আমি সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়েছি। সেখাকার পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করেছে, তাদের ব্যবহারও অনেক ভাল লেগেছে। আমি দেখেছি সেখানে যথেষ্ঠ পরিমানে কাজের যন্ত্রপাতি রয়েছে। এছাড়া তাদের কাজের মান খুবই ভাল।
ভাল দিকঃ বাইকটির ডিজাইন অসাধারন, সঠিক মাইলেজ পাওয়া যায়, ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুবই ভাল, সিটিং পজিশন অনেক ভাল কেননা সিটে দুইতিন জন বসতে পারে, রাতে হেড লাইটে প্রচুর আলো হয়, সুইচগুলো দেখতে অনেক সুন্দর, কন্ট্রোল ভাল।
মন্দ দিকঃ তুলনামূলকভাবে দামটা অনেক বেশি, খারাপ রাস্তায় খুব ঝাকুনি লাগে।
পরিশেষে আমি বলতে চাই, বাইকটির ভাল দিকগুলো বিবেচনা করে আপনারা রোড মাস্টার ভেলোসিটি ১০০ সিসির বাইকটি কিনতে পারেন। আমার কাছে এর পারফর্মেন্স খুবই ভাল লেগেছে। আর সকলেই ট্রাফিক আইন মেনে চলুন। সবাইকে ধন্যবাদ।