ছোটবেলা থেকেই আমার খেলনা গাড়ির প্রতি নেশা ছিলো। বড় হবার পর সেই নেশাটা হলো বাইকের প্রতি। কিন্তু বাইক কেনার ইচ্ছা থাকলেও বাবা মায়ের সম্মতির অভাবে দীর্ঘদিন তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া এখনও বাড়ি করা হয়নি। এই মুহূর্তে দেড় দুই লাখ টাকা মানে বিশাল ব্যাপার। বাইকের তেলের কথা আর নাইবা বললাম! তাই নিজের শখ আর ইচ্ছাটাকে নিজেই ধামাচাপা দিয়ে রাখতাম। তবে কষ্টটা বেশিদিন থাকলো না যখন রানার কোম্পানি তাদের সবচেয়ে কমদামী এবং স্টাইলিশ বাইক বাজারে ছাড়লো। ইন্টারনেটে একবার দেখেই ভীষন পছন্দ হয়ে গেলো বাইকটা। এতো সুন্দর বাইক মাত্র ৬২হাজার টাকা দাম দেখে আর তর সইছিলো না। মনে হচ্ছিলো সেদিনই বাইকটা কিনে ফেলি যদি না আবার স্টক শেষ হয়ে যায়..
অবশেষে অনেক কষ্টে ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করালাম এবং বিশ হাজার টাকা ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বাইকটা কিনে ফেললাম।
যাইহোক কাজের কথায় আসি। ইন্টারনেটে অনেক খোঁজাখুজির পরেও এই বাইক সম্পর্কে তেমন কোন ইউজার রিভিও পাই নাই। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজকে এই বাইকটা নিয়ে আমার নিজস্ব একটা রিভিউ শেয়ার করবো।
আমার বাইক চালানোর বয়স দু সপ্তাহ। এর মধ্যেই যতোটুকু সম্ভব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা এখন শেয়ার করছি ধাপে ধাপেঃ
১। বাইকটি কেনার কারনঃ
আমার বাজেট ছিলো ৮০হাজার। এই বাজেটের মধ্যে তিনটা বাইক চয়েস হয়। সেগুলো হলো রোডমাস্টার প্রাইম, ভিক্টর-আর-৮০ এবং রানার বাইক আরটি।
এরমধ্যে রোডমাস্টার প্রাইমটা একটু পুরাতন মডেল মনে হয়েছে আমার কাছে। আর ভিক্টর মডেলটা দেখতে সুন্দর লাগলেও এই কোম্পানি একটু আনকমন এবং দাম ৭৭হাজার টাকা একটু বেশিই মনে হয়েছে। অপরদিকে রানার আরটি মডেলটা দেখতে জোশ। আর বাইকটিতে চড়েও অনেক কমফোর্ট ফিল করলাম। এর লুকিংটা সবচেয়ে বেশি সুন্দর এবং প্রায় ১০০সিসি বাইকের মতোই দেখতে। তাছাড়া এই বাইকটা দেখতে অন্যান্য দামি বাইকের মতোই। বরং কিছু দামি বাইকের চেয়েও সুন্দর। তাই এই বাইকটাই কিনে ফেলি।
২. ক্যাপাসিটিঃ বাইকটা ৮৬ সিসির। ওজন ৮৪কেজি এবং এতে আট লিটার তেল ভরা যাবে।
৩. সাসপেনশনঃ এটার সাসপেনশটা মোটামুটি। গাড়ির গতি বেশি বাড়ালে একটু কাঁপে। তিনজন বসালে কিংবা বেশি ঝাঁকি লাগলে একটু শব্দ হয়।
৪. ফিচারঃ এতে কিক এবং সেল্ফ দুটো স্টার্ট সিস্টেমই আছে। এতো কমদামি বাইকে সেল্ফ স্টার্ট সিস্টেম খুবই ভালো। সামনে আছে এ্যানালগ স্পিডমিটার, ডিজিটাল ফুয়েল মিটার এবং ডিজিটাল গিয়ার নাম্বার। তবে সব আরটি মডেলের বাইকের ফুয়েল মিটার ঠিকমতো কাজ করেনা। পিছনে আছে সুন্দর ডিজাইনের ব্যাকলাইট এবং ভালো গ্রীপযুক্ত সিটকভার যেটা অন্যান্য বাইকগুলোতে দেয়া হয়না।
৫. রাফ ব্যবহারঃ বাইকটি রাফ ব্যবহারের জন্য একদম উপযুক্ত নয়। পিছনে একজন উঠানো যায়, তবে পিছনে দুজনকে নিয়ে চালানো কিছুটা কঠিন। তবে আমি কয়েকবার চালিয়েছি। কন্ট্রোলিং এ কোন সমস্যা হয়নি। আর বেশি স্পিডে চালালে অনেক শব্দ হয়।
৬. স্পিডঃ এটা শহুরে রাস্তায় চালানোর জন্য পারফেক্ট। সাধারনত ৪০-৫০ কিমি গতিতে চালানো ভালো। আমি এটাতে সর্বোচ্চো স্পিড পেয়েছি ৭০। কিছুদিন গেলে আর একটু স্পিড পাওয়া যেতেও পারে।
৭. মাইলেজঃ 80 cc বাইক হিসেবে এই বাইকের মাইলেজ একটু হতাশই করেছে আমাকে। আমি এ পর্যন্ত তিনশো কিলোমিটার চালিয়েছি ৬লিটারে। মোটামুটি ৪৫-৪৮কিমি মাইলেজ পেয়েছি। ব্রেক ইন পিরিয়ড শেষ হলে ৬৫-৭০কিমি মাইলেজ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে শোরুম থেকে।
এইছিলো আমার বাইকটি সম্পর্কে নিজস্ব রিভিউ। পরিশেষে একটা কথা বলতে পেরে আমি এই বাইকটি চালিয়ে শতভাগ সন্তুষ্ট এবং এই রেন্জের মধ্যে এই বাইকটাই বেষ্ট। আপনারা নিঃসন্দেহে বাইকটি কিনতে পারেন।