বিভিন্ন মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক এর মধ্যে রানার অটো মোবাইল একটি উদীয়মান এবং স্বদেশী মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক কোম্পানি। বাংলাদেশে চাইনিজ, জাপানী ইতালি এবং অন্যান্য ব্রান্ডের মত করে রানার নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছে এবং তারা তাদের সামর্থ্য এবং ক্ষমতা দুটিই প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে। রানার বাংলাদেশে বিদ্যমান একটি মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক কোম্পানি এবং তারা তাদের পণ্য গুলো বাংলাদেশেই এসেম্ববল করে থাকে। যদিও তারা শুরু দিকে ছোট সেগমেন্ট মোটরসাইকেল তৈরি করতো এগুলো মোটরসাইকেল গুলো সাধারণত তাদের জন্য যারা বেশী দাম দিয়ে মোটরসাইকেল কিনতে চান না এর ফলে তাদের বেশিরভাগ মোটরসাইকেল গুলোতে ৫০ থেকে ১০০ সিসির ইঞ্জিন দেওয়া হতো। সম্প্রতি সময়ে
তারা ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল বাজারে নিয়ে আসে এবং তাদের প্রধান অভিপ্রায় ছিল “সবার জন্য মোটরসাইকেল”। এর কারণ হল তাদের মোটরসাইকেল গুলো অনেক সুলভমুল্যে পাওয়া যায়। মানুষ এখন অন্যান্য ব্রান্ডের ১২৫ সিসির মোটরসাইকেল এর সমপরিমাণ মুল্যে রানারের ১৫০সিসির মোটরসাইকেল পাচ্ছে। বর্তমানে তাদের টপ ১৫০ সিসি মোটরসাইকেলের নাম হল “রানার নাইট রাইডার” যেটি সম্প্রতি বাজারে এসেছে। এই মোটরসাইকেলটি রিলিজ হওয়ার পর থেকে এই মোটরসাইকেলের প্রতি গ্রাহকদের চাহিদা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে।মানুষ চায় যে তাদের এই রকম একটি শক্তিশালী ইঞ্জিন এবং কম মুল্যের মোটরসাইকেল থাকুক। সেই সাথে এই কোম্পানির প্রতি মানুষের দৃঢ় আস্থা রয়েছে। এছাড়াও মোটরসাইকেলটিতে ভাল পারফরমেন্স পাবার জন্য নতুন নতুন কিছু ফিচার যোগ করা হয়েছে। সেই ফিচার গুলো নিচে উল্লেখ করা হয়।
ডিজাইন এবং লুকস
রানার এই বাইকটিকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য এর সাথে নতুন ডিজাইন এবং গ্রাফিক্স যোগ করেছে। ফুয়েল ট্যাংকার এর সাইজটা কিছুটা কম আকর্ষণীয় তবে এটি যথেষ্ট চওড়া এবং কার্ভ হওয়ায় এর ডিজাইনে কোন প্রভাব পড়েনি। তবে রানারের অন্যান্য মডেলের তুলনায় এর হেডল্যাম্পটাতে একটু ভিন্ন এবং মার্জিত ডিজাইন লক্ষ্য করা যায়। যদিও এর ডিজাইনটা বেশ ভাল তবে এর ইঞ্জিন গার্ড না থাকার কারণে এত দেখতে অন্যরকম এবং পুরাতন থিমের মোটরসাইকেল এর মত লাগে। বাইকটির পেছেনের দিকে রয়েছে স্টাইলিশ ইনডিকেটর এবং টেল ল্যাম্প সেই সাথে বাইকটিতে পেছেনের সিট কিছুটা উঁচু করা হয়েছে যেটা বাইকটিকে ভিন্ন লুক দিয়েছে।
ডাইমেনশন এবং সিটিং পজিশন
নাইট রাইডার সাইজে কিছুটা ছোট একটি বাইক যার ২০৫০ মিমি লম্বা এবং চওড়া এবং উচ্চতায় ৭৪০ মিমি এবং ১০৬৫ মিমি রাখা হয়েছে যেটা একদম পারফেক্ট রাখা হয়েছে। বাইকটি আরামদায়ক হবার পেছনে এর হুইলবেজ এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায় বাইকটিতে ১৩৬০ মিমি হুইলবেজ রয়েছে। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স যথেষ্ট ভাল যেটা ১৬৫ মিমি এবং বাইকটির কার্বওয়েট ১৩৫ কেজি রয়েছে কোম্পানির মতে যেটা ১৫০ কেজি পর্যন্ত লোড বহন করতে সক্ষম। এই বাইকটিতে স্প্লীট সিটিং পজিশন রয়েছে যার ফলে বাইকটিতে স্পোর্টস টাইপের বাইকের অনুভুতি পাওয়া যায় এবং পিলিয়নরা আরামের সাথে পেছনের সিটে বসে রাইড করতে পারেন। রানার নাইট রাইডার এর ফুয়েল ট্যাংকার এবং সিটিং পজিশন দেখতে অনেকটা লিফান কেপি ভার্সন ২ এর কাছাকাছি। ফুয়েল ট্যাংকারের সাথে সংযুক্ত ওভার ল্যাপ্পেড সিটিং পজিশন অনেক আরামদায়ক এবং এতে করে কোমরের ব্যথা ছাড়াই রাইড করা যায়।
ইঞ্জিন পারফরমেন্স
রানার নাইট রাইডার ১৫০ সিসির ইঞ্জিন দ্বারা গঠিত। এছাড়াও এখানে রয়েছে, ১১.৯ বিএইচপি @ ৭৫০০ আর পি এম এবং এর টর্ক ১২.২ এন এম @ ৫৫০০ আর পি এম। এই ধরনের ইঞ্জিন সাধারণত অনেক ভাল পারফরমেন্স দিয়ে থাকে তবে এটি স্পোর্টস কমিউটার বাইক হিসেবে এর পাওয়ার এবং টর্ক পাওয়ার আরও ভাল হতে পারত। যদিও বাইকটির পাওয়ার এবং টর্ক কম দেওয়া হয়েছে তবুও বাইকটির স্পীড লক্ষ্যনীয় ভাবে অনেক ভাল। এর টপ স্পীড বলতে গেলে ১২০ কিমি প্রতি ঘন্টায় দিয়ে থাকে। স্পীডের পাশাপাশি এর মাইলেজ ৫০ কিমি প্রতি লিটারে যেটা ১৫০ সিসি বাইক হিসেবে বেশ ভাল এবং এর পারফরমেন্স নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। অন্যদিকে এই এয়ার কুলড ইঞ্জিনে সেলফ এবং কিক স্টার্ট অপশন রয়েছে কিন্তু এর একটি বিশাল সমস্যা হল এর কিকটি পাদানি উপরে সরাসরি অবস্থিত যার ফলে কিক স্টার্ট দিতে হলে রাইডারকে পাদানি তুলে বা ফোল্ড করে স্টার্ট দিতে হবে । এটি ফোল্ড না করা ছাড়া স্টার্ট দেয়া যাবে না।যেটা রাইডারের জন্য বিশাল একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।
সাসপেনশন এবং ব্রেকিং
সাসপেনশন কোয়ালিটি রানারের অন্যান্য মোটরসাইকেল থেকে উন্নত করা হয়েছে এবং এটিতে উন্নতমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে। টুইন শক সাসপেনশন এর পরিবর্তে এই স্টাইলিশ মোটরবাইকের পেছেনের দিকে এডজাস্টএবল মনোশন সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণত বেশিরভাগ মার্জিত বাইকগুলোতে পেছনের দিকে টুইন সাসপেশন ব্যবহার করা হয় কিন্তু নাইট রাইডারে মনোশক ব্যবহার করা হয়েছে।মনোশক সাসপেনশন অবশ্যই টুয়িন শক এর তুলনায় অনেক ভাল এবং এটি উচ্চ গতিতে রাইডারের রাইডকে আরও সহজ করে তোলে। এর সামনের দিকে টেলিস্কোপ ফর্ক সাসপেশন ব্যবহার করা হয়েছে যেটা ভাল কম্ফোর্ট দিয়ে থাকে। এই নতুন রানার নাইট রাইডার বাইকটিতে ভাল সাসপেশনের সাথে ডিস্ক এবং ড্রাম ব্রেকের সংযুক্ত লক্ষ্য করা যায়। এর সামনের চাকায় হাইড্রোলিক ব্রেক এবং পেছনের চাকার ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে।
স্পীড এবং মাইলেজ
ইঞ্জিনের ম্যাক্স পাওয়ার এবং টর্ক এর উপর ভিত্তি করে এই বাইকের টপ স্পীড একেবারেই অপ্রত্যাশিত। রানার দাবি করে যে তাদের এই বাইক ঘন্টায় প্রায় ১২০ কিমি টপ স্পীড দিবে যেটা প্রকৃতপক্ষে প্রশংসনীয় টপ স্পীড। অন্যদিকে বাইকটির মাইলেজ নিয়ে বলতে গেলে সাধারনভাবে কোম্পানীর মতানুসারে প্রতি লিটারে এভারেজ ৫০ কিমি মাইলেজ দিতে সক্ষম। হাইওয়েতে এর থেকে বেশী মাইলেজ পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায় তবে ১৫০ সিসি স্পোর্টস (কমিউটার) ক্যাটাগরির বাইক হিসেবে এর মাইলেজ ৪৫ কিমি প্রতি লিটারের নিচে নামবে না।
ইনস্ট্রুমেন্ট প্যানেল এবং ফীচার
নাইট রাইডারের ইন্সট্রুমেন্ত প্যানেলের মধ্যে রয়েছে এনালগ এবং ডিজিটাল ট্যাকচোমিটার এবং স্পীডো মিটার। এছাড়াও এর সাথে রয়েছে ডিজিটাল ফুয়েল গেজ, ডিজিটাল গিয়ার ইনডিকেটর ডিসপ্লে, ওডোমিটার এবং অন্যান্য স্পেশাল কিছু ফিচার যেগুলো রানানের আগে কখন ছিল না।
রং এবং দাম
স্পেশাল মোটসাইকেল নিয়ে বলতে গেলে বাইকের কালারের বিষয়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কালার যে কোন বাইকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিশেষ ভুমিকা রাখে। রানার নাইট রাইডারের ব্ল্যাক, ব্লু, রেড এই তিনটি কালার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।বাইকটার বর্তমান মূল্য ১৫৬০০ টাকা।
পরিশেষে বলা যায় যে রানারের নাইট রাইডার বাইকটি নতুন নতুন কিছু আধুনিক ফিচার দিয়ে গঠিত। তবে সবমিলিয়ে আশা করা যায় যে বাইকটির পারফরমেন্স দারুন হবে।
রানার ক্রেতাদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করেছে সেট হল কিস্তি সুবিধা যে কোন প্রকারের ক্রেতা এই বাইকটি সাথে কিস্তি সুবিধা গ্রহন করতে পারবেন। যাদের বাইক কেনার স্বপ্ন আছে কিন্তু টাকার অভাবে কিনতে পারছেন না তাদের জন্য এই কিস্তির সুবিধা থাকছে। রানারের এই কিস্তি পরিমাণটা আপনাকে ১২ কিংবা ২৪ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। আপনার সুবিধা অনুযায়ী আপনি এই কিস্তি সুবিধা বেছে নিতে পারেন।