১৯৯০ সাল, তখন আমি স্কুলের ছাত্র। বন্ধুর বাবা ব্যবহার করতেন সুজুকি ৮০সিসির একটি মোটরসাইকেল। মাঝে মাঝে বন্ধুও চালাতো। তার চালানো দেখে আমারও লোভ হলো। একদিন সাহস করে বন্ধুকে অনুরোধ করলাম চালানো শেখার জন্য। বন্ধু রাজী হয়ে গেলো। বন্ধুর সাহায্য নিয়ে জীবনের প্রথম মোটরাসাইকেল চালানো শেখা। সে ঘটনার পরে পদ্মায় অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। আমি নিজেও অনেক ধরনের মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছি সময়ের প্রয়োজনে। বর্তমানে ব্যবহার করছি রানার এর টারবো ১২৫সিসির এই মোটরসাইকেলটি। আমার ব্যবহারের অভিজ্ঞতাটিই মুলত আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি।
রানার টার্বো ১২৫সিসি মোটরসাইকেলটি কেনার পূর্বে আমার বিভিন্ন মোটরসাইকেল ব্যবহারের সুযোগ হয়েছে যেমন সুজুকি ১০০, হোন্ডা এইচ১০০এস, হোন্ডা সিজি১২৫, জিংফু ১২৫, বাজাজ বক্সার, বাজাজ পালসার ইত্যাদি।
আমি মজিবুর রহমান। পেশায় ব্যবসায়ী। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী আম এর ব্যবসার সাথে জড়িত। বিভিন্ন সময়ে আমের বাগানগুলোতে ঘুরাঘুরির জন্যই আমার মোটরসাইকেল ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। তাই একটি ভালোমানের কিন্তু স্বল্প বাজেটের রানার টার্বো ১২৫ মোটরসাইকেলটি কেনার সিদ্ধান্ত নিই। জাপানিজ এবং ইনডিয়ান ব্রান্ডের মোটরসাইকেল চালানোর পরে রানার ব্রান্ডের মোটরসাইকেল কেনার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও দ্বীধা ছিলো। কেমন সার্ভিস হবে, তেল খরচ কেমন হবে, টেকসই কেমন হবে ইত্যাদি। বিষয়গুলো জানাতেই রাজশাহীর নূপু করপোরেশনের ব্যবস্থাপক ইসমাইল ভাই আস্বস্ত করলেন। তিনি আমার বন্ধুও বটে। তাই তার কথাতে ভরসা পেলাম। এবং মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করার পরে বুঝলাম তার কথায় ভরসা করে আমি ভুল করিনি। রানার টারবো ১২৫ মডেলটি দেখে আমার ভালো লেগে যায়। ডিজাইনে ইনডিয়ান মোটরসাইকেল থেকে কোনো অংশেই কম নয়। টেস্ট ড্রাইভ দিয়েও ভালো লাগলো। এরপরে মোটরসাইকেলটি কেনার ক্ষেত্রে আর জড়তা ছিলো না। রানার এর রাজশাহীর ডিলার নূপু করপোরেশন থেকে মোটরসাইকেলটি কিনে নেই।
মোটরসাইকেলটি কেনার পরে নিয়ম মেনে ব্রেকিং পিরিয়ডটি পাড়ি দেই। যেভাবে যখন বলেছে সার্ভিসিং করিয়ে নিয়েছি এবং ইনজিন ওয়েল পরিবর্তন করিয়ে নিয়েছি।
মোটরসাইকেলটি সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই ডিজাইন নিয়ে বলতে হয়। আমার পছন্দের লাল রংয়ের মোটরসাইকেলটি। বড় জ্বালানি ট্যাংক, সুন্দর ডিজাইনের হেডলাইট এবং উইন্ডস্ক্রীন সামনে থেকে বেশ ভালো লাগে। সব মিলিয়ে ডিজাইন এক দেখাতেই ভালো লাগার মতো।
১২৫সিসি এবং ৮.৪কিলোওয়াট শক্তির ইনজিনটি ১১এনএম টর্ক তৈরী করতে পারে। তাই কমিউটার মোটরসাইকেল হিসেবে আমার কাছে যথেষ্ঠ শক্তিশালীই মনে হয়েছে। আমি সাধারনত জোরে মোটরসাইকেল চালাই না। তাই ৬০-৭০কিমি গতিতে আমার কাছে স্বাচ্ছন্দময় লেগেছে। জ্বালানি খরচ লিটারে ৪৫কিমি পাচ্ছি। ৫০কিমি হলে খুবই ভালো হতো।
মোটরসাইকেলের সামনের এবং পেছনের দুটি সাসপেনশনই যথেষ্ট কার্যকরী। রাস্তার সাধারন ঝাকুনী তেমন অনুভব হয়না বললেই চলে। সীটটি নরম এবং লম্বা বলে বসতেও আরাম। সামনের ডিস্ক ব্রেক বেশ শক্তিশালী। টায়ারও চওড়া (সামনে/পেছনে: ২.৭৫-১৮, ৯০/৯০-১৮) এবং গ্রিপ বেশ ভালো। এখন পর্যন্ত স্কীড করার ঘটনা ঘটে নাই।মোটরসাইকেলটির ওজন ১৩৩কেজি হওয়াতে চালিয়ে যেমন আরাম, ব্রেকিংএ তেমনি কার্যকর। গিয়ার শিফটিং নিয়েও কখনও সমস্যায় পড়িনি। বেশ সুন্দরভাবেই গিয়ার পরিবর্তন করা যায়। মোটরসাইকেলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক ডিজাইনের এবং আধুনিক সুবিধাযুক্ত ডিজিটাল মিটার।
মোটরসাইকেলটির ইলেক্ট্রিক্যাল দিকগুলো বেশ ভালো। কিকস্টার্টের পাশাপাশি রয়েছে শক্তিশালী ইলেক্ট্রিক স্টার্ট। হ্যান্ডেলবার এর বাটনগুলো বড় এবং ব্যবহারে আরামদায়ক। রয়েছে ইনজিন কিল সুইচ এবং পাসিং সুইচ, যেটি বর্তমান সময়ে খুবই প্রয়োজনীয়।
ভালো দিক
- দেখতে সুন্দর
- চালিয়ে আরামদায়ক
- স্বল্প মূল্য
- ভালো কাস্টোমার সার্ভিস
খারাপ দিক
- হেডলাইটের আলো কম
- মোটরসাইকেলে ব্যবহৃত রাবারগুলোর মান খারাপ মনে হয়েছে
জাপানিজ এবং ইনডিয়ান ব্রান্ডের ভেতরে রানার তার দেশী ব্রান্ড প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। মোটরসাইকেলটি ইনডিয়ান ব্র্যান্ডের মতো সম-মানের না হলেও দামের তুলনাতে তার মান কম নয়। আমার ব্যবহারের অভিজ্ঞতায় মোটরসাইকেলটি আমাকে সন্তুষ্ট করেছে। যদিও ২-১দিক খারাপ আছে। সব মিলিয়ে বাইকটিকে আমি দশে সাত দিবো।