সুপ্রিয় পাঠকমন্ডলী, আমি সুনন্দ কুমার সরকার এবং আমি পেশায় একজন শিক্ষক। আপনাদের স্বাগতম জানাই “বাজাজ প্লাটিনা ১০০সিসি” যেটা আমি ব্যবহার করি তার রিভিউ পড়ার জন্য। প্রথমেই বলে ফেলা ভাল যে আমি গত দুইবছর যাবত এই বাইকটি ব্যবহার করছি এবং আমি মনে করি ২ বছর পর্যাপ্ত সময় একটি বাইককে ভালভাবে বুঝতে। আর সেই বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আজ আমি আমার অভিজ্ঞতা মোটরসাইকেলভ্যালীর মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই যা ভবিষ্যতে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের জন্যেই যথেস্ট সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি। আমার বর্তমান ঠিকানা নাটোর জেলার আহমেদপুর গ্রামে। এই বাইকটি কেনার মুল কারণ হিসেবে আমি বলতে পারি যে আমার প্রতিদিনের কাজকর্ম সঠিকভাবে এবং সময়মত সমপন্ন করার তাগিদ। এই বাইকটি ব্যবহার করার পুর্বে আমি অনেকগুলা বাইক ব্যবহার করেছি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি বাইক হলো “হোন্ডা ১২৫সিসি”। বলা বাহুল্য যে আমি কোন বাইক এক্সপার্ট না বরং আপনাদের মতই একজন সাধারন বাইকার কাজেই আমার মতামত সম্পুর্নভাবেই একজন সাধারন বাইকারের মতামত হিসেবে মুল্যায়ন করার অনুরোধ থাকল। আমি আশা করি আপনার শেষ অবধি আমার সাথেই থাকবেন এবং আমার এই রিভিউ আপনি বাইক না নিলেও আপনার কাছের মানুষদের পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।
প্রথমে আসি এর ডিজাইন এবং আউটলুকের ব্যাপারে কথা বলতে। শুধুমাত্র আমিই না যে এই বাইকের ডিজাইনটাকে ভাল বলি এই কথা আমি বলতেই পারি যে এমন ব্যক্তি খুজে পাওয়া দুষ্কর হবে যার কাছে এই বাইকের ডিজাইন ভাল লাগে না। আমি এখনও পাই নি। এর সম্পুর্ন ডিজাইনটা এমনভাবে তৈরি যা যেকোন বয়সের রাইডারের সাথে বেশ ভালভাবেই মানাবে বলে আমি মনে। এই বাইকটা যথেস্টই ভদ্রভাবে ফ্যাশানেবল। এর অসাধারন কালার কম্বিনেশন এর সৌন্দর্য অনেক গুনে বাড়িয়ে দিয়েছে আর এই কারনে এই বাইকটা সাধারন রাইডারদের নিকট অতি পরিচিত নাম। বিল্ড কোয়ালিটি এতটাই শক্তিশালী মনে হয় আমার যা আমাকে আমার ইচ্ছামত রাইড করার সাহস যোগায় রাস্তার অবস্থার কথা ভুলে।
আমি বলব এই বাইকের আরাম আন্যান্য ১০০সিসি বাইকের থেকে অনেক ভাল। এর সিটিং পজিশন, হ্যান্ডেনলবার এবং সাসপেনশনের অসাধারন একটা কম্বিনেশন আছে যা এটি রাইড করলেই টের পাওয়া যায়। এর সিটিং পজিশনটা বেশ ভাল এবং হ্যান্ডেলবারের সাথে বেশ সুন্দরভাবে কম্বাইন করা আছে। সিটিং পজিশনে হ্যান্ডেলবার ধরতে বেশ মজা লাগে। সাসপেনশন যথেস্ট ভাল যা আমাকে রাস্তার অবস্থা খুব সামান্যই বুঝতে দেয়। কিন্তু ব্রেকিং সিস্টেম মাঝে মাঝেই জ্যাম হয়ে যায়। একই সাথে টায়ারগুলাও বেশ ভাল কজ করে যার কারনে আমি এখনও কোন ধরনের স্কিডিং অনুভব করিনি। গত দুই বছরে আমি হাই স্পিড তুলেছি অনেকবার কিন্তু উল্লেখ করার মত ভাইব্রেশন অনুভব করিনি।
এবার আসি ইঞ্জিন পারফরমান্স এবং মাইলেজের ব্যাপারে কথা বলতে। বলে ফেলা ভাল যে আমাদের উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে মাইলেজের ব্যাপারটাই স্বিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে আর এই দৃষ্টিকোন থেকে বলা যায় যে এই অংশটাই হয়ত এই আর্টিকেলের সব থেকে গুরুত্বপুর্ন অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং একই সাথে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারটাও এখানে সম্পন্ন হওয়াটা অবাক করার মত কিছু না। আমার বাইকের ইঞ্জিনের পারফরমান্স নিয়ে বলতে গেলে আমি উল্লেখ করার মত খারাপ কিছু বিগত সময়ে অনুভব করিনি। আমার বলয়ে ভাল লাগছে যে এর মাইলেজটা যেকোন রাইডারের মুখে হাসি ফুঠানোর জন্য যথেষ্ট। বর্তমানে আমি ৬০ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পাচ্ছি যা ১০০সিসির বাইক হিসেবে যথেষ্ট বলে আমি মনে করি।
সার্ভিসিং সেন্টারের সার্ভিস যথেস্টই ভাল যা একজন কাস্টমারের মুখে হাসি ফুটাতে পারে বলে আমি মনে করি। আমি তাদেরকে তাদের দায়িত্বের প্রতি আন্তরিক দেখেছি এবং ব্যবহারও বেশ ভাল। বাজাজের মত ব্রান্ডের কাছে এমনটা খুবই আশাব্যাঞ্জক। আমি রাজশাহীর তাহেরপুরে আমার বাইক সার্ভিস করাই।
ভাল দিকসমুহঃ
-মাইলেজটা অসাধারন ২ বছর পরেও
-সুন্দর এবং মার্জিত দেখতে
-বিল্ড কোয়ালিটি এতটাই ভাল যা খারাপ রাস্তাতেও সুন্দর সাপোর্ট দিয়ে থাকে।
নেতিবাচক দিকসমুহঃ
-ব্যাগ রাখার কোন হুক নাই
-ডিজিটাল গিয়ার কাউন্টার নাই।
এর কোয়ালিটি, পারফরমান্স এবং সকল ফিচার বিবেচনা পুর্বক দাম নিয়ে মন্তব্য করতে গেলে আমি বলব এর দামটা ঠিকই আছে। বাজাজের ১০০সিসির বাইক হিসেবে এর দামটা এর থেকে কম আশা করাটা উচিত হবে না বলে আমি মনে করি। আপনি যদি এই একই সেগমেন্টের কোন বাইক কেনাও কথা চিন্তা করেন তবে এই বাইকটাকে আমি আপনার পছন্দ তালিকার শীর্ষে রাখার পরামর্শ দিব। আমি বলতে পারি যে এর পারফরমেন্স আপনাকে কখনই হতাশ করবে না বরং আপনি নিজেই স্বীকার করবেন যে টাকা দিয়ে খারাপ জিনিস আপনি কিনেন নি।
ধন্যবাদ সবাইকে।