আমাদের দেশে বলতে গেলে মোটরসাইকেল একটি জনপ্রিয় বাহন। যে কোন রাস্তায় এটি নিয়ে চলাচল করা যায়। এছাড়া অল্প সময়ে অতি দ্রুত যাতায়াতের জন্য বাইককে সবাই প্রাধান্য দেয়। আমি মোঃ তুহীন আলী, আমার বাসা পুঠিয়া থানার পাইকপাড়া গ্রামে। আমি এক জন ব্যবসায়ী। ব্যবসার কাজের সুবিধার জন্য বাইকটি কিনি। আজ আমি আপনাদের কাছে আমার বাইকের ভাল ও মন্দ কিছু বিষয় তুলে ধরবো। যারা নতুন বাইক কিনতে চান এগুলো তাদের কাজে লাগবে। আমার বাইকের নাম বাজাজ ডিস্কোভার ১২৫ সিসি। আমি এই বাইকটি প্রায় দুই বছর যাবত ব্যবহার করছি। এটা আমার জীবনের ৩য় বাইক। এর আগে আমি হিরো হোন্ডা ও টি ভিএস মেট্রো বাইক দুটি ব্যবহার করেছি। আমি যখন প্রথম বাইক কিনি, তখন আমাকে পরামর্শ দেবার মত কেউ ছিল না। কোন বাইক কিনবো, কোন বাইক ভাল হবে, কোন বাইকের পারফরমেন্স ভাল ইত্যাদি বিষয়ে আমার কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। শোরুমে গিয়ে যে কোন একটা বাইক দেখেই কিনে নিয়েছি। কিন্তু বর্তমানে মোটরসাইকেলভ্যালী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাইকের বিস্তারিত সঠিক মতামত পাওয়া সম্ভব। আজ আমিও এই টিমের কাছে আমার বাইকের সঠিক রিভিউ প্রকাশ করার জন্য হাজির হয়েছি।
প্রথমে আমি আমার বাইকের ডিজাইন নিয়ে অল্প কিছু কথা বলতে চাই। আমার এই বাইকের ডিজাইনটা খুব মার্জিত ও রুচিসম্মত। এক কথায় আমার কাছে একদম পারফেক্ট। এছাড়া এই বাইকের বডির প্লাস্টিক গুলো অনেক মজবুত। এটি সহজে ভেংগে যায় না বা ফেটে যায় না। বাইকটি নিমিষেই সঠিক গতিতে তুলতে পারে।
আমার বাইকের ইঞ্জিন নিয়ে আমি তেমন খুশি ছিলাম না। কারন ইঞ্জিনে ১ বছরের মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছিল। আমি সার্ভিসিং সেন্টার থেকে সার্ভিসিং করিয়ে নিয়েছিলাম। এখন আর ইঞ্জিনে কোন প্রকারের বাজে শব্দ করে না। এজন্য আমি একটু ইঞ্জিন নিয়ে হতাশ ছিলাম। তবে সার্ভিসিং এর পর এখন এর পারফরমেন্স অনেক ভাল। এছাড়া সার্ভিসিং সেন্টারের কাজের মান আমার কাছে ভাল লেগেছে। তাদের ব্যবহার অনেক ভাল এবং সেখানে পর্যাপ্ত পরিমানে যন্ত্রপাতিও রয়েছে। শুধু মাত্র ইঞ্জিনে এত তাড়াতাড়ি সমস্যা হওয়ার কারনে আমি একটু অসন্তুষ্ট। এছাড়া বাইকে ব্রেক খুব ভাল। দ্রুত গতিতে সহজেই বাইক কন্ট্রোল করা যায়।
বাইকটির আরেকটি ভাল দিক হল এর সিটিং পজিশন খুব ভাল। এটি অনেক চওড়া, খুব সহজেই এক সাথে ২/৩ জন বসে রাইড করা যায়। ইঞ্জিন শক্তিশালী হওয়ায় এতে কোন সমস্যা হয় না। এছাড়া খুব সহজেই সিটে বসে মাটিতে পা রাখা যায়। এই বাইকের হ্যান্ডেবার আমাকে আরাম এনে দেয়। তবে দীর্ঘ যাতায়াতে হাত ঝিনঝিন করে। আমি সর্বোচ্চ ১০০ গতি তুলেছি। এছাড়া এক দিনে প্রায় ২৫০ কিমি পথ চালিয়েছি। দীর্ঘ যাতায়াতে আমার হাত, পিঠ, বুক, কোমর ব্যাথা করে। এই বাইকটি মুলত দীর্ঘ যাতায়াতের জন্য নয়। তবে আমাদের গ্রাম অঞ্চলের জন্য পারফেক্ট। বাইকের সুইচ গুলো দেখতে অনেক সুন্দর। যা ব্যবহারে আমার কোন সমস্যা হয় না। এছাড়া রাতে হেডলাইট থেকেও আমি অনেক আলো পাই, যা পরিষ্কার রাস্তা দেখতে সাহায্য করে। বাইকটির সাসপেনশনের কথা বলতে গেলে এটি খারাপ রাস্তায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনি মনে হয়। তবে পাকা রাস্তা বা ভাল রাস্তায় ঝাকুনি মনে হয় না। পিছনের রাস্তা দেখতে লুকিং গ্লাস দুটি আমাকে অনেক ভাল সাপোর্ট দেয়।
বাইকটি শোরুম থেকে কেনার সময় যে মাইলেজের কথা বলেছিল, আমি ২ বছর পরেও সেই মাইলেজ পাচ্ছি। এজন্য আমি খুব সন্তুষ্ট। ১২৫ সিসি বাইকে ৫০ কি মি পথা যাওয়া মানে অনেক কিছু, কিন্ত আমি ১ লিটার তেলে প্রায় ৫৫ কিমি পথ যেতে পারি। এজন্য আমার মনে হয়েছে শোরুমের বিক্রেতার কথার সাথে কাজে মিল আছে। তবে এই বাইকের পারফরমেন্স বিবেচনা করে দামটা আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে। বর্তমান বাজারে পণ্যের প্রতিযোগিতার হার অনেক বেশী। সেই তুলনায় এই বাইকে দামটা আর একটু কমানো উচিৎ বলে মনে করি।
ভাল দিকঃ সিটিং পজিশন খুব ভাল, সঠিক গতিতে তুলতে পারে, মাইলেজ খুবই ভাল, সার্ভিসিং সেন্টারের কাজের মান ভাল।
মন্দ দিকঃ দাম বেশী, বেশি স্পীডে হাত ঝিনঝিন করে, ইঞ্জিনে সমস্যা, সাসপেনশন ভাল না।
পরিশেষে বলতে চাই এই বাইকটি মোটামুটি ভাল, দাম একটু বেশী হলেও এর পারফরমেন্স অনেক ভাল। বাংলা ভাষায় একটা প্রবাদবাক্য আছে – “ যতই গুড়, ততই মিষ্টি “ । তাই বলতে চাই পন্যের দাম বেশী হলে সেই পন্যটির মান অবশ্যই ভাল। এজন্য এই বাইকটি আপনারা অনায়াসে কিনতে পারেন।