বাইক কেনার শখটা মুলত আমার অনেক আগে থেকেই ছিলো কিন্তু আমি সেই রকম পছন্দের বাইক খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমাদের দেশে যেখানে সিসি লিমিট থাকার কারণে অনেক ভালো ভালো বাইক আসতে পারে না। বাংলাদেশের সিসি লিমিট যখন ১৬৫ করা হলো তখন ভাবলাম যে এইবার হয়তো কিছু ভালো মানের বাইক দেশে ঢুকবে । আমাদের দেশে দেখা যায় যে অনেকেই প্রিমিয়াম বাইকগুলো নিয়ে বেশি মাতামাতি করে থাকে কিন্তু আমি স্রোতের বিপরীতে যেতে পছন্দ করি। আমার এমন একটি বাইক দরকার যা আমাকে অনেক সুন্দর একটা আউটলুক দিবে। অনেক খুঁজে আমার চোখে ধরা দিলো একটি স্টাইলিশ ক্যাফে রেসার বাইক এবং এই ক্যাফে রেসার বাইকটির নাম হচ্ছে স্পীডার কান্ট্রিম্যান ১৬৫। ১৬৫ সিসির এই ক্যাফে রেসারটি দেখে আমাই ভীষণ ভালো লেগে যায় এবং আমি গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাইকটা কিনে ফেলি।
আমার নাম অনিরুল আনাম পেশায় চাকুরীজীবী।বাইক কেনার জন্য আমি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে গিয়ে খুজেছি এবং অবশেষে আমার বাইক কেনার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। এটা বলতে গেলে আমার প্রথম বাইক এবং প্রথম বাইক হিসেবে বেশি সিসি বাইককেই বেছে নিয়েছি। যাই হোক আজকে আর সময় নষ্ট না করি আমার ক্যাফে রেসার বাইকটির ব্যবহার অভিজ্ঞতা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
ইঞ্জিন
ইঞ্জিনের ব্যাপারে বলতে গেলে এটা অনেক শক্তিশালী ইঞ্জিন এবং এই শক্তিশালী ইঞ্জিনটা আমাকে অনেক ভালো গতি তুলতে সাহায্য করে। আমি এই পর্যন্ত সর্বচ্চো গতি বলতে প্রায় ৭৫ কিমি তুলছি এবং এর বেশি তোলার চেষ্টা করিনি । মোট কথায় বলতে গেলে ইঞ্জিন পারফরমেন্স ভাল, বাজে কোন শব্দ হয় না এবং ইঞ্জিন ওভার হিট হয় না।
ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি
ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে যদি বলি তবে অবশ্যই আমাকে বলতে হবে যে দুটাই খুব ভালো। কারণ ডিজাইনটা ভিন্নধর্মী এবং ক্যাফে রেসারের যেরকম ডিজাইন থাকার কথা ঠিক সেরকমই রয়েছে এবং বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে আমি আমি অনেক সন্তুষ্ট। আমি দেখেছি যে অন্যান্য যে কোন বাইকের তুলনায় আমার কাছে বিল্ড কোয়ালিটি মজবুত মনে হয়েছে । সব মিলিয়ে ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি খুবই ভালো।
আরাম
যেহেতু ক্যাফে রেসার তাই এই বাইকটা লং রাইডের জন্য না তবে শর্ট রাইডের জন্য বাইকটি পারফেক্ট। সিটিং পজিশন অনেক নরম, বসতে কষ্ট হয় না এবং সিটে বসে মাটিতে পা পেতে কোন সমস্যা হয় না। অন্যদিকে হ্যান্ডেলবারটা একটু নিচু ও চওড়া যার ফলে বেশিক্ষন রাইড করলে সমস্যা অনুভূত হয় তবে ২০-২৫ কিমি পথ পাড়ি দেবার জন্য বাইকটি অনেক আরামদায়ক। এদিকে ইলেকট্রিক্যাল দিকগুলো ও হ্যান্ডেলবারের সুইচগুলো অনেক ভালো তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে যে বাইকটির হেডল্যাম্পের আলো অনেক বেশি এবং আমি এর আগে এত বেশি আলো অন্য কোন বাইকে দেখিনি। তাই আরাম নিয়ে বলা যায় যে বাইকটি ২০-২৫ কিমি পথ পাড়ি দেবার জন্য অনেক আরামদায়ক।
কন্ট্রোল
১৬৫ সিসির এই বাইকটির কন্ট্রোল আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে কারণ আমি বিভিন্ন খারাপ পরিস্থিতিতে পড়লেও কন্ট্রোল করে সেটা মোকাবিলা করতে পারি। ব্রেকিং সিস্টেম অনেক ভালো কাজ করে । সামনের দিকের সাসপেনশন আপ সাইড ডাউন থাকার ফলে খুব ভালো পারফরমেন্স পাই কিন্তু পেছনের সাসপেনশনটা আমার কাছে একটু কম পারফরমেন্স দিচ্ছে বলে মনে হয়েছে। এছাড়া ব্রেক করলে চাকা তেমন স্কীড করে না ।
মাইলেজ
কোম্পানী থেকে আমাকে বলা হয়েছিলো যে ৩০ কিমি এর বেশি মাইলেজ পাওয়া যাবে এবং আমি মাইলেজ ঠিক সেরকমই পাচ্ছি।
সার্ভিস সেন্টার
১০০০ কিমি এর মধ্যে আমার তেমন কোন বড় সার্ভিস করাতে হয়নি তবে তাদের সার্ভিস সেন্টারে আমি মবিল ড্রেন দিতে গিয়েছি এবং আমার কাছে তাদের আচরণ, কাজের মান সব কিছু ভালোই লেগেছে এবং তাদের সকল পার্টস বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে।
দাম
দাম বিবেচনা করলে আমার কাছে দামটা একটি বেশি মনে হয়েছে বর্তমান বাজার অনুযায়ী। যদি ২ লক্ষ কিংবা ২ লক্ষ ২০ হাজার এর মত দাম করা যেত তাহলে আমি মনে করি যে চোখ বন্ধ করে অনেকেই কিনতো।
বাইকের সাথে টিউবলেস টায়ার, সামনের বড় মাডগার্ড থাকলে আরও ভালো হত –একটু বড় করা যেতো।
কোম্পানির কাছে আমার তেমন কোন পরামর্শ থাকবে না – কারণ তারা ক্যাফে রেসারের সকল ফিচারস দিয়েছে।