স্পিডার কান্ট্রিম্যান ১৬৫ ক্যাফেরেসারটির সাথে আমার পথচলা শুরু হয় আজ থেকে প্রায় দেড় মাসে আগে। অসাধারণ ডিজাইন, ক্যাফে রেসার লুক এবং অফিসের কলিগের রেফারেন্স সব মিলিয়ে বাইকটা আমার আপন হয়ে যায়। আমার এই প্রিয় বাইকটি কিনেছিলাম গুলশানের আড়ং শোরুমের পার্শে যে শো-রুম ওখান থেকে। আমি মনে করি যে বাইক হচ্ছে চলাচলের অন্যতম এক সহজ মাধ্যম। বিশেষ করে ঢাকা শহরের অসহনীয় জ্যাম এড়িয়ে চলার জন্য বাইকের বিকল্প নেই। আমি বাইক ব্যবহার করি মূলত অবসরে একটু ঘুরাফেরা করার জন্য। অনেকেই দেখি যে বাইক কেনার জন্য বিভিন্ন জনের পরামর্শ নিয়ে থাকেন তো মোটরসাইকেলভ্যালী আমাকে আমার বাইকের রিভিউ এর জন্য আমন্ত্রণ জানায় । আমি তাদের এরকম উদ্যোগ কে স্বাগত জানাই কারণ আমার বাইকের রিভিউ এর ফলে অনেকেই এই বাইক সম্বন্ধে ভালো ধারণা লাভ করতে পারবেন পাশাপাশি বাইকের ভালোমন্দ দিক বোঝার জন্য আপনাকে কষ্ট করে কারও বাসায় বা রাস্তায় ধরে জিজ্ঞেস করা লাগবে না। তাই আর সময় নষ্ট না করে চলুন আরম্ভ করা যাক।
ডিজাইন
আমরা প্রত্যেকেই বাইকের প্রথম যে বিষয়টা দেখি সেটা হল ডিজাইন। আমি যখন প্রথম এই বাইকটার ডিজাইন দেখি তখন এক দেখাতেই অনেক ভালো লেগে যায়। ডিজাইনটা সম্পূর্ণ ক্যাফে রেসার । মোট কথায় আউটলুকে আমি যা চেয়েছিলাম তাই পেয়েছি। তবে ডিজাইনের দিক দিয়ে কিছু বিষয় আমার খারাপ লেগেছে যেমন- কিটের কালার এর বডির সাথে ম্যাচ করে না, ইঞ্জিনের পাশে SPM-১৬৫ লেখাটার ফন্ট পছন্দ হয়নি। এছাড়া ডিজাইনের পাশাপাশি বাইকটার বিল্ড আমার অনেক ভালো লেগেছে।
ইঞ্জিন
ইঞ্জিনটা ১৬৫ সিসি হিসেবে এর শব্দ,গতি ইত্যাদি ঠিক আছে। আমি ব্রেকিং পিরিয়ডে আছি আশা করছি ব্রেকিং পিরিয়ড পার করার পর ইঞ্জিনটা অনেক স্মুথ হয়ে যাবে। সকালে বা এমনি অন্যান্য সময় ইঞ্জিনটা অনেক গরম করা লাগে । ইঞ্জিন গরম করার পর বাইক রাইউ করলে ইঞ্জিনটা বন্ধ হয় না। আমি তাদের সার্ভিস সেন্টারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কেন এই সমস্যা হচ্ছে। তারা আমাকে বলেছিলো যে এই সমস্যা ১ মাস পর আপনাআপনি ঠিক হয়ে যাবে।
আরাম
সিটিং পজিশন অনেক আরামদায়ক আছে । সিটের উচ্চতা এবং পজিশন আমার কাছে পারফেক্ট মনে হয়েছে। হ্যান্ডেলবারটার পজিশন ভালো যার কারণে বেশিক্ষন রাইড করলেও হাত,কাধ ঝিনঝিন করে না । আমি শহরের মধ্যেই বেশি রাইড করি এবং শহরে রাইডের ক্ষেত্রে আরাম নিয়ে আমি অনেক সন্তুষ্ট।
কন্ট্রোল
বাইকটা যেহেতু ক্যাফে রেসার তাই আমি খুব সুন্দর কন্ট্রোল করতে পারি এবং এই পর্যন্ত খারাপ কোন কন্ট্রোল পাই নি। একটি বিষয় আমি বলে রাখি যে বাইকটা করনারিং করতে একটু সমস্যা হয়।
ব্রেকিং, টায়ার ও সাসপেনশন
ব্রেকিং এক কথায় অনেক জোশ। সামনের ডাবল ডিস্ক এবং রেয়ার ডিস্ক খুব সুন্দর ব্রেকিং নিশ্চিত করে। আমি যে কোন পরিস্থিতিতে খুব সুন্দর ব্রেকিং করতে পারি। অন্যদিকে সাসপেনশনগুলো একটু শক্ত মনে হয়েছে আশা করছি সাসপেনশনগুলো ধীরে ধীরে আরও স্মুথ হয়ে যাবে তবে এমনিতে সাসপেনশনগুলোর পারফরমেন্স খারাপ না। টায়ারের সাইজ ঠিক আছে এবং সেগুলো খুব ভালো গ্রিপ দেয়
ইলেকট্রিক্যাল
হেডল্যাম্পের আলো শহরে কিংবা হাইওয়েতে একদম পরিস্কার । হাই বিম বা লো বিমে অনেক ভালো পরিমাণে আলোর যোগান পাই। এদিকে ইলেকট্রিক্যাল সুইচগুলো অনেক সুন্দর কাজ করে।
মাইলেজ
কেনার সময় শো-রুম থেকে বলেছিলো যে মাইলেজ ৩৫ কিমি/লিটার পাওয়া যাবে । এখন আমি মাইলেজ পাচ্ছি ২২-২৩ কিমি/লিটার। আমি মনে করি এরকম একটা বাইকের জন্য তেল ফুরানোর ব্যাপারটা তেমন বড় কোন সমস্যা না। মাইলেজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। তবে সব রাইডার একই না তাই অন্যান্যদের ক্ষেত্র বিবেচনা করে মাইলেজটা আরেকটু বেশি হলে আমি মনে করি ভালো হত।
সার্ভিস সেন্টার
আমি তাদের সার্ভিস সেন্টার গিয়ে অনেক ভালো সার্ভিস পেয়েছি। তারা প্রত্যেকটি বিষয় অনেক যত্নসহকারে দেখে এমনকি তারা ফোন দিয়ে খোঁজ নেয় যে আমার বাইকের কোন সমস্যা হয়েছে কি না। এরকম সার্ভিস পেয়ে আমি অনেক খুশি আসলে বাইক কেনার পর গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আসে সেটা হল সার্ভিস সেন্টার তাই সকল কোম্পানীর উচিত তাদের সার্ভিস মান উন্নত করা।
দাম
বাইকটি আমাকে যে রকম সার্ভিস দিচ্ছে সেগুলো বিবেচনায় দামটা ঠিক মনে হয়েছে। যদি অন্যান্য বাইকের সাথে তুলনা করা যায় তাও আমি বলবো যে বাইকটার দাম একদম ঠিক আছে।
এই পর্যন্ত আমি বাইকের খারাপ কোন বিষয় খুঁজে পাই নি। ভবিষ্যতে আশা করছি পাবো না।
তাই আপাতত কোম্পানির কাছে আমার কোনো পরামর্শ নেই।