স্পিডার কান্ট্রিম্যান বাইকটি গত ফেব্রুয়ারী মাসে কিনেছিলাম। ক্যাফে রেসার বাইকের প্রতি আমার অন্য রকম ভালোবাসা রয়েছে এবং স্পীডার কান্ট্রিম্যান বাইকটি ক্যাফে রেসারের ডিজাইন বিধায় আমি এই বাইকটা কিনেছি। এই বাইকটির পূর্বে আমার নিজস্ব কোন বাইক ছিলো না ।আমার জীবনের প্রথম বাইক বলতে গেলে এটাই। মোটরসাইকেল ভ্যালীতে আমি এই বাইকটি নিয়ে কেনার কিছুদিন পর রিভিউ প্রকাশ করেছিলাম এবং চলতে চলতে আমার প্রায় ৫ হাজার কিমি সম্পন্ন হয়েছে । তাই আমি মনে করি যে এখন একটা রিভিউ প্রকাশ করা উচিত। রিভিউটি সম্পূর্ণ আমার ব্যাক্তিগত মতামত এখানে আমি আমার বাইক চালিয়ে যে সমস্ত অভিজ্ঞতা পেয়েছি তা তুলে ধরেছি।
ইঞ্জিন নিয়ে প্রথমে অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যাক। বাইকের ইঞ্জিন প্রথমে দিকে ভালো ছিলো এখন ৫ হাজার কিমি রানিং অবস্থায় ইঞ্জিন নিয়ে আমি সন্তুষ্ট না। সম্ভবত আমি সেই দুর্ভাগ্য ব্যাক্তি যার কাছে ইঞ্জিনের সমস্যা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ৫ হাজার আরপিএম এর পর থেকে ইঞ্জিন থেকে ঢকঢক শব্দ হচ্ছে। টপ স্পীড আশানুরূপ পাচ্ছি না আর গিয়ার শিফটিং এখনও স্মুথ হয়নি। অন্য ব্যবহারকারী কেমন পাচ্ছে জানি না কিন্তু আমার বাইকের ইঞ্জিনে এই সকল সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
ডিজাইনটা যেহেতু ক্যাফে রেসার তাই আমার কাছে অবশ্যই ভালো লেগেছে। ডিজাইন নিয়ে আমার বেশি কিছু বলার নাই কিন্তু তাদের বিল্ড কোয়ালিটিটা আমার কাছে একটু সন্দেহজনক মনে হয়েছে। কিছুদিন আগে থেকে বাইকের বডি এবং এক্সজস্ট থেকে ত্রুটিপূর্ণ শব্দ বের হচ্ছে । আমার বাইকের ব্যাটারীটা নষ্ট হয়ে গেছে এবং মেকানিক এই সমস্যাটা সমাধান করতে পারছে না । আমি বলবো যে ম্যানেজমেন্টকে আরও সজাগ হতে হবে আফটার সেলস সার্ভিস এর ব্যপারে এবং তাদের আরও দক্ষ টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিতে হবে যাতে করে তাদের কোম্পানী সব দিক দিয়েই সামনের দিকে অগ্রসর হয়।
বাইকটি চালিয়ে বেশ আরাম বিশেষ করে শহরের মধ্যে চালিয়ে অনেক মজা কিন্তু সমস্যার বিষয় হল যে ৭০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে স্পীড তুলার পর ভাইব্রেশন হয়। সিটিং পজিশন ক্যাফে রেসার বাইক হিসেবে ঠিক আছে এবং হ্যান্ডেলবারটা আমি ক্যাফে থেকে স্ক্রাম্ববেলার এ পরিবর্তন করিয়েছি এজন্য স্পীডারকে ধন্যবাদ।
বাইকের সুইচগুলো আমি পরিবর্তন করে এফযেডএস ভার্সন ১ এর সুইচ লাগিয়েছি কারণ স্টক সুইচে পাস সুইচ ছিলো না। এখন সুইচগুলো অনেক স্মুথ হয়েছে। স্টক হেডল্যাম্পের আলোটা মোটামুটি ছিল আমি এখন ৭ইঞ্চি প্রজেকশন হ্যালো লাইট ইন্সটল করেছি এবং পূর্বের তুলনায় এখন আলোর পরিমাণটা অনেক বেশি কিন্তু আমি বলবো যে স্টক লাইটটা জিক্সার ,এফযেডএস এর তুলনায় অনেক ভালো ছিলো।
হ্যান্ডেলবার পরিবর্তন করার পরে কন্ট্রোল অনেক ভালো হয়েছে । এখন আমি খুব ভালোভাবে করনারিং করতে পারি। পূর্বের হ্যান্ডেলবারে একটু হাত ব্যাথা করতো কিন্তু এই হ্যান্ডেলবার ইন্সটল করার পর একটানা ১ ঘণ্টা রাইড করার পরও হাত ব্যথা করে না। বলতে গেলে এই হ্যান্ডেলবারটা লাগিয়ে বেশ ভালো কন্ট্রোল পাচ্ছি। বাইকের একটা বিরাট সমস্যা হচ্ছে যে ৭০ কিমি এর পরে প্রচণ্ড ভাইব্রেশন করে এটা আমি পূর্বেও বলেছি এখনও বলছি।
ব্রেকিং সিস্টেম ঠিক আছে এবং সেগুলো খুব ভালো কাজ করে কিন্তু সামনের ব্রেক কষলে সময়ে সময়ে শব্দ হচ্ছে। সাসপেনসনগুলো ভালো পারফরমেন্স দিচ্ছে কিন্তু এর টায়ার তুলনামূলক অন্যান্য বাইকের থেকে একটু বেশি স্কীড করে আমার কাছ ।
বাইকের মাইলেজ সত্যি করে বলতে গেলে আমি পাচ্ছি লিটারে প্রায় ২৮ কিমি এর মত । যেহেতু শহরের মধ্যে রাইড করি সেহেতু মাইলেজটা আমার কাছে মোটামুটি মনে হয়েছে।
সার্ভিস সেন্টারের মান মোটামুটি। তারা অগ্রসর হচ্ছে কিন্তু ধীর গতিতে । আরেকটি বিষয় হচ্ছে যে তারা শুক্রবার সার্ভিস বন্ধ রাখে এটা সার্ভিস হোল্ডারদের জন্য একটু অসুবিধা কারণ একটি বাইকের সম্পূর্ণ সার্ভিস নিয়ে অনেক দিনের অর্ধেকাংশ চলে যায় । তাদের সার্ভিস করার যন্ত্রপাতি আরও ক্রয় করা উচিত এবং আরও দক্ষ টেকনিশিয়ান নিয়োগ করা উচিত । যদি কোন বাইকের সমস্যা দেখা দেয় তারা যে দ্রুত সেটা সমাধানের জন্য নিয়োজিত থাকে। আশা করি স্পীডার এর ম্যানেজমেন্ট এর সমস্যা দ্রুত অবসান করবে।
দামটা বাংলাদেশের বাজাজের তুলনায় একটু দাম বেশি কিন্তু প্রসঙ্গক্রমে জিপিএক্স লেজেন্ড এর তুলনায় দাম সহনীয়।
বাইকের ভালো দিক
-সুন্দর লুক
-সুন্দর কালার কম্বিনেশন
-টায়ার মোটা কিন্তু স্কীড করে
-প্লাস্টিকের ব্যবহার কম
মন্দ দিক
-গিয়ার শিফটিং সমস্যা
-ভাইব্রেশন
-বেশি ত্রুটিপূর্ণ শব্দ
যারা এই বাইকটি কিনতে চান তাদেরকে বলবো যে আপনার যদি ক্যাফে রেসার বাইক ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই এই বাইকটা কিনতে পারেন।