Suzuki Gixxer 150 motorcycle ownership review by Rad bin Alam
কেনো কিনলাম এবং চালিয়ে কেমন লেগেছে তা বরং আপনাদের বলি।
Key features:
Brand: Suzuki
Model: Gixxer 150
Engine: 154cc Single Cylinder, Air cooling Four Strokes SOHC
Fuel Tank Capacity (L): 12 Liter
Weight: 135 KG
Starting method: Electric and Kick start.
বাইকটি একদম নতুন না। এই সিরিজের অর্থাৎ জিক্সার সিরিজের বাইক সুজুকি করপোরেশান অনেক আগে থকেই তৈরী করছে। আর ১৫০ সিসির এই বাইকটি শুধু ইন্ডিয়ার বাজার লক্ষ্য করেই তৈরী করা হয়েছে।
বাইকটির নামের Gixxer অংশ নেয়া হয়েছে তাদের অত্যান্ত জনপ্রিয় GSX-R 750 সিরিজের মডেলের নাম থেকে। ১৯৮৫ সালে প্রথম GSX-R 750 সিরিজের বাইক সুজুকি করপোরেশান বের করে। এরপর মডেলটিকেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সারা পৃথিবী জুড়ে এই সিরিজের লক্ষ-লক্ষ ডাইহার্ড ফ্যান রয়েছে। এই সিরিজের সম্প্রতি ১০০০ সিসির বাইকটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আসলে Suzuki Motorcycle India একটি বড় ধরনেরই ঝুকিই নিয়েছিল অত্যান্ত জনপ্রিয় দানবীয় Gixxer নাম ১৫৫ সিসির বাইকের সাথে জুড়ে দিয়ে। মানুষজনের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, একটি বনেদি অভিজাত পরিবারের উপাধী Gixxer, তুলনামূলক কম ক্যাপাসিটির একটা বাইকের সাথে জুড়ে দিলে। বাইকটি বাজারে আশার পরে ইন্ডিয়াতে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয় । ২০১৫ সালে ইন্ডিয়াতে সর্বাধিক এওয়ার্ড উইনিং বাইক এটি । খুবই উৎসাহিত ছিলাম । আরে চড়ে দেখতে হবে তো। এই বাইক আমার না হলেই না। বাইকের শো-রুম গুলি আমাকে সবাই চেনে একদিন বাইকটি নিয়ে এলাম।
ইনজিনের কার্যক্ষমতা
বাইকটির ইঞ্জিনের কথা যদি বলেন তবে এটি আমার চালানো অন্যতম একটি সেরা ১৫০ সিসির স্মুথ ইঞ্জিন।স্মুথ বললাম কারণ এটি বিশেষ ভাবে ভাইব্রেশান মুক্ত করে তৈরী করা হয়েছে। আপনি যদি বাইকটিকে এর সর্বোচ্চ লিমিটে নিয়ে যান তবে কম্পন বলতে হালকা গুন-গুনানি অনুভব করবেন। ইঞ্জিনের গিয়ারিং এর দিকটি আর একটা উল্লেখযোগ্য দিক। বাইকটির ইঞ্জিন সবচেয়ে ভালো পারফর্মেন্স দেয় 6000-8000RPM এ। কিন্তু শহরের ভীড়ের রাস্তায় আপনি যখন ৪০০০ RPM এ চালাবেন দেখবেন তেমন ঘন ঘন গিয়ার পরিবর্তন করার প্রয়োজনই পড়বে না। জিক্সারের ইঞ্জিন ১৪৫.৯ সিসি, ৪-স্ট্রোক সিঙ্গেল সিলিন্ডারেরার এয়ার কুলিং ইঞ্জিন। জিক্সারে রয়েছে সুজুকির নিজস্ব SJCS অর্থাৎ Suzuki Jet Cooling System ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে এই সিস্টেমটি পিস্টনের গায়ে তেল স্প্রে করে ইঞ্জিনকে অতিরিক্ত গরম হবার হাত থেকে রক্ষা করে। বাইকটির ম্যাক্স পাওয়ার ১৪.৮ পিএস @ ৮০০০ RPM এবং টর্ক ১৪ N m @ ৬০০০ RPM
কন্ট্রোল
একটি মোটরসাইকেল যতই পাওয়ারফুল, স্টাইলিশ আর আধুনিক ফিচার দিয়ে সাজানো হোক না কেন যদি না তা রাইডারকে কনফিডেন্ট আর উদ্বুদ্ধ করতে না পারে তবে তা তেমন কোন কাজে লাগবে না । আর জিক্সারের বিশেষত্ব এইখানেই। সামনের পেশীবিহুল ৪১ MM Forksসাস্পেনশান আর পেছনের মনো কয়েল সাস্পেনশান আপনাকে এতোটাই স্ট্যাবিলিটি দিবে যে যেকোনো রাস্তাতেই বাইকটি চালাতে আপনি অন্যধরনের কনফিডেন্ট পাবেন । বাইকটি আপনাকে চালাতেই ইচ্ছা করবে। আমার কাছে মনে হয়েছে বাইকটি চালিয়ে অভস্ত হয়ে গেলে এর সাথে আপনার এক ধরণের মানুষিক কমিউনিকেশান তৈরি হয়ে যাবে, AVATAR সিনেমার উড়ন্ত ড্রাগন আর তার রাইডারের মতো । এর চেসিস আর স্টিকি টায়ার জিক্সারের স্পোর্টি রাইডকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে। যেকোনো উচ্চতা আর সাইজের রাইডারের জন্য উপযুক্ত করে বাইকটি বানানো হয়েছে। কিন্তু তাই বলে সুজুকি করপোরেশান এর স্পোর্টি ইমেজের সাথে কোন কম্প্রমাইজই করেনি। এর সিটিং পজিসান এমন, হ্যান্ডেল বার এবং পাদানির দুরত্ব এবং সিটে বসার অবস্থা জিক্সারকে এমন একটা স্পোর্টি লুক দিয়েছে যা এই ক্যাটাগরির অন্য বাইকে আপনি পাবেন না। বাইকটির সিটিং পজিশান একদিকে যেমন আরামদায়ক অন্যদিকে এর কোবরার ফনার মতো ট্যাঙ্ক এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যে রাইডার ইচ্ছা করলেই ট্যাকের উপরে হেলে পড়ে বাইরের দিকে এত চমৎকার ভাবে পা লক করে নিতে পারেন যে দ্রুত গতিতে বাঁক নিতে আপনাক অতিরিক্ত কনফিডেন্ট দিবে । অর্থাৎ আপনি রেসিং স্টাইলে বাইকটি চালাতে পারবেন। বাঁক ঘুরার পরে আপনি আবার যখন বাইকটিকে দুই চাকার উপরে সোজা করে নিবেন দেখবেন একটি জেট ফাইটারের মতোই মুহুর্তেই গতি দিয়ে আপনাকে মুগ্ধ করে দিবে। । আর শহুরে রাস্তায়?? জেট ফাইটার যেমন এ্যারো-এক্রোব্যাট করে, ভিড় ট্রাফিকেও আপনি বাইকটি নিয়ে তা করতে পারবেন।বাইকটির গিয়ার বক্স এর অবস্থান, আকার ওজন এতই চমৎকার যে খুব মসৃণ ভাবে আপনি গিয়ার বদলাতে পারবেন। প্রায় পাচ ছয় সেকেন্ডের ভেতর ৮০কিমি/ঘন্টা স্পিড তোলা সম্ভব । বাইকটির পেছনে রয়েছে ১৪০/৬০-১৭ সাইজের টায়ার ও সামনে রয়েছে ১০০/৮০-১৭ সাইজের টায়ার। সব কিছু মিলিয়ে কন্ট্রোলিং নিয়ে যদি বলতে বলেন তবে বলবো দক্ষ বাইকারের হাতে পড়লে এই বাইকটি অন্যবাইকের থেকে এগিয়ে থাকবে।
কন্ট্রোলিং এর পাশাপাশি এর দৃষ্টনন্দন ডিজাইনের কিছু বর্ননা না দিলেই না। এক কথায় পেশীবহুল একটি পশু মনে হবে আপনাকে। হাজার হলেও GSX-R পরিবারের উপাধি যে লাগানো আছে বাইকটিতে। এর সাইলেন্সার প্রচলিত ধারার সাইলেন্সার থেকে আলাদা। সাইলেন্সার এর সেগমেন্ট দুটি। ট্যাংকটি দেখলে অনেকটা ফনা তোলা কোবরা। পেছনের চাকার দুটি মার্ডগার্ড, ত্রিকোন এলিডি ব্যাক লাইট।এর স্পীডো মিটার আসলেই অনন্য, আমাদের দেশের যেকোনো বাইকের তুলনায় এর স্পীড মিটার ফিচার ও দেখার দিক দিয়ে ভালো। মোট কথায় ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে দেখলে বাইকটিকে আপনার ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলের মনে হবে।
স্পীড ও মাইলেজ
সুজুকি দাবি করে ৬৩ কিমি যায় প্রতি লিটারে । আসলে তা যদি সম্ভব হয় তবে সেটি বিশ্ব মানের পরিস্থিতিতে। সঠিক ভেজালমুক্ত জ্বালানী মসৃণ সোজা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রত রাস্তা , আবহাওয়া একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হবে এই ক্ষেত্রে। আমি একবার চেষ্টা করে দেখেছিলাম তাও ৩৫ কিমি দুরত্বে পেয়েছিলাম ৫৫ কিমি/লিটার। তবে এভারেজে আমি ৪০ থেকে ৪৩ কিমি / লিটার পেয়ে থাকি। মাইলেজের ক্ষেত্রে আমি একটা বিষয় বিশ্বাস করি , আর তা হলো ইঞ্জিনের ঘোড়াকে আপনি যদি নির্দয়ভাবে চালান তবে তার খাদ্য পানিও বেশী দিতে হবে অন্যদিকে আপনি যদি মার্জিত ভাবে, সুন্দরভাবে ভালোবেসে দক্ষ হাতে চালান তাহলে দেখবেন অনেক কম খাবারেও অনেক দূর অতিক্রম করবে। যদিও কোম্পানি টপ স্পীড ১২০ কিমি /ঘন্টা বলেছে আমি একবার ১২৫ কিমি/ ঘন্টা গতি তুলেছিলাম। অসাধারণ অনুভুতি ছিল। তবে আমার ধারণা বাইকটির গতি আরও বেশী তুলে ফেলা সম্ভব।
লং জার্নি
আমি দুইবার বাইকটি নিয়ে লং জার্নিতে গিয়েছে। মাইলেজ স্পীড আর আমার কোন দিক দিয়েই কমতি পাইনি। যদিও SJCS প্রযুক্তি আছে এই বাইকে , কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে ইঞ্জিন একটু বেশীই গরম হয়ে যায়। আমি একবার ২১০ কিমি রান করেছিলাম আমার কাছে মনে হয়েছিল সিটিং পজিশান অন্য রকম হলে ভালো হতো আবার এটাও মনে হলো ঠিকই আছে বাইকটি টি স্পোর্টি বাইক। হালকা পিঠ ব্যাথা নিয়ে ভাবছিলাম স্পোর্টি বাইক নিয়ে আর যাই হোক লং জার্নির জন্য না।
ভালো দিক
• ইঞ্জিন পারফর্মেন্স অসাধারণ
• মজবুত এবং টেকসই
• স্টাইলিশ এবং উজ্জ্বল রঙের গ্রাফিকস
মন্দ দিক
• লম্বা জার্নিতে আরামদায়ক না
• ব্রেকিং সিস্টেমে দুটিই ডিস্ক ব্রেক হতে পারতো
• প্লাস্টিক কোয়ালিটি বাইকের মানের সাথে যায় না
পরিশেষে বলতেই হয় ছোটখাট দুই একটা সমস্যা বাদ দিলে আমাদের দেশে প্রাপ্ত যেকোনো স্পোর্ট বাইকের থেকে এর পারফর্মেন্স ভালো।