Suzuki Gixxer ownership review by Arman Akash
আমি আরমান আকাশ। বাড়ী নওগাতে। ছাত্র। পড়ি বাংলায় অনার্স, ফাইনাল ইয়ারে। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে কিছু কাজও করি। আর তাই নিজের জন্য বাইক কেনার সময় বাবার কাছে হাত না পেতে নিজের বাইক নিজেই কিনে ফেলি। নিজের পরিশ্রমের টাকায় নিজের জন্য বাইক কেনার অনুভতি কেমন যে না কিনবে তাকে কখনও বোঝানো যাবে না। যেহেতু এটি আমার অনেক শখেরও জিনিস তাই বাইকটি আমার অনেক প্রিয়। বিগত এক বছর ধরে ব্যবহার করছি। আমি চেষ্টা করবো এই এক বছরে আমার কাছে বাইকটি কেমন লেগেছে তা আপনাদের কাছে তুলে ধরার। যেহেতু বাইকটি আমার অনেক প্রিয় তাই হয়তো তেমন খারাপ জিনিস আমার চোখে পড়েনি, বা পড়লেও আমার ভালোবাসার কাছে তা তুচ্ছ হয়ে গেছে, তবুও চেষ্টা করবো ভালোকে ভালো, খারাপকে খারাপ বলার জন্য। তবে যাই বলি না কেনো, সেটা একান্ত্ই আমার নিজের কথা। হয়তে এর সাথে অন্যের মিল নাও থাকতে পারে।
পুর্বেই বলেছি বাইকটি আমার নিজের টাকাতে কেনা আর তাই আমি চেষ্টা করেছি এতো শখের জিনিস যেন ভুল জায়গায় খরচ করে টাকাটি নষ্ট না হয়। বাইক কেনার আগে আমার বিভিন্ন ধরনের বাইক চালানোর সুযোগ হয়েছে। Yamaha FZS বা Yamaha Fazer বাইকের সাথে এই বাইকের কিছুটা তুলনা চলে এবং আমার দৃষ্টিতে তাদের থেকে বেশ খানিকটা ভালোই বলবো। বাইক কেনার আগে অন্যান্য বাইকের সাথে তুলনা করে আমাকে Suzuki Gixxer অনেক ভালো মনে হয়েছে, বিশেষ করে তার স্টাইলিশ ডিজাইণ। বলতে পারেন এক দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেছিলাম। বাইক তো নয় যেন নীল গোখরা সাপ। সাপের মতো ফনা তোলা ট্যাংকি, ২ধাপের বাকানো সিট, ডাবল লেয়ারড সাইলেন্সার, পেছনের চওড়া টায়ার দেখে এই বাইককে অপছন্দ করার সত্যিকারের কোন কারন নেই। আর পরিচিত জনের থেকে চেয়ে নিয়ে যতবারই চালিয়েছি ততোবারই মুগ্ধ হয়েছি। আর তাই টাকা সংগ্রহ করেই দৌড় দিয়েছি নওগার অন্যতম পরিচিত মোটরসাইকেল শোরুম ন্যাশনাল মোটরস এ। বাইকটি কিনে যখন বাসায় আনছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো রাস্তায় নয়, আমি আকাশ দিয়ে উড়ছি।
বিগত এক বছর চালানোর অভিজ্ঞতায় দেখেছি বাইকটি আমার শরীরের সাথে দারুন মিলে যায়। বসার সিটির পজিশন, চমতকার হ্যান্ডেল বার, নরম সাসপেনশন আর হাইড্রোলিক ব্রেক আমাকে একই সাথে স্টাইল, আরাম এবং কন্ট্রোলের অপূর্ব সমাহার দিয়েছে। এর শক্তিশালী ইনজিন দিয়েছে গতি। আমি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১১৯কিমি বেগে চালিয়েছি। মনে হয়েছে আরো স্পীড তোলা সম্ভব কিন্তু নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে আর চেস্টা করিনি। ভাইব্রেশনবিহীন ইনজিনের ক্ষীপ্রতা আপনি টের পাবেন পিকআপ ঘুরালেই। আর তেল খরচের কথা বলতে হলে বলবো সেভাবে মেপে দেখিনি কিন্তু ৪২-৪৫কিমি যায় প্রতি লিটারে। আর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করি পেট্রোল এবং অকটেনের মিশ্রন। আমার কাছে মনে হয়েছে এতে বাইকের টান বেশি পাই এবং ইনজিনও ভালো থাকে। দু:খের বিষয় এক রাস্তায় বাক ঘুরতে গিয়ে বাইক পড়ে গিয়ে হ্যান্ডেল বার বাকা হয়ে গিয়েছিলো। এতো সহজে হ্যান্ডেল বাকা হওয়া দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে হ্যান্ডেলটি কম মজবুত। অনেক বৃষ্টির মধ্যেও দীর্ঘ পথ চালিয়েছি, ইলেক্ট্রিক্যাল সমস্যা বা অন্য কোনো সমস্যায় পড়িনি। রাতের রাস্তায় চলার জন্য বাইকটির শক্তিশালী হেডলাইটের আলোয় আমি সন্তুষ্ট।
প্রতি ১০০০কিমি পর পর মবিল চেন্জ করি। সাধারনত Super V অথবা Castrol ব্যবহার করি 20W40 গ্রেডের। পরিচিত টেকনিশিয়ান দিয়ে নিয়মিত বাইক ওয়াশ করানো এবং অন্যান্য ছোটখাটো কাজ করিয়ে নেই্।যেহেতু বড় কোনো সমস্যায় পড়িনি তাই বলতে পারছি না এর খারাপ অন্য কিছু আছে কিনা। আর একবার বগুড়াতে SUZUKI এর নিজস্ব সার্ভিসিং সেন্টার থেকে সার্ভিসিং করিয়ে নিয়েছি। তাদের ব্যবহার এবং কাজ দুটোই ভালো লেগেছে।
বাইকটির সীট ছোট বলে ৩জন বসা যায় না আর লম্বায় ছোট বলে খুব সহজেই বাক নেয়া যায়। সব মিলিয়ে বাইকটির উপরে আমি সন্তুষ্ট। আর কিছুদিন গেলে হয়তো আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবো। আর যারা এই বাইকের ব্যাপারে আগ্রহী তাদের প্রতি পরামর্শ কিনতে চাইলে বাইকটি কিনতে পারেন। আশা করি ভালোই লাগবে।