সুজুকি তরুণ প্রজন্মের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড। আমাদের দেশে সুজুকি তাদের স্পোর্টস কমিউটার বাইক দিয়ে গ্রাহকদের মন জয় করেছে । আমিও একজন সুজুকি প্রেমি বাইকার এবং আমি সুজুকি জিক্সার এসএফ বাইকটা বেশি পছন্দ করি কারণ এই বাইকের মধ্যে প্রিমিয়াম একটা ভাব আছে। বর্তমানে যে সুজুকি জিক্সার এসএফ আছে সেটার পুর্বে আমি ব্যবহার করতাম সুজুকি জিক্সার এসএফ আগের ভার্সনটা । সেই বাইকটা অনেক দিন ব্যবহার করেছি এবং সেই থেকে সুজুকি বাইকের প্রতি ভাল লাগা আছে বিধায় আমি এই বাইকটা কিনেছি। নতুন এই জিক্সার এসএফ বাইকটা যখন প্রথম বাজারে আসে তখন এটা এক দেখাতেই আমার পছন্দ হয়ে যায় এদিকে অনেক দিন আগের ভার্সনের জিক্সার এসএফ বাইকটা ব্যবহার করতে করতে একটু নতুন বাইকের অভিজ্ঞতা নিতে মন চায় । তাই সুজুকি জিক্সার এসএফ কারবুরেটর ভার্সনটা আমি রাজশাহীর স্বনামধন্য ডিলার একতা এন্টারপ্রাইজ থেকে ক্রয় করি।
বর্তমানে কোভিড ১৯ এর জন্য বাইক নিয়ে তেমন রাইড করা হয় না । কাজের ফাকে একটু সময় পেলে বাইক নিয়ে রিফ্রেশমেন্টের জন্য বের হই। তাই এখন পর্যন্ত এই বাইকটা ৩ মাসে রাইড করেছি মাত্র ১৫০০ কিমি। আমার এই বাইকটা কিনে এবং ১৫০০ কিমি রাইড করে কেমন পারফরমেন্স বা অনুভুতি পাচ্ছি সেগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আশা করি আমার রিভিউ পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন।
প্রথমেই বলি এই বাইকের ডিজাইনের কথা। আমার কাছে বাইকের ডিজাইন অনেক প্রিমিয়াম লেগেছে এবং বাংলাদেশের প্রিমিয়াম সেগমেন্টের বাইকদের টেক্কা দেওয়ার মত ডিজাইন এই বাইকে রয়েছে। সামনের হেডল্যাম্প, পেছনের টেল ল্যাম্প, স্প্লিট সিটিং পজিশন, কালার কম্বিনেশন, বডি গঠন, মিটার প্যানেল সব কিছুই নতুন করা এবং পূর্বের ভার্সনের সাথে এর কোন মিল নেই। আমার কাছে ডিজাইনটা খুব বেশি ভালো লেগেছে বিধায় আমি এই বাইকটা নিতে বেশি আগ্রহী হই।
ইঞ্জিনের পারফরমেন্স আমি পূর্বের জিক্সার এসএফ এর থেকে অনেক স্মুথ পাচ্ছি এবং ইঞ্জিন এই বাইকের গঠন এর কম্বিনেশনের ফলে আমার কাছে ইঞ্জিনের স্পীড বেশি উঠলেও অনেক কম মনে হয়। আমার মতে ইঞ্জিন একটু রিফাইন করা হয়েছে পূর্বের ভার্সনের থেকে। অপরদিকে ইঞ্জিন একটু ওভার হিট মনে হচ্ছে। এই ইঞ্জিন থেকে আমি গড়ে মাইলেজ পাচ্ছি ৪১ কিমি প্রতি লিটার।
সিটিং পজিশন স্প্লিট সিটিং পজিশন এবং তার সাথে থ্রী পার্ট হ্যান্ডলবারের কম্বিনেশনটাও দারুণ। আমি অনেকক্ষন রাইড করার পরও আমার কাছে খুব আরামদায়ক লাগে এবং আমি আরাম খুব ভালো অনুভব করি কিন্তু একটা সমস্যা আছে সেটা হল এর সিটিং পজিশন ও হ্যান্ডেলবার দুটাতেই। সিটিং পজিশন ঠিক মনে হলেও আমার কাছে সিট অনেক শক্ত মনে হয়েছে এবং একটা অভিযোগ ছিলো যে পিলিয়ন সিটিং পজিশন ছোট সেটা খুব বেশি নতুন ভার্সনে বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে হ্যান্ডেলবারে আমি ভাইব্রেশন লক্ষ্য করেছি।
ব্রেকিং সিস্টেম ও কন্ট্রোল আমার কাছে ভালো লেগেছে। আমার বাইকটা নন এবিএস তবে যে ডাবল ডিস্ক ব্রেকিং আছে তার পারফরমেন্স খারাপ না। আমি আমার পূর্বের বাইকেও ডাবল ডিস্ক ব্যবহার করেছি এবং সেখান থেকে এই বাইকে ডাবল ডিস্ক ব্যবহার করতে আমার খুব বেশি অসুবিধা হয় না। আমি চাইলেই আমার মত করে ব্রেক করে নিতে পারি। এদিকে মোটা চাকা , বাইকের গঠন ইত্যাদি মিলিয়ে কন্ট্রোল অনেক ভালো পাই। আমি খুব সুন্দরভাবে এই বাইকটা কন্ট্রোল করে নিতে পারি এবং আমার কাছে আগের বাইকের থেকে এটা বেটা মনে হয়েছে।
সাসপেনশন এর পারফরমেন্স বলতে গেলে খুব বেশি উপযুক্ত না । আমি এই বাইকের সাসপেনশন লক্ষ্য করে দেখেছি যে খুব বেশি শক্ত যার ফলে ভাঙ্গা রাস্তায় বেশি ঝাঁকুনি খেতে হয় । আশা করি এটা আরও রাইড করার পর দূর হয়ে যাবে তবে শুরু থেকেই এত শক্ত হওয়া উচিত না।
মিটার কনসোল আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে এবং এটা পূর্বের জিক্সার এসএফ এর থেকে অনেক বেটার। আমার কাছে এর মিটার কনসোল অনেক প্রিমিয়াম লেগেছে। অন্যদিকে হেডল্যাম্পের আলো একটু বাড়ানো উচিত এবং সিঙ্গেল রাইড করলে আমার কাছে মনে হচ্ছে লাইটের পজিশন একটু বেশি উঁচুতে যাচ্ছে। এটা আমি খুব শীঘ্রই ঠিক করে নেব।
ভাল খারাপ দুইটা মিলিয়েই একটা বাইক। আমি পূর্বের জিক্সার এসএফ ব্যবহার করেছি এবং এটা বর্তমানে ব্যবহার করছি। আমার কাছে বর্তমান ভার্সনটা বেশি ভালো লাগছে। এগুলো সব আমার ব্যাক্তিগত মতামত। সবাই সাবধানে রাইড করবেন। ধন্যবাদ।