যখন থেকে জিক্সার সিরিজ চালু হয়েছে, তখন থেকেই এটি ১৫০সিসি সেগমেন্টের মধ্যে একটি নতুন ক্রেজ তৈরি করেছে। একটি নতুন ফ্যান বেস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে সুজুকি এই বাইকগুলোর মাধ্যমে। বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেটে আমরা বেশকিছুদিন ধরেই একটি সংবাদ শুনছিলাম যে জিক্সার সিরিজের নতুন সংস্করণ আসতে চলেছে, যা ভারতে অনেক আগে থেকেই চালু হয়েছিল।সমস্ত জিক্সার এবং সুজুকি প্রেমীরা নতুন এক আকর্ষনের অপেক্ষায় ছিলেন বেশ অনেকদিন এবং অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত নতুন জিক্সার সিরিজ আমাদের স্থানীয় বাজারে চলে এসেছে। “বর্ন অফ গ্রেটনেস” এই ট্যাগ্লাইনের সাথে সুজুকি নতুন জিক্সার এবং জিক্সার এসএফ চালু করেছে সম্প্রতি। নতুন আউটলুক, নতুন প্রযুক্তি এবং ডিজাইন, সবকিছু মিলেই এই বাইকগুলিকে হট টপিকে পরিনত করে। আমাদের আজকের আলোচনায় আমরা জিক্সার নিয়ে কথা বলছি না, তার পরিবর্তে আমরা জিক্সার এসএফ ফাই এবিএসের নতুনত্ব এবং এর নতুন ফিচারগুলি নিয়ে কথা বলব। নতুন যুক্ত হওয়া বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করার আগেই আপনি ইতিমধ্যে নামের সাথে দুটি নতুন জিনিস যুক্ত দেখতে পাচ্ছেন, এফআই এবং এবিএস, আরও অনেক নতুন বৈশিষ্ট্য এখানে রয়েছে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
জিক্সার এসএফ ফাই এবিএসে আকর্ষণীয় নতুন পরিবর্তন:
- নতুনভাবেডিজাইনকৃত এলইডি হেডল্যাম্প
- ক্লিপ অন হ্যান্ডেল বার
- স্প্লিটসীট
- সম্পূর্ণ ডিজিটাল মিটার প্যানেল
- ডুয়াল মাফলার
- LED টেইল ল্যাম্প
- রেয়ার টায়ার হাগার
- স্টিফ ফ্রন্ট সাস্পেনশন।
- অ্যারোডাইনামিক ডিজাইন
ডিজাইন এবং গ্রাফিক্স:
এই নতুন জিক্সার এসএফের জন্য সুজুকি তাদের সেরাটাই দিয়েছে। এখন এই বাইকে রয়াছে রিয়াল স্পোর্টি আকর্ষন এবং এটির নতুন ডাইমেনশন ও অ্যারোডাইনামিক ডিজাইনের কারণে এটি বোঝা যাচ্ছে। ক্লিপ অন হ্যান্ডেল বার, স্পিট সিট, নতুন ডিজাইন করা টুইন মাফলার, ফ্রন্ট এবং রিয়ার লাইটের নতুন ডিজাইন এবং রেয়ার টায়ার হাগার এই বাইকটিকে আগের মডেলগুলির তুলনায় সম্পূর্ণ নতুন আকর্ষণ দিতে সক্ষম। এই নতুন এসএফের জন্য ব্যবহৃত কালার স্কিমগুলি খুবই আকর্ষনীয়। মোটো জিপি এডিশনের ক্ষেত্রে আরেকটি নতুন আকর্ষন হচ্ছে ECSTARস্টিকারের সাথে কালার কম্বিনেশন। যা এই বাইকটিকে আসল মোটো জিপি ট্র্যাক অনুভূতি দিতে সক্ষম। অন্যদিকে, বাকি কালারগুলোর ক্ষেত্রে গ্লসি কালার স্কিম ব্যাবহার করেছে, যা বাইকগুলোর ডিজাইনকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে।
ইঞ্জিন ট্রান্সমিশন:
সুজুকি কয়েক বছর আগেই তাদের SEP (সুজুকি ইকো পারফরম্যান্স) প্রযুক্তি নিয়ে এসেছিল, তবে এখন তারা তাদের বাইকে সর্বোত্তম পাররফর্মেন্স দেওয়ার জন্য ফুয়েল ইনজেকশন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করেছে। নতুন সুজুকি জিক্সার এসএফের কার্বুরেটর সংস্করণও রয়েছে, তবে মূল আকর্ষণ এফ আই ইঞ্জিনের। উন্নতমানেরফুয়েল ইনজেকশন প্রযুক্তি ৬ টি সেন্সর সহ তৈরী হয়েছে যাতে আরও ভাল মাইলেজ এবং স্পিড এর কম্বিনেশন পাওয়া যায়। আপনার প্রতিটি যাত্রাকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলতে যেকোন আরপিএম এ সঠিক থ্রোটল রেস্পন্সও এই ইঞ্জিন সরবরাহ করে। উভয় ভার্শনে প্রযুক্তির সামান্য পরিবর্তন ব্যতীত একই ইঞ্জিন কনফিগারেশন রয়েছে। জিক্সার এসএফ এফ আইবাইকে১৫৫ সিসি ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গেল-সিলিন্ডার, এয়ার কুলড ইঞ্জিন রয়েছে যা ১৪.১ পিএস মাক্স পাওয়ার @ ৮০০০ আরপিএম এবং ১৪ এনএম সর্বোচ্চ টর্ক @ ৬০০০ আরপিএম উত্তপন্ন করতে পারে। মাল্টি প্লেট ৫ স্পিড গিয়ার ট্রান্সমিশন বক্স উভয়ই এফআই এবং কার্বুরেটর ভার্শনে রয়েছে। এই নতুন ইঞ্জিনের জন্য বোর এক্স স্ট্রোকটি ৫৬.০x ৬০.৯মিমি সেট করা হয়েছে। ইঞ্জিন স্টার্টআপর করার জন্য এই বাইকে রয়েছে শুধুমাত্র ইলেক্ট্রিক স্টার্ট অপশন।
বডি ডাইমেনশনঃ
আমরা যদি এই বাইকের বডি ডাইমেনশনের দিকে লক্ষ করি তাহলে এই বাইকে দেখা যাবে,২০৩০ মিমি দৈর্ঘ্য, ৭৮০ মিমি প্রস্থ এবং ১১৩০ মিমি উচ্চতা। এই বাইকের হুইলবেসটি ১৩৪০ মিমি এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৬৫ মিমি সেট করা হয়েছে। সিটের উচ্চতা ৮০০ মিমি এবং এটির সাথে ১২ লিটার ফুয়েল ট্যাঙ্কার রয়েছে। সমস্ত কিছুর সংমিশ্রণ এই নতুন জিক্সার এসএফ-কে১৩৬ কেজি ওজন দিয়েছে।
সাসপেনশন এবং ব্রেক:
এই বাইকের সাসপেনশন সাইডে কিছুটা পরিশুদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। স্টিফার টেলিস্কোপিক, কয়েল স্প্রিং, অয়েল ড্যাম্পড সাসপেনশন সামনের দিকে রাখা হয়েছে, এবং পিছনের দিকে সুজুকি সুইং আর্ম ব্যবহার, মনো সাসপেনশন ব্যাবহার করেছে।
এখন যদি আমরা ব্রেকিংয়ের দিকটি লক্ষ করে দেখি তবে এই বাইকের আসল আকর্ষণ দেখা যাবে। এখন জিক্সার সিরিজের সাথে এবিএস (অ্যান্টি-লক ব্রেক সিস্টেম) রয়েছে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্রেকিং ফোর্সকে দক্ষতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করে এবং পিচ্ছিল রাস্তা এবং রাস্তার অবস্থার আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে হুইল লকআপকে এড়িয়ে যায়। যদিও সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস তবে এটি আগের চেয়ে অনেক ভালো পারফর্মেন্স দিতে সক্ষম। সামনের দিকে সুজুকি স্থাপন করেছে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএসের সাথে ডিস্ক ব্রেকএবং পিছনের দিকেও রয়েছে ডিস্ক প্লেটের ব্যাবহার।
টায়ার এবং হুইলঃ
সুজুকি সবসময় তাদের বাইকের জন্য ভাল গ্রিপ সম্পন্ন এবং দীর্ঘস্থায়ী টায়ার সরবরাহ করার চেষ্টা করে এবং এই নতুন এসএফের জন্যও একি প্রচেষ্টা। সামনের টায়ারের জন্য নতুন জিক্সার এসএফে রয়েছে ১০০/৮০-১৭ টিউবলেস টায়ার এবং পিছনের দিকে ১৪০/ ৬০R- ১৭ রেডিয়াল টিউবলেস টায়ার রয়েছে। উভয় দিকেই রয়েছে টিউবলেস প্রশস্ত টায়ারের জন্য ১৭ ইঞ্চি আলই হুইল যা নতুন নকশাকৃত, এবং ডিউরেবল।
ইলেকট্রিক এবং মিটার ক্লাস্টার:
এই দুটি ক্ষেত্রেও কিছু আপগ্রেড এই নতুন জিক্সার এসএফ এ লক্ষ্য করা যায়। এখন নতুন ডিজাইন করা হেডল্যাম্প এবং রিয়ার ল্যাম্প এলইডি পাওয়ার ফোর্স সহ পাওয়া যাবে। ক্লিয়ার লেন্স টার্ন লাইট স্থাপন করা হয়েছে এবং মেইনটেন্যান্স ফ্রি ১২ ভোল্ট ৩ এমএএইচ ব্যাটারি এই বাইকে রাখা হয়েছে সকল নতুন ইলেক্ট্রিক ফিচারগুলোকে চালানোর জন্য।
পুরোপুরি ডিজিটাল মিটার ক্লাস্টার এই বাইকে আগে থেকে দেখা যায় এবং নতুন মডেলে এমনকি আরও ভাল মিটার ক্লাস্টার রয়েছে। সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ফিচারসসহএই মিটার ক্লাস্টার রাইডারদের সলার পথকে আরো সুন্দর করতে সক্ষম।
শেষকথাঃ
আমরা ইতিমধ্যে আগেই উল্লেখ করেছি যে এই নতুন জিক্সার মডেলগুলির একটি মোটো জিপি সংস্করণ রয়েছে, এটি সেরা আকর্ষণ, তবে আরও দুটি নতুন কালার স্কিমও রয়েছে সেই সাথে। সুজুকির মতে Metallic sonic silver এই কালারটি প্রথম সুজুকিই বাজারে নিয়ে এসেছে, অন্য কারও কাছে এই কালারের বাইক নেই। এই নতুন এসএফের জন্য আরেকটি কালার স্কিম রাখা হয়েছে সেটি হচ্ছে glass sparkle black। আশা করি আমরা আপনাকে এই বাইকটি সম্পর্কে সকল প্রয়োজনীয় ফিচারের কথা উল্লেখ করতে পেরেছি। দেখে মনে হচ্ছে, সত্যই বর্ন অফ গ্রেটনেস কথাটি যুক্তিসম্পন্ন, এখন বাকিটা পারফরম্যান্সের উপরে।