বাইক চালাতে কার না ভালো লাগে আর যদি সেটা হয় আরামদায়ক ও দেখতে আকর্ষণীয় বাইক তাহলে তো সে বাইক নিয়ে সারা দিন রাইড করেও কোন ক্লান্তি আসবে না। আমি ঠিক তেমন একজন বাইকার যে সারাদিন রাইড করেও আমার কোন ক্লান্তি আসে না। ২০০৮ সালে আমি প্রথম বাইক চালানো শিখি এবং সেটা ছিলো আমার বাবার বাইক তারপরে আমি আমার ভাইয়ার বাইক চালাতাম এবং এক পর্যায়ে যখন পুরোপুরি বাইক চালাতে শিখে গেলাম তখন একটি দিনও বাইক ছাড়া বাসা থেকে বের হইনি। এমনটি আমার কলেজ জীবন পুরোটাই বাইকের উপর দিয়ে গেছে। তখনকার সময়ে আমার নিত্য দিনের সঙ্গী ছিলো টিভিএস এপ্যাচি আরটিআর। তারপরে আমি যখন ভার্সিটি জীবনে প্রবেশ করলাম তখন ভাবলাম যে নিজের একটা ব্যাক্তিগত বাইক থাকা প্রয়োজন কারণ বাসার সবারই একটা করে বাইক রয়েছে । আমার বাসা জয়পুরহাট । আমি উচ্চ শিক্ষার জন্য রাজশাহীতে আসি এবং এসে আমার বন্ধুদের বিভিন্ন জনের বিভিন্ন বাইক থেকে বাইক কেনার প্রতি আরও আগ্রহ বেড়ে যায়।
প্রথমের দিকে টিভিএস এপ্যাচি আরটিআর কেনার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু পরে দেখলাম যে এই বাইকের কিছু সমস্যা রয়েছে যার মধ্যে ইঞ্জিন ভাইব্রেশন অন্যতম। এরপর আমার আগ্রহ জাগে ইয়ামাহার জনপ্রিয় বাইক ফেজার কেনার জন্য কিন্তু আমার কাছে তখন ইয়ামাহা ফেজার ক্রয় করার জন্য বাজেট ছিলো না এবং তারা কোন ইন্সটলমেন্ট সরবরাহ করে না। ইয়ামাহা ফেজারও কেনা হলো না তারপরে আমি আমার বন্ধুর জিক্সার দেখি এবং সেটা ভালো লেগে যায় এবং জিক্সার এসএফ মটো জিপি এডিশন কেনার সিদ্ধান্ত নিই। জয়পুরহাট এর সুজুকির শোরুম থেকে আমি বাইকটা ইন্সটলমেন্টে কিনেছিলাম এবং এই বাইক কেনার বিষয় সবচেয়ে অনুপ্রাণিত হই এর ডিজাইন,রেসিং লুক এবং গ্রাফিক্স দেখে। সব মিলিয়ে আমি দেড় বছর ধরে এই বাইকটি ব্যবহার করছি এবং প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার লম্বা পথ ইতোমধ্যেই পাড়ি দিয়ে ফেলেছি। আজ শোনাবো এই ১০ হাজার কিলোমিটার রাইডিং অভিজ্ঞতা।
প্রথমেই বলতে চাই এর ডিজাইন নিয়ে। ডিজাইন নিয়ে যদি বলি তাহলে অবশ্যই বলতে হবে যে ডিজাইনের ব্যপারে এই বাইক প্রশংসার কোন কমতি রাখে না। মাস্কুলার ডিজাইন, রেসিং আউটলুক এবং মটো জিপির গ্রাফিক্স সব মিলিয়ে ডিজাইনের দিক দিয়ে এই বাইকটি অসাধারণ। আমি আমি একটু স্বাস্থ্যবান হওয়ার আমার বন্ধুরা মন্তব্য করে যে এই বাইকটা নাকি আমার সাথে খুব ভালো মানায়। যাই হোক ডিজাইন নিয়ে আমি বলতে গেলে অনেক সন্তুষ্ট।
বিল্ড কোয়ালিটির ব্যাপারে বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি বেশ ভালোই আছে । আমি এই বাইক নিয়ে একবার দুর্ঘটনার সম্মুখীন হই এবং যেমনটা ক্ষতি হবে বলে ধারনা করেছিলাম তেমনটা হয়নি। শুধুমাত্র হ্যান্ডেলবারটা একটু বাঁকা হয়ে গিয়েছিলো এবং সামনের চাকার রিমটাও বাঁকা হয়ে গিয়েছিলো। সেই দুর্ঘটনাটা ছিলো অনেক বড় এবং আল্লাহর রহমতে আমি প্রাণে বেঁচে গিয়েছি। আমার তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। আরেকটি বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি যে হাই স্পীডে শুধু বাইকের সামনের ব্রেক ব্যবহার করলে একটু ভেসে যায় মনে হয় এছাড়া আর কোন সমস্যা আমি এখনও পাই নি।
সিটিং পজিশনের কথা বলতে গেলে আমি প্রথমেই বলতে চাই যে আমি সপ্তাহে অন্তত দুইবার করে রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট যাতায়াত করি এক্ষেত্রে দেখেছি যে রাইডিং সিটিং পজিশন অনেক আরামদায়ক। একদিনে প্রায় ৪০০ কিমি রাইড করার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলবো যে সিটিং পজিশ্ন রাইডারের জন্য দুর্দান্ত কিন্তু পিলিয়নের সিটিং পজিশন তেমন আরামদায়ক না । যেহেতু নেকেড স্পোর্টস বাইক তাই পিলিয়ন সিটিং পজিশন রাইডারের তুলনায় অনেক ছোট এবং উঁচুও বটে তাই পিলিয়নের চড়তে একটু কষ্টকর হয়। রাইডিং করার জন্য আমার মনে হয় এই বাইকের সিটিং পজিশন অনেক ভালো।
ইলেকট্রিক্যাল বিষয়ের মধ্যে আমার কাছে অন্যান্য ইলেকট্রিক্যাল ফিচারস ভালো লেগেছে শুধু এর হেডল্যাম্পটা একটু হতাশ করেছে কারণ এর হেডল্যাম্পের আলোটা অনেক কম । বিশেষ করে এই সেগমেন্টের যে বাইকগুলো আছে তাদের থেকে তুলনামূলক অনেক কম। আমি এলিডি হেডল্যাম্প লাগিয়ে নিয়ে এখন অনেক ভালো আলো পাচ্ছি।
আরামের দিক থেকে এই বাইকের এখন পর্যন্ত তেমন কোন খারাপ বিষয় লক্ষ্য করিনি। এদিকে কন্ট্রোলের দিক দিয়ে আমি এই বাইকে অসাধারণ পারফরমেন্সে পাচ্ছি। শহর কিংবা হাইওয়েতে আমি খুব সুন্দরভাবে কন্ট্রোল করে নিতে পারি এবং সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে বাইকের ওজনটা যা আমাকে আরও ভালো কন্ট্রোল সরবরাহ করে।
ব্রেকিং সিস্টেম হিসেবে আমার এই বাইকে ব্যবহার করা হয়েছে ডাবল ডিস্ক ব্রেক যা ব্রেকিং কে আরও শক্তিশালী করেছে এবং আমি যতগুলো বাইক চালিয়েছি তার তুলনায় ব্রেকিংটা আমার কাছে বেশ ভালো বলে মনে হয়েছে। ১০ হাজার কিমি রাইডেও ব্রেক শু এর ক্ষয় তেমন লক্ষ্য করিনি।
সিংগেল রাইডে ভাংগা রাস্তায় একটু ঝাঁকুনি মনে হয় তবে পিলিয়ন থাকলে ঝাঁকুনি একদমই মনে হয় না। আমার মনে হয় এর পেছনের সাসপেনশন আরেকটু নরম করা উচিত। আর এমনি রাস্তায় সাসপেনশন খুব ভালো পারফরম করে।
টায়ারের সাইজগুলো বেশ মোটাসোটা এবং গ্রিপিং অনেক ভালো সরবরাহ করে।
এই বার আসি মাইলেজের ব্যপারে। আমি শুরুতে মাইলেজ পেয়েছিলাম ৩৫ কিমি এর মত । এখন মাইলেজ পাচ্ছি প্রায় ৪০ কিমি। মাইলেজের ব্যপারে আমি তেমন মাথা ঘামায় না কারণ এত বড় একটা দানবের জন্য কিছুতো উৎসর্গ করতেই হবে।
সার্ভিস সেন্টারে বাইক কেনার পর আমি শুধুমাত্র একবার গিয়েছিলাম । কারণ আমাকে বেশিরভাগ সময় রাজশাহীতেই থাকতে হয় তাই জয়পুরহাট এর শোরুমে যাওয়ার সুযোগ হয় না। তাদের শোরুমে এক বার গিয়ে আমি দেখেছি যে তাদের ব্যবহার যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ভালো তবে রাজশাহীতে এসে আমি বাইরে সার্ভিস করাতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করি।
সবশেষে যে বিষয়টা আসে সেটি হল বাইকের দাম। আমার মনে হয় ডিজাইন, ইঞ্জিন, আরাম ইত্যাদি দিক দিয়ে বিবেচনা করলে দাম হিসেবে এই বাইকটি পারফেক্ট। আমি যখন কিনেছিলাম তখন দামটা একটু বেশি ছিলো কিন্তু এখন গ্রাহকদের নাগালের মধ্যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
সবশেষে আমি বলবো যে এই বাইকটা নিয়ে আমি অনেক খুশি। বাইকের লুক, ইঞ্জিন সব কিছু আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছে। আজ এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন।