প্রায় ৮ মাস আগে জিক্সার বাইকটি নিয়ে আমার পথ চলা শুরু। আমি এই বাইকটি প্রথম পছন্দ করি এর ডিজাইন দেখে তারপর আমার বন্ধুর জিক্সার ছিলো তাদের জিক্সারটি চালিয়ে এর কন্ট্রোল ও সিটিং পজিশন আমাকে মুগ্ধ করে। আমি ডিজাইন,কন্ট্রোল,সিটিং পজিশন সম কিছু মিলিয়ে জিক্সার বাইকটি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। আমার এখন বাইক আছে প্রায় ৪ টার মত এবং জিক্সার তাদের মধ্যে একটি। যেহেতু বর্তমানে আমি একসাথে ৪টি বাইক ব্যবহার করছি তাই জিক্সারের ভালো মন্দ কিছু দিক আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। আশা করি সেগুলো আপনাদের জন্য সহায়ক হবে।
জিক্সারের ডিজাইন নিয়ে শুরুতে যদি বলে তাহলে আমি আন্তরিকভাবে বলবো যে এর ডিজাইন আমার খুব পছন্দ হয়েছে। সুন্দর কালার কম্বিনেশনের পাশাপাশি মোটা চাকা এর ডিজাইনকে আরও বেশি ফুটিয়ে তুলেছে। আর এই বাইকটি দেখতে অনেকটা দানবের মত যার জন্য চালিয়ে এর মাস্কুলার বডি অনুভব করা যায় কিন্তু আমি ডিজাইনের সন্তুষ্ট হলেও এর বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে তেমনটা সন্তুষ্ট না। বিল্ড কোয়ালিটি ১৫০ সিসির বাইক হিসেবে আরও মজবুত ও উন্নত করা দরকার । আমার মাঝে মাঝে মনে হয় যে বাইকের কিছু পার্টস থেকে বিরক্তিকর শব্দ আসে যা এর বিল্ড কোয়ালিটির নিম্নমানের পরিচয় বহন করে।
ইঞ্জিনের পারফরমেন্স সত্যি করে বলে গেলে খুবই ভালো। ইঞ্জিনে শব্দ, থট্রল রেসপন্স, শক্তি, সাপোর্ট সব কিছু অনেক ভালো মানের। আমার মনে হয় যে এই বাইকের ইঞ্জিন লম্বা ট্যুর দিলেও পারফরমেন্সে কোন ঘাটতি হবে না বরং যত ব্যবহার করা হবে তত আরও স্মুথ হবে। আর এত ভারী বাইক নিয়ে, মোটা চাকা নিয়ে ইঞ্জিনটা খুবই ভালো সাপোর্ট দেয়। আমি ঠিক সেভাবে টপ স্পীড ট্রাই করিনি তবে এমনি পিকআপ দিয়ে বুঝতে পারি আসলেই ইঞ্জিন অনেক শক্তিশালী। ইঞ্জিন পারফরমেন্স এই পর্যন্ত আমাকে কোন প্রকার হতাশ করেনি।
সিটিং পজিশন অনেক ভালো এবং বেশ প্রশস্ত যার ফলে চালিয়ে অনেক আরাম পাই। এছাড়া সিটিং পজিশনের সাথে মিলিয়ে এর হ্যান্ডেলবারটা আপরাইট যে কারণে কোন ব্যাক পেইন হয় না। আমি অনেকক্ষণ চালিয়ে দেখেছি যে বাইকটা আসলেই অনেক আরামদায়ক। তাই এই বাইকে আরাম নিয়ে আমি কোন ধরণের দুশ্চিন্তা করি না।
ইলেকট্রিক্যাল দিক গুলোর মধ্যে আমার কাছে খারাপ লেগেছে এর হেডল্যম্পের আলো এবং সুইচ। হেডল্যাম্পের আলো রাতের বেলার খুবই কম মনে হয় আর হাইওয়েতে রাইডের জন্য এই হেডল্যাম্পের আলো পারফেক্ট না।
বাইকটি আকারে একটু ছোট এবং নেকেড স্পোর্টস। যার ফলে শহরের ব্যস্ততম রাস্তা এবং হাইওয়েতে খুব ভালোভাবে রাইড করা যায় বিশেষ করে শহরের মধ্যে রাইড করতে কোন প্রকার সমস্যা হয় না। আমি দেখেছি যে অন্যান্য ১৫০ সিসি বাইকগুলো শহরের মধ্যে রাইড করতে একটু সমস্যা হয় কিন্তু আমার এই বাইকে কোন প্রকার সমস্যা হয় না এবং কন্ট্রোলও খুব ভালো দেয়। আমি এই বাইকের কন্ট্রোল নিয়ে সন্তুষ্ট। আর সবচেয়ে মজার বিষয় যে এই বাইক বেশি স্পীডে কোন ভাইব্রেশন করে না।
ব্রেকিং সিস্টেম খুবই ভালো। সামনের এবং পেছনের ব্রেক খুব সুন্দর কাজ করে কিন্তু সমস্যার বিষয় হচ্ছে যে পেছনের ব্রেক মাঝে মাঝে একটু লুজ হয়ে যায়।
সাসপেনশনগুলো নরম আছে এবং এগুলো যে কোন রাস্তায় খুব ভালো সাপোর্ট দেয়। আমি ভাংগা রাস্তায় চালিয়ে দেখেছি যে সাসপেনশনগুলো আসলেই অনেক ভালো মানের এবং এগুলো যথেষ্ট ভালো কন্ট্রোল এনে দেয়।
টায়ারের সাইজ যথেষ্ট মোটা এবং এগুলো গ্রিপ খুব ভালো দেয়। বৃষ্টি ভেজা রাস্তা কিংবা অন্য যে কোন ধরণের রাস্তায় টায়ারের গ্রিপ অত্যান্ত ভালো মানের।
মাইলেজ নিয়ে আমি আরও খুশি। এই রকম একটা দানব, মোটা চাকা নিয়ে আমাকে এখন ৪৫ কিমি মাইলেজ দেয়। আমি মাইলেজ নিয়ে বেশি কিছু বলবো না কারণ বেশি কিছু বললে আসলেই অনেক কিছু বলা হয়ে যাবে।
বাইকের আফটার সেলস সার্ভিস খুবই ভালো। তারা যথেষ্ট ভালো কেয়ারিং এবং গ্রাহকদের সকল সমস্যা খুবই ভালোভাবে সমাধান করার চেষ্টা করে।
দামটা বর্তমান বাজার অনুযায়ী একটু বেশি বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। দামটা যদি একটু কমানো যেত তাহলে আমার মনে হয় বাইকের চাহিদা আরও বাড়ত।
ভালো দিক
-কন্ট্রোল ভালো
-সিটিং পজিশন বসে খুব আরাম
-টায়ারের গ্রিপ খুব সুন্দর
মন্দ দিক
-বিল্ড কোয়ালিটি আরও উন্নত করা উচিত
-হেডল্যাম্পের আলো কম
সব কিছু বিবেচনা করে কেউ যদি জিক্সার বাইকটি কেনার জন্য পরামর্শ চান তাহলে আমার পরামর্শ থাকবে যে – আপনার যদি এই বাইক পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই নিতে পারেন। আমি মনে করি যে ভালো জিনিসের খারাপ দিক অবশ্যই থাকবে এবং যত বেশি খারাপ দিক থাকতে ততবেশি ওই জিনিস ভালো হবে।