যদি আমরা বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় বাইক ব্র্যান্ডের কথা উল্লেখ করি তবে সুজুকি নামটি উঠে আসবে। সুজুকি জাপানের অন্যতম শীর্ষ মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক। কোন সন্দেহ ছাড়াই তারা বছরের পর বছর ধরে বেস্ট কোয়ালিটির বাইক সকলকে উপহার দিয়ে আসছে এবং তা এখনও চলমান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই কোম্পানি জিএসএক্স সিরিজের মতো স্পোর্টস ক্যাটেগোরি বাইকের জন্য পরিচিত। তবে বাংলাদেশের মতো দেশগুলির ক্ষেত্রে কমিউটার বাইকেরই বেশি চাহিদা। আর এই কারনে কমিউটার সেগমেন্টেও সুজুকি বাইক অফার করে থাকে এবং এই সেগমেন্টে আমাদের দেশে তাদের সর্বশেষ বাইক হচ্ছে সুজুকি জিএসএক্স ১২৫। যদিও সুজুকি জিএসএক্স ১২৫ সুজুকির একটি আকর্ষনীয় কমিউটার বাইকের মধ্যে একটি এবং সকলের পরিচিত সুজুকি সিরিজ জিএসএক্স-আর ট্যাগলাইন বহন করছে, তবে এই বাইকে লেজেন্ডেরি জিএসএক্স বাইকের তেমন কিছুই নেই, এমনকি একটি সিরিজে একই নামে কোন বাইক থাকলে যে মূল বৈশিষ্ট্যগুলি থাকে সেগুলোরও কোন মিল নেই। এই বাইকের আগমনের পরে যাদের এটি নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ছিল বেশিরভাগই হতাশ হয়ে পড়ে, তার কারন নামের সাথে এবং চেনা পরিচিত মডেলের সাথে কোন মিল নেই। তবে কমিউটার বাইক হিসাবে এই বাইকটি যথেষ্ট উন্নত।ভালো ইঞ্জিনের সাথে সাথে বাইকটিতে কমিউটার বাইক হিসেবে দেয়া হয়েছে লোভনীয় ডিজাইনের। আধুনিকতম ফিচার এবং আকর্ষনীয় রঙগুলি এই বাইকটিকে কমিউটার হিসেবে সম্পূর্ণ করে তুলেছে। সুজুকি ১২৫ সিসি সেগমেন্টে একজন রাইডারের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ফিচার সরবরাহ করার চেষ্টা করেছে। তাহলে চলুন দেখে নেই এই নতুন বাইকে কিকি আকর্ষন রয়েছে।
ডিজাইন ও অউটলুকঃ
শুরু করার জন্য আমরা এই বাইকের ডিজাইন হাইলাইট করব এবং প্রথমেই এটা দেখার কারন অনেক সময় এইদিকটি আমরা বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। এই মডেলটির জন্য সুজুকি বাইকের ডিজাইনটি আকর্ষনীয় রাখার চেষ্টা করেছে, এই বাইকের জন্য অতিরিক্ত স্পেশাল কিছুই দেওয়া হয়নি। তবে বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন অন্যান্য ১২৫ সিসি বাইকের সাথে তুলনা করলে বাইকটির ডিজাইন বেশ উন্নত। এই বাইকে দেয়া হয়েছে একটি সামনের এক্সটেনশন কিট, যা বাইকের অউটলুককে কিছুটা প্রশস্ত করেছে। কিট ব্যতীত, বাইকের সাথে ততটা বেশি স্টিকার ব্যাবহার নেই এবং এর জন্য এটি দেখতে সুন্দর দেখা যায়। একটি আকর্ষনীয় ড্যাশবোর্ড, মাসকুলার ফুয়েল ট্যাঙ্কারসহ স্টাইলিশ হেডলাইট ইউনিট, ক্রমিংয়ের সামান্য ব্যবহার এবং ফ্ল্যাট সীটবাইকটিকে একটি আদর্শ ১২৫ সিসি কমিউটার বাইকের লুক প্রদান করেছে।
ইঞ্জিন এবং ট্রান্সমিশনঃ
একটি ১২৫ সিসি কমিউটার বাইক হিসাবে সুজুকি জিএসএক্স ১২৫ সর্বাধিক পারফরম্যান্স দেবার উদ্দেশ্যে ভাল ইঞ্জিন ফিচার নিয়ে এসেছে। এই কমিউটার বাইকটি এয়ার কুলড, ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গেল-সিলিন্ডার, ২-ভালভ, ১২৫সিসি ইঞ্জিনে সম্বৃদ্ধ, যা ৭.৮ পি এস মাক্স পাওয়ার দিতে সক্ষম ৯০০০ এরপিএম এ এবং ৯.২ এনএম টর্ক তৈরি করতে পারবে ৭০০০ আরপিএম এ। ৫ স্পিড গিয়ারবক্স এবং ওয়েট মাল্টি-প্লেট ক্লাচ রাখা হয়েছে এই বাইকে ইঞ্জিন ট্রান্সমিশনের জন্য। এই বাইকটির গড় মাইলেজ প্রায় ৫৫-৬০ কিলোমিটার / ঘন্টা এবং টপ স্পীড ১১০কিলোমিটার / ঘন্টা যা সুজুকির নিজেস্ব মতামত। বাইকের ইঞ্জিনটি স্টার্ট করার জন্য রাইডার পাবেন ইলেকট্রিক এবং কিক স্টার্টিং দুইটি ব্যাবস্থাই।
ডাইমেনশনঃ
শহরে কিংবা হাইওয়ে রাইড উভয় ক্ষেত্রেই আরামদায়ক করে তোলার জন্য সুজুকি এই বাইকটিকে আপ-রাইট হ্যান্ডেলবারের পাশাপাশি একটি ফ্ল্যাট এবং সিঙ্গেল সিটের কম্বিনেশন দিয়েছে। এই ফিচারের কারনে বাইটি শহর এবং হাইওয়ে দুই ক্ষেত্রেই আরামদায়ক। ডাইমেনশনের দিক থেকে বাইটি স্ট্যান্ডার্ড দেখায়। এই বাইকের সামগ্রিক দৈর্ঘ্য ১৯৯০ মিমি, প্রস্থ ৭৫৫ মিমি, উচ্চতা ১০৭৫ মিমি। সীটের উচ্চতা ৭৫০ মিমি, তবে এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স প্রায় ১৬৭ মিমি, যা কিছুটা কম। এই বাইকের সম্পূর্ন ওজন ১২৬ কেজি এবং এতে ১৪.২ লিটার ফুয়েল ধারন ক্ষমতা রয়েছে।
ব্রেক এবং সাসপেনশন:
বর্তমান ট্রেন্ড এবং ব্র্যান্ডের মান অনুযায়ী আমরা অবশ্যই এবিএস, বা সিবিএস আশা করতে পারি, তবে এটি একটি কমিউটার বাইক, হয়তো এই কারনে বাইকে কোন ABS / CBS ব্রেকিং সিস্টেম নেই, এবং এটি সিঙ্গেল ডিস্ক ভার্শনে পাওয়া যাবে। সামনের দিকে একটি ডিস্ক প্লেট যা নিসিন ক্যালিপারের সাথে অবস্থিত, এবং দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সরবরাহ করতে সক্ষম। অন্যদিকে পেছনের দিকে রয়েছে ড্রাম ব্রেক।
সাসপেনশনের জন্য এই বাইকটিতে সামনের চাকায় রয়েছে টেলিস্কোপিক, কয়েল স্প্রিং, অয়েল ড্যাম্পড সাসপেনশন এবং পিছনের দিকে হাইড্রোলিক স্প্রিং ড্যাম্পিং ডুয়েল-শক সাসপেনশন। এই সাসপেনশনগুলি সহ জিএসএক্স ১২৫ অবশ্যই আরও ভাল পারফরম্যান্স সরবরাহ করবে বলে আসা করা যায় এই সেগমেন্টে।
টায়ার এবং চাকা:
উভয় পাশের আলয় হুইল এবং টিউবলেস টায়ারের ব্যাবহার করেছে সুজুকি। সামনের দিকে রয়েছে ২.৭৫/১৮ টায়ার এবং পিছনের দিকে ৯০/৯০/১৮। আশা করা যায় এই টিউবলেস টায়ারগুলি চালকদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং সুরক্ষার দিকটি ভালোভাবেই পূরন করবে।
মিটার প্যানেল এবং ইলেক্ট্রিকাল:
জিএসএক্স ১২৫ এর মিটার প্যানেলটি সম্পূর্ণ অ্যানালগ। ড্যাশবোর্ড দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি স্পিডোমিটার ও ট্রিপ মিটারের জন্য এবং অন্যটি টেকোমিটারের জন্য। এছাড়াওফুয়েল গেজ, টার্নিং ইন্ডিকেটর, গিয়ার ইনডিকেটর ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। হেডলাইট, টেইল ল্যাম্প এবং ইন্ডিকেটর গুলোর জন্য হ্যালোজেন বাল্ব এই বাইকের সাথে দেয়া হয়েছে। সামনের বাল্বটিতে 12V, 35W-12V হ্যালোজেন এবং পিছনের জন্য 5W / 21W হ্যালোজেন বাল্ব দেয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ ইলেক্ট্রিকাল ফিচারগুলো পরিচালনার জন্য মেইন্টেনেন্স ফ্রি12V, 3Ah ব্যাটারি রাখা হয়েছে এই বাইকে।
শেষ কথা:
এই বাইকের জন্য তিনটি কালার স্কিম রাখা হয়েছে এবং প্রত্যেককে বিভিন্ন কালারের সাথে কিছুটা শেড যুক্ত। প্রধান কালার স্কিমগুলি হল রেড, ব্লু এবং ব্ল্যাক।এই বাইকের সমস্ত ফিচার দেখার পর আমরা এটি বিবেচনা করতে পারি এটি একটি আকর্ষনীয় এবং ভাল ফিচার সম্বৃদ্ধ কমিউটার বাইক, যার পারফরম্যান্সও আসা করা যায় ভালোই হবে। তবে জিএক্সএস-আর নামটি স্পোর্টস,রেসিং, স্টাইল এবং স্পীডের জন্য বেশি পরিচিত কিন্তুসেগুলি মোটেই এই বাইকের অংশ নয়।