খুব ছোটবেলা থেকেই বাইকের প্রতি আমার ভালোবাসা ও আবেগ । আমি যখন দেখি আমার আশেপাশের বড় ভাইয়েরা বাইক ব্যবহার করত তখন নিজের মনে খুব শখ হত যে আমারও একদিন একটা বাইক হবে। বাইক কেনার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় থাকে এবং বিষয়গুলো বাইকে থাকলে সেই বাইক নিঃসন্দেহে পছন্দ করা যায় । আমার বাইক কেনার ক্ষেত্রে তিনটা বিষয় বিবেচনা করেছিলাম। এক হচ্ছে ডিজাইন, আরেকটি হচ্ছে স্পীড এবং আরেকটি ব্র্যান্ড। এই তিন দিক থেকে আমার কাছে পারফেক্ট মনে হয়েছে সুজুকি জিএসএক্স আর। ডিজাইনগত দিক থেকেও রয়েছে স্পোর্টস বাইকের ছোঁয়া। বাইকটা সামনে থেকে দেখতে খুবই অসাধারণ লাগে এবং আমি নিজে লক্ষ্য করেছি এর সার্বিক লুকস ও ডিজাইন অনেক এগ্রেসিভ। অন্যদিকে বাইকের ইঞ্জিনের শক্তি ও স্পীড আমি বলবো যে বাংলাদেশের মধ্যে সেরা কারণ আমি দেখেছি যে এই বাইকটার গতি অন্যান্য বাইকের থেকে অনেক বেশি। আর সুজুকি একটি জাপানিজ ব্র্যান্ড তাই তাদের কোয়ালিটি নিয়ে আমার তেমন কোন দ্বিধা নাই। সব মিলিয়েই বাইকটা আমার পছন্দ হয়ে যায়।
আমি প্রায় ২ মাস যাবত এই বাইকটা ব্যবহার করছি এবং এই ২ মাসে রাইড করেছি ৩১০০ কিমি। সুজুকি জিএসএক্স আর ডুয়াল চ্যানেল এবিএস বাইকের আগে আমি ব্যবহার করতাম সুজুকি জিক্সার এসএফ ডাবল ডিস্ক । সেই বাইক থেকেই অনেক ভালো পারফরমেন্স পেয়েছিলাম এবং আমার সুজুকি জিএসএক্স আর বাইকটা বেশি পছন্দের ছিলো তাই সেটি বিক্রি করে দিয়ে এই বাইকটা নিয়েছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার এই বাইকের ভালো দিকগুলো তুলে ধরবো এবং আপনাদের কাছে আরেকটি বিষয় বলে রাখি যে এই বাইকটা রাইড করে আমি এখন পর্যন্ত এর খারাপ কোন দিক লক্ষ্য করিনি। তাই আমি যা বলবো সব এই বাইকের ভালো দিকগুলো নিয়েই বলবো।
-এই বাইকের স্পীড এই সেগমেন্টের মধ্যে অনেক বেশি । কারণ আমি এক্সেলেরেশন একটু দিলেই অনেক বেশি স্পীড তুলতে পারে এবং আমি আশাবাদী যে নিমিষেই এই বাইকটা নিয়ে ১০০ স্পীড তুলা যাবে এবং টপ স্পীড পাওয়া যাবে। আমি এই বাইক নিয়ে এখন হাই রেভ করছি না তবে এখনবার স্পীড তুলার চেষ্টা করেছিলাম এবং আমি স্পীড পেয়েছিলাম ১৩০ কিমি প্রতি ঘণ্টা। এই বাইকের স্পীড আরও বেশি পাওয়া যাবে যদি রাস্তা ভালো হয়।
-ডিজাইনের দিক থেকে এই বাইকের মধ্যে অনেক প্রিমিয়াম একটা ভাব আছে এবং আমি এই বাইকটা ডিজাইনের জন্য আরও বেশি পছন্দ করি। আমার কাছে মনে হয়েছে যে বাইকের এরো ডাইনামিক শেপ একদম পারফেক্ট যার ফলে স্পীড দ্রুত উঠে এবং স্পীড উঠলে বুঝা যায় না। হাই স্পীডে বাইকের ব্যালেন্স অনেক ভালো থাকে এবং কোন কাপাকাপি অনুভব হয় না।
-সিটিং পজিশন রেসিং বাইক হলেও যথেষ্ট আরামদায়ক মনে হয়েছে আমার কাছে। আমাদের দেশে যে প্রিমিয়াম রেসিং বাইক আছে সেগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বেশি রাইড করলে কব্জিতে ব্যথা করে কিন্তু আমার কাছে তেমন কোন কিছু মনে হয় না সুজুকি জিএস এক্স আর রাইড করে। হ্যান্ডেলবারটা অনেক ইজি এবং এটা খুব ভালো ভাবেই ঘোরানো যায়।
-হেডল্যাম্পের ডিজাইন অনেক সুন্দর লেগেছে এবং দেখে মনে হয়েছে যে এখানে সুজুকি তাদের ডিজাইনের দিক থেকে কোন আপোষ করেনি। হেডল্যাম্পের আলোটাও অনেক ভালো পেয়েছি।
-ব্রেকিং সিস্টেমে তারা এবার নিয়ে এসেছে ডুয়াল চ্যানেল এবিএস। এজন্য সুজুকি কে অনেক ধন্যবাদ কারণ তারা এই বাইকের স্পীডের পাশাপাশি ব্রেকিং এর দিকেও খেয়াল করেছে। বাইকের যে পরিমানে স্পীড উঠে সে পরিমানে এটাকে থামানোও সম্ভব। ডুয়াল চ্যানেল এবিএস থাকার ফলে আমি খুব ভালো ভাবে বাইকটার স্পীড কমাতে পারি এবং আমার কাছে খুবই আত্মবিশ্বাসী লাগে ব্রেকিং করার সময়। বৃষ্টিভেজা রাস্তা কিংবা যে কোন রাস্তায় এর ব্রেকিং পারফরমেন্স লক্ষ্যনীয়।
-ভালো ব্রেকিং এর পাশাপাশি আমি খুব ভালো মাইলেজও পাচ্ছি। শহরের মধ্যে আমি লিটারে ৩৮ থেকে ৪০ কিমি এবং হাইওয়েতে পাচ্ছি লিটারে ৪২ কিমি। আমার মতে এর ইঞ্জিন, এক্সেলেরেশন ইত্যাদি বিবেচনা করে মাইলেজ অনেক অনেক ভালো। এই রকম মাইলেজ যে কোন রাইডারকে আকর্ষণ করবে।
-মিটার কনসোল এর ফিচারস অনেক সুন্দর পাশাপাশি এর থেকে আমি আমার রাইডিং এর সব তথ্য নির্ভুল পাই।
-টায়ারের গ্রিপ এবং সাসপেনশনের পারফরমেন্স আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আমি যখন ভাংগা রাস্তায় রাইড করি তখন এই বাইকের সাসপেনশন আমাকে খুব ভালো আরাম সরবরাহ করে এবং এই সাসপেনশন যত দিন যাচ্ছে ততই আরও বেশি স্মুথ হচ্ছে। আমি সাসপেনশনের পারফরমেন্স নিয়ে মুগ্ধ । অন্যদিকে বাইকের টায়ারের সাইজ ও গ্রিপ ভালো লেগেছে এবং টায়ার প্রেশার যদি সঠিক রাখা হয় তাহলে এই বাইকের ব্যালেন্স ও গ্রিপ অনেক ভালো পাওয়া যায়।
-বাইকের এগজস্ট শব্দটা অনেক সুন্দর এবং যখন হাই রেভ করা হয় তখন রেসিং বাইকের মত গর্জন শুরু করে এবং হাই স্পীডে বাইকের এগজস্ট শব্দ আমার কাছে অনেক ভালো লাগে । এটার মধ্যে একটা আলাদা অনুভুতি কাজ করে।
-চেইন সেট আমার কাছে অনেক উন্নতমানের মনে হয়েছে এবং এই চেইন সেট থেকা মি অনেক ভালো সাপোর্ট পাচ্ছি। আশা করি এই চেইন সেট অনেক দিন আমাকে সাপোর্ট দিবে।
-বাইকের ইগ্নিশন সিস্টেম আপডেট ।
আমার কাছে সুজুকি জিএসএক্সআর বাইকটা ব্যবহার করে অন্য রকম অভিজ্ঞতা লাগছে। আমি অনেক বাইক রাইড করেছি কিন্তু এই বাইকের মত সাপোর্ট, ফিচারস অন্য কোন বাইকে লক্ষ্য করিনি। এই বাইকাট অন্যান্য সব বাইক থেকে আলাদা এবং সুজুকি অনেক পরিশ্রম দিয়েছে এই বাইকের পেছনে। এই ছিলো আমার অভিজ্ঞতা সুজুকি জিএসএক্সআর ডুয়াল চ্যানেল এবিএস নিয়ে । সবাই সাবধানে রাইড করবেন ধন্যবাদ।