জাপানের প্রসিদ্ধ মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড কাওয়াসাকির এলিমিনেটর ক্রুজারের সাফল্যে অনুপ্রানিত হয়ে বাজাজ সর্বপ্রথম ২০০৫ সালে তাদের এভেন্জার সিরিজ এর ক্রুজারগুলো বের করে। এভেন্জার সিরিজ এর বৈশিষ্ট্য হলো দেখতে প্রায় একই রকম। বাজাজ এভেন্জার ১৫০ হলো তাদের এন্ট্রি লেভেলের ক্রুজার যেটি কম সিসি এবং দামেও কম। তরুনদের টার্গেট করে বানানো এই ১৫০সিসি ক্রুজারটি সহজেই ক্রেতাদের মনযোগ আকর্ষন করতে সক্ষম হয়।
সুজুকি জিক্সার সিরিজটি মুলত সুজুকি জিএক্সআর১০০০ এর আদলে ১৫০সিসি ইনজিন দিয়ে তৈরী করা হয়। সিরিজটি তরুনদের মধ্যে যথেষ্ঠ জনপ্রিয়তা লাভ করে। বাজাজের এভেন্জার ১৫০ বাইকটির জনপ্রিয়তার কারনে সুজুকিও ভারতের বাজারে এন্ট্রি লেভেলের ক্রুজারের কথা ভাবতে থাকে এবং এ বছরের(২০১৭) নভেম্বরে তাদের ১৫০সিসি ক্রুজার সুজুকি ইন্ট্রুডার ১৫০ উন্মোচন করে।সুজুকি এটিকে মডার্ন ক্রুজার বলছে। তাদের ইন্ট্রুডার এম১৮০০ এর আদলে একে তৈরী করা হয়েছে। যদিও ইনজিন সহ অন্যান্য অনেক অংশই তাদের জনপ্রিয় জিক্সার সিরিজ থেকে ধার করা। ইন্ট্রুডার এম১৮০০ এর তুলনাতে ইন্ট্রুডার ১৫০তে বডিকিট হিসেবে অনেক বেশি প্লাস্টিকের ব্যবহার দেখা যায়।তো চলুন পরিচিত হই এর গুরুত্বপূর্ন ফীচারগুলোর সাথে।
ডিজাইন
আমরা বাইকটির ডিজাইনের প্রতি দৃষ্টি দিলে যে জিনিস দেখতে পাই তা হলো ডিজাইনের বেশ কিছু অংশ নেয়া হয়েছে ইন্ট্রুডার এম১৮০০ থেকে।সামনের হেডলাইট, লুকিং মিরর, জ্বালানি ট্যাংকের কিছু অংশ ইত্যাদি। যেহেতু ইন্ট্রুডার ১৫০ এবং ইন্ট্রুডার এম১৮০০ এর মধ্যে ফীচারগত পার্থক্য রয়েছে অনেক কিন্তু ডিজাইনের ক্ষেত্রে ইন্ট্রুডার এম১৮০০কেই অনুসরন করা হয়েছে। ক্রুজার সুলভ ফুয়েল ট্যান্ক থাকলেও দুপাশে বড়সাইজের কিট ব্যবহার করা হয়েছে। যেটি ফুয়েল ট্যাংক ঢেকে রেখেছে এবং বাইকটিকে মাসকৃলার লুক এনে দিয়েছে। হেডলাইট এবং সামনের অংশে অনেকটাই ইন্ট্রুডার এম১৮০০ এর মতো। টায়ার এবং হুইল সরাসরি জিক্সারের কপি। চালকের সীট এবং পিলিওন সীট অনেকটাই ইন্ট্রুডার এম১৮০০ এরমতো।
গঠন
সুজুকি তার ইন্ট্রুডার ১৫০কে মডার্ন সিটি ক্রুজার বলছে। ক্রুজারটি দৈর্ঘ্যে ২১৩০মিমি প্রস্থে ৮০৫ মিমি এবং উচ্চতায় ১০৯৫মিমি। অন্যান্য ক্রুজারের মতোই এর নীচু সীটহাইট ৭৪০মিমি। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স রয়েছে ১৭০মিমি। ওজন ১৪৮কেজি এবং ফুয়েল ট্যাংক এর ক্যাপাসিট ১১লিটার। বাইকটির হুইলবেজ ১৪০৫মিমি। রাইডার এবং পিলিয়ন উভয়ের ফুটরেস্ট নরমাল যেটি বাজাজ এভেন্জার ১৫০তে দেখতে পাওয়া যায়। এইধরনের ফুটরেস্ট সিটি রাইডে সুবিধা দেয়। এক্সজষ্ট হিসেবে স্টাইলিশ টুইন মাফলার ব্যবহার করা হয়েছে। যা মুলত সুজুকি জিক্সার এর মডিফায়েড সংস্করন।
ইনজিন
পূর্বেই বলা হয়েছে ডিজাইনের অনেক অংশ ইন্ট্রুডার এম১৮০০ এর থেকে নেয়া হলেও ইনজিনসহ অন্যান্য অনেক যন্ত্রাংশ জিক্সারের অনূরূপ। ইনজিনটি তার মধ্যে অন্যতম। ইনজিনটি ১৫৫সিসি, ম্যাক্সপাওয়ার ১৪.৬বিএইচপি এবং ম্যাক্সটর্ক ১৪এনএম। গিয়ার রয়েছে ৫টি। অফিসিয়ালী বলা হয় সিটি রাইডে মাইলেজ পাওয়া যাবে ৪০-৪৫কিমি/লিটার। সিটি ক্রুজার হিসেবে ইনজিনটি যথেষ্ট সুবিধা দিবে বলেই আশা করা যায়। বিশেষকরে দক্ষিন এশীয় অঞ্চলের রাইডারগন জ্বালানী খরচের বিষয়টি বাইকের পারফরমেন্সের থেকেও বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন সে হিসেবে এমন জ্বালানী খরচ রাইডারকে সন্তুষ্ট করবে বলেই আশা করা যায়।
হুইল এবং টায়ার
হুইল বা রিমের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এটি জিক্সার থেকে নেয়া একই সাথে টায়ারগুলোও। সামনের চাকায় ১০০/৯০-১৭ এবং পেছনের চাকায় ব্যবহার করা হয়েছে ১৪০/৬০-১৭ সাইজ টায়ার। উভয় টায়ারই টিউবলেস। উভয় হইলই একই সাইজের। সাধারনত ক্রুজারবাইকে পেছনের তুলনাতে সামনের চাকাটি বড় সাইজের হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আমরা কিছুটা ব্যতিক্রম লক্ষ্য করি।
ব্রেক ও সাসপেনশন
সামনের এবং পেছনের উভয় চাকাতে ডিস্কব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে সামনের চাকায় ব্যবহার করা হয়েছে এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম। যা অনেক শক্তিশালী এবং নিরাপদ ব্রেকিং এর নিশ্চয়তা দেয়।
সামনের চাকায় টেলিস্কোপিক সাসপেনশন ব্যবহার করা হলেও পেছনের চাকায় ব্যবহার করা হয়েছে মনোশক সাসপেনশন যেটি সাধারত ক্রুজার বাইকে দেখা যায় না।
মিটার ও ইলেক্ট্রিক্যাল
মিটারটি পরিপূর্ন ডিজাটাল মিটার। আধুনিক এবং প্রয়োজনীয় প্রায় সকল নির্দেশকই এখানে রয়েছে। ক্রুজার বাইকে সাধারনতই ক্লাসিক বৈশিষ্টের এনালগ মিটার কনসোল দেখা যায়। যেহেতু এই ক্রুজারকে মডার্ন ক্রুজার বলা হচ্ছে সেই হিসেবে ডিজিটাল মিটারকনসোল যুক্তিযুক্ত। হ্যান্ডেলে ব্যবহৃত সুইচগুলো সাধারন বাইকের মতো যা সিটি রাইডের জন্য বেশ কার্যকর। AHO যুক্ত ৩৫/৩৫ওয়াটের হেডলাইট ব্যবহার করা হয়েছে। এলইডি রেয়ার ল্যাম্প রয়েছে।
পরিশেষে
বাইকটির ফীচার পর্যালোচনা করে বলা যায় বাইকটি বাজাজ এভেনজার ১৫০ এর শক্ত প্রতিদ্বন্দী হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে। যদিও দামের পরিমান এভেন্জারের থেকে বেশি কিন্তু ফীচার এবং লুক বিবেচনায় এভেন্জারের থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে।