আমি মীর রাব্বী। বাইক চালানো শেখা হয়েছিলো আজ থেকে প্রায় ৬ বৎসর আগে । আমি যে বাইকটি দিয়ে বাইক চালানো শিখেছিলাম সেটা হল হোন্ডা এইচ১০০এস । জনপ্রিয় এই বাইকটি দিয়ে বাইক চালানো শিখতে পেরে নিজে অনেক গর্ববোধ করি কারণ ওই বাইক দিয়ে বাইক চালানো শেখার ফলে আমার খুব ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং তারপর থেকে বিভিন্ন বাইক অনায়াসেই চালাতে পারি। তারপরে আমি অনেকগুলো বাইক ব্যবহার করেছি এবং সর্বশেষ যে বাইকটি ব্যবহার করছি সেটি হল সুজুকি লেটস। এইটা মূলত স্কুটার ক্যাটাগরির বাইক আর স্কূটারের বিশেষ সুবিধা হল এটি শহরে অনায়সেই চালানো যায়। অনেকেই বলে থাকেন স্কূটার শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য কিন্তু আমি মনে করি যে শহরের মধ্যে চলাচলের জন্য বাইকের বিকল্প মাধ্যম হচ্ছে স্কুটার। আমি গত ৫ মাস যাবত এই স্কুটারটি ব্যবহার করছি আর শহরের মধ্যে যে কোন স্থানে খুব অনায়াসেই স্কুটার নিয়ে চলাচল করছি। আজকে আপনাদের সাথে এই স্কূটার নিয়ে ভালো এবং মন্দ মতামত তুলে ধরবো।
ডিজাইন আমার কাছে ভালো লেগেছে কিন্তু এটা আরও ভালো করতে পারতো। স্কুটারটির সাথে কিছু গ্রাফিক্স দিয়ে এর মাধুর্য আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিজাইন আমার কাছে ভালো মনে হলেও এর বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে আমি মোটেও সন্তুষ্ট না কারণ দাম হিসেবে এই স্কুটারের বডি প্লাস্টিকগুলো নিম্নমানের। বডি প্লাস্টিকগুলো আরও ভালো করার সুযোগ আছে।
সিটিং পজিশন রাইডার এবং পিলিয়নের জন্য খুবই ভালো । বিশেষ করে রাইডিং সিট অপেক্ষা পিলিয়ন সিট অনেক চওড়া তাই রাইডার ও পিলিয়ন খুব আরামের সাথে রাইডিং অনুভব করতে পারে। আমি একটানা ১৫০ কিমি( রাজশাহী-চাপাই-রাজশাহী) একদিনে চালিয়েছি এতে আমার কোন ধরনের ক্লান্তি বা কোমড় ব্যথা কোন কিছু অনুভব করিনি। স্কুটারটি আরামের দিক থেকে অনেক মজার।
ইঞ্জিনের তেমন কোন ভাইব্রেশন নাই কিন্তু আরপিএম বেশি হলে একটু ভাইব্রেশন হয়। আর ইঞ্জিনের দিক দিয়ে সবচেয়ে মজাদার বিষয় হল এইটি কোন ম্যানুয়াল গিয়ার নাই তাই গিয়ার কমানো বাড়ানোর কোন ঝামেলা নাই। স্কুটারটির ইঞ্জিন ১১০ সিসি । ইঞ্জিনের শক্তি অনেক ভালো কিন্তু ইঞ্জিনটা অতিরিক্ত গরম হয় তবে অতিরিক্ত গমর হওয়ার ফলে যে শক্তি অপচয় হবে তা হয় না। আমি ইঞ্জিনের টপ স্পীড পেয়েছি মহাসড়কে ১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা।
ব্রেকিং সিস্টেম উভয় দিকে ড্রাম ব্রেক হলেও আমি খুব সুন্দর ব্রেকিং পাই। কড়া ব্রেক করলেও কোন প্রকার স্কীড হয়না এবং রাস্তা স্মুথলি থেমে যায়। তবে আধুনিক যুগে বাইকের সাথে ডিস্ক ব্রেক থাকাটা বেশি প্রয়োজনীয় বলে আমি মনে করি।
স্কুটার সাধারণত শহরের মধ্যে রাইড করার জন্য পারফেক্ট । তাই শহরের ভাঙ্গা রাস্তায় এর সাসপেনশগুলো খুব ভালো পারফরমেন্স দেয়। তবে বেশি ভাঙ্গা রাস্তা হলে একটু লাফায় মানে সাসপেনশন তখন তার নিজের পারফরমেন্স দিতে সক্ষম হয় না কিন্তু সাধারণভাবে সাসপেনশনগুলোর পারফরমেন্স খুবই ভালো।
এই স্কুটার থেকে আমি মাইলেজ পাচ্ছি ৭০ কিমি প্রতি লিটার এবং এর তেল ধারন ক্ষমতা হচ্ছে ৫ লিটার। আমি মনে করি শহরের মধ্যে চালানোর জন্য পারফেক্ট একটা মাইলেজ এবং এটা দৈনন্দিন জীবনে চলাচলের ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক। স্কুটারের মাইলেজ নিয়ে সত্য করে বলে আমি অনেক সন্তুষ্ট আছি।
আমি রাজশাহীর স্বনামধন্য সুজুকি মোটরসাইকেলের ডিলার কে আর বাইক সেন্টার থেকে স্কুটারটি ক্রয় করেছি এবং তাদের কাছে সার্ভিসিং করার জন্য গিয়েছি। তারা অনেক আন্তরিক এবং পরিবেশ খুব ভালো কিন্তু যারা কাজ করে অর্থাৎ যারা বাইক সার্ভিসিং করে তারা আমার কাছে ওতটা দক্ষ বলে মনে হয়নি। আমি পরামর্শ দিবো তাদের কাজের মান আরও উন্নত করার জন্য।
দাম হিসেবে স্কুটারটির পারফরমেন্স ঠিক আছে কিন্তু দামটা বর্তমান লোকাল মার্কেট বিবেচনা করলে একটু বেশি মনে হয়েছে। এখন প্রায় সব কোম্পানী তাদের বাইকগুলোর দাম কমিয়ে ফেলেছে সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে দামটা একটু বেশি।