সবাইকে স্বাগতম ও অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমি একজন বাইক প্রেমি । এটা আমাকে খুবই আনন্দ দেয় এবং দৈনন্দিন যাতায়াত অনেক সহজ করে তোলে। যারা তাদের কর্মক্ষেত্রে কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একটু দূরে অবস্থান করে তাদের জন্য বাইক অনেক সহায়ক একটি মাধ্যম। এই বিষয়টি আমি খুব ভালো ভাবে অনুভব করতাম কারণ আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটা আমার বাসা থেকে একটু দূরে বিধায় আমি গত সেপ্টেম্বর মাসে সুজুকি লেটস স্কুটারটি ক্রয় করি। কিছু কিছু সময় শহরের মধ্যে বাইক রাইড করা একটু কষ্টকর হয়ে উঠে কারণ ট্র্যাফিক জ্যাম, গিয়ার পরিবর্তন, ব্যালেন্স নিয়ন্ত্রন ইত্যাদি বিষয় আমলে নিয়ে সাবধানতার সাথে শহরের মধ্যে রাইড করতে হয়। অন্যদিকে আমি একজন মহিলা যার ফলে বাইক রাইডিং করার জন্য উপযুক্ত পোশাক সব সময় পরিধান করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই এই বাধাকে অতিক্রম করার জন্য এবং ইচ্ছে স্বাধীনভাবে চলাচলের জন্য আমি স্কূটারকেই বেছে নিয়েছি। স্কূটারটি রাইডিং পজিশন অনেক ভালো এবং আমি চাইলে আমার ইচ্ছে মত পোশাক পরিধান করে স্কুটার নিয়ে রাইড করতে পারি। স্কুটার ক্রয় করার পর আমার দৈনন্দিন যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে গেছে এবং আমার রাস্তায় দুরত্ব অনেকটা সংকীর্ণ হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই সুজুকি লেটস নিয়ে রাইড করেছি প্রায় ৩৫০০ কিমি এবং আজকে আমি এই স্কুটার নিয়ে আমার প্রাপ্ত কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
আমি এই স্কুটার থেকে যে ভালো অভিজ্ঞতাগুলো পেয়েছি
-দ্রুত এক্সেলেরেশন আমাকে অনেক সাহায্য করে
-শহরের মধ্যে আমি খুব সুন্দরভাবে ব্যালেন্স করতে পারি
-রাইডিং সিট পারফেক্ট
-সিটের নিচে ফাঁকা স্থানটা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে সাহায্য করে
-ইঞ্জিন পারফরমেন্স অনেক শক্তিশালী
-আরামদায়ক রাইডিং অভিজ্ঞতা
এই স্কুটারের কিছু কিছু বিষয় আমার মন্দ লেগেছে যেমন-
-আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে AHO প্রযুক্তি উপযুক্ত না ।এটা খুবই বিরক্তিকর
-স্বল্প আলোতে হেডল্যম্পের আলো আরও উন্নত করা উচিত
-ইন্ডিকেটরের কোন শব্দ নেই
-স্কুটারের কমন ফিচারস ইউএসবি চার্জার পোর্ট নেই
-টায়ারের মান আরও উন্নত করা উচিত এবং সেগুলো খুব স্কীড করে।
এই স্কুটারটি পছন্দ করার পেছনে মূল কারণ
প্রথমত আমি চিন্তা করতাম যে ইন্ডিয়ান স্কুটারগুলো নিবো কারণ সেগুলো আমাদের দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় কিন্তু আমার বাবা সে ব্যাপারে একদমই নারাজ ছিলো। তিনি আমাকে বিশ্বস্থ ব্র্যান্ডের স্কুটার কেনার জন্য পরামর্শ দেন এবং সেই সাথে স্কুটারের রাইডিং পজিশন,ওজন,সিসি, পারফরমেন্স ইত্যাদি নিয়েও অনেক পরামর্শ প্রদান করেন। আমার বাবার পরামর্শ অনুযায়ী আমি শো-রুমগুলোতে স্কুটারের জন্য খোঁজ নিয়ে থাকি এবং সার্বিক দিক থেকে আমার জন্য একটি পারফেক্ট স্কুটার খুঁজে পাই এবং সেটা হল সুজুকি লেট।
বলতে গেলে আমি প্রতিদিনই আমার এই স্কুটারটি ব্যবহার করি যার জন্য আমার ইঞ্জিন থেকে সাপোর্টটা একটু বেশি দরকার। ইঞ্জিনের বিষয় নিয়ে বলতে গেলে আমি বলবো যে ১১০ সিসি হিসেবে ইঞ্জিন থেকে অনেক ভালো শক্তি উৎপন্ন হয় এবং থ্রটল রেসপন্স অনেক দ্রুত। এই দ্রুত এক্সেলেরেশন নিয়ে শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় আমি যে কোন বাহনকে খুব ভালোভাবেই ওভারটেক করতে পারি। কিছু কিছু সময় লক্ষ্য করি যে ইঞ্জিনটা একটু ওভার হিট হয় তবে পারফরমেন্সে কোন খারাপ প্রভাব পরে না । স্কুটারটির কন্ট্রোল অনেক ভালো কিন্তু ছোট টায়ার হওয়ার ফলে মাঝে মাঝে স্কীডের সম্মুখীন হতে হয় এবং এর ফলে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলি। আমি মনে করি যে টায়ারটা আরও মোটা করা উচিত। আমি আমার এই স্কুটার নিয়ে লং ড্রাইভে গিয়েছিলাম এবং সেটা মোটামুটি ৮০-৮৫ কিলোমিটার। আমি যখন রাতে রাইড করি তখন লক্ষ্য করি যে হেডল্যম্পের আলোটা একটু কম এবং অন্যান্য বড় যানবাহনের কাছে আমার এই হেডল্যম্পের আলোটা একদম নগণ্য। সুজুকি লেটস স্কুটারটি চালিয়ে অনেক আরাম কারণ এর সিটিং পজিশনটা অনেক চওড়া কিন্তু পিলিয়নের সিটিং পজিশনটা অতিরিক্ত চওড়া । যারা আমার পিলিয়ন হয় তাদের অনেকেই এই সিটিং পজিশন নিয়ে অভিযোগ করে। তাই আমি মনে করি যে পিলিয়ন সিটিং পজিশন আরেকটু চিকণ হওয়া উচিত। এখন পর্যন্ত ইলেক্ট্রিক্যাল সাইডগুলো খুব ভালো পারফরম করছে কিন্তু শুরতে এগুলো একটু ঝামেলা করতো। বাইকটি কেনার কিছু দিনের মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল বিষয়গুলো একটু ঝামেলা করতো এবং এর জন্য আমি সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে গিয়েছিলাম। সার্ভিস করার পরে সেগুলো অনেক ভালো করছে এবং এখন পর্যন্ত করে যাচ্ছে। আমি কখনও মাইলেজ সেভাবে গণনা করি না । প্রতিদিন প্রায় ২০ কিলোমিটারের মত রাইড করি এবং মাসে ৩ থেকে ৪ বার তেল নিই। এই ব্যাপারে আমি খুব খুশি।
এই ছিলো সুজুকি লেটস নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা । রিভিউ শেষ করার আগে আমি কিছু বলতে চাই , আমাদের বর্তমান সমাজে মহিলা রাইডারদের সবাইক ভালোভাবে গ্রহন করে না কিন্তু আমি মনে করি যে সময়টা এখন পরিবর্তন হয়েছে । আমরা মহিলা রাইডাররা বর্তমানে অনেক সম্মান পাচ্ছি এবং মানুষজন আমাদের ইতিবাচক হিসেবে দেখছে । মহিলাদের জন্য রাস্তাটা কঠিন না করে একটু মসৃণ করে দিলে তারা ইচ্ছে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে । মোটরসাইকেল ভ্যালীকে অশেষ ধন্যবাদ আমাকে আমার বাইক নিয়ে একটি রিভিউ দেওয়ার সুযোগ করে দেবার জন্য। আর সকলেই সাবধাণতা অবলম্বন করে বাইক রাইড করবেন।