বাংলাদেশের লোকাল মার্কেটে নতুন নতুন উদীয়মান ব্র্যান্ডগুলোকে নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নাই। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে নিত্য নতুন ব্র্যান্ড তাদের নতুন নতুন প্রডাক্টগুলো সারা বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের নিকট পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে পাশাপাশি তারাও পরিচিতি লাভ করছে এবং বাংলাদেশেও তারা পরিচিতি লাভ করছে। মোটরসাইকেলের পাশাপাশি স্কুটারগুলো আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে এবং তাদের চাহিদাও বাড়ছে। পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশে যেখানে মোটরসাইকেল প্রেমী মানুষ বেশী দেখা যায় সেখানে তারা স্কুটার ব্যবহার করে থাকে সাধারণত সহজ এবং যেখানে সেখানে অনায়াসেই যাওয়ার একটি উপযোগী মাধ্যম হিসেবে। স্কুটারের চাহিদা পুরন করার জন্য বিভিন্ন দেশি বিদেশী কোম্পানি তাদের স্কুটার আমাদের দেশে নিয়ে আসছে। তাদের মধ্যে তাইওয়ান এর শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড হলো SYM। তারা তাদের ভালো ফিচার সমৃদ্ধ এবং স্টাইলিশ স্কুটারগুলো আমাদের দেশের মোটরসাইকেল প্রেমীদের জন্য নিয়ে এনেছে। কোম্পানী গ্রাহকদের ভালো রাইডিং সুবিধার কথা মাথায় রেখে কিছু ভালো মানের প্রযুক্তি তাদের স্কুটারের সাথে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ফোর এস বাংলাদেশ লিমিটেড হচ্ছে তাদের একমাত্র পরিবেশক।
গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে তারা মোটরসাইকেল এবং স্কূটারের মাঝামাঝি পর্যায়ের একটি স্কুটার বাজারে নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের সম উচ্চতার চাকা স্কুটারটিতে স্কুটারের বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি মোটরসাইকেল সুবিধাও যুক্ত করেছে। SYM তাদের এই স্কুটারটি গর্বের সাথে গ্রাহকদের সামনে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে যার নাম সিম্ফোনী এস ১২৫ সিসি। তাই আমাদের সকলেই উচিত এই স্কুটারের কি কি ফিচার রয়েছে সেগুলো জানা।
সিম্ফোনী এস এর কিছু উল্লেখযোগ্য ফিচারগুলো হল –
- বড় আকারের ১৬ইঞ্চি সাইজের টিউবলেস টায়ার
- সামনে এবং পেছনের চাকাতে ডিস্ক ব্রেক
- শক্তিশালী ইনজিন
- ইলেকট্রিক এবং কিক স্টার্ট অপশন
- সুন্দর এলয় রিম
- নতুন বডি গ্রাফিক্স
- লাগেজ বক্স বা বিভিন্ন জিনিসপত্র রাখার জায়গা
ডিজাইন এবং স্টাইল
যখন কোনো বাহন ভালো ডিজাইন এবং সুন্দর গ্রাফিক্স দ্বারা তৈরি করা হয় তখন এমনিতেই গ্রাহকদের নজর কাড়ে যেমনটি সিম্ফোনি এস স্কুটারটিতে করার চেষ্টা করা হয়েছে। শহরের মধ্যে কিংবা শহরের বাইরে নিরাপদ ও আরামদায়ক রাইডিং এর জন্য সিম্ফোনী এস ১২৫ সিসির স্কুটারটির রয়েছে স্টাইলিশ ডিজাইন এবং অসাধারণ আউটলুক যেটা গ্রাহককে আরও উৎফুল্ল করে তুলবে এবং যাতায়াতকে আরও সহজ ও সুন্দর করে তুলবে। ডিজাইনের প্রত্যেকটা অংশ বেশ সুন্দর, স্টাইলিশ হেডল্যাম্প সাথে দুই দিকে ইন্ডিকেটর এবং কালার শেড এর কার্ভ সমন্বয় বাইকটিকে আরও বেশী দেখতে সুন্দর করে তুলেছে। বডি ডিজাইনের প্রত্যেকটি শেপ অনেক সুন্দর যার ফলে রাইডার খুব ভালো ভাবে পা মেলে বসতে পারে। ডিস্ক প্লেটটার ডিজাইনটা এবং টায়ারের সাইজটা বেশ সুন্দর। সব মিলিয়ে বলা যায় যে স্কুটারটিতে পরিপূর্ণতার ছোঁয়া রয়েছে। পেছনের লাইটটা বেশ প্রশস্ত হওয়ায় এবং রেয়ার ফেন্ডার থাকায় এর ডিজাইনটা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। স্কুটারটিতে গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় সকল ডিজাইন এবং স্টাইল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
ডাইমেনশন
আরামদায়ক রাইডিং এর জন্য রাইডারের প্রয়োজন অনেক ভাল মানের ডাইমেনশন। এই দিক দিয়ে এই স্কুটারটি একটি আদর্শ ডাইমেনশন ধরে রেখেছে। স্কুটারটির ডাইমেনশন রয়েছে লম্বায় ২০০০ মিমি,চওড়ায় ৬৯০মিমি এবং উচ্চতায় ১১২৫ মিমি। হুইলবেজ এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স হচ্ছে যথাক্রমে ১৩৩০ মিমি এবং ১৬০ মিমি। সিট হাইট রাখা হয়েছে ৭৬০ মিমি। সিম্ফোনির এই স্কুটারটির ফুয়েল ট্যংকারের ধারন ক্ষমতা হচ্ছে ৫.৫ লিটার এবং সব মিলিয়ে স্কুটারটির ওজন প্রায় ১১৪ কেজি। কোম্পানি দাবি করে যে তাদের এর স্কুটারটিতে যথেষ্ট পরিমাণ ভালো ওজন রয়েছে এবং বিভিন্ন জিনিস বহন করার জন্য এর কম্পারটমেন্টে যথেষ্ট ভালো জায়গায় রয়েছে। শুধু তাই নয় এর সিটিং পজিশনের সাথে মিল রেখে হ্যান্ডেলবারটাও বেশ সুন্দর এবং মিটার প্যানেলে প্রয়োজনীয় ফিচারস রয়েছে যা রাইডারকে চালাতে সাহায্য করবে।
ইঞ্জিন
সিম্ফোনি স্কুটারটিতে রয়েছে ১২৪.৬ সিসির ৪ স্ট্রোক,সিংগেল সিলিন্ডার,২ ভালভ এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন ।এই ইঞ্জিন ৭.৭ কিলোওয়াট @ ৭৫০০ আর পি এম ম্যাক্স পাওয়ার এবং ১০.৮ এন এম @ ৬০০০ আর পি এম ম্যাক্স টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। ইঞ্জিনের কম্প্রেশান রেশিও ১০.৫:১। স্কুটারটিতে অটো গিয়ার রয়েছে যার ফলে রাইড করা অনেক সহজ। ইঞ্জিন চালু করার জন্য রয়েছে ইলেকট্রিক এবং কিক স্টার্ট অপশন। ১২৫ সিসি স্কুটার হিসেবে স্কুটারটির ইঞ্জিন যথেষ্ট শক্তিশালী এবং এটা বেশ ভালো পাওয়ার দিতে সক্ষম। কোম্পানী দাবি করে যে তাদের এই স্কুটারটির টপ স্পিড ঘণ্টায় ১১৭ কিমি এবং মাইলেজ প্রতি লিটারে ৪৮ কিমি দিবে।
টায়ার ও ব্রেকিং
স্কুটারটিক সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল এই দুটি দিক। প্রায় সব স্কুটারে একই রকম টায়ার ব্যবহৃত হয় কিন্তু এই স্কুটারটিতে একটু ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। স্কূটারটিতে ১৬ ইঞ্চি টায়ার রয়েছে যেটা একটা মোটরসাইকেলের টায়ারের মতোই। এর ফলে স্কুটারটি রাইডার অনেক ভালো কন্ট্রোলিং এনে দিবে। দুই দিকের টায়ারের পরিমাপ হল 110/70-16 এবং উভয় টায়ারই টিউবলেস টায়ার।
এই ধরনের টায়ারে ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করলে অনেকটা মোটরবাইকের মতো লাগে এবং একই বাইকে মোটরসাইকেল এবং স্কুটারের উভয়ের সুবিধাই উপভোগ করা যায়। সামনে পেছনে উভয় দিকেই ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে এবং উভয় ডিস্কের পরিমাপ হচ্ছে ২২৬ মিমি।
সাসপেনশন
আমারদায়ক রাইডিং এর জন্য আরামদায়ক সাসপেনসন প্রয়োজন। কোম্পানী তাদের এই স্কূটারটিতে বেশ ভালো মানের সাসপেনশন ব্যবহার করেছে। টেলিস্কোপ এবং ডাবল সুইং সাসপেনশন রাইডারকে অনেক আরাম এনে দিবে
মিটার প্যানেল এবং ইলেকট্রিক্যাল
স্কুটারটির মিটার প্যানেলে অতিরিক্ত কিছু ফিচারস না থাকলেও একজন রাইডারের জন্য যথেষ্ট ভালো ফিচার রয়েছে যেখানে স্পিডওমিটারটি এনালগ এবং বাকি সব ডিজিটাল যেমন ফুয়েল ইনডিকেটর, ওডোমিটার, ঘড়ি ইত্যাদি।
ইলেকট্রিক দিক বলতে গেলে 12 V - & Ah, MF ব্যাটারী যার ফলে খুব সহজেই সেলফ স্টার্ট দেওয়া যায়। 12 V - 35W / 35W হেডল্যাম্প, 12V, 5W/ stop-12V, 21W টেল ল্যাম্প, 12V 10 W সাইড ইন্ডিকেটর এবং পাওয়ারফুল পাস সুইচ রয়েছে। হ্যন্ডেলবারে সমস্ত সুইচগুলো যথাযথ ভাবে স্থাপন করা হয়েছে এবং কমপারটমেন্ট খোলার সুইচও রয়েছে।
শেষকথা
পরিশেষে বলা যায় যে সিমের এই স্কুটারটি অনেক আকর্ষণীয় একটি স্কুটার এবং সুন্দর ভাবে রাইড করার জন্য এখানে সমস্ত ফিচারস বেশ ভালো ভাবে স্থাপন করা হয়েছে। কোম্পানি তাদের এই স্কুটারটির ২ টি ভিন্ন কালার বাজারে নিয়ে এসেছে সেগুলো হল –সাদা, এবং গাঢ ধুসর। তারা আশা করছে যে তাদের এই স্কুটারটি বাংলাদেশের লোকাল মার্কেটে অনেক বড় প্রভাব ফেলবে। রাইডারের হাই পারফরমেন্স সহ বিভিন্ন সুবিধা এই স্কুটারটিতে রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল SYM তাদের সকল স্কূটারের সাথে ৬ বছরের ওয়ারেন্টি দিচ্ছে যেটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিরাট একটি ব্যাপার এবং তাদের স্কূটার আপনি যেভাবে চালাবেন ঠিক সেই ভাবেই আপনাকে পারফরমেন্স দিবে।