বাংলাদেশে অনেকেই এটি মনে করেন যে স্কুটার হলো মেয়েদের বাহন। অথচ পৃথিবীব্যাপী মেয়েদের তুলনাতে ছেলেরা স্কুটার চালায় বেশি। স্কুটার মুলত শহর কেন্দ্রিক সাধারন যাতায়াতের জন্য একটি আদর্শ বাহন। যারা ঝামেলাবিহীন মোটরসাইকেল রাইড করতে চান তাদের জন্য স্কুটারের বিকল্প কিছু নেই। আর তাই আমি আমার বাসা থেকে অফিসের প্রতিদিনের যাতায়াতকে ঝামেলামুক্ত করতে বিশ্ব বিখ্যাত তাইওয়ানের ব্র্যান্ড SYM এর Symphony S 125 স্কুটারটি ব্যবহার করি।
আমি নুরুজ্জামান (জামান)। চাকুরীজীবি। বাসা থেকে কর্মস্থল দূরে হওয়াতে যাতায়াতের জন্য নিজস্ব একটি বাহন প্রয়োজন ছিলো। ঢাকার রাস্তায় জ্যাম, বাসের অবস্থা এবং সিএনজি এর দৌরাত্বের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। ঠিক এ কারনেই আমি বাহন হিসেবে সর্ব প্রথম টিভিএস ওয়েগো কিনি। বেশ কিছু সময় ব্যবহারের পরে বাইকটি বিক্রি করি। বন্ধুর ব্যবহৃত SYM Crox 125 স্কুটারটি ব্যবহারের সুযোগ হয়। সে থেকে অনুপ্রানিত হয়ে এবং Symphony S স্কুটারটি দেখি তখন এর সুবিধা দেখে খুবই ভালো লেগে যায় এবং SYM Symphony S 125 স্কুটারটি কিনে ফেলি।
Symphony S 125 স্কুটারটি ভালো লাগার প্রধান কারন ছিলো উচু চাকা। এর চাকাগুলো ১৬ইঞ্চি উচু। সাধারনত স্কুটারগুলো ১০-১২ইঞ্চি উচু চাকা হয়, ফলে ভাংগা রাস্তায় চালাতে কষ্ট হয় বিশেষ করে ঢাকায় যখন তখন বৃষ্টিতে পানি জমে যায়, সে পানিতে নীচু চাকার স্কুটার কিছুটা সমস্যার কারন হয়। Symphony S 125 এর উচু চাকা আমার এই সমস্যা দূর করে দিয়েছে। এছাড়াও আমি আরেকটি জিনিস লক্ষ্য করেছি যে ইনডিয়ান স্কুটারের তুলনাতে তাইওয়ানের SYM স্কুটারের ইনজিন বেশি শক্তিশালী।
Symphony S 125 ব্যবহারের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি বাইকটির ইনজিন যথেষ্ট শক্তিশালী। একা বা সংগীসহ অনায়াসে ৬০-৭০কিমি স্পীড তুলে ফেলা যায় এবং সে সময় আমি ইনজিন থেকে কখনও ভাইব্রেশন অনুভব করিনি।
স্কুটারটির ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় ডিজাইনটি সাধারনের মধ্যে বৈশিষ্ট্যযুক্ত। ডিজাইন যেমন সুন্দর তেমনি বডি পার্টস গুলো মজবুত। বিশেষ করে ফাইবার দিয়ে তৈরী বডি কিট, ব্যবহার যন্ত্রাংশগুলো বেশ মজবুত। আমার স্কুটারে এখন পর্যন্ত দাগ পড়া বা মরিচা পড়ে নাই। স্কুটারটির ওজন ১১৪কেজি হওয়াতে রাইড করে অনেক আরাম পাওয়া যায়, ঝাকুনি কম লাগে এবং ব্রেকিং এ সুবিধা পাওয়া যায়।
স্কুটারটি চালিয়ে যথেষ্ট আরামদায়ক বিশেষ করে বসার সীট এবং হ্যান্ডেলের পজিশন বেশ ভালো। সামনে পা রাখার জায়গা বেশ চওড়া বলে রাইডারের জন্য বেশ আরামদায়ক। স্কুটারের ব্যবহৃত ইলেক্ট্রিক্যাল সুইচগুলো খুবই উন্নত এবং ব্যবহারে সুবিধা। হেড লাইটের আলো অনেক শক্তিশালী। রাতের আধারে রাইড করার জন্য প্রয়োজনীয় আলোর চেয়ে অনেক বেশি আলো পাওয়া যায় বলে আমি মনে করি। বাইকটির হর্নের শব্দ শক্তিশালী কিন্তু কর্কশ নয়।
স্কুটারটির কন্ট্রোলিং অসাধারন। ইনজিন ভাইব্রেশন যেমন নেই তেমনি সামনে এবং পেছনের উভয় সাসপেনশন অনেক নরম, ফলে ঝাকুনি কম অনুভব হয়। সামনের এবং পেছনের চাকাতে ডিস্ক ব্রেক থাকাতে ব্রেকিং অনেক শক্তিশালী। টিউবলেস এবং আধুনিক ডিজাইনের টায়ার থাকায় চাকা স্কিড করে না।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জ্বালানি খরচ গুরুত্বপূর্ন। স্কুটারটি ঢাকার ব্যস্ততম রাস্তায় ৩৫-৪০কিমি মাইলেজ দিয়ে থাকে। সে হিসেবে হাইওয়েতে অনায়াসেই ৪৫কিমি পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি। ১২৫সিসি স্কুটারের কাছে এর থেকে বেশি আমি আশা ও করি না।
মোটরাসাইকেলটি নিয়ে তাদের কাস্টোমার সাপোর্ট নিতে হয়েছে। তাদের ব্যবহার যথেষ্ট ভালো এবং তারা খুবই হেল্পফুল। কাজের মান নিয়েও আমি সন্তুষ্ট।
আমার স্কুটারটির কিছু ভালো দিক
- উচু চাকা, যেটি খারাপ রাস্তা এবং পানি ডোবা রাস্তায় ভালো পারফরম করে।
- টায়ারটি খুবই উন্নত, ভালো গ্রিপ দেয়, চাকা স্কিড করে না।
- সামনে এবং পেছনের উভয় চাকাতে ডিস্ক ব্রেক।
- রাইডারের সামনে অনেক স্পেস
- ফ্যামিলী রাইডের জন্য খুবই কার্যকর
স্কুটারটির মন্দ দিক
- রাইডার পা নামালে অনেক সময় সহযাত্রীর পায়ের সাথে লেগে যায়
- দাম টা আরেকটু কম হলে ভালো হতো
পরিশেষে আমি একথাই বলবো যে স্কুটারটি ব্যবহার করে আমি সন্তুষ্ট এবং যারা বাড়ী থেকে অফিস বা শহরে চলাচলের জন্য ব্যবহার করতে চান তাদের জন্য SYM Symphony S 125 একটি আদর্শ বাহন হবে। শোরুমের সংখ্যা আরো বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি।
হ্যাপী বাইকিং।