Owned for 1year+ [] Ridden for 10000km+
টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৫০ মোটরসাইকেল রিভিউ - শামীম ইমতিয়াজ
আলহামদুল্লিলাহ বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের অন্যতম জনপ্রিয় বাইক TVS Apache RTR 150 এর গর্বিত মালিক আমি। আমি আগেই বলেছি বিভিন্ন মডেলের অনেক বাইক চালানোর সুযোগ আমার হয়েছে কিন্তু এই বাইকটি চালিয়ে আমি যেনো মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এর দুর্দান্ত কালার সাথে গ্রাফিক্যাল কারুকাজ , দানবীয় গতি আর মাইলেজ এই বাইকটিকে অন্য অনেক বাইকের ভিড়ে আলাদা করে তুলেছে। অন্তত আমার তাই মনে হয়েছে। ২০১৫ সালে বাইকটি কিনেছি। গত এক বছরে বাইকটি চালিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে আজ আপনাদের তা জানাবো ইনশাআল্লাহ্। যারা এই দুর্দান্ত বাইকটি কিনতে চান হয়তো আমার এই অভিজ্ঞতা তাদের সিধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
কেন TVS Apache RTR 150 কিনলাম?
আমার বন্ধু আসিফ অনেক দিন থেকেই এই বাইক চালাত। এক দিন তার বাইকটি নিয়ে প্রায় ৬০ কিমি দূরে আমার এক আন্টির
বাইকটির গুরুত্বপূর্ন ফীচার
বাইকটির স্পোর্টি লুক, মজবুত বডি ট্রাকচার , জ্বালানী সাশ্রয়ী ইঞ্জিন, অসাধারণ পাওয়ার সাথে হ্যান্ডেলিং আর কন্ট্রলিং অসাধারণ। সব মিলিয়ে এই বাইকটিকে এই ক্যাটাগরির শীর্ষে স্থান করিয়ে দিয়েছে। বলতে ভুলে গিয়েছি আমার বাইকটির রঙ সাদা। TVS Apache RTR 150 এর কিছু স্পেসিফিকেসান নীচে তুলে ধরলাম।
Engine: 4-stroke, single cylinder, air-cooled.
Displacement (cc) : 150cc
Max Power: 11.19 kW (15.2 bhp) @8500 rpm
Max Torque: 13.1 Nm @ 4000 rpm
Ignition Type: IDI-Dual mode digital ignition
Brake: Front Disc & Drum
বাইকটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পুর্বে এর কিছু গুরুত্তপুর্ন দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
ভালো দিক
আমার মতে TVS এর এই স্পোর্টি মডেলের ইউজার ফ্রেন্ডলি ফিচারগুলি আমাকে একদিকে যেমন কম্ফর্ট নিয়ে চিন্তা করতে দিবে না অন্যদিকে বাইকটি চালানোর ক্ষেত্রেও বাড়তি আত্ন বিশ্বাস পাবেন। বাইকটির এমন কিছু ফিচার নীচে দেয়া হলো।
বাইকটি চালিয়ে আপনি অসাধারণ কম্ফোর্ট পাবেন। বাইকটি স্পোর্টি হলেও অন্যান্য স্পোর্টি মডেলের মতো আপনাকে বাকা হয়ে বসতে হবে না। আপনার সিটিং পজিসান প্রায় আপ রাইট (খাড়া) হবে। ফলে দীর্ঘ সময় বাইক চালালেও আপনি ক্লান্ত হবেন না।
তুলনা মুলক দীর্ঘ এবং নরম সিট থাকায় প্রিয়জন কে সাথে নিয়ে ভ্রমণে বাড়তি আনন্দ পাবেন।
আপনি একা চালান বা সাথে কাউকে নিয়ে বাইকের কন্ট্রোল নিয়ে বাড়তি চিন্তা একেবারেই করতে হবে না।
১৫০ সিসির অন্য যেকোনো স্পোর্টি বাইকের তুলনায় আপনি এই বাইকের মাইলেজ অনেক ভালো পাবেন।
এর মজবুত চেসিস আর ভিন্নধর্মী ডিজাইন বাড়তি পাওনা হবে।
খারাপ দিক
তবে বাইকটির কিছু ফিচার যদি আর একটু ভালো হতো তবে আমার কোন অভিযোগই থাকতো না। যেমন-
বাইকটির কন্ট্রোল এমনিতে খুবই ভালো, কিন্তু বৃষ্টির দিনে বা কাদা রাস্তায় টায়ার পিছলে যায় এর ফলে কন্ট্রলে কিছু সমস্যায় পরতে হয়। আমার মতে সম্পুর্নই টায়ারের সমস্যা। ভালো মানের টায়ার দিলে এই সমস্যা থাকবে না আশা করি।
হেড লাইটের আলো আমার কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি। বাইক হিসাবে আলো আরো ভালো হওয়া উচিৎ ছিল।
১৬৫০০ কিমি চলার পরেই চেন সেট বদলাতে হয়েছে।
বাইকটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স কম থাকার কারণে কখনো কখনো সমস্যায় পড়তে হয় বিশেষ করে স্পীড ব্রেকারে মাঝে মাঝে সমস্যা হয়।
ইনজিন
ইঞ্জিনই হলো যেকোনো মেশিনের প্রাণ। ১৫০ সিসির ইম্প্রেসিভ ম্যাক্স পাওয়ার 15.2 Bhp @ 8500 rpm এবং 13.1 Nm টর্ক আপনাকে দানবীয় পাওয়ার দিবে । এই দানবীয় ইঞ্জিন মাত্র ৫ সেকেন্ডে ৬০ কিমি গতি তুলে ফেলতে সক্ষম। লং জার্নিতে ইঞ্জিন পারফর্মেন্স আপনাকে মুগ্ধ করে দিবে। আমি একবার ৩০০ কিমি রান করেছিলাম বাইকটি নিয়ে। এই সুদীর্ঘ পথে আমি মাত্র একবারই থেমেছিলাম তাও আমার প্রয়োজনে।
মাইলেজ
বাইকের মাইলেজ অধিকাংশ মানুষের কাছেই একটা গুরুত্তপূর্ণ ফ্যাক্টর। আমিই বা বাদ যাবো কেনো? একেবারে শুরুর দিকে বাইকটি ৩২ থেকে ৩৪ কিমি যেতো প্রতি লিটারে। কিন্তু টিউনিং করার পরে ১৭০০০ কিম রান করেছে বাইক। এখন আমি মাইলেজ পাই শহরের মধ্যে ৪৫+ প্রতি লিটারে। এবং হাই ওয়েতে প্রায় ৫২ কিমি / লিটার।
কন্ট্রোল ও কমফোর্ট
এই দানবীয় Apache RTR 150 গতি দিয়ে যেমন আপনাকে মুগ্ধ করবে তেমনি মুগ্ধ করবে এর কন্ট্রোল দিয়ে। আমি একবার ১০৭ কিমি / ঘণ্টা গতি তুলেছিলাম হাইওয়েতে পরিপূর্ন কন্ট্রোল নিয়ে। এর সামনের ডিস্ক ব্রেক আর পেছনের ড্রাম ব্রেকিং সিস্টেম এতটাই ভালো যে আপনি একবার এর সাথে মানিয়ে নিতে পারলে গতি তুলতে একটুও ভয় পাবেন না। সাথে এর হ্যান্ডেল বারের অবস্থান , সিটিং পজিসান , পাদানি , গিয়ার বক্সের অবস্থান সব মিলিয়ে হাইস্পীডে আপনি বাড়তি কনফিডেন্স পাবেন। আগেই বলেছি একবার ৩০০ কিমি লং জার্নি করেছিলাম। এই দীর্ঘ যাত্রায় আমি পিঠে কোন ব্যাথা অনুভব করি নি। এর আরামদায়ক নরম সিট, এ্যারো ডাইনামিক ডিজাইন , সিক্স স্পোক এলয় রিম আপনাকে অন্য এক মাত্রার রাইডিং এক্সপিরেয়েন্স দিবে। বাইকটির ফ্রন্ট টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনের গ্যাস চার্জ কয়েল স্প্রিং সাস্পেনশান আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য যথেষ্টের চেয়েও বেশী কিছু মনে হবে আপনার। তবে হেডলাইটের আলো কম হবার কারণে রাতে বাইকটি চালাতে আমার কিছু অসুবিধা হয়। এই সমস্যা বাদ দিলে এর টেইল লাইট এবং ইন্ডিকেটর যথেষ্ট ভালো। এছাড়া বাইকটির টায়ার কিছু ভালো হতে পারতো। সব কিছু মিলিয়ে বাইকটিকে আমি ১০ এর মধ্যে ৮ নম্বর দিবো।
যত্ন
বাইকটির যত্ন নেবার ব্যাপারে আমি কখনোই কার্পন্য করি না। প্রতি ১০০০ কিমি রান করার পরে আমি TVS এর শোরুম থেকে সার্ভিসিং করে নেই। এই সময় বাইকের ইঞ্জিন ওয়েল যেমন বদলে নেই তেমনি খুটিনাটি অন্য বিষয় যেমন ব্যটারি চেন, ব্রেক ইত্যাদি বিষয় গুলি চেক করে নেই । ইঞ্জিন ওয়েল হিসাবে আমার পছন্দ Mobile Visco 40 আর জ্বালানী হিসাবে প্রতি দুইভাগ পেট্রোলের সাথে একভাগ অকটেন মিশিয়ে ব্যাবহার করি।
সবমিলিয়ে
এখন পর্যন্ত TVS Apache RTR 150 আমার অভিযোগের তেমন কোন সুযোগ নাই। TVS এই চমৎকার মডেলটিতে ডিজাইন , কন্ট্রোল , কম্ফোরটের আর দামের যে মেলবন্ধন তা সত্যই মুগ্ধ করার মতো । এর সমস্ত ফিচার বিবেচনায় নিয়ে আমি এই বাইকটিকে আমাদের দেশে পাওয়া যাওয়া এই সেগমেন্টের বাইকের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বাইক বলতে একটুও দ্বিধা করবো না।
পরিশেষে
আপনি যদি এমন একটা বাইক চান যা আরাম , সুন্দর কন্ট্রোল , মজবুত সাথে ডিজাইন একটা প্যাকেজ হয় সাথে বাইকটির পার্সোনালিটি বিন্ধু মহলে আপনাকে ভিন্ন মাত্রায় উপস্থাপন করবে তবে TVS Apache RTR 150 আপনার জন্য উপযুক্ত বাইক ।