দুই চাকার বাহনগুলো দিন দিন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কারণ সেগুলো গ্রাহকদের ব্যবহারউপযোগী, যাতায়াত সুবিধা, দেখতে সুন্দরএবং দামটাও গ্রাহকদের হাতের নাগালের মধ্যে। বিভিন্ন সিসি এবং সেগমেন্ট বিভিন্ন ধরনের আগ্রহ তৈরি করে। নয় শুধু তাই বিভিন্ন মোটরসাইকেল কোম্পানীগুলো এখন নতুন নতুন বাইক গ্রাহকদের অফার করছে। আমরা যদি দুই চাকার প্রস্তুতকারক কোম্পানীর কথা বলি তাহলে অবশ্যই একটি নাম উল্লেখ করতে হয় এবং সেই নামটা হল টিভিএস। কারণ জাপানিজ ব্র্যান্ডগুলোর পরেই ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ডগুলো ভালো পজিশন ধরে রেখেছে।
আমরা সকলেই টিভিএস কোম্পানী এবং তাদের প্রডাক্টের কোয়ালিটি সম্পর্কে অবগত আছি এবং তাদের নতুন নতুন বাইকগুলো বিভিন্ন দেশে সফলভাবে মার্কেট জয় করছে । এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে তাদের নতুন একটি বাইক যুক্ত হচ্ছে যার নাম টিভিএস এপ্যাচি আরটিআর ১৬০ ৪ভি যা এই সেগমেন্টের সকল বাইককে টেক্কা দেবার জন্য প্রস্তুত। স্পোর্টস বাইকারদের মনে মনে একটু উন্মাদনা সৃষ্টি হচ্ছে কারণ এই বাইকটি আরটিআর এর সম্পূর্ণ রেসিং ডিএনএ নিয়ে প্রস্তুত। বাইকটিতে অনেক ফিচারস সংযুক্ত করা হয়েছে যেটা বলা যেতে পারে যে তার ভাই এপ্যাচি আরটিআর স্পোর্টস বাইকের সিরিজ থেকে ধার নেয়া। নতুন এই এপ্যাচি আরটিআর ১৬০ ৪ভি তে সম্পূর্ণ কমপ্যাক্ট রেস ডিজাইন, ক্লাসিক শেপ এবং সামনের এগ্রেসিভ এটিটিউড ধারণা পাওয়া যায়। আরটিআর ৪ভি এর ডিজাইনটা উন্নত করা হয়েছে মূলত রেস ট্র্যাক এর জন্য। মেশিনের ফর্মে কিছুটা সিংগুলার ফাংশন রয়েছে যা রাস্তার এর গতি আরও বেশি তরান্বিত করবে। বাইকের বিল্ডটাও অনেক ডাইনামিক এবং রাস্তায় চলার পথে সাইড থেকে দেখতে অনেক আকর্ষণীয় মনে হবে। তাই মানুষ এখন জানতে ইচ্ছুক এই বাইকের ফিচারস সম্বদ্ধে এবং অন্যান্য বাইকের সাথে এর কি কি পার্থক্য রয়েছে। নিচের রিভিউতে আমরা সে সকল বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
এপ্যাচি আরটিআর ৪ভি তে যে সকল নতুন ফিচারস সংযুক্ত করা হয়েছে-
রেসিং ডেরিভেড O3c প্রযুক্তি
টিভিএস প্রস্তুতকারক কোম্পানী এখানে ওয়েল কুল্ড কম্বুসশন চেম্বার প্রযুক্তির সাথে র্যা ম এয়ার এসিস্ট সিস্টেম ব্যবহার করেছে যেটা ইঞ্জিনের হিট নুন্যতম ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমিয়ে নিয়ে আসবে এবং নিঃসন্দেহে হাই পারফরমেন্স নিশ্চিত করবে। কম ওজনের ন্যানো ফ্রিস্ট কোটেড পিস্টন থ্রটল রেসপন্স করবে আরও দ্রুত এবং ইঞ্জিনের স্থায়িত্ব বাড়িয়ে তুলবে।
রেসিং ওরিজিন স্প্লিট ক্রাডেল চেসিস
বাইকটির ওভারওল ডিজাইনটা ডাবল ক্রাডেল স্প্লিট সিংক্রোনিক স্টীফ চেসিস এর উপর স্থাপন করা হয়েছে এবং মাল্টি বডি ডাইনামিক এনালাইসিস বাইকটারকে আরও নিখুঁতভাবে বিন্যাস্ত করেছে। এই কারণে বাইকের স্ট্যাবিলিটি আরও বৃদ্ধি পাবে এবং রাইডার চমৎকার রাইডিং অনুভুতি উপভোগ করতে পারবে।
রেসিং টায়ার
এপ্যাচি আরটিআর ১৬০ ৪ ভি তে রয়েছে অপশনাল রেস স্পেক পিরেলি টায়ার যেটা মূলত এডিশনাল রাস্তায় আরও ভালো পারফরমেন্সের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এটা বাইককে সর্বচ্চো গ্রিপ এবং দীর্ঘ স্থায়ী পারফরমেন্স নিশ্চিত করবে।
রেসিং ডাবল ব্যারেল এক্সজস্ট
আরটিআর ১৬০ ৪ ভি তে রয়েছে লো ফ্রিকুয়েন্সি শব্দ যেটা রাইডারকে আরও বেশি পিক আপ দিতে উৎসাহ দিবে কারণ এই শব্দে কোন ভাবেই একজন রাইডার বিরক্তি অনুভব করবে না। এই অদ্বিতীয় শব্দটা আরও উন্নত করার জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিক এবং ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানী ডাবল ব্যারেল স্টেইন লেস স্টিল এক্সজস্ট ব্যবহার করেছে।
ডিজাইন ও স্টাইল
আমরা যদি বাইকের ডিজাইন ও স্টাইল নিয়ে কথা বলি তাহলে অবশ্যই অনেক কিছু বলার আছে। হাইপার এগ্রেসিভ নেকেড হেডল্যাম্প যেটাতে রয়েছে সাপের ফনার তো লুক এবং সেগুলো সাথে এলিডি লাইট রয়েছে যেটা এর এগ্রেসিভ লুক এবং ফাংশান আরও বাড়িয়ে তুলবে। ফুল ডিজিটাল স্পীডো মিটার স্থাপন করা হয়েছে যেটা দেখতে অনেকটা ঠান্ডা প্রকৃতির। আরটিআর ৪ভি সিরিজ আপনাকে আলফা-নিউমেরিক মেসেজ সাথে রেস ইন্সপায়ারড প্যানেল যেটা আপনাকে একটি বাইক রেসার অনুভুতি এনে দিবে। মিটার কনসোলে রেস ডাইগ্নোস্টিক ফিচারস রয়েছে যেমন ল্যাপ টাইমার, ০-৬০ টাইমার, টপ স্পীড রেকর্ডার ইত্যাদি। ডিজাইনকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য এখানে রয়েছে এগ্রেসিভ ট্যংকার ঢাকনা, এরোডাইনামিক এর আদলে স্ট্রিট-ফাইটার মাস্কুলার ডিজাইন। এই ডিজাইনের ফলে সামনের দিকে কিছুটা হেলে রাইড করতে হবে যা যে কোন স্পীডে অনেক ভালো হ্যান্ডেলিং এনে দিবে। আরটিআর ৪ভি যে কোন দিক থেকে একদম রেসিং ভঙ্গির মতন। প্রস্তুতকারক কোম্পানী বাইকের সিটে ভাল মানের ফোম ব্যবহার করেছে যা রাইডাইরকে কোনভাবে খারাপ অনুভুতি দিবে না এবং এটা টিভিএস কোম্পানী নিজেই দাবি করছে। ডিজাইনকে আরেকটু ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য এর এলয় হুইলে ব্যবহার করা হয়েছে ইউনিক ডিজাইন। টিউবলেস টায়ার এলয় রিমের সাথে যথাযথভাবে স্থাপন করা হয়েছে যা রাইডারকে অনেক ভালো ব্যালেন্সিং ও অভিজ্ঞতা এনে দিবে। এরোডাইনামিক রেজর শার্প ডিজাইনের সাথে স্থায়ী মোশন স্টাইলিং ইঞ্জিন প্রটেক্টর খারাপ রাস্তায় ইঞ্জিনকে আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা করবে। রোটো-পেটাল ডিস্ক ব্রেক বাইকটাকে আরও আকর্ষণীয় লুক দিয়েছে।
চেসিস এবং ডাইমেনশন
আমরা ইতোমধ্যেই উল্লেখ করেছি যে সব বডি ম্যাটারিয়ালস এবং বডি পার্টসগুলো ডাবল ক্রাডেল স্পিল্ট সিঙ্ক্রো চেসিস এর উপর স্থাপন করা হয়েছে। এখন আলোচনা করা যাক বাইকের বডি ডাইমেনশন নিয়ে। বাইকের উচ্চতা ১০৫০ মিমি, ২০৫০ লম্বা এবং চওড়ায় ৭৯০ মিমি। এর আরও আছে ১৩৫৭ মিমি হুইলবেজ এবং ১৮০ মিমি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স । সিটের উচ্চতা রয়েছে মাটি থেকে ৮০০ মিমি উপরে। বাইকের সার্বিক ওজন ১৪৩ কেজি এবং ১২ লিটার তেল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ফুয়েল ট্যংকার রয়েছে।
ইঞ্জিন
টিভিএস তাদের এই এপ্যাচি আরটিআর ১৬০ ৪ভি তে দুইটা ইঞ্জিন অপশন রেখেছে এবং সেগুলো হচ্ছে ইএফআই এবং কারবুরেটেড । কারবুরেট ভার্সন ইঞ্জিনে আছে ১৫৯.৭ সিসি, ওয়েল কুল্ড সিংগেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন সাথে ৪ ভালভ যেটা ১২.১৪ কিলোওয়াট@ ৮০০০ আরপিএম শক্তি উৎপন্ন করতে পারে কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে যে দুই ইঞ্জিনের টর্ক একই রয়েছে যেটা ১৪.৮ এনএম @ ৬৫০০ আরপিএম। এখন ইঞ্জিনের একটা স্পেশাল বিষয় হচ্ছে ৪ভি যেটাকে টিভিএস বলছে ৪ ভালব ইঞ্জিন। এখন কথা হচ্ছে এই ইঞ্জিন থেকে আমরা কেমন সুবিধা পেতে পারি । আমাদের দেশে চলমান বাইকগুলোতে ২টি ভালভ ইঞ্জিন বেশি দেখা যায় কিন্তু টিভিএস তাদের এই বাইকে ৪ ভালভ ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে যার ফলে ইঞ্জিনে জ্বালানি ইনপুট এর জন্য বড় জায়গা পাবে, স্পার্ক প্লাগের পজিশনটা একজন মাঝামাঝি পর্যায়ে যা ইঞ্জিনের দহন ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং শুধু তাই নয় এই ইঞ্জিন পূর্বের ইঞ্জিনের তুলনায় অনেক বেশি শক্তি খুব দ্রুত উৎপাদন করবে। তাই ইঞ্জিন কোন ধরনের বাধা ছাড়াই অনেক বেশি শক্তি সরবরাহ করবে এবং ইঞ্জিনের আয়ুকাল বাড়বে। ইঞ্জিনের রয়েছে শক্তিশালী কম্প্রেশান রেশিং যা ১০.১৫:১ এবং টিসিআই ইগনিশন টাইপ এবং পাওয়ার টু ওয়েট রেশিং হচ্ছে 0.0843 KW/kg । ইঞ্জিনের সাথে রয়েছে ৫ স্পীড গিয়ার বক্স এবং চালু করার জন্য রয়েছে ইলেকট্রিক এবং কিক স্টার্ট অপশন।
ব্রেক এবং সাসপেনশন
স্পেশাল রটো পেটাল ডিস্ক ব্রেক ( সামনে ও পেছনে) এগ্রেসিভ গতি কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। সামনের চাকার পেটাল ডিস্ক ব্রেকের পরিমাপ হচ্ছে ২৭০ মিমি এবং পেছনে ১৩০ মিমি ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। সাসপেনশনের দিকে রয়েছে পেছনে মনোশক যা রাস্তার বেশি ঝাঁকুনিকে অনেকটাই কমিয়ে নিয়ে আসবে এবং সামনের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে টেলিস্কোপিক ফর্ক।
টায়ার ও হুইল
সামনের দিকে 90/90-17 49P সাইজের টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে এবং পেছনের দিকে 110/80-17 57P সাইজের টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে।
ইলেকট্রিক্যাল মিটার প্যানেল
12V, 9Ah মেইন্টেনেন্স ফ্রি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে যেটা 2V, 35/35W HS1 bulb । এর AHO প্রযুক্তিকে সার্বক্ষণিক পাওয়ার সাপ্লাই দিতে সাহায্য করবে। 1W/2.5 W এলিডি টেল ল্যাম্প 10W x 4 টার্ন ল্যাম্প এবং অন্যান্য ইলেকট্রিক্যাল ফিচারস। বাইকে ফুল ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে বিশেষ কিছু ফিচারস রয়েছে।
শেষ কথা
এপ্যাচি আরটিআর এর ৩টি ভিন্ন রঙ রয়েছে। এবং সেগুলো হচ্ছে লাল ,নীল এবং কালো। বাইকের সকল ফিচারস দেখার পর আমরা বলতে পারি যে বাইকটি বাংলাদেশের রাস্তা কাপানোর জন্য একে বারেই প্রস্তুত। তাই জনপ্রিয়তার একমাত্র কারণ হতে পারে বাইকটার পারফরমেন্স এবং এই পারফরমেন্স দেখানোর জন্য আশা করা যায় বাইকটি সর্বদা প্রস্তুত আছে।