হ্যালো ফ্রেন্ডস সবাই কেমন আছেন? আমি নাদিম ইকবাল আবির একজন বাইক লাভার এবং আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার RTR 160 4V এর ইউজার এক্সপেরিয়েন্স।
গত বছর জুন ভাই, রনি ভাই, ফয়সাল ভাই এবং আমি নেপালের মুস্তাং ট্রেইলে বাইক রাইড করতে যাই। ব্যালেন্স এবং ফুয়েল এফিসিয়েন্সির কথা চিন্তা করে আমরা এফজেডএস এফআই বাইক দিয়ে এই ট্যুরটা কমপ্লিট করি তবে আমাদের বাইক গুলোর সাথে হাইয়ার সিসি'র পারফর্মেন্স কম্পেয়ার করার জন্য একটা RTR 200 4V রেন্ট নেই। বলে রাখা ভালো মুস্তাং হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ডেঞ্জারাস অফরোড ট্র্যাকগুলোর একটি।
ট্যুরের সময় এফজেডএস বাইকগুলো ভালো পারফর্ম করলেও RTR টাকে নিয়ে অফরোডে আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। স্পেশালি এর ইঞ্জিন গার্ডের কারনে এই বাইকটা উঁচু নিচু অফরোডের বালু, কাদা এবং পাথরের সাথে বার বার আটকে যাচ্ছিলো গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বেশি হবার পরও। RTR 200 4V তেও হালকা ভাইব্রেশন ছিলো। অফরোডে ব্রেকিংও খুব একটা ভালো ছিলোনা এবং বার বার পিছনের চাকা স্কিড করছিলো। 200 সিসি বাইকে গিয়ার ছিলো মাত্র ৫ টা।
যাই হোক এই প্রব্লেমগুলোর পরেও আমি ওই সময়ই এই বাইকটার প্রেমে পড়ে যাই এর অসাধারন মাস্কুলার লুক এবং এর এক্সোস্টের বুম বুম সাউন্ডের কারনে। যদিও বাংলাদেশে এখন যেই RTR 160 4V গুলো পাওয়া যাবে এগুলোর এক্সোস্ট দেখতে সেইম হলেও ওই বুম বুম সাউন্ডটা নাই।
RTR 200 4V এর উপর আরও অনেক স্টাডি করে TVS মার্কেটে এনেছে এর ফাইনার এবং স্মুথ ভার্শন RTR 160 4V। কিছুদিন আগে জানতে পারি যে RTR 160 4V বাংলাদেশের মার্কেটে লঞ্চ হচ্ছে এবং আমি এই বাইকটি নেওয়ার ডিসিশন নিয়ে নেই। বাইকটি আমি ১৫ নভেম্বর হাতে পাই এবং তারপর থেকে শুরু হয় এর সাথে আমার পথ চলা।
বাইকটির এখন প্রি-বুকিং চলছে এবং আগামী এক মাসের মধ্যেই মার্কেটে এভেইলেবল হয়ে যাবে আশা করা যায়।
যদিও খুব বেশি রাইড করিনি। তবে যতটুকু রাইড করেছি তা থেকে আমার এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করছি -
ডিজাইনঃ
এর ডিজাইন নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। এর অনন্য ডিজাইনের কারনে এই বাইকটি অলরেডি মোটরবাইক প্রেমিদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। এর মাস্কুলার ফিউয়েল ট্যাংক এবং ফুল ডিজিটাল কনসোল রাইডিং সিটে বসা মাত্রই একটা অন্যরকম অনুভুতি জাগায়। নতুনত্ব আনার জন্য এতে ফিউয়েল লিড ক্যাপ ট্যাংকের সেন্টারে না দিয়ে কিছুটা ডান সাইডে দেওয়া হয়েছে। এর হেড এবং টেইল লাইট দুটোই আকর্ষনীয়। হেড লাইটের দুইপাশের এলইডি ডিআরএল গুলোও চমৎকার। এতে টিভিএসের ডুয়েল হর্ন ইউজ করা হয়েছে। এই বাইকটি পাওয়া যাবে Red, Black এবং Blue এই তিনটি ডিফারেন্ট কালারে।
ইঞ্জিনঃ
এই বাইকটিতে দেওয়া হয়েছে একটি ১৫৯.৭ সিসির ৪ স্ট্রোক বিশিষ্ট সিংগেল সিলিন্ডার ওয়েল কুল্ড ইঞ্জিন যা খুবই রিফাইন্ড, স্মুথ এবং পুরোপুরি ভাইব্রেশন ফ্রি। এর সিলিন্ডারে ৪ টি ভালভ রয়েছে যা এয়ার + ফুয়েল আরও ভালোভাবে মিক্সচার করে প্রোপারলি ফিউয়েল কম্বাশন করে যার জন্য পারফর্মেন্স এবং ফিউয়েল এফিসিয়েন্সি দুটোই বাড়ে। এই ইঞ্জিনটি ৮০০০ আরপিএমে ১৬.৫ পিএস পাওয়ার উৎপন্ন করতে পারে যা এই ক্যাটাগরির বাইকের জন্য যথেষ্ট। এতে ইউজ করা হয়েছে 5 speed গিয়ার বক্স। বাইকটিতে সেল্ফ এবং কিক দুইরকম স্টার্টিং মেকানিজমই রাখা হয়েছে। বাইকটি হাতে পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমার এভারেজ স্পিড ছিলো ৬০, টপ ছিলো ৮০। যেহেতু ব্রেকইন পিরিওড চলছে তাই এর উপরে আর স্পিড উঠাইনি। গিয়ার শিফটিং অনেক অনেক স্মুথ যা আপনি বাইকটি রাইড না করলে বিশ্বাসই করতে পারবেন না। ইম্প্রুভড ওয়েট ডিস্ট্রিবিউশন, আগের RTR এর মত এর সামনের দিকটা ভারি মনে হয় না। এক্সোস্টের সাউন্ড একটু ডিফারেন্ট এবং স্মুথ যা আপনার হয়তো ভালোই লাগবে।
ফিউয়েল কঞ্জাম্পশনঃ
এর ফিউয়েল ট্যাংক ক্যাপাসিটি ১২ লিটার। রিজার্ভ ফিউয়েল ক্যাপাসিটি ২.৫ লিটার। প্রায় ২০০ কিলোমিটার রাইডিং এ আমি ওভারঅল মাইলেজ পেয়েছি ৪০+ কিলো প্রতি লিটারে। আশা করছি ব্রেকইন পিরিওড শেষ হলে মাইলেজের পরিমান আরও বাড়বে।
ডাইমেনশন এবং ওয়েটঃ
বাইকটির ওজন ১৪৫ কেজি এবং রাইডিং এর সময় এই বাইকের ব্যালেন্স এবং কমফোর্ট খুবই ভালো। সিটিং পজিশন অনেক কমফোর্টেবল। এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৮০ মিমি এবং স্যাডেল হাইট ৮০০ মিমি যা কম হাইটের রাইডারদের জন্য একটু প্রব্লেমের কারন হবে। আপনার হাইট যদি ৫ ফিট ৬ ইঞ্চি বা এর উপরে হয় তাহলে কোন প্রব্লেম নেই আদারওয়াইজ গ্রাউন্ড টাচের ক্ষেত্রে আপনি প্রব্লেম ফেইস করতে পারেন।
চ্যাসিস এবং সাসপেনশনঃ
এর চ্যাসিস হচ্ছে Double cradle Split Synchro STIFF টাইপ। এর সামনে দুইটি টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পিছনে মনোশক সাস্পেনশন ইউজ করা হয়েছে। যা আপনাকে রাইডিং এ যথেষ্ট কমফোর্ট দিবে।
ব্রেকিংঃ
ব্রেকিং সিস্টেম আগের RTR থেকে যথেষ্ট ইম্প্রুভড। এর সামনে ২৭০মিমি এবং পিছনে ২০০ মিমি সাইজের পেটাল ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে যা রাইডিং এ আপনাকে দিবে যথেষ্ট কনফিডেন্স।
হুইল এবং টায়ারঃ
এই বাইকে ১৭ ইঞ্চি সাইজের এলয় হুইল ব্যবহার করা হয়েছে। এর সামনে ৯০/৯০-১৭ এবং পিছনে ১৩০/৮০-১৭ সেকশনের টায়ার ইউজ করা হয়েছে যা আপনাকে ব্রেকিং এবং কর্নারিং এ দিবে যথেষ্ট ব্যালেন্স এবং কনফিডেন্স। তবে আমার ধারনা স্টক টায়ার চেঞ্জ করে ভালো কোন টায়ার ইন্সটল করলে ব্রেকিং পারফর্মেন্স ইম্প্রুভ করবে। বালুতে এবং হালকা কাদাতে আমি ব্রেকিং কনফিডেন্স লুজ করেছিলাম।
ইলেক্ট্রিক্যালঃ
এই বাইকটিতে ১২ ভোল্ট ৯ এম্পিয়ারের একটি ব্যাটারী দেওয়া হয়েছে। এতে 35/35W Philips HS1 Halogen bulb ইউজ করা হয়েছে। অল টাইম অন এলইডি পজিশন ল্যাম্প আছে বাইকটিতে৷ বিল্ডিন AHO সিস্টেমে বাইকটি আসলেও TVS Bangladesh বাইকটিতে হেড ল্যাম্প অন অফের সুইচ ইন্সটল করে দিয়েছে আর এইজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ। আমি হ্যালোজেন হেডল্যাম্প খুলে এলইডি হ্যাডল্যাম্প ইন্সটল করেছি।
বিল্ড কোয়ালিটিঃ ওভারঅল বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি ভালোই মনে হচ্ছে।
ইঞ্জিন ওয়েলঃ এতে ১২০০ মিলি ইঞ্জিন ওয়েল লাগে। ইউজার ম্যানুয়ালে সিন্থেটিক টাইপের 10W30 গ্রেডের ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
দামঃ এইসব কিছু ফিচার সহ এই বাইকটির দাম পড়বে ২০৪৯০০ টাকা (রেজিস্ট্রেশন ফি ছাড়া)। সমসাময়িক অন্যান্য বাইকের সাথে তুলনা করলে আমার কাছে এই প্রাইসটি কম্পিটিটিভ মনে হয়েছে।
খারাপ লাগাঃ ১. বালু এবং কাদায় ব্রেকিং পারফর্মেন্স খারাপ। এইটা মুলত টায়ারের কোয়ালিটির কারনে। টায়ার চেঞ্জ করলে এইটা দূর হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি। ২. হেডলাইটের রিফ্লেক্টর সাইজে একটু ছোট তাই আলো কম এবং আলো বেশিদূর ছড়ায়না। ৩. রেয়ার ভিউ মিররটা সেইম আগের RTR এর টাই ইউজ করা হয়েছে এই বাইকে। নতুন মডেলের সাথে এই মিররটা কেমন যেনো বড় এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ লাগে। পিছনে দেখতে অসুবিধা হচ্ছিলো তাই আমি চেঞ্জ করে জিক্সারের রেয়ার ভিউ মিরর ইন্সটল করেছি। ৪. হ্যান্ডেলটা স্লাইটলি বড় তাই টার্নিং রেডিয়াস বেশি মনে হয়েছে আমার কাছে। ৫. এত সুন্দর একটা ডিজিটাল মিটার কিন্তু গিয়ার ইন্ডিকেটর নাই। ৬. মনোশকটা একটু হার্ড মনে হয়েছে, হয়তো সময়ের সাথে সাথে আরও ফ্রি হয়ে যাবে।
ওভারঅলঃ দাম এবং ফিচার অনুযায়ী ওভারঅল এই বাইকটিকে আমার ভালো মনে হয়েছে। মার্কেটে এভেইলেবল আগের মডেলের RTR বাইকগুলোর ব্রেকিং এবং ওয়েট ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে কিছু প্রব্লেম ছিলো যা এই মডেলে নাই। কম বেশি সব বাইকেই এক্সিডেন্ট হয় যা বাইকের পাশাপাশি রাইডারের উপরও ডিপেন্ড করে৷ তাই সাবধানে বাইক চালান, উচ্চগতি পরিহার করুন। এই রিভিউটি একান্তই আমার এক্সপেরিয়েন্স থেকে শেয়ার করা এবং সবশেষে একটা কথাই বলবো - Don't listen to what other says. Go & try by yourself ....
আমার হিসাবে রেটিং ও এর কারণসমূহঃ
ডিজাইন ৮/১০: শাড়ী গার্ড এক্সটেন্ডার + সুন্দর একটা রেয়ার ভিউ মিরর + মিটারে গিয়ার ইন্ডিকেটর থাকলে ১০ দেওয়া যেতো। কালারগুলো সুন্দর।
কন্ট্রোল ৯/১০: নো কমপ্লেইন এট অল বাট এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছু নাই ১০ দেওয়ার মত।
আরাম ১০/১০: সিটটা একটু বেশিই নরম। হয়তো আমি সিবিয়ার থেকে এই বাইকে আসছি দেখে এইরকম মনে হচ্ছে।
মাইলেজ ৮/১০: ৫০+ পাইলে ১০ দিতাম যেহেতু কার্ব ইঞ্জিন নিয়ে জিক্সারের মাইলেজ আরও বেশি।
সার্ভিস সেন্টার ৯/১০: যেহেতু টিভিএসের অথোরাইজড সার্ভিস সেন্টার প্রচুর এবং অলিতে গলিতে। যদিও টিভিএসের স্পেয়ার্সের দাম একটু বেশি অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায়।
দাম ৯/১০: এই দামে এফআই ভার্শনটা পেলে কোন কমপ্লেইন থাকতোনা।