টিভিএস এপ্যাচি আরটিআর ৪ভি বাইকটি সম্প্রতি বাজারে এসেছে এবং বর্তমানে আমি ৪ভি ইঞ্জিন সমৃদ্ধ এই বাইকটি ব্যবহার করছি। বাইকটি কেনা আমার খুব বেশি দিন হয়নি । তাই স্বল্প অভিজ্ঞতার আলোকে আমি সিজান রুপোম আপনাদের সাথে এর কিছু ভালো মন্দ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
শুরুতেই বলি টিভিএস এপ্যাচি আরটিআর ৪ভি বাইক কেনার কারণ- ৪ভি আমার ইন্ডিয়ার এক বন্ধু ব্যবহার করে । আমার বন্ধু বাংলাদেশী সে আমার সাথে একই স্কুলে পড়েছে। আমার বন্ধুর এপ্যাচি আরটিআর ৪ভি ইন্ডিয়াতে ব্যবহার করতো এবং তার বড় ভাই ব্যবহার করতো সুজুকি জিক্সার। আমি তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিলাম যে কম দামের মধ্যে ভালো বাইক কোনটা কেনা যায়। আমার বন্ধুর ভাই বলল যে জিক্সার না নিয়ে তুমি এইটা নাও কারণ এখানে ব্যবহার করা হয়েছে – ৪ ভালভ ওয়েল কুল্ড ইঞ্জিন, ফুল ডিজিটাল মিটার, মনোশক সাসপেনশন,ডাবল ডিস্ক, চওড়া টায়ার সব কিছু মিলিয়ে আমাকে ৪ভি সাজেস্ট করা হয়। আমি সব কিছু বিবেচনা করে রাজশাহীতে আসা মাত্রই টিভিএস এপ্যাচি আরটিআর ৪ভি সাকুরা এন্টারপ্রাইজ থেকে ক্রয় করি।
ডিজাইনের দিক থেকে আমার কাছে এই বাইকটার ডিজাইন বেস্ট মনে হয়েছে। সামনের টায়ার থেকে শুরু করে হেডল্যাম্প, এলিডি টেলল্যাম্প, কালার কম্বিনেশন, ফুয়েল ট্যাংক সহ ইত্যাদি সব কিছু ডিজাইন অনেক ভালো লেগেছে।
সিটিং পজিশনে বসে আমার অনেকটা এফযেডএস বাইকের মত অনুভুতি হয় কারণ সিটিং পজিশন ও হ্যান্ডেলবারের কম্বিনেশনটা দারুণ। পিলিয়নের জন্য অন্যান্য ১৫০ সিসি বা ১৬৫ সিসি বাইকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে পেছনের সিটটা একটু উঁচু থাকে কিন্তু এই বাইকের পিলিয়নের সিটিং পজিশনের উচ্চতা একদম পারফেক্ট।
রাতে হেডল্যাম্পের আলো আমি অনেক ভালো পেয়েছি । আমি খুব অন্ধকার রাস্তায় চালিয়ে হেডল্যম্পের পর্যাপ্ত আলো পেয়েছি আর দুইটা পারকিং লাইট জ্বলে থাকলে দূর থেকে দেখলে অনেক সুন্দর ভালো। এলিডি লাইট ব্যবহার করেও আমি মনে করি এত সুন্দর ঝকঝকে আলো পাবো কি না ।
ইঞ্জিনটা অনেক ভালো । আমি কোন প্রকার ভাইব্রেশন ৬ হাজার আরপিএম এ পাইনি যেহেতু আমি ব্রেক ইন পিরিয়ডে আছি এটা শেষ হলে বুঝতে পারবো যে ৬ হাজার আরপিএম এর উপর উঠলে ভাইব্রেশন হবে কি না। আমি আগের আরটিআর চালিয়েছি কিন্তু নতুন এই ৪ভি প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ইঞ্জিনে কোন প্রকার ভাইব্রেশন এখন পর্যন্ত পাইনি। আর থ্রটল রেসপন্সের কথা অবাক করার মত । আমি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতি তুলতে পারি । ইঞ্জিন হালকা গরম হচ্ছে তাদের দক্ষ টেকনিশিয়ান বললেন যে প্রথম সার্ভিস নেওয়ার পর আশা করা যায় ঠিক হয়ে যাবে। এক্সজস্ট সাউন্ড গম্ভীর এবং এই শব্দটা আমাকে বাইকের ইঞ্জিনের প্রতি একটা আলাদা প্রবণতা এনে দেয় এবং মনে হয় সারাদিন চালাতে থাকি।
মনোশক সাসপেনশনটা আমারো চালানো অন্যান্য বাইকের থেকে অনেক ভালো। আমি এফযেডএস নিয়ে ভাঙ্গা রাস্তায় গিয়েছি তখন একটু ঝাঁকুনি মনে হত আবার সুজুকি জিক্সার,পালসার এনএস বাইকের সাসপেনশন ৪ভি এর থেকে তুলনামূলক শক্ত যার জন্য আমি ভাঙ্গা রাস্তায় সবচেয়ে বেশি আরাম ও সাসপেনশনের স্মুথ পারফরমেন্স পেয়েছি এপ্যাচি ৪ভি থেকে।
টায়ারের গ্রিপগুলো অনেক ভালো বিশেষ করে আমার কাছে যেটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সেটা হল টায়ারের সাইজটা। টায়ারের সাইজ খুব বেশি মোটা বা চিকণ না । বাংলাদেশের রাস্তার জন্য একদম পারফেক্ট টায়ার বলে আমি মনে করি। আমি ভেজা রাস্তায় টায়ারের গ্রিপ পরীক্ষা করার জন্য কড়া ব্রেক করেছিলাম তো সেখানে আমি কোন স্কীড পাইনি।
করনারিং করে আগের এপ্যাচি আরটিআর এর থেকে অনেক ভালো অনুভুতি পেয়েছি। ব্রেকিংটা বলতে গেলে খুবই ভালো। আমি এর মিটার কনসোলে দেখেছি যে এবিএস লিখা আছে আবার একজনের মুখে শুনেছি যে জরুরী মুহূর্তে ব্রেকিংগুলো এবিএস এর মতো কাজ করে। আমি কড়া ব্রেক করেছিলাম শুধুমাত্র এর ব্রেকিং আর ব্যালেন্স পরিক্ষা করার জন্য তো কড়া ব্রেক করে এই বাইকে যেমন অনুভুতি পেয়েছি আমার মনে হয় আগের এপ্যাচি হলে আমি বাইক নিয়ে সেখানেই পড়ে যেতাম। অর্থাৎ ব্রেক করলে যথারীতি খুব ভালো সাপোর্ট পাওয়া যায়।
মাইলেজ আমি এখন পাচ্ছি ৩৫ কিমি প্রতি লিটারের মত। সার্ভিস সেন্টার থেকে বলা হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ প্রতি লিটারে মাইলেজ পাওয়া যাবে। আমি জানি যে নতুন বাইক প্রথমেই দিকে একটু কম মাইলেজ দেয়। শহরের মধ্যে ১৬৫ সিসি বাইকের জন্য আমি মনে করি ৪০-৪৫ কিমি প্রতি লিটার মাইলেজ ঠিক। আশা করছি আমার প্রথম সার্ভিসের পর মাইলেজ আরও বৃদ্ধি পাবে।
সার্ভিস সেন্টারের ম্যানেজারের ব্যবহার খুব ভালো এবং তারা অনেক আন্তরিক কিন্তু তাদের কর্মচারী যারা আছেন তাদের ব্যবহার আরও উন্নত করা উচিত বলে আমি মনে করি। সাকুরা এন্টারপ্রাইজ থেকেই কিনেছি এবং পরবর্তী সার্ভিসগুলো এখান থেকে করাবো।
দাম হিসেবে আমি মনে করি যে , আমি যেই দাম দিয়ে কিনেছি সে হিসেবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি যে এর ফিচারস ,পারফরমেন্স সব কিছু দিক বিবেচনায় দামটা একদম ঠিক আছে। বাংলাদেশের লোকাল মার্কেটের প্রেক্ষিতে দাম একদম ঠিক আছে।
বাইকের যে সকল বিষয় আরও ভালো করা যেত
-লুকিং গ্লাসটা পূর্বের আরটিআর এর মতই রাখা হয়েছে যার জন্য লুকটা সামান্য কমে গেছে
-বাইকের সাথে শাড়ী গার্ডের পা রাখার স্থানটা দেয় নি । সেটা দিলে আমার মনে হয় ভালো হত।
-হ্যান্ডেলবারটা যদি আরেকটু ঘোরানো যেত তাহলে ভালো হত। অন্যান্য বাইকের হ্যান্ডেল পুরপুরি ঘুরে যায় কিন্তু এই বাইকে অন্যান্য বাইকের তুলনায় একটু কম ঘুরে।
এই ছিলো টিভিএস এপ্যাচি আরটিআর ৪ভি নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত মতামত। রাইডারের যত্ন নেওয়ার উপর নির্ভর করে যে তার বাইক কেমন পারফরমেন্স দিবে। আমি সর্বদা চেস্টা করি বাইকের যত্ন নেওয়ার। সবাইকে ধন্যবাদ এতক্ষন সাথে থাকার জন্য।